নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আব্দুল হান্নান ১৯৪৫ সালের ১ মার্চ সাত নং নন্দীর গাঁও ইউনিয়নের শালুটিকর বাজার সংলগ্ন মানাউরা গ্রামের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগহণ করেন। পিতা আব্দুর রাজ্জাক ও মাতা হাবিবা বেগমের অত্যন্ত আদরের ছেলে ছিলেন তিনি। বাবা মায়ের ইচ্ছে ছিল ছেলে বড় হয়ে দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে সরকারি চাকুরি করে পরিবারের দুঃখ ঘোচাবে। কিন্তু দেশের পরিস্থিতির ক্রমশ খারাপ হওয়ার কারণে একাদশ শ্রেণিতে থাকার সময়েই আব্দুল হান্নাকে পড়াশোনায় ইস্তফা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করতে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আব্দুল হান্নান এক আলোকিত নাম।
অনুপ্রেরণা:
তখন সবেমাত্র এমসি কলেজে ভর্তি হয়েছিল। এ সময় ছাত্রলীগের সাথে জড়িত হয়ে পড়ে আব্দুল হান্নান। তৎকালীন এমসি কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি ছিলেন নির্মলেন্দুবাবু। মূলত তিনিই মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য উদ্ধুদ্ধ করেছিলেন।
যাদের সাথে নিয়ে ট্রেইনিংয়ে গিয়েছিলেন:
জগলু, আব্দুল ইউনুছ ডাক্তার, রহিম, আ. মতিন, আব্দুল হক, ফয়জুর, নূর, আ. রাজ্জাক, রোশন, সালাম, হুনাই, মেম্বার, সাজিদ, আব্দুল হান্নান, রুস্তম, আখলু, খালিক প্রমুখদের সাথে নিয়ে মোট এক গাড়ি করে যুদ্ধে রওয়ানা হন। ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধার টিম লিডারের দায়িত্ব পালন করেন বীরকুলির আব্দুল হান্নান ও খলামাধবের আব্দুল জব্বার।
যে মাসে গিয়েছিলেন:
সময়ে অনেক স্মৃতিই ম্লান হয়ে যায়। তবু সময় নিয়ে মনে করার চেষ্টা করেন আব্দুল হান্নান। আনুমানিক ফাল্গুন কিংবা চৈত্রমাসে তারা যুদ্ধে রওয়ানা দেন।
ছবি: যুদ্ধে যাওয়ার মুহূর্তে...
টেইনিং সেন্টার:
তাদের পুরো টিমকে নিয়ে যাওয়া হল ডাউকী সেন্টারে। সেখানে তাবু গেড়ে তাদের একরাত্রি রাখা হল। পরের দিন তাদের নাচাইন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে তাদের এক সপ্তাহ রেখে মেডিকেল করা হল। মেডিকেলে সবাইকে ফিট ঘোষণা করা হল।
এরপর তাদের মেঘালয়ের ফাইভ জিআর ইকোয়ান ট্রেইনিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে মোট ৬১টি তাবু ছিল। প্রতি তাবুতে ৩০ জন করে ট্রেইনিংরত সদস্য ছিল। তিনি ছিলেন ৮ নং তাবুতে। পরবর্তীতে তাদের তাবুও পরিবর্তন করা হল। এভাবে ৮ থেকে ২০ পর্যন্ত বিভিন্ন তাবুতে তিনি অবস্থান করে ফলশ্রুতিতে তার বেইজ নং ১৭ থেকে ২১ পর্যন্ত ক্রম পরিবর্তন হতে থাকে।
ট্রেইনিয়ের মোট সময়:
১ মাস তিন দিন।
ট্রেইনিং ইন্সট্রাকটর:
শিখ শান্ত সিং, গুর্খা প্রলাল
খাদ্য:
সকাল আটটায় জাউভাত আবার কোন কোন দিন রুটির সাথে একমগ চা। সন্ধ্যার সময় ভাতের সাথে মাংস ও মাছ দেওয়া হত।
উল্লেখ্য একই সাথে ৩০টি খাসি বলি ও ৩০টি খাসি জবাই করা হত। তবে কাকে যে কোন মাংস দেওয়া হয়েছে তার কোন হিসেব-নিকেশ থাকতো না।
অভিযোগ:
বলি দেওয়া পাঁঠার মাংস নিয়ে অভিযোগ করলে ইন্সট্রাকটর বলতেন- তোম লোক সাচ্চা মুছলিম হাম জানতাহে... মাত বন করো... মেরা আইডিনটিটি মানুষ... মালুম হে?
