নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কমান্ডার আব্দুল হক: অন্যরকম এক ভালো লাগার মানুষ:: মুনশি আলিম

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৫




আব্দুল হক গোয়াইনঘাট উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নের এক আলোকিত মানুষ। সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা রূপসী বাংলাদেশের এক অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভাণ্ডার গোয়াইনঘাট। এই গোয়াইনঘাট উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নের এক নিভৃত পল্লি লেঙ্গুরা। এই গ্রামেই ১৯৫৪ সালে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল হক। বাবা আব্দুল মোতালিব ও মা সরবুল নেছা। ব্যক্তিজীবনে আব্দুল হক খুবই সরল প্রকৃতির মানুষ। সব ধরনের জটিলতা ও দুর্নীতি থেকে তিনি নিজেকে নিরন্তর দূরে রাখার চেষ্টা করেন। আর একারণেই হয়ত গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তাঁকে নির্লোভ এবং সৎ মানুষ বলেই জানে। বাবার ইচ্ছে অনুযায়ীই তিনি স্কুলে ভর্তি হন। যতদূর জানা যায় পড়াশোনাতে তিনি খুবই ভালো ছিলেন। আট ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। আর এ কারণে সংসারের টুক-টাক কাজের ফাঁকে স্কুলের পড়াশোনার কাজও তাকে চালিয়ে যেতে হত। এভাবেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পদার্পণ করেন। বাবা আব্দুল মোতালিবের স্বপ্ন ছিল ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার কারণে আব্দুল হকের সে স্বপ্নপূরণ আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

ইতোমধ্যে দেশে যুদ্ধ শুরু হয়। হানাদার বাহিনী গ্রামে প্রবেশ করতেই পুরো গ্রামের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। গ্রামের সাধারণ মানুষ যে যেভাবে সুযোগ পেল নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে লাগলো। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই যেন ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। হানাদাররা গ্রামের অনেক যুবতিদের ধরে তাদের নিয়ে যেত। দিনের পর দিন তাদের শাররীক নির্যাতন করত। আর যুবকদের দেখামাত্রই নির্বিচারে গুলি করে মারতো।

একসময় পাক হানাদাররা স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় লেঙ্গুরা গ্রামে প্রবেশ করে মুক্তিবাহিনীদের খোঁজ করতে থাকে। সন্দেহজনক যুবকদের পাকড়াও করে। আব্দুল হকের বাবা, চাচাসহ গ্রামের অনেক মধ্যবয়সী লোকদেরকে পাকহানাদাররা জৈন্তা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। সেই সাথে তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাঁকে মারার জন্যও বাড়ির ভিতর দুরাউন্ড গুলি করে। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে সেদিন তিনি অন্যত্র থাকায় তাদের হাত থেকে বেঁচে যান। তিনি বেঁচে গেলেও ছাড়া পেলেন না তাঁর বাপ-চাচা। তাঁর বাবা ও চাচাসহ গ্রামের অনেককে জৈন্তা ক্যাম্পে নেওয়া হলো। ক্যাম্পে যাদের নেওয়া হয় তাদের বেশির ভাগই আর জীবিত হয়ে ফেরত আসে না। বাবা ও চাচাকে ধরে নেওয়ায় তিনি খুব বিচলিত হয়ে পড়লেন।

তিনি মনে মনে বুদ্ধি আঁটলেন। যে করেই হোক তাদের মুক্ত করতে হবে। যে কথা সেই কাজ। জৈন্তার তৎকালীন ক্যাপ্টেন হেলালের সহযোগিতায় খুব কৌশল করে তিনি তার বাবা ও চাচাদের মুক্ত করালেন। এরপর দেশের পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপের দিকে যেতে থাকে। দেশমাতৃকাকে রক্ষার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি ট্রেইনিংয়ের জন্য ভারতের মেঘালয়ের ইকোয়ানে রওয়ানা দেন। ট্রেইনিংয়ে বিনোদনের বিশেষ কোন সুযোগ ছিল না। তবে মাঝে মধ্যে রেডিওর গনজাগরণমূলক গান শোনাই ছিল তাদের প্রধান বিনোদন। তিনি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের নাচাইন ক্যাম্পে ট্রেইনিং করেছিলেন। সেখানে ২১ নম্বর ব্যাচে ২১ দিন ট্রেইনিং করার পর তাদেরকে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়।

আব্দুল হক বিভিন্ন অস্ত্রের ওপর ট্রেইনিং করে। এর মধ্যে রাইফেল, এসএলআর, এসএমজি, টুইস মর্টার, হ্যান্ড গ্রেনেড অন্যতম। ট্রেইনিং শেষে তাঁর নামে থ্রি নট থ্রি রাইফেল ইস্যু হয়। নাচাইন ক্যাম্প থেকে তিনি চলে আসেন ৪ নং সেক্টরে। বিশেষ করে মুক্তাপুর সাবসেক্টরে তিনি অনেকদিন ছিলেন। এসময় তাঁর কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন কুমিল্লার নজির আহমদ। সাবসেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন কর্ণেল ফারুক। তাঁর সাথের সহযোদ্ধারা হলেন রাজা মিয়া, আবদুল করিম, রহমত উল্লাহ, আবদুস সালামসহ গ্রামের ৩০/৪০ জন সুহৃদ যোদ্ধা এবং অসংখ্য গোর্খা সৈনিক।

এক অকুতোভয় যোদ্ধা হিসেবে আব্দুল হক মুক্তাপুর, জাললিখলা, লালাখাল, লালারবাগান, দরবস্ত, হরিপুর, বড় হাওড়, মেঝল বিল, বালিপাড়ার সম্মুখ যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক মনে করেন এ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করে মূলত জাতিকে সম্মানিত করেছে। তবে এখনো কোন কোন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। একটু খোঁজ নিলে এ তথ্য পাওয়া হয়ত দুষ্কর হবে না। বর্তমানে তিনি গোয়াইনঘাট উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালন করছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হকের প্রত্যাশা- এই সরকার জনগণবান্ধব। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সরকারের আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানী প্রদানে এ সরকারের কর্ম ইতোমধ্যেই ভূয়সী প্রশংসার দাবি রাখে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের সুচিকিৎসাসহ দেশের প্রতিটি মানুষই যাতে প্রাপ্য নাগরিক সুবিধা নিয়ে সুখে থাকে, সরকারের প্রতিটি ভালো কাজের সুফলই যাতে তৃণমূল মানুষের কাছে এসে পৌঁছায় সেদিকে সরকারের আরেকটু সুনজর দেওয়া উচিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.