নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

উইলিয়াম শেকসপিয়ার’র হ্যামলেট যেনো মহাকালের স্বর্ণালি তিলক!

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪০



ছবি:ওফেলিয়া


প্রবাদতুল্য বাক্য, কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। আর সে দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে উইলিয়াম শেকসপিয়র (William Shakespeare) নিঃসন্দেহে একজন কালোত্তীর্ণ মানুষ। তাঁর রচনাসমগ্রের মধ্যে বিশেষ করে ট্র্যাজেডি নাটকগুলোই তাঁকে আরো কয়েক শতাব্দী বাঁচিয়ে রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। শেকসপিয়র রচিত অন্যতম সেরা নাটক 'হ্যামলেট'। বিশ্বসাহিত্যের সেরা ট্র্যাজেডির মধ্যেও এটি একটি। দি ট্রাজেডি অফ হ্যামলেট শেকসপিয়র রচিত সর্ববৃহৎ ট্র্যাজেডি নাটক। শেকসপিয়রের জীবনে ‘হ্যামলেট’ ছিলো সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় ট্র্যাজেডি নাটক। মূলত 'হ্যামলেট' শেকসপীয়র রচিত দীর্ঘতম নাটক। এর রচনাকাল সঠিক জানা যায়নি। ধারণা করা হয় তা ১৫৯৯ থেকে ১৬০৩ এর মধ্যে। 'হ্যামলেট' নাটকটির বর্ণনাভঙ্গি সেই সময়কার রচনাগুলির বর্ণনাভঙ্গি থেকে নিঃসন্দেহে অনেক আলাদা ছিলো।



ছবি: হ্যামলেটের বই


সব ট্র্যাজেডি নাটকেই নায়ক কিংবা নায়িকা মুখ্য। করুণ রস পরিবেশনই ট্র্যাজেডির ধর্ম। এখানে রসই ট্র্যাজেডির প্রধান ধর্ম। ট্র্যাজেডির ধর্ম হলো কোনো জটিল ও গুরুতর ঘটনার আশ্রয়ে বিশেষ ধরনের রসসঞ্চার যা আমাদের অনুভূতিকে অভূতপূর্ব আবহে আলোড়িত করবে। তবে ট্র্যাজেডি নাটকের মূলে রয়েছে ব্যক্তি-আত্মার দ্বন্দ্ব-বিক্ষুদ্ধ তীব্র যন্ত্রণা আর হাহাকার।


স্বার্থক ট্র্যাজেডি জৈব ঐক্যবিশিষ্ট হবে অর্থাৎ এর একটি একক অটুট আকার থাকবে। সেইসঙ্গে, এর ভাষা হবে সাংস্কৃতিক গুণসম্পন্ন। দ্বন্দ্বপূর্ণ কাহিনির এতে বিশেষ ভূমিকা থাকলেও গঠনগত দিক থেকে এতে নাট্য বৈশিষ্ট্য থাকা অপরিহার্য। সর্বোপরি তা একদিকে দর্শকের মনে করুণা ও ভয়ের সঞ্চার করবে; আবার অপরদিকে এক ধরনের প্রশান্তিও জাগাবে।
কেননা, নাটকে শত-বিপর্যয় সত্ত্বেও নায়কের যে সুদৃঢ় মহিমান্বিত অবস্থান রূপায়িত হবে তা দর্শককে বিস্ময়ঘন আনন্দ প্রদান করবে; একইসঙ্গে যে বিপর্যয় দর্শক দেখবেন তা তাঁকে এই বলে স্বস্তি দেবে যে, অন্তত দর্শকের নিজের জীবনে তা ঘটেনি। এতে দর্শকের ভাবাবেগের মোক্ষম বা বিশেষ প্রবৃত্তির পরিশোধন ঘটবে।


শেকসপিয়র তাঁর এ ট্র্যাজেডি নাটকে দৃশ্যের দিকে তেমন একটা গুরুত্ব দেননি; গুরুত্ব দিয়েছেন কাহিনি ও সংলাপের ওপর। কাহিনির মধ্য দিয়ে সংলাপগুলোকে শৈল্পিক ও কালজয়ী করাই ছিলো তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য। ‘হ্যামলেট’ নাটকে তেমনি একটি সংলাপ:

“There are more things in heaven and earth,
Horatio, than are dreamt in your philosophy.”

উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও শেকসপিয়রের নাটকের মধ্যে নিজস্বতা ছিলো। নাটকগুলো ভরপুর ছিলো নতুনত্বের সুঘ্রাণে। তৎকালীন সময় যাঁরাই নাটক রচনা করতো তাদের জন্যই অ্যারিস্টটল ছিলো আদর্শ স্বরূপ। অর্থাৎ অ্যারিস্টটলের 'Poetics' অনুসরণ করেই নাট্যকাররা তাদেঁর নাটক রচনা করতো। সৌরজগতে যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহগুলো চারদিকে আবর্তিত হয় ঠিক তেমনি নাটক বা অন্যান্য সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রেও অ্যারিস্টটল ছিলেন সবার কাছেই সূর্যের মতোই ধ্রুব ও অনুসরণীয়।


শেকসপিয়রের সবচেয়ে বড় গুণ হলো তিনি অ্যারিস্টটলের সাহিত্য থেকে নির্যাস নিয়েছেন কিন্তু তাঁর নির্দেশিত পথে হাটেঁননি। শেকসপিয়র প্রথম তাঁর এই ‘হ্যামলেট’ নাটকে অন্য ধরণের বর্ণনাভঙ্গি ব্যবহার করেন। ধারণা করা হয় 'Amleth' লোককাহিনির ওপর ভিত্তি করে শেকসপীয়র 'হ্যামলেট' রচনা করেন।




ছবি: শেকসপিয়র ও হ্যামলেট বই

এই লোককাহিনির সাথে 'হ্যামলেট' এর ঘটনা প্রায় মিলে যায়। আবার, অনেকে মনে করেন 'হ্যামলেট'র একটি পুরনো সংস্করণ আছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে 'উর-হ্যামলেট'। 'উর-হ্যামলেট' এর রচয়িতা ‘টমাস কিড’ নামে এক লেখক। শেকসপিয়র পরে 'উর-হ্যামলেট' এর ছায়া অবলম্বনে 'হ্যামলেট' লিখেছেন। অর্থাৎ এই নাটকটিতে অপর এক বিখ্যাত এলিজাবেথীয় নাট্যকার টমাস কিড এর বিখ্যাত নাটক "দ্য স্প্যানিশ ট্র্যাজেডি"-কে কমবেশি অনুসরণ করেছে। বলা বাহুল্য, টমাস কিড সেই সময় এক নতুন ঘরানার নাটকের সূচনা করেছিলেন; যাকে ‘রিভেঞ্জ ট্র্যাজেডি’ বলা হয়। এই ধরনের নাটকের মূল বিষয়বস্তু হলো প্রতিশোধ; যা আমরা ‘হ্যামলেট’ এ দেখতে পাই।


এ নিয়ে অবশ্য কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। তবে বেশিরভাগ নাট্যবোদ্ধাগণই মনে করেন 'উর-হ্যামলেট' এর রচয়িতাও শেকসপিয়র। কারণ, শেকসপিয়র ‘হ্যামলেট’র অনেক সংস্করণ লিখেছেন। প্রতিটিতেই কিছু না কিছু পরিবর্তন আছে। তাই অনেকে 'উর-হ্যামলেট'-কে সেরকম কোনো সংস্করণই মনে করেন।


আবার অনেক নাট্যবোদ্ধাই মনে করেন তিনি জীবিতাবস্থায় এই ট্র্যাজেডিটি সাজিয়েছিলেন তৎকালীন কিংবদন্তি অভিনেতা ‘রিচার্ড বার্বেজ’-কে মূল চরিত্র হিসেবে কল্পনা করে। এই ট্র্যাজেডি রচিত হওয়ার পর গত চারশত বছর ধরে ‘হ্যামলেট’ চরিত্রটি বিভিন্ন কিংবদন্তি অভিনেতাগণ স্বরূপ দিয়ে আসছেন।


বিশ্বসাহিত্যের প্রতিটি সাহিত্যকর্ম চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, উইলিয়াম শেকসপিয়রের প্রতিটি সাহিত্যকর্মই সেরা। তবে শেকসপিয়ারের সেরা কাজ কোনটি সেটা নিয়ে অবশ্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাহিত্য সমালোচকরা হ্যামলেটকেই এগিয়ে রাখেন। সারা বিশ্বেই নিয়মিত মঞ্চায়ন হয় এই ট্র্যাজেডি নাটকটি।


নাটক মূলত দৃশ্যকাব্য ও শ্রব্যকাব্যের সমষ্টি। প্রতিটি নাটকের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো সংলাপ। কারণ, নাটকে পরিস্থিতির বর্ণনা থাকে না, সংলাপই সব। 'হ্যামলেট' নাটকের সংলাপগুলোয় একইসাথে গদ্য ও পদ্যের ছোঁয়া পাওয়া যায়। একই সাথে সংলাপগুলো পড়লে মাঝেমধ্যে চিরন্তন বাণীর মতো কিছু কালজয়ী সংলাপেরও সুঘাণ মেলে।


তাঁর ‘হ্যামলেট’ নাটকের সংলাপগুলো অত্যন্ত ধারালো ও যুক্তিসম্পন্ন। অবশ্য এতে আবেগের আতিশয্যও রয়েছে। তিনি তাঁর এই নাটকটিতে যেভাবে সময়ের সুচারু ব্যবহার করেছেন, তেমনি করেছেন দৈববিশ্বাসের পরিস্ফুটন। নিঃসন্দেহে তাঁর এই নাটকটি সুখপাঠ্য।


