নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিবন্ধী ও মানবতা

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:১১





দূরপাল্লার বাসের একেবারে সামনের আসনে বসেছি। কন্ট্রাকটারের পীড়াপীড়িতে হঠাৎ এক বোরকাপরা মহিলা অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমার গা ঘেঁষে বসলো। আমি কিছুটা অস্বস্থি ও কিছুটা বিস্ময়ে মহিলার দিকে তাকাই। চোখের পাতায় ভাঁজ ও কপালের বলিরেখাগুলো স্পষ্ট বলে দিচ্ছে তার মধ্যবয়সের কথা! আমাকে জিজ্ঞেস করলেন-খানো যাইবায়?- জ্বী, কালিগঞ্জ। -- আমিও যাইতাম, আমারে এখটুতা ফথঘাট ছিনাইয়া দিওরে বাবা।–জ্বি আইচ্চা।
আমার আসনের পাশাপাশি এক বৃদ্ধ মহিলা তার ছেলেকে নিয়ে বসেছে। মাঝে মাঝেই ছেলেটি অনর্থক কো কো শব্দ করছে। প্রথম প্রথম আমিসহ অনেকেই বিরক্ত বোধ করলো। কন্ট্রাকটার তো সজোরে ধমক দিয়েই বসলেন। কিন্তু পরবর্তীতে গাড়ির সকলেরই আর বুঝতে বাকী রইল না যে সে মানসিক প্রতিবন্ধী!
গাড়ি চলছে। ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে। ভাবলাম একটু পরেই হয়ত গতি বৃদ্ধি হবে। কিন্তু সে আশায় যেন একেবারেই গুড়েবালি! এরই মধ্যে কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ গাড়ির স্ট্রাট বন্ধ হয়ে গেল। গাড়ির চালক কন্ট্রাকটারকে বললেন –সখলের কাছ তাকি ভাড়া তুলিলা- আর তানতানরে খইলা গাড়ি আর যাই তো নায়। ইঞ্জিন নষ্ট অইগেছ। কন্ট্রাকটার তাই করলো। আমি ও আমার সাথের কয়েকজন ভাড়া মিটিয়ে নিচে নেমে এলাম। আমার পিছনে নেমে এল ঐ বৃদ্ধ মহিলা ও তার ছেলেটি। একে একে অন্যান্য যাত্রীরাও নামছে।
কন্ট্রাকটার ছেলেটির কাছে ভাড়া চাইল। ছেলেটি তার পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে মুখে কী যেন বলতে চাইল। কিন্তু প্রতিবন্ধীতার কারণে সে শব্দগুচ্ছ বের হতে হতে প্রায় মিনিটখানেক লেগে গেল। আর এতেই চটে গেলেন কন্ট্রাকটার। অত্যন্ত ক্রোধে সেই প্রতিবন্ধী ছেলেকে জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল- চোদাউরির ফোয়া বাড়া দেছ না খেনে? ছেলেটি আবারও কী যেন বলতে চাইলো কিন্তু ততক্ষণে অপমান ও কোধে তার মুখ থেকে আর কোন শব্দ বের হল না। আমি ভালো করে খেয়াল করলাম তার চোখ ক্রমশ রক্তিম হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদেরও যে আমাদের মতোই মানবিকতা বোধ আছে, অনুভূতি আছে এমনকি অপমান করলেও যে গায়ে লাগে বা নিজে অপমানিত বোধ করে- স্বচক্ষেই তার প্রমাণ পেলাম।
ছেলেটির বয়স আনুমানিক ২০ বা ২১ হবে। দেরি হচ্ছে দেখে কন্ট্রাকটার ছেলেটিকে পুনরায় গালিও দিল। ছেলেটি অপমানিতবোধ করেও টাকা পরিশোধ করলো। টাকা দিতে দিতে মিনিটখানেক সময় ব্যয় করে বলল- হরতালের দিন তরে দেখিয়া দিমু...! কথাটি শেষ হতেই কন্ট্রাকটার ছেলেটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। অবিরাম বৃষ্টিবর্ষণের মতো উপর্যুপরি
চড়-থাপ্পর, কিল, ঘুষি মারতে লাগলো।

