নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবি জায়েদ হোসাইন লাকী ১৯৭৫ সালের ১৮ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক নিবাস ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার গজারিয়া গ্রাম। পিতা: কে এম তোফাজ্জ্বেল হোসাইন, মাতা: বেগম সুফিয়া হোসাইন। পেশা বেসরকারি বিদেশি সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত থেকে সাধারণের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করা। পেশা যাই হোক তাঁর মূল নেশা কিন্তু কবিতা লেখা। সাহিত্যের মধ্যে ডুবে থাকাকেই বেশি পছন্দ করেন। পারিবারিক নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সাহিত্য সাধনা থেকে ছিটকে পড়েননি। সময়ের সাথে পাল্লা দিতে না পেরে কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পেরে অনেক কবিই অকালে ঝরে পড়ে। কিন্তু কবি জায়েদ হোসাইন লাকী সেসব কবিদের থেকে নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম।
তাঁর জীবনে ‘পড়া এবং লেখা’ কিংবা ‘লেখা এবং পড়া’ ঠিক যেন মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ! পাঠ্য বই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে পাঠ্যের বাইরের বিশেষ করে কবিতার বইয়ের নেশা তাঁকে সব সময় তাড়া করে বেড়াত। আর সে তাড়না থেকেই সাহিত্যের প্রতি বিশেষ করে কবিতার প্রতি তাঁর বিশেষ ঝোঁক। তিনি যেমন পড়তে ভালোবাসেন তেমনি লিখতেও পছন্দ করেন। সৃজনশীল বন্ধুদের অনুপ্রেরণা ও সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে চলে তাঁর লেখনী। বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে একের পর এক প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর সৃষ্টিশীল কবিতা।
বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে বের হতে থাকে তাঁর শিল্পসুষমাসমৃদ্ধ কবিতার বই। কবি জায়েদ হোসাইন লাকীর কবিতার বইগুলো পড়লে নিঃসন্দেহে বলা যায় কবিতার জন্যই বুঝি জন্ম কবি জায়েদ হোসাইন লাকীর! তিনি মূলত কবি গৌণত সম্পাদক। কবিতাই যেন ধ্যানজ্ঞান; ঋষিদের যেমন পরমাত্মায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়াই ধ্যানজ্ঞান ঠিক তেমনি আরকি! স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে কবিতা প্রকাশ হওয়া শুরু হলে খুব দ্রুতই চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তাঁর কবিখ্যাতি। ফলশ্রুতিতে সমৃদ্ধ হতে থাকে বাংলা ভাষা, বাংলা কাব্যসাহিত্য।
এটা খুবই স্পষ্ট যে, কবি জায়েদ হোসাইন লাকীর লেখনীর নিজস্ব ধারা রয়েছে। চিন্তা-চেতনার মধ্যেও রয়েছে নতুনত্ব। ২০১৪ সালে জয়তী প্রকাশন থেকে প্রকাশিত কবি জায়েদ হোসাইন লাকীর ১৩তম কবিতার বই ‘ভালোবাসা উড়ে যায় পাখির ডানায়’ । এতে মোট চুয়ান্নটি কবিতা রয়েছে। কবিতার নামকরণের মধ্যেই এক ধরনের রোমান্টিক পূর্বভাস মেলে।
তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য কাব্য ও গ্রন্থগুলো হলো:
• ভালোবাসা বাতাস সেলাই করে
• একদিন রাস্তায় চাঁদ নেমেছিল
• আমি তাকে আদর করি নয়তো, হত্যা করি
• হাত বাড়াই নিষিদ্ধ গন্ধমের দিকে
• যেভাবে আমার দ্বিতীয় মৃত্যু হলো
• ভূমিবালিকা
• নারী ও গোলাপ
• আগডুম বাগডুম ছড়া
• বৃষ্টি ও প্যারাসিটামল
• এক মুঠু প্রেম হলে কেটে যায় দিন
• ভুল করে তোমাকে ভেবেছি আমার
• খ্যাপা সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস
এছাড়াও তিনি মুক্তি, সময়, জাগরণ, মানবজীবন, বাংলার কাগজ, মানচিত্র, কালেরবৃক্ষ, মনোভূমি প্রভৃতি সাহিত্যের ছোট কাগজ সম্পাদনা করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন।
‘ভালোবাসা উড়ে যায় পাখির ডানায়’কাব্যটির বিশ্লেষণে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যথা:
ক. অতিমাত্রায় রোমান্টিকতা
খ. প্রত্যাশা
গ. আত্মক্ষরণ
ঘ. বিচ্ছিন্ন আত্মকথন
ঙ. জীবনের ছায়াপাত
চ. আত্ম অস্থিরতা ছাপ
ছ. বিভ্রান্তির ছাপ
জ. সমকালীন বাস্তবতা
ঝ. ভাবের রোদন
ঞ. মানসপ্রিয়ার স্মৃতিচারণ
ট. রোমান্টিকতার দীর্ঘশ্বাস
ঠ. আদিম কামনা
ড. যুগ জটিলতা
ঢ. প্রেমের জটিল নিকাশ
ণ. পৌরাণিকতার সুঘ্রাণ
ত. বিবিধ
কবিরা স্বপ্নদ্রষ্টা। মানুষের মনে স্বপ্ন বুননে তাঁরা নিরলস ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রয়োজনের তাগিদেই কবিকে শিল্পের পথে হাঁটতে হয়। কবি জায়েদ হোসাইন লাকী শিল্প ও সুন্দরের পূজারি। পুরোপুরি এক রোমান্টিক স্বপ্নদ্রষ্ট্রা। তাঁর প্রথম কবিতাতেই তিনি তাঁর প্রমাণ রেখেছেন। ভালোবাসার পূর্ণতা মেলে বিশুদ্ধ প্রেমে। আর প্রেমের পূর্ণতা নাকি চুম্বনে! ভালোবাসা উড়ে যায় পাখির ডানায়’ কবিতায় একই সাথে চরম আদিম আকাঙক্ষার দিকটি যেমন ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তেমনি রোমান্টিক ভাবের ভিতর দিয়ে নিজের দ্বৈরথ সত্ত্বার দিকটিও স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন।
আমার চুম্ব ন সমগ্র
তোমার কাছে যাওয়ার আগেই
আটকে যায়। উত্তরা আর শাহবাগের মাঝ পথে;
আমার যাযাবর চুমু
শুধু পৃথিবী ভ্রমণ করে বেড়ায়
তাই আজ আমি তোমার চুল থেকে
পায়ের পাতা পর্যন্ত, এক দীর্ঘ ভ্রমণে যেতে চাই
চুমোয় এখন সত্যিই আমার আলস্য লাগে।
উৎস: যাযাবর চুমো, পৃষ্ঠা ১১
কবি জায়েদ হোসাইন লাকীর ‘প্রেম যেন এক, অনিবার্য পচন’ চমৎকার একটি কবিতা। কবিতার পংক্তির ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে বাস্তবতার সুঘ্রাণ। একটি ভালো গান দিয়ে যেমন একটি সিনেমা হিট হয়ে যায় তেমনি ভালো একটি কবিতার কারণেও একটি কাব্যগ্রন্থ সফলতার মুখ দেখতে পারে। কবি জায়েদ হোসাইন লাকীর ‘প্রেম যেন এক, অনিবার্য পচন’ তেমনি একটি কবিতা যা পুরো কাব্যকে সফলতার পক্ষে সুপারিশ করার যোগ্যতা রাখে। যেমন:
পৃথিবীর সকল পুরুষই কেবল নারীর পেছনে ছোটে
সুন্দরী বিধবার পেছনেও ছোটে শালিকের ঝাঁক।
পুরুষেরা বউয়ের পোষ মানে না
যেমন, পুরুষ খায় না কখনোই জন্মনিরোধ পিল
-----------------------------------
কষ্টগুলোকে আজ তুলে দিয়েছি আরিচা রোডের গাড়িতে