শেকসপিয়র একদিকে যেমন ছিলেন পরিবেশ সচেতন তেমনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন। রাষ্ট্র-নায়কদের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোই তাঁর নাটকে অত্যন্ত দরদ দিয়ে তিনি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। নাটকটিতে অতিপ্রাকৃত বিষয়ের ব্যবহারও খুব ভালোভাবে করা হয়েছে। এবং এটি নাটকটিতে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। নাটকটিতে বিশ্বাসঘাতকতা, বিষাদ, উন্মত্ততা, প্রতিশোধ উজ্জলভাবে চিত্রিত করেছেন শেকসপিয়র।


নাটক মূলত ক্রিয়াশীলতার সৃজনভূমি। এই চিন্তা উইলিয়াম শেকসপিয়র পূর্বাপর বজায় রেখেছেন। দীর্ঘ বর্ণনার ভার কখনোই নাটকটিকে আক্রান্ত করেনি। একটি দৃশ্য থেকে অপর দৃশ্যে নাট্যকার চলে গেছেন অনায়াসে দ্রুততার সঙ্গে।


নাটকটির মূল চরিত্র হ্যামলেটের মধ্যে একইসাথে বিষাদ, উন্মত্ততা, প্রতিশোধ-পরায়ণতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন: একটি দৃশ্যে দেখা যায় সে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ফুঁসছে। পরের দৃশ্যেই দেখা যায় প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্যেও তিনি তা নিচ্ছেন না। এটা শেকসপীয়রের ভুল না তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে করেছেন, তা নিয়ে সমালোচকদের মধ্যে দন্দ্ব আছে। প্রকৃত অর্থেই শেকসপিয়রের ‘হ্যামলেট’ একটি জটিল মনস্তাত্ত্বিক নাটক। তাঁর হ্যামলেট নাটকের মূল ঘটনাটি ছিলো এরকম:


প্রথম দৃশ্য

রাতের দ্বিতীয় প্রহর। এলসিনোর দুর্গপ্রাসাদের সামনে ফ্রানসিসকো নামের এক প্রহরী পাহারা দিচ্ছিলো। রাতের দ্বিতীয় প্রহর হওয়ার সাথে সাথেই সে বিদায় নিলো। তার স্থলে আরো দুজন প্রহরী যোগ দিলো। হোরেশিও এবং মারসোল্লাস। রাত যখন প্রায় একটা বাজে ঠিক তখনই তাদের একটু অদূরে ডেনমার্কের সাবেক রাজার মতো একটি প্রেতাত্মা ভেসে উঠলো। তারা দুজনেই যতটা না অবাক হলো তার চেয়ে বেশি ভয় পেলো। এ কী করে সম্ভব! এ যে প্রেতাত্মা! মনে হলো সে কিছু একটা বলবে! ক্রমশ এগিয়ে আসছে। প্রেতাত্মার মতো ছায়াটি যতই এগিয়ে আসছে প্রহরীদ্বয় ততই ভয় পাচ্ছে।


ছায়াটি যখনই কিছু বলতে যাবে ঠিক সে মুহূর্তেই একটি কুকুর ডেকে উঠলো। ঘেউ ঘেউ শোনামাত্রই ছায়াটি গভীর অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো। প্রহরীদ্বয় অবাক হয়ে ভাবলো বিষয়টি তার পুত্র হ্যামলেটকে অবগত করা দরকার।


পরের দিন। ডেনমার্কের বর্তমান রাজা ক্লদিয়াস দুর্গপ্রাসাদে বসেছেন। তার ঘনিষ্ট দুজন পরিষদ কর্নেলিয়াস ও ভোল্টম্যানসহ পুরো পরিষদই পরিপূর্ণ ছিলো মন্ত্রী ও আমত্যবর্গে। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় ভাইয়ের মৃত্যুতে সবাই শোকাভিভূত। স্বর্গ রাজার স্ত্রী গারট্রুড যিনি আগে রানি ছিলেন এবং কিছুকাল আমি যাকে বোন বলে জানতাম, তাকেই আমি বিয়ে করেছি…।




ছবি: শিল্পীর তুলিতে রাজা ক্লদিয়াস

একপর্যায়ে তিনি কর্নেলিয়াস ও ভোল্টম্যানকে একটি পত্র দিয়ে নরওয়ের রাজার কাছে পাঠান। এটি একটি অভিনন্দন পত্র।


ছবি: আধুনিক যুগের রাজা ক্লদিয়াস ও রানি গারট্রুড

কর্নেলিয়াস ও ভোল্টম্যান বিদায় নেওয়ার পর রাজ গৃহাধ্যক্ষ পলোনিয়াসের পুত্র লেয়ার্টেসকে উদ্দেশ্য করে রাজা বলেন, কী তোমার আবেদন বলো? লেয়ার্টেস বললো- সে ফ্রান্সে যেতে চায়। রাজা পলোনিয়াসের দিকে তাকিয়ে সম্মতি দিলেন।


