![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাস বদল করে লেগুনায় উঠলাম। সাথে আমার ইছামতি কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়সহ অন্যান্য সহকর্মীবৃন্দ। ছাতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কেউ-ই এলোপাথারি বৃষ্টির ছোবল থেকে রেহাই পাইনি। অনেকটাই কাকভেজা হয়ে জড়োসড়ো হওয়ার মতো অবস্থা! হঠাৎ আমার চোখ পড়ল লেগুনায় কর্মরত ফুটফুটে এক শিশু কন্ট্রাকটারের ওপর। বয়স ছয় কী সাত হবে! সমস্ত চোখ-মুখ জুড়ে কী যে অপূর্ব মায়া সচক্ষে না দেখলে বিশ্বাসই করাই দায়! এই অল্প বয়সে যখন তার সমবয়সী বন্ধুদের সাথে স্কুলে থাকার কথা, খেলাধুলা করার কথা কিংবা হাতে থাকার কথা রঙিন বই আর কলম- আজ সেখানে কিনা সে লেগুনা যাত্রীদের ভাড়া তুলছে! আমার কৌতূহলের মাত্রা বাড়তে থাকে।
আমি জিজ্ঞেস করি- কী নাম তোমার?- জসীম উদ্দীন! আমি সরস কৌতুক করে বললাম- বাহ্! পল্লি কবি জসীমউদদীন! ছেলেটি আমার সরস কৌতুক না বুঝে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। আমি আবারো তাকে জিজ্ঞেস করলাম- বাবার নাম কিতা? - নজরুল ইসলাম। আমি একটু মুচকি হেসে বললাম- ওমা! তুমি তো দেখা যার কবি বংশের লোক!
বোধ করি ছেলেটি তখনো কবি বংশের মর্মার্থ উদ্ধার করতে না পরে আবারও বোকাবোকা ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম- বাড়ি কিয়ানো? সে ক্ষীণস্বরে বলল- নালুআটি । স্কুলে যাও?- সে তখন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে! তার দীর্ঘশ্বাসে ভাতাস ভারী হতে থাকে, আকাশের মেঘ আরো ঘন থেকে ঘনতর হতে থাকে। আমার মনটা মোচর দিয়ে ওঠে। আমি বলললাম- যদি তোমারে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ খরিয়া দেই তুমি যাইবায় নি? সে আমার দিকে কিছুক্ষণ নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কী যেন ভাবলো। তারপর একটু মুচকি হেসে বললো-জ্বী অয়। আমার সহকর্মীদের দৃষ্টিও তখন তার দিকে। আমার মনে পড়ে গেল সাম্প্রতিক রাজন হত্যার পর নতুন আইনের কথা। ১০ বছরের নিচে কোন শিশুকে কোন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে রাখা যাবে না! রাখলে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে তা গণ্য হবে।
একবার ভাবলাম ড্রাইভারকেই জবাবদিহির আওতায় আনি। আবার ভাবলাম নাহ্! থাক। ওসব পুলিশি ঝামেলায় গিয়ে লাভ কী! তার চেয়ে মনে মনে ভিন্ন একটি কৌশল অবলম্বন করলাম। আমি জসীমকে বললাম- তুমি ছোট্ট এখটা খাম খরতা ফারবায় নি?- খিতা? আগামী বিশুদবার (বৃহঃপতিবার) তোমার আব্বারে নিয়া কলেজে আইতায় ফারবায়নি? কথাটি শোনার পর থেকে তাকে খানিকটা চিন্তিত মনে হল। আমি আবারও কৌশল অবলম্বন করলাম। বললাম- তোমার আব্বারে খইবায় কলেজের ছার অখল আফনারে চা খাওয়ার দাওয়াত দিছইন। ফারবায় নি?- এবার সে বেশ নির্ভরতার হাসি দিয়ে বলল- জ্বি অয় ফারমু। কথা শেষ না হতেই লেগুনা এসে থামলো কলেজ গেইটে। ভাড়া মিটিয়ে আমরাও নেমে গেলাম।
