নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আচ্ছা, আমি ‘পানি’-কে ‘জল’ বললে তুমি ওভাবে তাকাও কেন?
ছোটো ‘চাচা’-কে ‘কাকা’ বললেও তুমি যেনো কেমন করে তাকাও!
আমার ভাবনার অন্দরমহলে কাঁপুনি ধরে। ভয়ের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়! জলপাই রঙের রেস্টুরেন্টে যখন খাবার অর্ডার করো তখন সচেতনভাবেই তোমাকে বলতে শুনি “‘সুরুয়া’ বেশি করে দিবেন, প্লিজ”! ওয়েটার অবশ্য ‘সুরুয়া’ শব্দের অর্থ না বুঝে হা করে তাকিয়ে থাকলে তুমি খুব বিরক্তি নিয়ে বলো- ‘সুরুয়া’ মানে হলো ‘ঝুল’!
ওয়েটার হেসে বলে- স্যার কীসের সুরুয়া দেব? মাংসের? ভ্রু কিছুটা কুঞ্চিত করে তুমি বলো- গোশতের সুরুয়া; মানে মাংসের ঝুল!
সংকীর্ণ বিশ্বাসের পোশাকে মোড়া তোমার হৃদয়। তোমাকে কখনো ‘লাউ’ বলতে শুনিনি। ভরাট গলায় বলো- “লাউ এর খারাপ অর্থ আছে, বলতে হয় কদু!”
‘পিসিমা, মাসিমা, পিসেমশাই’ – ডাকগুলো শুনলেই মনে হয় তোমার শরীরে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে!
‘আদিম’ শব্দ নিয়েও তোমার কতই না যুক্তির বহর! তোমার খোঁড়া যুক্তির বৃষ্টিতে ভিজাতে চাও সকলকে। কী মনে করে যেনো তুমি এখন আর ‘Holy Quran’ বলো না! বলো- ‘Sacred Quran’
দেশি বিদেশি কোনো সুহৃদ এলে কখনোই তোমাকে বলতে শুনিনা “লাল গোলাপ শুভেচ্ছা কিংবা লাল গালিচা শুভেচ্ছা। ‘লাল রঙ’, ‘লাল পতাকা’, ‘লাল গোলাপ’ শব্দগুলোর সাথে যেনো তোমার নিত্য দ্বন্দ্ব লেগেই রয়েছে!
বিশ্বাসের বৃষ্টিতে গোসল করলেও কখনোই তুমি ‘স্নান’ স্থলাভিষিক্ত করো না! কুয়োর ব্যাঙের মতো ক্ষুদ্র জায়গাতে পড়ে থাকো বলে অনেক বিদেশি শব্দ বা বিধর্মী শব্দই তোমাকে ছোঁ’তে পারে না!
আজকাল ‘রেনেসাঁ’ শব্দের প্রতিও তোমার কেমন যেনো অনীহা অনীহা ভাব! উত্তর চাইলেই অবশ্য রেডিমেড ডায়লগের মতো বলো-‘পুনরুজ্জীবন’ বা ‘নবজাগরণ’ শব্দদ্বয় সন্তানের মতোই আপন!
‘আদিম যুগ’ বললেই তুমি বেশ চটে যেতে; অনেক পরে জানতে পেরেছিলাম ‘আদম’ থেকেই শব্দটির উদ্ভব! আর তাতেই ... ! পাশের বাড়ির কমলাকেও তুমি সামন্ত রাজাদের মতো ভাব নিয়ে শাসাতে। উপদেশের ঝুলি থেকে দামি শব্দ বের করার মতো করে বলতে “দর্জিকে খলিফা বলতে নেই!”
তোমার আচরণের কারণে বিভিন্ন সময় আমি ‘বলির পাঠা’ হলেও তুমি তা বলতে নিষেধ করতে। ‘ইফতার পার্টি’ শব্দদ্বয় পরিবর্তন করে বলতে ‘ইফতার মাহফিল’।
‘বাবা’ শব্দটিকেও তোমার কাছে একজিমার মতো মনে হয়! ভদ্র-অভদ্র সকল জায়গাতেই তোমাকে বলতে শুনতাম ‘পাদ’ শব্দটি। ভুলেও বলতে না ‘বদবায়ু’ কিংবা দুষিত বায়ু!
বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে তুমি ‘আশীর্বাদ’ শব্দটি কৌশলে পরিহার করে ‘দোয়া’ই ব্যবহার করতে। ‘প্রার্থনা’ শব্দটিকেও তোমার কাছে যেনো মনে হতো সৎ ভাই! তাই তুমি ‘মোনাজাত’ই বলো!
একসময় ‘মেহমান’র পরিবর্তে ‘অতিথি’ বললেও এখন কিন্তু তোমাকে ঠিকই গেস্ট বলতে শুনি! কেবল ‘দুলেহা-দুলেহীনে’র পরিবর্তে ‘বর-কনে’ বললেই তোমার গায়ে যেনো 105 ডিগ্রি জ্বর চলে আসে!
লাইলি-মজনু’র প্রেমের মতো দিওয়ানা হয়ে তুমি ‘মরহুম’ শব্দটিকে আলিঙ্গন করে বুকে টেনে নাও অথচ ‘প্রয়াত’ শব্দটিকে তোমার মনে হয় বাংলা ছবির খলনায়কের মতোই চিরকালীন নিকৃষ্ট!
বিশ্বাসের মল্লযুদ্ধে তুমি বিজয়ী বীর! তোমার বিশ্বাসে প্লাবিত হয় ভাষার জমিন। বোরকা পরার মতোই তুমি ধর্মকে শব্দের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে চাও। শব্দের অন্ধগলিতে দাঁড়িয়ে ভাবছো- তুমি এক দিগ্বিজয়ী বীর! ধর্মের সুঘ্রাণ নিয়ে তুমি অবলীলায় শব্দের মাত্রা ধরে হাঁটো। ওহে পণ্ডিত! তোমার হয়ত কখনো জানাই হবে না যে, ধর্মকে ভাষার কাঠামোতে ধরে রাখার চেষ্টা ধর্মেরই ক্ষতি, ভাষা বা সাহিত্যের না। তোমার অন্ধ, সংকীর্ণ ভেজা বিশ্বাসে কোনো ফাঁকি নেই নিঃসন্দেহে; কিন্তু কেনো যেনো মনে হয় অনেক ফাঁক রয়েছে!
-------------------
মুনশি আলিম
15.09.2015
শিবগঞ্জ, সিলেট
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০৯
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: অশেষ কৃতজ্ঞতা। হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।
২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৯
প্রণব দেবনাথ বলেছেন: সারা পৃথিবীতে যদি একটাই ভাষা থাকত তাহলে এইসব অনেকটাই থাকত না। হিন্দুরা কাউকে দেখা হলে নমস্কার বলে যদি আমি ইংলিশে হাই, হ্যালো বলি তাতেও কেউ কিছু মনে করবে না । যদি আসালামুয়ালায়কুম বলি সবাই এমন ভাবে তাকাবে যেন আমি মুসলিম হয়ে গেছি ! আরে বাবা আমি আরবি তে সম্ভাসন করেছি এটা শুধু একটা ভাষা। আরবি ভাষা যেন মুসলিম মুসলিমরা তৈরী করেছে। ঠিক এরকম সংস্কৃত ও হিন্দুদের একার নয়। ভাষা শুধু মাত্র ভাষা-ই হয় কোনো ধর্মের একার নয় । কে বোঝাবে এসব মুর্খ দের ।
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১২
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: আপনার চিন্তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। অশেষ কৃতজ্ঞতা । শুভকামনা সতত।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৩
অনর্থদর্শী বলেছেন: লেখার কায়দাটা মন ছুঁয়ে গেলো। বিষয় নির্বাচন থেকে শব্দ ব্যবহার সর্বত্রই মুন্সিয়ানা ফুটে উঠেছে।