তখন আর তাদের বলার কিছু থাকতো না। বৃহৎ সার্থের জন্য নিজের ক্ষুদ্র সার্থকে জলাঞ্জলি দিলেন।
যেসব অস্ত্রের ট্রেইনিং:
১. রাইফেল ত্রিনট (মারাত্মক রাইফেল)। বাট বডি লেভেল সম্পর্কে বিস্তারিত শিখতেন। উল্লেখ্য এক ম্যাগাজিনে পাঁচ রাউন্ড গুলি থাকতো।
২. এস এল আর এর পূর্ণ রূপ হল সেলফ লোডিং রাইফেল। এস্পর করলে স্টপ, আর ফর করলে সিঙ্গেল রাউন্ড, এ ফর করলে অটো গুলি বের হতো।
৩. এল এম জি এর পূর্ণ রূপ হল লাইট মেশিন গান। এটাতে এ ফর অটো, এস্পর করলে স্টপ, আর ফর করলে সিঙ্গেল গুলি বের হতো।
৪. স্টেইন গান অস্ত্রে এ ফর অটো, এস্পর স্টপ, আর ফর সিঙ্গেল রাউন্ড গুলি বের হতো।
৫. মাইন্ড ফিটার এ ডেটে নেটার বা উত্তম সিরিয়াল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হত।
কোম্পানি কমান্ডার:
আব্দুল হান্নান হিন্দি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই পারদর্শী ছিল বলে ট্রেইনিং সেন্টারে তিনি কোম্পানি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু ট্রেইনিং শেষে তাকে প্লাটুন কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
যে সেক্টরের হয়ে যুদ্ধ করেন:
তিনি ৫ নং সেক্টরের হয়ে যুদ্ধ করেন। সেক্টর প্রধান: ক্যাপ্টেন হেলাল, এরিয়া কমান্ডার: মীর শওকত, সাব সেক্টার কমান্ডার: কর্ণেল চিত্তরঞ্জন দত্ত সেক্টর জেনারেল: আতাউল গণি ওসমানি
হাতিয়ার ইস্যু:
শিলং সেনাবাহিনী সেন্টারে তার নামে এস এল আর হাতিয়ার ইস্যু হয়।
শিক্ষা: মেট্রিক ১৯৬৯, ১৯৭০
তাদের যে নামে ডাকা হত:
ওয়ার্ল্ড অপারেশন গেরিলা।
শপথ:
কোরআন এ বাইবেল ও গীতার মধ্যে হাত রেখে শপথ করানো হয়েছে।
যুদ্ধের সময় বয়স: ২৪ বছর
প্রথম পোস্টিং:
সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক এবং চেলায়। এখানে প্রশিক্ষণ শেষে প্রায় তিন কোম্পানি যোদ্ধা প্রেরণ করা হয়। পূর্বাঞ্চল কোম্পানি কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন বিমল বাবু, পশ্চিম উত্তর কোম্পানির দায়িত্বে ছিলেন আমির আলী ও আব্দুর রব। প্রথম অপারেশনে সেক্টর কান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন ক্যাপ্টেন হেলাল, সাব সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন মীর শওকত, প্লাটুন কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন অনীল চন্দ। পোস্টিং হয়ে অপারেশনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত হতে মোট তিন ঘণ্টা সময় নেন।
প্রথম অপারেশন:
বাংলা বাজার, ছাতক। এতে মোট এক কোম্পানি যোদ্ধ অংশগ্রহণ করেন। প্রথম অপারেশনে কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন আমির আলী, প্লাটুন কমানর্ডার ছিলেন আব্দুল হান্নান। এটি ছিল সম্মুখ যুদ্ধ।
প্রথম অপারেশনের ফলাফল:
সদ্য ট্রেইনিং করা মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিপক্কতার কারণে ১৭ জন বাঙ্গালি মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হয়। আহত হয় ৯ জন। পাকিস্তানীদের ৩জন নিহত হয়।
দ্বিতীয় অপারেশন:
পরের দিন তারা বাংলা বাজারে অবস্থান নিলে পাকিস্তানী সৈন্যরা পিছু হটে টেংরাটিলাতে অবস্থান নেয়।
তৃতীয় অপারেশন:
টেংরাটিলা, হাদাটিলা, লাঠিটিলা। এই তিন জায়গায় মোট ১৩ বার অভিযান পরিচালনা করেন। এতে মোট সময় ব্যয় হয় ২ মাস ১৫ দিন।
১ মাস ১৫ দিন পর নতুন অস্ত্র আসে, ভারী অস্ত্র আসে। ধারণা করা হয় অস্ত্রগুলো রাশিয়ান। বিশেষ করে এফ সিক্সটিন রাইফেলগুলো ছিল খুবই উন্নতমানের।
ফলাফল:
দীর্ঘদিন যুদ্ধের পরও তাদের কোন সৈন্য শহিদ হয়নি তবে কিছু সংখ্যক আহত হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণ প্রতিহত করতে না পেরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সদস্যরা পিছু হটে। আর এ সুযোগে তারা পাকিস্তানীদের কোম্পানী দখল করে ফেলে। কোম্পানি দখল করার সময় মোট ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা অসমসাহসিকতা দেখিয়ে পাকিস্তানীদের আস্তানায় প্রবেশ করে। সেখানে প্রতি রুমই বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। এই ২৫ জনের মধ্যে প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন প্লাটুন কমান্ডার আব্দুল হান্নান। তিনি তালাবদ্ধ রুমগুলোকে ভেঙ্গে ফেলেন। যদিও তার সাথের অনেকেই বলাবলি করছিল যে, রুমের পাশে হয়ত মাইল বা বোমা ফিটিং করে তারা চলে গেছে। কিন্তু অসমসাহসি বীর আব্দুল হান্নান সে কথায় কর্ণপাত করলেন না। প্রথম রুমরে দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করতেই তিনি আশ্চর্য হয়ে যান।
নির্যাতিত বাঙালি নারীদের উদ্ধার:
প্রতি রুমেই সাত থেকে আটজন যুবতী নারীদের উলঙ্গ বা অর্ধ উলঙ্গ, রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে তিনি তড়িৎগতিতে তাদের নিজেদের সাথে থাকা জামা পড়িয়ে কোম্পানি ক্যাম্পের পিছনের দরজা দিয়ে তাদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। আনুমানিক ৭৫ থেকে ৮০ জনের মতো সুন্দরী তরুণীদের তিনি পাকিস্তানী ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করেন।
৪র্থ অপারেশ:
ছাতকের উত্তর পাড় আমবাড়িতে ছিল তাদের সম্মখ যুদ্ধ। এতে মোট ১ কোম্পানি অংশ নেয়। তবে পুরো এক কোম্পানি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে আক্রমণ অংশ নেয়।
অপারেশনের ফলাফল:
পূর্ব ভাগের ২ জন, মধ্যভাগের ১জন এবং পশ্চিমভাগের ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। কিন্তু শেষপর্যন্ত পাকিস্তানীরা পিছু হটে।
৫ম অপারেশন:
বাঘ বাড়ি অপারেশনে মোট এক ব্যাটালিয়ন অংশ নেয়। তিনটি কোম্পানির দায়িত্বে ছিলেন আমির আলী, আব্দুর রব, বিমল বাবু। এটি ছিল ত্রিমুখী যুদ্ধ। তিনটি কোম্পানি তিন দিকে অবস্থান করে। এই অপারেশন মোট ১ মাস ৩ দিন স্থায়ি হয়।
যুদ্ধের ফলাফল:
তুমুল যুদ্ধে ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন এবং পাকিস্তানীদের ১৫০ জনের মতো মৃতের খবর পাওয়া যায়। এতে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধ আহত হয়। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের শিলং মিলিটারি হসপিটালে পাঠানো হয়। জায়গাটির বর্তমান নাম হ্যাপি ভ্যালি।
৬ষ্ঠ অপারেশন:
জিগলি, গোবিন্দগঞ্জ। এতে মোট তিনদিন তারা অবস্থান করেন। এটিও ছিল ত্রিমুখী যুদ্ধ। দুই কোম্পানি মিলে তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে এ যুদ্ধ সম্পন্ন করেন।
ফলাফল: পাকিস্তানীরা পিছু হটে।
৭ম অপারেশন:
এম এ খান ব্রিজে সর্বমোট প্রায় ২ কোম্পানি যোদ্ধা অংশ নেয়। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে এ যুদ্ধ সম্পন্ন করেন। পশ্চিম কোম্পানির দায়িত্বে ছিলেন আমির আলী আর পূর্ব কোম্পানির দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল হান্নান।
ফলাফল:
এতো কোন পক্ষেরই কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু তুমুল যুদ্ধে পাকিস্তানীরা পিছু হটে।
৮ম অপারেশন:
বাধাঘাট শিবের বাজার। এতে মোট চারদিন সময় তাদের অবস্থান করতে হয়। মোট দুই কোম্পানি যোদ্ধা এতে অংশ নেয়।
ফলাফল:
এতো কোন পক্ষেরই কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু তুমুল যুদ্ধে পাকিস্তানীরা পিছু হটে।
নবম অপারেশন:
বর্তমান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমে নলকট নামক স্থানে অংশ নেয় এক কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা।