পুত্র হ্যামলেটের ভীষণ মন খারাপ দেখে রাজা ও রানি উভয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে। এতেও হ্যামলেট স্বাভাবিক হয় না।



ছবি: হ্যামলেট


তার বাবার মুত্যুর একমাসও হয়নি এরই মধ্যে তার মা নতুন বিয়ে করে কী উৎসবেই না মজেছে! কষ্টে তার হৃদয়ের অন্দরমহল অপ্রকৃতিস্থ হয়ে উঠতে থাকে। কেননা, রাজ্যের সবাই সাবেক রাজার মৃত্যু স্বাভাবিক বলে মনে করলেও সে এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক মনে করেনি। তার ধারণা নিশ্চয়ই এটি চক্রান্ত, এটা মহাপরিকল্পিত হত্যা! এর নেপথ্যে বর্তমান রাজা ও রানি অর্থাৎ তার মায়ের দিকেই সন্দের তীর বেশি।



ছবি: রাজা ক্লদিয়াস রানির সাথে আলাপরত...


একটু পর সহপাঠী হোরেশি এবং মারসোল্লাস এসে উপস্থিত হয়। তাদের উটেনবার্গ থেকে এখানে উপস্থিত দেখে হ্যামলেট খুবই অবাক হলো। সে কারণ জানতে চাইলে তারা উত্তর দেয়- হ্যামলেটের বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখতে তারা এখানে এসেছে। কিন্তু হ্যামলেট তাদের ব্যাঙ্গ করে বলে- অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নাকি মা’র বিয়ে! শেষতক তারা মূলকথায় ফিরে আসে। গতরাতে তার বাবার প্রেতাত্মারূপে উপস্থিতির ঘটনা সব খুলে বলে। সব শুনে হ্যামলেট বললো আজ রাত এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে আমি অবশ্যই তোমাদের ওখানে যাবো। বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার। তবে আপাদত এ ঘটনাটি গোপন রাখার জন্য তাদের দুজনকেই খুব অনুরোধ করলো।


এদিকে লেয়ার্টেস বাড়ি ফিরে এসে তার বোন ওফেলিয়াকে দরাজকণ্ঠে বলে, যাতে সে আর রাজপুত্র হ্যামলেটের সাথে না মিশে। হ্যামলেটের প্রেমকে যেনো সে প্রত্যাখ্যান করে। ওফেলিয়ার বাবা পলিনিয়াসও খুব শক্ত ভাষায় কথা বললেন। দুদিক থেকেই ওফেলিয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।

মধ্যরাতে এলসিনোর দুর্গ থেকে তুর্যধ্বনি ও দুর্বার কামানের গর্জন শোনা যায়। এটি অবশ্য নতুন রাজা ক্লডিয়াসের ফুলশয্যা ও নৈশভোজের সঙ্কেত। হ্যামলেট ক্রোধে ফেটে পড়তে থাকে। এমন সময় হোরেশি বলে- প্রভু, ওই তিনি আসছেন।


দুর্গপ্রাসাদের দেয়ালের কাছে এসে প্রেতাত্মা থামে। এরপর হ্যামলেটকে উদ্দেশ্য করে বলে, যদি আমাকে কোনোদিন ভালোবেসে থাকিস, তবে হত্যার প্রতিশোধ নিস। শোন, সবাই জানে বাগানে ঘুমোবার সময় আমি সাপের কামড়ে মারা গেছি। তোর কাকা ব্যাভিচারী জানোয়ার, চুপিসারে এসে আমার ঘুমন্ত অবস্থায় কনের মধ্যে বিষ ঢেলে দেয়; যার ফলে আমার মৃত্যু হয়েছে। দেখিস ডেনমার্কের রাজকীয় শয্যা যেনো অভিশপ্ত বিলাস শয্যায় পরিণত না হয়। এরপরই প্রেতাত্মা অদৃশ্য হয়ে যায়।


এরপর হ্যামলেটের মধ্যে অস্থিরতা আরো বেড়ে যায়। সে তার বন্ধুদের অনুরোধ করে যাতে করে তারা প্রেত দর্শনের কথা অন্যকারো কাছে না বলে।


দ্বিতীয় দৃশ্য


পলোনিয়াস তার ছেলে লেয়ার্টাসের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য একটি পত্র দিয়ে রেনালভোকে কিছু উপদেশসহ পাঠালো। এরই মধ্যে ওফেলিয়া এসে পলোনিয়াসকে জানায় যে, হ্যামলেট তার ঘরে এসেছিলো। সে কিছু বুঝে উঠার আগেই তার দুহাত ধরে ঝাঁকুনি দেয়। অতঃপর কী সব প্রলাপ বকে বিদায় নেয়। পলোনিয়াস এ ঘটনাকে হ্যামলেটের গভীর প্রেম হিসেবে বিবেচনা করলেন।



ছবি: হ্যামলেট ও ওফেলিয়া


পরের দিন পলোনিয়াস রাজা ও রানিকে বিষয়টি সবিস্তারে বর্ণনা করে। সেই সাথে ওফেলিয়াকে লেখা একটি প্রেমপত্রও রাজার কাছে প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপন করলেন।



ছবি: হ্যামলেটের পত্র !