সেগুলো এখন পদ্মায় নিক্ষিপ্ত হবে।
উৎস: প্রেম যেন এক, অনিবার্য পচন, পৃষ্ঠা ৪২
কবি একদিকে যেমন স্বপ্নদ্রষ্টা অপরদিকে তেমনি শব্দ কারিগড়! তাঁর কবিতায় শব্দ বিন্যাসে তিনি সর্বদাই চমক দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কবিতার প্রতি প্রবল আত্মমগ্নতার কারণেই এ সৃষ্টিশীলতা সৃষ্টি হয়। ছোট শিশুরা যেমন পুতুল খেলা নিয়ে মগ্ন থাকে, ফুটবল খেলোয়াররা যেমন ফুটবল খেলা নিয়ে মগ্ন থাকেন, সঙ্গীত শিল্পীরা যেমন সঙ্গীত নিয়ে মগ্ন থাকেন ঠিক তেমনি কবি জায়েদ হোসাইন লাকীও শব্দ নিয়ে মেতে থাকতে পছন্দ করেন। তাঁর কবিতার ভাঁজে ভাঁজে আমরা সেরকমই নজির দেখতে পাই। সফল ব্যক্তিরা যেমন একই কাজ বারবার করেন না, ভিন্ন ভিন্ন ভাবে করেন ঠিক তেমনি কবির কাজও হলো প্রতিনিয়ত শব্দের পর শব্দ সাজানোর ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনয়ন করা। কবি জায়েদ হোসাইন লাকী এ ক্ষেত্রে মোটেও পিছিয়ে নেই। তাঁর নিচের কবিতাদ্বয়ের মধ্যেই সে প্রমাণ মেলে-
নিজেকে কম্পোজ করতে দিয়েছি। মেয়েটি বড্ড টাইপ করতে জানে।
কেমন খটখট করে আমাকে প্রতিদিন কম্পোজ করে চলে সে দু’আঙুলের চাপে।
তার মুঠোর চাপে আমি প্রতিদিন ভাঙতে, ভাঙতে পাথর থেকে জল।
উৎস: আমাকে জ্বালায় সে দু’আঙুলের চাপে, পৃষ্ঠা ৩৩
মধ্যরাতে কেঁপে ওঠে শরীর
ইদানিং প্রায়শই আমি জীবনের ভেতর ঘুমিয়ে পড়ি
মনে হয় সমস্ত শরীরে চেপে আছে পুরোটা আকাশ
---------------------------------------------
জীবনের পুষ্টিহীন পরিহাসে মেতে উঠি আমি- শুধু রাত্রি এলে
উৎস: মধ্যরাতের গদ্য, পৃষ্ঠা ৪০
নদী ও নারীকে নিয়ে কবিদের কতই না ভাবনা, কতই না উপমার হিড়িক! নদী ও নারী প্রকৃতির মতোই যেন অভিন্ন। এই নদীর বুকে অজ্ঞাতে লেখা থাকে গোপন কথা! সে কথা হদয়ের অনুভূতি দিয়ে পাঠ করতে হয়। আকাশের বুকে লেখা থাকে মোহন কথন! তা চেতনার স্পর্শে বোঝে নিতে হয়। মেঘের বুকে লেখা থাকে জন্মবৃত্তান্ত! সে বৃত্তের মধ্যে আশা ও প্রত্যাশা ঘোরপাক খায়। জীবনের চলমান ট্রেনে ঘটনা প্রবাহ চলে অহর্নিশি। সে ঘটনার রেশ ধরে দিনের পরে আসে রাত। একেকটি রাতের বুকে লুকিয়ে থাকে অজানা চমক! তা কোথাও হয়ত লেখাজোকা থাকে না, তবে জীবনের স্বন্ধিগ্ধ জারুলতলায় তা জোছনার স্নিগ্ধ আলোর মতোই স্পষ্টতর।
আমরা জানি, জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশজুড়ে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। আর তার সাথে জড়িত কত নাম না জানা ইতিহাস! কাজেই সে বহুমুখী রাতের জন্য কার না অপেক্ষা করতে মন জাগে! রোমান্টিক প্রত্যাশার ভেলায় চড়ে কবি স্মৃতি রোমন্থন করেছেন অবলীলায়। সেই সাথে উঠে এসেছে প্রাত্যহিক জীবনের টানাপোড়েন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, কাম-ক্লেদের পরিপূর্ণ এক নিরঙ্কুশ প্রচ্ছদ। নিচের কবিতাদ্বয় সে দিকটাই যেন প্রকাশ করছে-
ডাকাতিয়া নদীর উপরে উঠেছে আজ বয়ঃসন্ধির চাঁদ
নদীর জলে সে চাঁদের আলো করে আত্মহনন।