ছেলেটি সম্পর্কে আমার কিছুই হয় না। তবু কেন যেন মনে হল-এটা অন্যায়। ছেলেটিও আমাদের মতো যাত্রী। তাকে অপমান করা মানে প্রকারান্তরে আমাদের সবাইকেই অপমান করা। তাছাড়া মনে হল-এই প্রতিবন্ধী ছেলেটি তো আমার পরিবারেরও কেউ হতে পারতো! এরা তো আমাদের সমাজেরই অংশ। সভ্য সমাজ কোনভাবেই এদের অস্বীকার করতে পারে না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো- আমি তার কোন দোষই খোঁজে পেলাম না।

এমন বর্বরোচিত অন্যায় দেখে আমার কোথায় যেন খুব লাগলো। আমার সমস্ত শরীর শিহরিত হয়ে উঠলো। আমি কন্ট্রাকটারকে ডাকলাম। বোমা বিস্ফোরণের মতো করে সজোরে তাকে ধমক দিয়ে জানতে চাইলাম- তুইন ই ফাগল ফোয়াটারে খিতার লাগি মারলে?
উত্তরে সে বললো - তরে খওয়া লাগবোনি? বলেই সে আমাকেও সজোরে ধাক্কা মারলো। আমি কিছু সময়ের জন্য ভুলে গেলাম আমি যে কলেজ শিক্ষক! মুহূর্তেই ছাত্র বয়সের সমস্ত তেজ আমার মধ্যে ভর করলো। আমি কালবিলম্ব না করে বাম হাতে তার শার্টের কলার চেপে ডান হাত দিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় ওজনের থাপ্পরটি তার ডান গালে মারলাম।

এরপরের ব্যাপারটি একেবারেই ভিন্ন। আমি মারার সাথে সাথে আশে-পাশে যারা ছিল তারা সকলেই কন্ট্রাকটারকে মারতে লাগলো। প্রতিবন্ধী ছেলেকে অন্যায়ভাবে মেরেছে- এ সংবাদ শোনামাত্র গাড়ির ভেতর থেকে মসজিদের ইমাম, প্রফেসর, মানবাধিকারকর্মী, ব্যাংকার, স্বাস্থ্যকর্মীসহ নানা পেশার ছেলে-বুড়ো, নারী সকলেই হুড়মুড় করে বেরিয়ে এল। যে যেভাবে সুযোগ পেল কন্ট্রাকটারকে মারার চেষ্টা করলো। যে সুযোগ পেলো না, সেও মৌখিক যোগান দিল- মারো হালার ফোয়ারে!

কয়েকজন মহিলা তো ভীড়ের মধ্যে কন্ট্রাকটারকে না মারতে পেরে জুতা উচিয়ে সিলেটী ভাষায় গালি দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করলো।

কলেজে যেতে হবে। হাতে সময় ছিল কম বিধায় সিএনজিতে রিজার্ভ করতে হলো। সিএনজিতে বসে বসে ভাবছি- প্রতিবন্ধীদের প্রতি সমাজের মানুষের এখনো যথেষ্ট দরদ রয়েছে। এখনো এ সমাজে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অনেক মানুষ রয়েছে। কেবল প্রয়োজন সৎ-সাহসী ভূমিকা নিয়ে সামনে আসা। জয় হোক সৎ সাহসের, সৎ সাহসীর!

-----------------
১৩.০৯.২০১৫
মুনশি আলিম
জকিগঞ্জ, সিলেট

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৯

অন্ধকারের আলোর দিশারী বলেছেন: যোগ্য মানুষ আর ঐ মানুষটির একটু সাহস করে গলা উচিয়ে কথা বলতে পারাটাই দরকার তারপর দেখবে সমাজের সকল শ্রেনির মানুষই অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে ।

২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২০

শাহজাহান সুজন বলেছেন: জয় হোক সৎ সাহসের, সৎ সাহসীর :)

৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৩

শারলিন বলেছেন: দৃষ্টি নয় দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে.।.।.।.।।।

৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫২

রানা আমান বলেছেন: অন্যায়ের প্রতিবাদ করিনা দেখেই আমাদের দেশে কিছু লোক অন্যায় করার সাহস পায় ।

৫| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৭

কালীদাস বলেছেন: ভাল করেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.