কেন যেন তখনও আমার ভেতরে কোন প্রকার নির্ভরতা খুঁজে পেলাম না। আমি এগিয়ে ড্রাইভারের কাছে যাই। মুচকি হেসে বলি- ভাইসাব, ছোট্ট এখটা উফখার করবা নি?- জ্বি অয় ছার, খউক্কা।– জসীমের বাফরে এখটু কইবা- আগামী বৃহঃবার তান বাচ্চারে (জসীম কে) নিয়া যেন আমরার কলেজে আইন, চা খাবার দাওয়াত। ফারবা নি ভাই?- ড্রাইভার মুচকি হেসে বলে- জ্বি অয় ছার। চিন্তা খরবা না, আমি খইমুনে যাওয়ার লাগি।
ফেরার সময় আমি আবারও জসীমের দিকে তাকাই। তার চোখে-মুখে তখনও কিছুটা সংশয়, কিছুটা উৎকণ্ঠা, কিছুটা হাসির ঝিলিকের আভা! ড্রাইভারের নির্ভরতা শর্তের পরও কেন যেন শিশুটিকে ছেড়ে যেতে মন চাচ্ছিল না। তবুও চলে আসতে হল, চলে আসতে হয় বলে। ভেতরে এখন কেবলি বৃহঃবারের অপেক্ষা!
---------------------
মুনশি আলিম
০১.০৯.২০১৫
জকিগঞ্জ, সিলেট
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫০
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: আপনার আন্তরিকতাপূর্ণ মন্তব্য দেখে এতই আপ্লুত হয়েছি যে ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষাও আপনা থেকেই গুলিয়ে ফেলেছি।
সত্যিকার অর্থেই ছেলেটি তার পিতাকে নিয়ে যদি কলেজে আসে, তবে আশা করছি আমি একাই সমাধান করতে পারবো। তারপরেও যদি কোন ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তবে অবশ্যই আপনারদের সাথে শেয়ার করব।
অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভ কামনা সতত।
২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৭
মানবী বলেছেন: আমার মন্তব্যটি সাধারন, আপনার উদ্যোগটি অসাধারন।
আজ বৃহস্পতিবার তাই খোঁজ নিতে এসেছিলাম জসিম এসেছিলো কিনা।
ভালো থাকুন।
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৮
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: কেউ কথা রাখেনি, কেউ কথা রাখে না...
৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৬
মানবী বলেছেন: হতেই পারে এমন, ওরা ঘাবড়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে।
তবে এতে আপনার উধরনের মহান প্রচেষ্টা থেমে যাবেনা আশা করি।
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৮
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: নিশ্চয়ই না। তাকে কেন্দ্র করে নতুন আরেকটা পোস্ট দিয়েছি। দেখলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৮
মানবী বলেছেন: আপনার ভাবনা ও সুন্দর উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা!
আশা করছি এই জসিমউদ্দীন পল্লী কবি হয়ে না উঠলেও এক সময় উচ্চ্ শিক্ষিত, সুপ্রতিষ্ঠিত সুন্দর মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে!
একটি অনুরোধ অধবা পরামর্শ। হয়তো আপনি নিজেই এব্যপারে উদ্যোগ নিয়ে রেখেছেন, তারপরও... জসিমের বাবা নিশ্চয় আর্থিক সংকটের কারনেই ছেলেকে এমন পেশায় নিয়োজিত করেছে। তাই শুধু তাকে স্কুুলে ভর্তি করালে বা পড়ার খরচ বহন করলেই হয়তো সমস্যার সমাধান হবেনা! হয়তো নজরুল ইসলামের আর্থিক স্বাবলম্বিতার কথাও বিবেচনায় আনতে হবে। আপনি নিজেই এই সমস্যার সমাধান করবেন বলেই বিশ্বাস, তারপরও প্রয়োজন মনে করলে আমাদের অর্থাৎ ব্লগারদের জানাবার অনুরোধ রইলো।
সুন্দর মানসিকতা ও একটি মানবিক উদ্যোগের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।