কৈশোর গড়িয়ে যৌবনে ডুব দেয় চাঁদ আজ ডাকাতিয়ার জলে
------------------------------------
আমি আজ মৃত এক বিলুপ্তপ্রায় নদী।
ডাকাতিয়া চাঁদের আলো শরীরে মেখে তুমি হয়ে উঠেছিলে চন্দ্রগন্ধা নারী
উৎস: তুমি বয়ঃসন্ধির চাঁদ। আমি শুঁয়োপোকা, পৃষ্ঠা ৩৭
আমার ভেতরে টুকরো টুকরো আমিত্ব
সময়ের বালিশে মাথা রেখে আমি রোজ রোদ পান করি
------------------------------------
তোমার ঠোঁটে আজ অন্যের চুম্বন
আমাকে ওভারটেক করো তুমি রোজ শাহবাগের মোড়ে।
তুমি আমাকে ফিরিয়ে দাও বলেই
আমি অন্যের গৃহ থেকে পরিপূর্ণ পুরুষ হয়ে বের হই।
উৎস: ওভারটেকিং নিষধে, পৃষ্ঠা ৪১
পৃথিবীর পরিপূর্ণতার পেছনে রয়েছে সৃষ্টিশীল মানুষের স্বপ্ন, প্রেম আর ভালোবাসা। স্বপ্ন বিলাসী মানুষ নিরন্তর স্বপ্ন দেখে চলে। স্বপ্ন বাস্তবায়নে চলে অহর্নিশি সংগ্রাম। কাঙ্খিত বস্তু লাভে কখনো বা অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয় আবার কখনো বা চলে সুদীর্ঘ প্রতীক্ষা। চাওয়া-পাওয়া নিয়েই মানব জীবন আবর্তিত হয়। পাওয়ার সংবাদ যেমন মানুষকে আবেগ-মথিত করে তেমনি না পাওয়ার বেদনাও মানুষকে হতাশায় পর্যবশিত করে তোলে। এটা তো চির সত্য যে, রাষ্ট্র, সমাজ, সভ্যতার কাছে আমাদের অনেক কিছুই চাওয়ার থাকে, পাওয়ারও থাকে। যদিও তার অনেকটাই আমরা পাই না। ফলে আমাদের জীবন পরিক্রমাতেও অপূর্ণতার ছাপ পড়ে। আশাবাদী কবি প্রেমের ক্ষেত্রেও সর্বদা আশার আলো জ্বেলে স্বপ্নের পর স্বপ্ন বুনে চলছে। কবির কবিতার ভাষায়-
আমাদের প্রেম এখন বয়ঃসন্ধিতে আছে
যদি না কেউ তাঁকে নিগ্রহ করে; তবে আমাদের সে প্রেম একদিন ঠিকই শস্যবতী হবে।
উৎস: লাভেরিয়া, পৃষ্ঠা ১৫
আজ রাত লুট হবে জোছনা
চোরেরা আমার বাড়িতে গচ্ছিত রখে যাবে চুরি করা চাঁদ।
--------------------------------------------------
আমি শুধু চুরি যাওয়া চাঁদ থেকে একমুঠো জোছনা
গোপনে ধার নিয়ে শরীরে মাখবো।
আজ আমি খুবই দ্বিধাগ্রস্থ
উৎস: জোছনা ও চন্দ্রগ্রস্থ আমি, পৃষ্ঠা ১২
কবিরা সমাজের আর-দশজন মানুষের মতোই মানুষ। তবে তাঁদের চিন্তাভাবনা থাকে সাধারণ থেকে ভিন্ন ও উন্নত। ব্যক্তিজীবনের প্রভাব প্রায় সব লেখকের লেখনীতেই রয়েছে। বিখ্যাত সাহিত্যিকদের জীবনী পড়লে এটার সত্যতা অনায়াসেই মিলবে। এটা অবশ্য অনেকটা জ্ঞাতসারে আবার অনেকটা অজ্ঞাতসারেই হয়ে থাকে। কবিদের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটে না বললেই চলে। কবিতার সাথে কবি আর কবির সাথে কবিতা। এই সম্পর্ক যেন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কবির ব্যক্তি জীবনের স্বপ্ন, আশা-আকাঙক্ষা, বিশেষ করে যাপিত জীবনের করুণ চিত্র, সুখ-দুঃখের ছায়াপাতই যেন কবিতায় উঠে এসেছে; তবে ছায়াপাত থাকুক আর নাই থাকুক কবিতাটি বেশ আবেগঘন করে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা সব কবির পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। শব্দ অলংকরণের বৈচিত্র্যতাও লক্ষ্যণীয়। আর এখানেই কবি জায়েদ হোসাইনে লাকীর কৃতিত্ব- স্বীকার্য!
