নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলোর পথে সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক ছোটকাগজ ‘স্রোত’

১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২০








বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধকরণে যেমন সৃষ্টিশীল ব্যক্তির ভূমিকাকে প্রধান হিশেবে বিবেচনা করা হয় তেমনি লেখক সৃষ্টির কারিগর হিশেবে সাহিত্যের ছোটকাগজগুলোকেও প্রায় সমদৃষ্টিতে দেখা হয়ে থাকে। মূলত ছোটকাগজ হচ্ছে সাহিত্যের পাঠশালা। পাঠশালাতে যেমন আমরা ধ্বনি, বর্ণ, শব্দগঠন, বাক্যগঠন শিখি তেমনি ছোটকাগজের মাধ্যমেও সাহিত্যের পাঠশালার কাজ সম্পাদন করা হয়ে থাকে। তাছাড়া ছোটকাগজে থাকে সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর রুচির প্রকাশ। এতে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় প্রবীণ লেখকের সাথে নবীন লেখকের। এতে করে লেখকদের মধ্যে যেমন ভাবের মিথস্ক্রিয়া ঘটে তেমনি ঘটে রুচির পরিবর্তন।

মূলত ছোটকাগজের নৈর্ব্যক্তিক অভিব্যক্তিই শিল্প-সাহিত্যের মূল ভিত্তি। সম্পাদকের মননশীল প্রচেষ্টায় আর সৎ মনোভাবের প্রয়োগে সাহিত্য-উত্তীর্ণ কাগজ পরিচিতি পায়। ছোটকাগজ সাহিত্যের সকল শাখাকেই সমানভাবে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করে। যদিও অনেক সময়ই নানাবিধ কারণে তা শতভাগ সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না, তবুও সম্পাদকমণ্ডলীদের চেষ্টার ত্রুটি থাকে না বললেই চলে।

শিক্ষকরা যেমন মানুষ গড়ার কারিগর তেমনি ছোটকাগজও লেখক সৃষ্টির কারিগর। এ কথা অনস্বীকার্য যে, মঞ্চের মাধ্যমে উঠে আসা অভিনেতা/ অভিনেত্রীরা যখন চলচিত্রে যায় সেখানে তারা খুব দ্রুতই উন্নতির শিখরে আরোহণ করতে থাকে। মঞ্চটা যদি পাঠশালা ধরা হয় চলচিত্র হবে বিশ্ববিদ্যালয়। পাঠশালা পাশ না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন যেমন অসম্ভব তেমনি সাহিত্যের ছোটকাগজে না লিখে বা পঠন পাঠন না করে বড় লেখক হওয়াও অনেকটা অসম্ভব ব্যাপার!

নতুন লেখক সৃষ্টির দৃঢ় প্রত্যয় ও সেই সাথে নিজেদের সৃষ্টিশীলতাকে বিশ্বসাহিত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলা সাহিত্যে ১৪ এপ্রিল- ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে উন্মেষ ঘটে সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’-এর।
নতুন লেখক ও কবিদের প্রতিভাকে প্রকাশ করতে সুযোগ করে দিল ‘স্রোত’। নতুন লেখকদের জন্য ছোট কাগজ এক অনন্য সুযোগ। পশ্চিমা দেশগুলোতেই প্রথম ছোট কাগজের আবির্ভাব ঘটে। ১৮০২ সালে ইংল্যান্ডের সমালোচক ফ্রানসিস জাফরি, হেনরি ব্রোহাম এবং সিডনি স্মিথ বের করেন ‘ইডেনবার্গ রিভিউ’। আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো ছোটকাগজ ছিলো ‘নর্থ আমেরিকান রিভিউ’। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় বন্ধ হয়ে যায়। এদিক থেকে নিয়মিত প্রকাশিত সবচেয়ে পুরনো ছোটকাগজ ‘ইয়েল রিভিউ’। নিয়মিত প্রকাশের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