কিছুটা বিস্মিত হয়ে রাজা ও রানি হ্যামলেটের মনের প্রকৃত খবর জানার জন্য পলোনিয়াসের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করে। এদিকে রাজার বিশ্বস্ত পরিষদ রোজেনক্রাঞ্চ ও গিলডেনস্টার্নকেও পাঠালেন হ্যামলেটের অপ্রকৃতিস্থ আচরণের মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য।


এরই মধ্যে পলোনিয়াস হ্যামলেটকে নাট্যানুষ্ঠানের সংবাদ দিতে আসে। অভিনয় কর্মীরা উপস্থিত হলে তাদের সাথে পলোনিয়াস হ্যামালেটকে পরিচয় করিয়ে দেয়। হ্যামলেট তাদের সাথে কথা বলে বেশ উৎসাহবোধ করে। তার বাবার মৃত্যুর রহস্যময় কাহিনিটাই অভিনয়ের মূল কাহিনিরূপে নির্ধারণ করে। হ্যামলেট প্রেতাত্মার কথা প্রমাণ করার জন্য এরূপ কৌশলের আশ্রয় নেয়। এই নাটকটি দেখার জন্য বর্তমান রাজা ও রানিকে পলোনিয়াসের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হয়। নাটক দেখে রাজার মধ্যে যদি উদবেগ ও উৎকণ্ঠা বা অনুশোচনা হয় তবে বুঝতে হবে রাজা ও রানি উভয়েই দোষী এবং প্রেতাত্মাই সত্য!


নাটক শুরু হওয়ার আগে হ্যামলেট ওফেলিয়ার ঘরে প্রবেশ করে বলে- সুন্দরী, আমার সমস্ত পাপ তোমার প্রার্থনায় নিঃশেষ হোক। ওফেলিয়া স্বাগত জানায় কিন্ত পরবর্তীতে সে জানতে পারে হ্যামলেট এখন আর তাকে ভালোবাসে না। অবশ্য তাদের এ কথোপকথনগুলো পলোনিয়াস ও রাজার আরেকজন বিশ্বস্ত রাজকর্মচারী শুনছিলেন। ওফেলিয়ার কেনো যেনো আজ হ্যামলেটকে বেশি অপ্রকৃতিস্থ মনে হলো।



ছবি: হ্যামলেট ও ওফেলিয়া

ওফেলিয়ার বাবা পলোনিয়াসের কাছেও হ্যামলেটের কথাবার্তাকে খুবই অসংলগ্ন বলে মনে হলো। রাজার কাছে তিনি স্ববিস্তারে সব বর্ণনা করলেন। রাজা হ্যামলেটকে দূরে পাঠানোর প্রস্তাব করলে পলোনিয়াসও তাতে সায় দেয়। মূলত রাজা ক্লডিয়াসের এটি একধরনের চক্রান্ত। যাতে করে হ্যামলেট আর এ রাজ্যে জীবিত ফিরে আসতে না পারে।


নাটক শুরু হওয়ার আগে রাজা ও রানি স্ব স্ব আসনে অন্তরঙ্গ অবস্থায় বসে। অভিনয় শুরু হওয়ার বাঁশি বাজে। প্রেতাত্মা যেভাবে বর্ণনা করেছিলো ঠিক সেরকম কাহিনিই এ নাটকে অভিনীত হতে চললো। শেষপর্যায়ে নান্দীকার এসে বলে যায়, আমাদের বিয়োগান্তক নাটক আপনারা ধৈর্য ধরে শুনুন, এই আমাদের প্রার্থনা। আবার অভিনয় শুরু হলো। রানি রাজার ছোটো ভাইয়ের সাথে হাত মিলিয়ে রাজার নিদ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় কানে বিষ ঢুকিয়ে হত্যা করে এবং পরবর্তীতে সে ছোটো ভাইকেই সে বিয়ে করে। কাহিনি চলতেই থাকে। এরই মধ্যে হ্যামলেট তার মা বর্তমান রানিকে জিজ্ঞেস করে নাটকে সম্পর্কে। রানি বেশি বিস্মত হয়ে বলে- নায়িকার অভিনয়টা একটু বেশি বাড়াবাড়িই হয়েছে। রাজা কাহিনির বাস্তবতা নিয়ে কথা বললে হ্যামলেট বলে, এটি ভিয়েনার হত্যাকাণ্ডের কাহিনি।