আমি আত্মহত্যা করতে চললাম
ফিরতে অনেক রাত হবে।
তুমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে; বাড়ির সামনের সোডিয়ামে দেখে নিও
কী করে একটি মৃত লাশ জীবন্ত হয়ে রোজ বাড়িতে ফেরে।
উৎস: সুইসাইড নোট- ২, পৃষ্ঠা ১৭
এমনও হতে পারে;
আমাকে পোড়ানোর মতো চৈত্রের সকল দাবদাহ
চুরি করে নিয়ে গেছে পৌষের চাঁদ
-------------------------------------
আমি যে আগুনে পুড়ি; তুমি তার ছাই
উৎস: যে আগুনে পুড়ি, পৃষ্ঠা ১৯
প্রথমেই স্বীকার করেছি যে, কবির এ কাব্যটি পুরোপুরি রোমান্টিক ধাঁচের। কবি শব্দ চয়নে ও সরলভাবের স্পষ্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে নামকরণের ক্ষেত্রেই কেন যেন একটু খটকা লেগে গেল! কবির একটি কবিতার নামকরণ ‘তোমাকে ভিজিয়ে দেব চাঁদের বৃষ্টিতে’ না হয়ে যদি হতো ‘তোমাকে ভিজিয়ে দেব জোছনার বৃষ্টিতে’ তবে বোধকরি তা আরও সার্থক এবং পূর্ণতা পেত। উপমার ভুল প্রয়োগ অনেক শক্তমান কবিদের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যায়। তবুও নবীন-প্রবীণ সকল কবিরই সেসব ছোটখাট দিকে গভীর দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
আমার একটি জানালা চাই
যদি সে জানালায় পর্দা না থাকে, তাহলে বরং ভালো হয়।
দেয়ালবদ্ধতা আমাকে জ্বালায় বীভৎসতায়
------------------------------------
আর পর্দা যদি লাগিয়ে দেই জানালায়
তবে তুমি হয়ে যাবে চাষবাসহীন এক পৌরাণিক জমি।
উৎস: তোমাকে ভিজিয়ে দেব চাঁদের বৃষ্টিতে, পৃষ্ঠা ২৬
জায়েদ হোসাইন লাকী রোমান্টিক কবি। তিনি কবিতার এক নিবেদিত প্রাণ। কবিতাই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। তাঁর কবিতার ভাঁজে ভাঁজে ভাষার সরলীকরণ যেমন চোখে পড়ার মতো তেমনি শব্দালংকারও দৃষ্টি কেড়ে নেওয়ার মতো। নিচের কবিতাত্রয়ে আমরা তার প্রমাণ পাই-
কষ্টগুলো এমব্রয়ডারি করা পাঞ্জাবির মতো
ঝুলে আছে শরীর; যন্ত্রণার বোঝা হয়ে।
মনটাকে হ্যাঙ্গার বানিয়ে দুঃখগুলোকে বয়ে নিয়ে চলি
নীরবে বাতাসের ঘ্রাণে ঘ্রাণে।
--------------------------------
তুমি ছাড়া আসলেই আমার মুখ লুকানোর
অন্য কোন জায়গা নেই
উৎস: তুমি ছাড়া; মুখ লুকানোরজায়গা নেই, পৃষ্ঠা ৫০
পকেট ভর্তি ঝলমলে দিন।
সূর্যের ঝালে ত্বক পুড়িয়ে শূন্যে হাঁটে রাজপথে;
আগন্তুক এক হ্যামিলনের স্বপ্নপায়ী বালক।
উৎস: আগন্তুক এক স্বপ্নপায়ী বালক, পৃষ্ঠা ৫৮
তোমার মাংসাশী মন; তৃণ-গুল্মলতায় হয় না ভোজন
আন্তঃনগর ট্রেন যেমন তৃপ্ত হয় না ছোট শহর বেয়ে
ঠোঁটে ঠোঁট আয়নার অন্তর্ভেদ, তোমার তারল্য পান করি।
আমি নীরব রাতের ভেতরে গোপনে;