অবস্থাদৃষ্টে একথা প্রতীয়মান যে, রুচিশীল চিন্তা প্রকাশ বিষয়ক মতাদর্শের ছোটকাগজ ‘স্রোত’। ছোটকাগজের পথপরিক্রমা যদি উদ্দেশ্যহীন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হয়, সেক্ষেত্রে ছোটকাগজের মনস্তাত্ত্বিক প্রকাশ প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড়ায়। বিজ্ঞাপনের প্রতি সম্পাদকের আত্মসমর্পণে ছোটকাগজের নৈতিকতা নিষ্পেষিত হয়। প্রাচীন প্রথাতত্ত্বে কলঙ্কের কালিমা লাগে। বর্তমানে বাজারি ছোটকাগজের প্রকাশস্রোতে প্রতিনিয়ত বাজারি লেখক সৃষ্টির প্রবণতা চোখে পড়ে।

বাংলাদেশের ছোটকাগজের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে, নিঃসন্দেহে উপর্যুক্ত কথাটির সত্যতা মিলবে। আবার উল্টাপার্শ্বে প্রকৃত জাতকাগজের স্বীকারোক্তি বরাবরই স্বচ্ছ হয়। মূলমন্ত্র তাদের, জাত তরুণ লেখক আবিষ্কার। এরকমই জাত তরুণ লেখক আবিষ্কারের প্রত্যয় নিয়ে বাংলা সাহিত্যে আবির্ভাব ঘটেছে সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’-এর।
এক নজরে প্রথম সংখ্যা:

সংখ্যা: প্রথম,
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল- ২০০৩ খ্রিস্টাব্দ
ফর্মা: তিন
সম্পাদক: মো.বদরুজ্জামান
প্রচ্ছদ: ইয়াহ্‌ইয়া ফজল
দাম: দশ টাকা
যোগাযোগ: বৈশাখী ১১৭/২, খরাদিপাড়া, শিবগঞ্জ, সিলেট

প্রথম সংখ্যাটিতে লেখাগুলোকে তিনভাবে সন্নিবেশ করা হয়েছে। প্রথম অংশে প্রবন্ধ, দ্বিতীয় অংশে গল্প এবং তৃতীয় অংশে কবিতা। বাংলা সাহিত্যের বহুমার্ত্রিক লেখক, প্রথম ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদের কালজয়ী প্রবন্ধ‘বাঙলা প্রচলনের সমস্যাটি ভাষাতাত্ত্বিক নয়’ স্রোতের প্রথম সংখ্যাকে যারপর নাই ঋদ্ধ করেছে। এতে সত্যিকার অর্থেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে- বাংলা ভাষার প্রকৃত শত্রু-মিত্রদের পরিচয়।

কবিতা নিয়ে সাইদুর রহমান সাঈদের ‘শিল্পের বাস্তবতার শর্তেই প্রকৃত শিল্প বা কবিতা নির্মিত হয়। বাস্তবতার ভিত্তিতেই চেতনার বোধ আসে’ নিরীক্ষামূলক রচনা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’ কে প্রাণদান করেছে। যদিও দীর্ঘ নামকরণ শিল্পসার্থকতার জগতে প্রশ্নবিদ্ধ! সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে কবি ও প্রাবন্ধিক খালেদ উদ-দীন চমৎকার একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। এতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবক্ষয়কে ক্ষুরধার লেখনীর তুলিতে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে তোলে এনেছেন।

গল্পের ক্যাটাগরিতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন গল্পকারগণ। ‘স্বপ্নের মল্লিকা’ মুহাম্মদ শাহেদ রাহমান, ‘পারভীন’ আমির উদ্দীন, ‘তরুগাঙ্গের পথে’ জিল্লুর রহমান জয় প্রমুখের গল্প বর্ণন সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’কে বহুগুণে প্রবহমাণতা দান করেছে।

ছোটকাগজটিতে কবিতা লিখেছেন দেশের নবীন-প্রবীণ একঝাঁক তরুণ। জাহিদ হায়দার, মামুন সুলতান, মোকাদ্দেস বাবুল, সালমান ফরিদ, মো.বদরুজ্জামান, শেখ ফয়জুর রহমান, খালেদ রাজ্জাক, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবু তাহের তুহিন, সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল হাসান, দন্তন্য নাজিম, হাবিব আহমদ এহসান, মো.সুয়েজ হোসেন, খালেদ উদ-দীন প্রমুখগণের কবিতাতে বিষয়বস্তু দেশ কালের গণ্ডি পেরিয়ে হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের।

সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বে সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’-এর কিছু ত্রুটি লক্ষ্যণীয়। প্রথম সংখ্যাতে বিজ্ঞাপন না নিলে কাগজটির মান আরও সমৃদ্ধ হতে পারতো। তাছাড়া খ্যাতিমান আরও কিছু লেখক বা কবির কবিতা থাকলে নবীন লেখকেরা যেমন নিজেরা সে লেখার সাথে পরিচিত হতে পারতো তেমনি পাঠকও উপকৃত হতো সেই সাথে সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’ও আরও বেশি সমৃদ্ধ হত বলে আমার বিশ্বাস।

ত্রৈমাসিক নাম নিয়ে সাহিত্যের ছোটকাগজগুলোর উন্মেষ ঘটলেও শেষ পর্যন্ত এ কাগজগুলো নিজেদের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে না। অবশ্য এটার সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ওতোপ্রোতভাবে জড়িত বলে অনেক সময়ই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ সম্ভব হয়ে উঠে না। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’ প্রথম সংখ্যাটি বের হওয়ার দীর্ঘ নয় বছর পর স্রোত এর দ্বিতীয় সংখ্যা বের হয়। এক নজরে স্রোত এর দ্বিতীয় সংখ্যা:

সংখ্যা: দ্বিতীয়,
প্রকাশ: এপ্রিল-২০১২
ফর্মা: চার
সম্পাদক: মো. বদরুজ্জামান
প্রচ্ছদ: পীযূষ কান্তি সরকার
দাম: ৫০ টাকা
যোগাযোগ: ২১ বিস রুই ব্রিগেট ৭৫০১১, পেরিস, ফ্রান্স

যদিও দীর্ঘ সময় বিরতীর পর দ্বিতীয় সংখ্যার প্রকাশ তথাপিও এটা স্পষ্ট যে, প্রথম সংখ্য থেকে দ্বিতীয় সংখ্যা মানের দিক থেকে ও বিন্যাসের দিক থেকে অনেকটাই সমৃদ্ধ হয়েছে। দ্বিতীয় সংখ্যাটিতে মোট চারটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপটি সাজানো হয়েছে প্রবন্ধ দিয়ে, দ্বিতীয় ধাপটি সাজানো হয়েছে গল্প দিয়ে, তৃতীয় ধাপটি সাজানো হয়েছে কবিতা দিয়ে এবং সর্বশেষ ধাপটি সাজানো হয়েছে বিশেষ রচনা দিয়ে। যদিও বিশেষ রচনাটি বিশেষ বলে মনে হয়নি!
প্রবন্ধের শুরুতে সাইদুর রহমান সাঈদের ‘কবিতার কাছে যাবো অথবা জীবনের গভীরে’ প্রবন্ধটি মূলত আগের সংখ্যার ‘শিল্পের বাস্তবতার শর্তেই প্রকৃত শিল্প বা কবিতা নির্মিত হয়। বাস্তবতার ভিত্তিতেই চেতনার বোধ আসে’ প্রবন্ধটির বর্ধিত রূপ! কেবল ফর্মটাই যেন পরিবর্তন হয়েছে ভেতরের রসদ যেন একই!

কবি খালেদ উদ-দীনের ‘ব্যক্তি ও কাব্যে অনন্য জীবনানন্দ’ প্রবন্ধ সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’ কে স্বতঃস্ফুর্তভাবেই অনন্যতা দান করেছে। অনেক রচনা থাকা সত্ত্বেও যে জীবনানন্দ দাশ কবি এবং কবি হিশেবেই সমধিক পরিচিত সে দিকটিই তিনি বিশ্লিষ্ট ভঙ্গিতে বলতে চেয়েছেন। সেই সাথে বাংলা কবিতার ধারা পরিবর্তনে জীবনানন্দ দাশ যে এক প্রবাদপ্রতীম পুরুষ সে দিকটিও তিনি ব্যাপক আকারে তোলে আনার চেষ্টা করেছেন।

দ্বিতীয় ধাপের গল্পগুলোতে জীবন ও বাস্তবতার নানাদিক ফুটে উঠেছে। সালাম সালেহ উদদীন, সালমান ফরিদ, তানিয়া সুলতানা, বশির আহমদ জুয়েল প্রমুখের গল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’কে সত্যিকার অর্থেই প্রাণদান করেছে।