এর একটু পরেই রাজা ক্লদিয়াস যেনো কেমন ঘেমে উঠতে লাগলো। এরপর পলোনিয়াসকে বললো নাটকটি বন্ধ করতে বলেন। এরপর নাটক বন্ধ করা হলে রাজার সাথে সবাই আসর ছেড়ে চলে গেলো।




ছবি: রাজা ক্লদিয়াস পরিষদের সাথে আলাপরত


হোরেশি হ্যামলেটের কাছে এসে বলে, প্রভু! মৃত রাজার প্রেতাত্মার বাণী মিথ্যে নয়। হ্যামলেট হঠাৎ হো হো করে হেসে ওঠে। এসময় গিলডেনস্ট্রার্ন বলে, রাজার অবস্থা ভালো নয়। তার একবার রাজার কাছে যাওয়া উচিত। হ্যামলেট বলে, সে গেলে রাজার অবস্থা আরো খারাপ হবে। শেষতক রানির কথা বললেন যাতে ঘুমোবার আগে সে রানির সাথে দেখা করে। পলোনিয়াস এসে একই অনুরোধ করে।


হ্যামলেট তার মায়ের কাছে গেলে আড়াল থেকে পলোনিয়াস তাদের সংলাপ শুনতে থাকে। তার মা তাকে বলে- তুই তোর বাবাকে অসন্তুষ্ট করেছিস হ্যামালেট।


তুমিও তাই করেছো মা! … তুমি তোমার স্বামীর ভাইকে বিয়ে করেছো। একবার নিজের অন্তরে দৃষ্টি দিয়ে দ্যাখো। দুইজনে উত্তপ্ত তর্ক চলতে থাকলে একসময় রানি ভয়ে চিৎকার করে- কে আছো? আমায় বাঁচাও। পলোনিয়াস আড়াল থেকে চিৎকার করে উঠলে হ্যামলেট তাকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করে।


এরপর ধীরে ধীরে হ্যামলেট তার মাকে সব ঘটনা খুলে বলে। এমন সময় প্রেতাত্মা একটু দেখা দিয়ে দুটি কথা শুনিয়ে মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে যায়। রানি তখন তার ভুল বুঝতে পারে।




তৃতীয় দৃশ্য




ছবি: চিন্তাযুক্ত হ্যামলেট

বৃদ্ধ পলোনিয়াসকে খুন করার জন্য হ্যামলেট অনুতপ্তবোধ করে। আর এ কারণে পলোনিয়াসের লাশ সে নিজেই ধর্মমন্দিরে অপসারণের ব্যবস্থা করে। এ ঘটনা রাজা ক্লদিয়াস জানামাত্রই ক্রোধে দুই পরিষদকে হ্যামলেটের কাছে পাঠিয়ে দিলো; যাতে করে তারা অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় তাকে ধরে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে রাজা তাকে লন্ডন পাঠানোর ব্যবস্থা করে। লন্ডন চলে যাওয়ার আগে নরওয়ে রাজ্যের ভ্রাতুষ্পুত্র ফোর্টিনহামের সেনানায়কের সাথে তার দেখা হয় কথাও হয়।


হ্যামলেটের লন্ডন চলে যাওয়ার খবর রানিকে দেওয়া হয়। এবং সেই সাথে তাকে এও শোনানো হয় যে সে একটুও বদলায়নি। এদিকে ওফেলিয়াও হ্যামলেটের বিরহে অস্থির হয়ে ওঠে। সে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে বিরহের গান গা। সকল কাজেই কেমন যেনো বিরক্তিবোধ করে। ওফেলিয়ার দুঃখ দেখে রাজা ও রানি তাকে সান্ত্বনা দেয়। এদিকে তার ভাই লেয়ার্টেস বেশ কিছু সৈন্যসামন্ত ও প্রজাবর্গ নিয়ে তার পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ক্লদিয়াসের দিকে ছুটে আসে। লেয়ার্টেস তপ্ত গলায় বলে- আমার পিতাকে ফিরিয়ে দাও, পিশাচ।


রাজা কৌশলে লেয়ার্টেসকে বুঝাতে সক্ষম হলো যে, এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে তার কোনো হাত নেই। হ্যামলেটই তার আপন স্বার্থ উদ্ধারের জন্য তাকে হত্যা করেছে। সে তোমারও শত্রু আমারও। তুমি যদি চাও তোমাদের দ্বৈত যুদ্ধের ব্যবস্থা করে দেব। আর সে সুযোগে তুমি অপ্রকৃতিস্থ হ্যামলেটকে হত্যা করে ফেলবে। লেয়ার্টেস প্রস্তাবে বেশ খুশিই হলো। সে পরিকল্পনা করতে লাগলো কীভাবে হ্যামলেটকে হত্যা করা যায়! সে সহসাই একটি কৌশল খুঁজে বের করলো। অস্ত্রের মাথায় বাজিকরের কাছ থেকে বিষ এনে মাখবে। এরপর সে অসি দিয়েই হ্যামলেটকে হত্যা করবে। অবশ্য রাজা ক্লদিয়াসও তাকে এরকমই পরামর্শ দিয়েছে।