ফলাফল:
এতো কোন পক্ষেরই কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু তুমুল যুদ্ধে পাকিস্তানীরা পিছু হটে।
মজার ঘটনা:
বর্তমান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে রাতের বেলা পাকিস্তানী হানাদারদের দৃষ্টিভ্রম ঘটে। রাতের বেলা জোনাক পোকার মিটিমিটি আলোকে তারা গুলির আগুন মনে করে সে জোনাকি পোকার আলোর দিকে তুমুল গুলিবিবর্ষণ করেন।
১০ নং অপারেশন:
পাঠানটুলায় এক কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেয়। এটি ছিল ত্রিমুখী যুদ্ধ। এই অপারেশনে মোট ৫দিন সময় ব্যয় হয়।
ফলাফল:
এতো কোন পক্ষেরই কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু তুমুল যুদ্ধে পাকিস্তানীরা পিছু হটে।
মিলন:
১০ম অপারেশনের পর তারা আলিয়া মাদ্রাসায় তিন কোম্পানির যোদ্ধারা মিলিত হন। এখানে তারা ২ দিন অবস্থান করেন। আনুমানিক ৭০০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা এখানে অবস্থান করেছিলেন। এরপর ক্লোজিং করে কোম্পানিকে বিভিন্ন দিকে প্রেরণ করা হয়।
সিকিউরিটি প্রধান:
আব্দুল হান্নাকে প্রধান করে মোট ১৩ জনকে চিত্তরঞ্জন দত্তের অফিসে পাঠানো হলো। এই অফিসে তারা মোট ১২ দিন সিকিউরিটির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সর্বশেষ অপারেশ:
মডেল স্কুলে কোন ধরনের মাইল বা বোমা রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য তাদের ১৩ জনকে পাঠানো হল। তারা পরীক্ষা করে সংবাদ দিলেন- পুরো স্কুল আশংঙ্কামুক্ত। পরবর্তীতে পুরো ব্যাটালিয়ন সৈন্য সেখানে অবস্থান করেন।
স্বাধীনতার সংবাদ:
তারা মডেল স্কুলে অবস্থান করার আগেই সংবাদ পেল দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। এরপর বিপুল উল্লাসে তারা বিজয়ের পতাকা নিয়ে তারা মডেল স্কুলে অবস্থান করেন।
অস্ত্র জমা:
কর্ণেল চিত্তরঞ্জনের অফিসে তারা অস্ত্র জমা দেন। বাকীরা মীর শওকতের অধীনে আলিয়া মাদ্রাসায় অস্ত্র জমা দেন।
বিনোদন:
প্রশিক্ষণে বিনোদনের বিশেষ কোন সুযোগ ছিল না। তবে মাঝে মধ্যে রেডিওর গনজাগরণমূলক গান শোনাই ছিল তাদের প্রধান বিনোদন।
স্মরণীয় ঘটনা:
জিগলি অপারেশনে যখন তার ত্রিমুখী যুদ্ধে প্রাণপণ যুদ্ধ করছিল তখন তরা ভুলে গিয়েছিল তাদের পরিবার পরিজনদের কথা। রাতের বেলা তাদের ঘন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে তাদের সম্মুখে অগ্রসর হতে হত। অপারেশন শেষে সকালে যখন আব্দুল হান্নান নাস্তা করার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন ঠিক তখনি তার এক সহযোদ্ধা তাকে হাত দিয়ে তার পা দেখিয়ে বলল যে একটি দুমুখো সাপ তার পা পেচিয়ে জুতায় কামড় মেরে রয়েছে। যেখানে গুলির ভয়েই সে ভীত নয় সেখানে সাপের ভয়! দেখামাত্রই সে রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে সে সাপকে দুটুকরো করে ফেললো।
শাস্তি:
যারা যুদ্ধের সময় একটু অমনযোগী ছিল তাদের বিভিন্ন প্রকার শাস্তি দিত। তবে এসব শাস্তির মধ্যে ট্রলিং ছিল অন্যতম।
বিয়ে:
১৯৮৪ সালে তিনি পশ্চিম কাজীর বাজারের মোগলতুল এলাকার কুলসুমাকে বিয়ে করেন।
সর্বমোট সময়:
প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধে অপারেশনে অংশগ্রহণসহ মোট সাড়ে আটমাস তিনি যুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে পরিচিতি ঘটেছে; অর্জন হয়েছে বিপুল অভিজ্ঞতা।
মুক্তিবার্তা: ০৫০১১১০৩১১
ভারতীয় বার্তা: ২২৮৭০
কেন্দ্রীয় কাউন্সিল নং: ৯১-৪১-৫৩-০০১
জাতীয় পত্রিকা যুগান্তর: ২০৭
এক নজরে দাদা আ. রহমানের পরিবার:
দাদি: সাহেবা বেগম
সন্তান: ৩ জন
ছেলে: ১, মেয়ে: ২
ছেলে: আ. রাজ্জাক
স্ত্রী: হাবিবা বগেম
এক নজরে মুক্তিযোদ্ধা হান্নানের পরিবার:
আব্দুল হান্নান
স্ত্রী: কুলসুমা বেগম(৬৫)
সন্তান: ৩ জন মেয়ে ২, ছেলে ১ জন
• আ. করিম জনি (২৪)
• লিজা আক্তার
• তাহমিনা তাহসিন লিমা
যাপিত জীবন এবং প্রত্যাশা:
বর্তমান সরকারের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা যে সম্মান ও সম্মানি পেয়ে আসছেন তিনি ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর পিতার কাছ থেকে তিনি যে যে সম্পত্তি পেয়েছে তা খুবই সামান্য। তার উপর যুদ্ধের সশয় তাদের ঘরবাড়ি পাকিস্তানীরা জ্বালিয়ে দিয়েছে। ফলে তাদের পুরো পরিবারকেই নতুন করে ভাড়া বাসায় থেকে সংসার করতে হয়।
বর্তমানে তার নিজের মাত্র ১৭ শতক ভূমি রয়েছে কিন্তু কোন গৃহ নেই। তিনি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের কাছে গৃহ প্রত্যাশি। তার বিশ্বাস বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে, মুক্তিযোদ্ধাদের দুঃখে এ সরকার পাশে দাঁড়াবেন বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস।
এ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করে মূলত জাতিকে সম্মানিত করেছে। যদিও সরকারের অনেক কাজই সরকারের কাছের অনেক মানুষদের চতুরতার কারণে, দুর্নীতির কারণে তৃণমূল মানুষেরা সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে। তবে এখনো কোন কোন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। একটু খোঁজ নিলে এ তথ্য পাওয়া হয়ত দুষ্কর নয়। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ইর্শাদ আলীর প্রত্যাশা- এই সরকার জনগণবান্ধব। দেশের প্রতিটি মানুষই যাতে প্রাপ্য নাগরিক সুবিধা নিয়ে সুখে থাকে, সরকারের প্রতিটি ভালো কাজের সুফলই যাতে তৃণমূল মানুষের কাছে এসে পৌঁছায় সেদিকে সরকারের আরেকটু সুনজর দেওয়া উচিত।
---------------
মুনশি আলিম
জাফলং, সিলেট
১৯.০৯.২০১৫- ২১.০৯.২০১৫-
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৮
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ; যদিও আপনার মন্তব্যটি ত্রুটিপূর্ণ তবুও বলছি- আমি ঐ মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাতকার নেওয়ার সময় তাঁর সাক্ষাতকারটি রেকর্ড করেছি। আর সে রেকর্ডের ভিত্তিতেই লেখা। তাছাড়া উনার ডকুমেন্টও প্রমাণ করে যে তিনি নিয়মিত ছাত্র ছিলেন না। সন্দেহ থাকা ভালো তবে তার যৌক্তিক কারণ থাকা সমীচীন।
আপনার শুভ বোধের উদয় হোক।
আপনার জন্য রইল অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।
২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৫৮
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: জাতির ঘর গড়তে যেয়ে যে ঘর ভেঙ্গেছে তা এই ৪২ বছরেও হলো না জেনে ভাল লাগছে না।।আর হান্নান সাহেবের শিক্ষাজীবনটা!!
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৩
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: কী আর করা বলেন! কত নির্মম সত্যই তো আমরা জানি না! অনেক সত্যই মেনে নিতে কষ্ট হয় তবু মেনে নেই, মেনে নিতে হয় বলে।
আপনার জন্য রইল হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
"আব্দুল হান্নান ১৯৪৫ সালের ১ মার্চ সাত নং নন্দীর গাঁও ইউনিয়নের শালুটিকর বাজার সংলগ্ন মানাউরা গ্রামের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগহণ করেন। " এরপর লিখেছেন
"কিন্তু দেশের পরিস্থিতির ক্রমশ খারাপ হওয়ার কারণে একাদশ শ্রেণিতে থাকার সময়েই আব্দুল হান্নাকে পড়াশোনায় ইস্তফা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করতে হয়। "
- ১৯৪৫ সালে জন্ম নিয়ে, ১৯৭১ সালে একাদশ শ্রেণিতে? আপনার পক্ষে সঠিভাবে লখা সম্ভব হবে না কোন কিছু