তৃতীয় ধাপে রয়েছে কবিতা। এ পর্বে প্রথম সংখ্যা থেকে দ্বিতীয় সংখ্যার কবিদের মধ্যে অনেক নতুন মুখের আগমন ঘটেছে। এতে ফারুক নেওয়াজ মোহাম্মদ হোসাইন, পুলিন রায়, শিউল মনজুর, সাইদুর রহমান সাঈদ, আবদুল মুমিন মামুন, বদরুজ্জামান জামান, মো.মোস্তফা কামাল, লিটন হয়দার, চৌধুরী রেজাউল হায়দার, সালমান ফরিদ, সুমিত্র প্রধান প্রমুখ কবিতা লিখেছেন। কবিতাগুলোতে একদিকে যেমন সমকালীন বাস্তবতা নিপুণভাবে ফুটে উঠেছে তেমনি বৈশ্বিক জটিলতাও উপমায় উপমায় পরিস্ফুটিত হয়েছে। তবে সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’-এর লেখার পাশাপাশি বানান সতর্কতার প্রতি আরও বেশি দৃষ্টি দেওয়া উচিত ছিল। কেননা, কোন লেখা মানে, গুণে, প্রকরণে, শুদ্ধ ভাব-ভাষার মধ্য দিয়েই শিল্প সার্থক হয়ে উঠে, অন্যথায় এর ব্যত্যয় ঘটে।
এটা সত্য যে, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের বিকাশে সেই প্রাচীনকাল থেকেই ছোট কাগজ বা লিটল ম্যাগাজিন রেখেছে অনন্য কৃতিত্বের স্মারক। রাজধানী থেকে একদম মফস্বলে সাহিত্যের প্রতি মানুষের টানকে সবসময়ই ধারন করেছে ছোট কাগজ। আর অলিগলি থেকে চায়ের দোকানে বসে প্রকাশ করা ছোটকাগজের ক্রমবিকাশের ধারায় এবার যুক্ত হল সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘স্রোত’র তৃতীয় সংখ্যা।
এপ্রিল-২০১৫-তে সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’ এর তৃতীয় সংখ্যার প্রকাশ হয়। এক নজরে তৃতীয় সংখ্য:

সংখ্যা: তৃতীয়,
প্রকাশ: এপ্রিল-২০১৫
ফর্মা: ৫.৫ ফর্মা
সম্পাদক: মো.বদরুজ্জামান
প্রচ্ছদ: সজল ছত্রী
দাম: ৭৫ টাকা
যোগাযোগ: বৈশাখী ১১৭/২, খরাদিপাড়া, শিবগঞ্জ, সিলেট


এই সংখ্যা দীর্ঘ চেষ্টার ফসল। এই সংখ্যা এটাই প্রমাণ করে, ‘স্রোত’ বিজ্ঞাপনের তীক্ষ্ণ বল্লমে বিদ্ধ না হয়ে, প্রকৃত মানপূর্ণ লেখক এবং বিষয় ভিত্তিক চিন্তা নিয়ে পথ চলছে। বলাবাহুল্য, মুক্ত সাহিত্যচর্চার জন্য সৎ উদ্দেশ্যে যে কাগজ নির্মাণবিলাসী, সেই কাগজ সব সময় ভালো লেখার প্রতি উদারতা ধারন করে প্রতি পৃষ্ঠায়। নিরীক্ষামূলক লেখার পাশাপাশি নতুন লেখক সৃষ্টিতে নিঃশর্ত স্বাক্ষর রাখে যে কাগজ, সেই কাগজ প্রকৃত জাত ছোটকাগজ। এমন মনোবৃত্তির পরিচর্যা করতে সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মুক্ত সাহিত্যচর্চার জন্য, সৎ উদ্দেশ্যে ‘স্রোত’-এর প্রকাশ সাহিত্যাঙ্গনকে নিঃসন্দেহে আলোকিত করেছে, সমৃদ্ধ করেছে- ‘স্রোত’ পাঠমাত্রই যে কোন পাঠক তা অনায়াসে স্বীকার করবে বলে আমার বিশ্বাস।
সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘স্রোত’ সম্পর্কে একালের শক্তিমান কবি মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, “জীবনের স্রোত, শিল্পের স্রোত, সুন্দরের স্রোত একসাথে মিশে গেলেই আমরা আনন্দিত হই। অনেক ছোটকাগজ বের হয় কিন্তু টিকে থাকে না। এর যাত্রা আসলেই দুষ্কর, আসলেই ব্যতিক্রম। অনেকেই গোষ্ঠীপ্রীতি, ব্রাহ্মণীয় পৈতা নিয়ে ঘোরেন, আমরা তা পছন্দ করি না। স্রোতের যাত্রা দীর্ঘজীবী হোক”।

সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘স্রোত’র তৃতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে খালেদ উদ-দীন ও সুমনকুমার দাশ’র প্রবন্ধ, একে শেরাম, শিউল মনজুর, মোহাম্মদ হোসাইন, জাফর ওবায়েদ, সালমান ফরিদ, সজল ছত্রী ও মেকদাদ মেঘ’র গুচ্ছ কবিতা, সজল কান্তি সরকার, মুনশি আলিম ও আবদুল হান্নান ইউজেটিক্স’র গল্প, ফকির ইলিয়াস, তমিজ উদ্দীন লোদী, মনজুর মোহাম্মদ, বদরুজ্জামান জামান ও কামরুন নাহার রুনু’র জোড়া কবিতা, মিলু কাশেম’র ভ্রমনবিষয়ক স্মৃতিকথা, কাজী আতিক, সাইদুর রহমান সাঈদ, কামাল তৈয়ব, মামুন সুলতান, রফিকুজ্জামান রণি, মুহিবুর রহমান মজনু, খালেদ উদ-দীন, মো. হিফজুর রহমান, মুহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), চৌধুরী রেজাউল হায়দার, মো.হারুনুর রশিদ, সৈয়দ মাসুম, কাজী আনিসুল হক, জান্নাতুল ফেরদৌস সুমী ও প্রকাশ কুমার বিশ্বাস কিশোর’র কবিতা, বিনিয়ামিন’র মুক্তগদ্য, এনায়েত হাসান মানিক, শাহাদত বখত শাহেদ, সৈয়দ মুক্তদা হামিদ ও বদরুজ্জামান জামান’র ছড়া।

এছাড়াও এ সংখ্যাতে রয়েছে কিছুটা ব্যতিক্রমী আয়োজন। এ আয়োজনের অংশ হিশেবে এই ছোটকাগজে সংযুক্ত হয়েছে চলতি বছরে সিলেট থেকে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত ১২ টি গ্রন্থ সম্পর্কে কবি মেকদাদ মেঘ’র আলোচনা। ছোটকাগজটিকে বৈচিত্র্যতা দানে কবি মেকদাদ মেঘ এর গ্রন্থ আলোচনা নিঃসন্দেহে ভূয়সী প্রশংসার দাবি রাখে।

‘স্রোত’ এর সম্পাদকীয়র মধ্যে ছোটকাগজ সম্পর্কে আরও একটু বড় কলেবরে ভূমিকা টানলে সম্পাদকের কৃতিত্ব আরও বেশি তেজস্বী হতো। সম্পাদকীয়তে পূর্ববর্তী সংখ্যার লেখার পুনরাবৃত্তি না করে কবি ও লেখকদের লেখার মূল নির্যাস নিয়ে আরও একটু তথ্যবহুল ভূমিকা লিখলে সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’ আরও বেশি প্রাণ পেত বলে আমার মনে হয়।
তারপরও কবিতা নিয়ে যে ভাষ্য দেয়া হয়েছে, তা তরুণ কবিদের প্রয়োজন মেটালে সম্পাদক সার্থক হবেন, যা কিনা বহুদূর হেঁটে যাওয়ার ইঙ্গিত মাত্র। যে কোনো কাগজের প্রকাশপথ বন্ধ হয়ে যাওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমরা চাই—সব কাগজের প্রকাশ মহাকালের পথে হেঁটে যাক। তাহলে যেমন সাহিত্যের নতুন লেখক সৃষ্টি হবে, তেমনি সেই নতুন লেখক কর্তৃক সাহিত্যের বাঁকও পরিবর্তন ঘটবে। সনাতন রুচির পরিবর্তন ঘটবে। সমৃদ্ধ হবে বাংলা সাহিত্য। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘স্রোত’ সনাতন রুচির পরিবর্তন ঘটাক, বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধতা দানে এগিয়ে চলুক।


-----------------------------
মূল প্রবন্ধ: মুনশি আলিম
১৯-০৮-২০১৫


মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:২২

প্রামানিক বলেছেন: পত্রিকার উন্নতি কামনা করি।

২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৪

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.