--------------------------------------
আমি তোমাকে মদ ভেবে পান করে দেখি, এ ভীষণ বিষ।
উৎস: হেমলক, ৬৩
কবি জায়েদ হোসাইন লাকী সমকালীন ভাবধারার কবিদের মধ্যে অন্যতম প্রধান। তাঁর কবিতায় যাপিত জীবনের চাওয়া-পাওয়া, আনন্দ-বেদনা, কাম-ক্লেদ, ভালোবাসা, প্রেম-বিরহ, স্বপ্ন ব্যক্তি অস্থিরতার ছাপ, অন্তঃদ্বন্দ্ব অত্যন্ত শৈল্পিক হয়ে ফুটে উঠেছে। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে বইটিতে এত বারই ‘চুম্বন’ শব্দটি এসেছে যে অনায়াসেই বইটির নামকরণ করা যেতে পারতো চুম্বনসমগ্র!!!
কবিরা জ্ঞাতসারেই হোক আর অজ্ঞাতসারেই হোক কোন কোন শব্দের প্রেমে পড়ে যান। ফলে সে শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহার দেখা যায় তাঁর কবিতায়। জায়েদ হোসাইন লাকীও এ গণ্ডি থেকে বের হতে পারেননি। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে যে, তার চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। তাছাড়া কাব্যের নামকরণের সাথে কবিতা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও কবিকে কিছুটা উদাসীন ও এলোমেলো মনে হয়েছে।
আমাদের মনে রাখা উচিত যে এক একটি কাব্যগ্রন্থ হল সন্তানতুল্য! সন্তানের প্রতি যেমন পিতার বা মাতার সর্বোচ্চ দরদ থাকে তেমনি কবিকেও কাব্যের ক্ষেত্রে সেরকম দরদ দেখানো উচিত। অন্যথায় সন্তান বেয়াড়া হওয়ার মতোই কাব্যও হয়ে উঠবে মানহীন। তবে এটা স্পষ্ট যে কাব্য নির্মাণে কবি জায়েদ হোসাইন লাকীর কাজের মধ্যে কোন প্রকার ফাঁকি ছিল না, তবে খানিকটা ফাঁক ছিল এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। অবশ্য বাস্তবতার যুপকাষ্ঠে জর্জরিত হয়ে এটা অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে।
সর্বোপরি ভাষার সররীকরণের দিক থেকে বিবেচনা করলে কিংবা ভাব-ভাষা, ছন্দ, অলংকরণ ও বিষয়-বস্তুর নতুনত্বের দিক থেকে চিন্তা করলে কবি জায়েদ হোসাইন লাকীর ‘ভালোবাসা উড়ে যায় পাখির ডানায়’ পাঠক হৃদয়ের কাছাকাছি তো যাবেই বাংলা সাহিত্যেও দীর্ঘকাল টিকে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।
------------------------
মুনশি আলিম
২৫.০৮.২০১৫ - ০৪-০৯-২০১৫
ইমেইল: [email protected],
জাফলং, সিলেট
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৩
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: কেবলি ভালোবাসা
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৫
জায়েদ হোসাইন লাকী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ! প্রিয় কবি আলিম ভাই