এদিকে হঠাৎ করে লেয়ার্টেসের বোন ওফেলিয়া অসতর্ক অবস্থায় পানিতে নিমজ্জিত হয়ে মারা গেলে লেয়ার্টেস আরো ভেঙ্গে পড়ে। শিল্পীর তুলিতে ওফেলিয়ার মুত্যুর দৃশ্য:



ছবি: ওফেলিয়া ১


ছবি: ওফেলিয়া ২


ছবি: ওফেলিয়া ৩


ছবি: ওফেলিয়া ৪


সে ধরেই নেয় হ্যামলেটের কারণেই তার বোন অপ্রকৃতিস্থ হয়ে আত্মাহুতি দিয়েছে। হ্যামলেটের ওপর তার ক্রোধ আরো বেড়ে যেতে লাগলো।


রাজা ও রানি উভয়ে তাকে আবারও সান্ত্বনা দিলো। এবং সেই সাথে তাকে আরও শক্ত হয়ে এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য উজ্জিবিত করে তুলতে লাগলো। তারা ওফেলিয়াকে সমাধিস্থ করার জন্য শবাধারের কাছে এলো। ওফেলিয়ার জন্য শব খোড়া হলো। তাকে সমাধিস্থ করার সময় হ্যামলেট ও হোরেশি তাদের একটু দূরে গাছের আড়ালে এসে দাঁড়ালো। মাথা একটু উকিঁ দিয়ে হ্যামলেট বুঝতে পারলো এটি ওফেলিয়ার লাশ। তার অস্ফুট কণ্ঠ শোনা যায়- ওফ! ওফেলিয়া তুমি কী সুন্দর!


লেয়ার্টেস সমাধি গহ্বরে ঝাঁপিয়ে পড়ে হ্যামলেটকে উদ্দেশ্য করে বলে- এই তোমরা মাটি ফেলো যতক্ষণ না জীবিত আর মৃতের সমাধি পরিপূর্ণ না হয়। হ্যামলেট আর শয্য করতে পারেনি। সে এগিয়ে আসে সমাধি গহ্বরের কাছে। সেও সমাধি গহ্বরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। লেয়ার্টেস এ সুযোগে তার গলা চেপে ধরে। শুরু হয় দুজনে ধস্তাধস্তি।


রাজা অনুচরদের দ্বারা দুজনকেই ছাড়িয়ে দেন। দুজনেই সমাধির গহ্বরের বাইরে এসে দাঁড়ায়। হ্যামলেট রানিকে উদ্দেশ্য করে বলে, এর মতো একটা কেন চল্লিশ হাজার ভাইদের ভালোবাসার যে পরিমাণ, তা আমার প্রেমের চেয়ে অনেক কম। এর জন্য তুমি কী করতে পারো? ঘটনা প্রশমিত করে তাদের দুজনকেই সেখান থেকে সরানো হয়।


এরপর রাজা ক্লদিয়াস আরো কৌশলী হলেন। সে হ্যামলেটের কাছে এক ঘনিষ্ঠ পরিষদ এসরিককে কে পাঠিয়ে দিলেন। এসরিক হ্যামলেটকে গিয়ে বললো- রাজা লেয়ার্টেসের সঙ্গে এক পণ রেখেছেন। আপনার আর তার মধ্যে মাত্র বারোবার অসি সঞ্চালন হবে। তার আঘাতের সংখ্যা তিনকে ছাড়িয়ে যাবে না। আপনি যদি রাজি থাকেন তবে আমি রাজাকে গিয়ে জানাবো। হ্যামলেট রাজি হলো।


শুরু হলো দ্বৈত যুদ্ধ। রাজার সামনে একপাত্র সুরা রাখা আছে। হ্যামলেট জয়লাভ করলে রাজা তার পক্ষে সুরা পান করবেন। কামানও গর্জন করে উঠবে। হ্যামলেট ঘেমে উঠে অসি চালনায়। রানি সেদিকে তাকিয়ে বলে, বাছা আমার ঘেমে উঠছে, আয় আমি রুমাল দিয়ে মুখখানা মুছে দিই। রাজা উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠেন, আমাদের পুত্রের জয় অবশ্যম্ভাবী। এরপর রানিকে কৌশলীভঙ্গিতে সুরা পান করতে নিষেধ করলেন। রানি সে নিষেধ মানলেন না।


প্রচণ্ড যুদ্ধ। আঘাতের পর আঘাত চলছে। শিল্পীর তুলিতে হ্যামলেট ও লেয়ার্টেসের যুদ্ধ:



ছবি: হ্যামলেট ও লেয়ার্টেসের যুদ্ধ


হঠাৎ লেয়ার্টেস হ্যামলেটকে অস্ত্রাঘাতে আঘাত করে। রাজা দুজনকে ছাড়িয়ে নেওয়ার সময়ই হ্যামলেট লেয়ার্টেসকে পাল্টা আঘাত করে। লেয়ার্টেস বলে-আমি নিজেই নিজের ফাঁদে পড়েছি। আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই দায়ী।


এরপর হ্যামলেট ছুটে আসে রানির কাছে। ইতিমধ্যে রানি মুর্ছিতা হওয়ার পথে। রাজা কৌশলীকণ্ঠে বললেন, সে তোমার রক্তক্ষয় যুদ্ধ দেখে মুর্ছিত হয়েছে। রানি বললেন, না! না! ঐ সুরাপাত্রে বিষ মিশিয়ে আমাকে হত্যা করা হয়েছে। লেয়ার্টাস মৃত্যুর আগে বলে, বন্ধু হ্যামলেট, ওই রাজার চক্রান্তেই এইসব হয়েছে। আর ঘটনাক্রমে তোমার হাতে যে তরবারি রয়েছে তা বিষমাখা।


হ্যামলেট সে অসির দিকে তাকায়। তারপর সে অসি দ্বারা রাজাকে আঘাত করে এবং পেয়ালার অবশিষ্ট সুরা রাজা ক্লদিয়াসের মুখে জোর করে ঠেলে দেয়— খাও রাজা, আমার মাকে অনুসরণ করো। সবাই চিৎকার করে ওঠে- রাজদ্রোহ! রাজদ্রোহ!


হ্যামলেট এলিয়ে পড়ে বন্ধু হোরাশিওর বাহুতে। অশ্রুসিক্ত চোখে হোরাশিও বন্ধুকে বিদায় জানায়: Good night, sweet prince, and the flights of angels sing thee to the silence. লেয়ার্টেস শান্তির নিশ্বাস ফেললো। এরপর হ্যামলেট পরিষদকে উদ্দেশ্য করে বলে- আমিও চলে যাচ্ছি… ।


এমন সময় একটু দূরে তোপধ্বনি বেজে ওঠে। যুবরাজ ফরটিনব্রাস জয়ী হয়ে পোলান্ড থেকে ফিরে এসেছে। তুপধ্বনিকে হ্যামলেটের কাছে কুকুরের চিৎকারের মতো মনে হলো। হ্যামলেট হোরেশিকে উদ্দেশ্য করে বলে- তুমি তাকে সব কাহিনি শুনিয়ো। হোরেশি মাথা নত করে। অস্ফুট স্বরে বলে, হায়! একটি মহান হৃদয় চূর্ণ হয়ে গেলো।


বিজয়ী প্রিন্স ফরটিনব্রাস হ্যামলেটের কাহিনি শুনে তাকে রাজকীয় মর্যাদায় সমাহিত করার নির্দেশ দেয়। এরপর প্রিন্স অব ডেনমার্ক হ্যামলেটের জন্য সম্মানসূচক গোলাবর্ষণের শব্দ ভেসে আসে।


শেকসপিয়ার ‘রোমিও ও জুলিয়েট’-এ জুলিয়েটের উপস্থিতি প্রবল, কিন্তু ‘হ্যামলেট’-এ ওফেলিয়া উপেক্ষার শিকার। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লিখেছেন: “বাক্যবাগীশ পিতা তাকে ইচ্ছামতো চালাতে চায়, দায়িত্বজ্ঞানহীন ভ্রাতা অকারণে উপদেশ দেয়, বিব্রত-বিচলিত প্রেমিক হ্যামলেট তার সঙ্গে অতিশয় নিষ্ঠুর আচরণ করে।”


মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে তাকে মৃত্যুর পথই বেছে নিতে হয়। রানী গারট্রুড জানিয়েছেন, ওফেলিয়া নদীর ধারে বৃক্ষে আরোহণ করেছিল, ডাল ভেঙে নদীতে পড়ে যায়, একসময় ভেসে ওঠে এ কিশোরীর মরদেহ। আসলে মৃত্যুটি ছিল আত্মহনন।


তিনি আরো লিখেছেন: “না, কেউ বাঁচায়নি ওফেলিয়াকে; পিতা না, ভ্রাতা না, না প্রেমিক। বরং বলা যাবে, সবাই মিলে তাকে ঠেলে দিলো মৃত্যুর দিকে। অথচ বাঁচার অধিকার তারই ছিল সবচেয়ে বেশি।”


শেকসপিয়ারও দুর্বিনীত দার্শনিক প্রিন্স হ্যামলেটের বিপরীতে কিশোরী ওফেলিয়াকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেননি। আমাদের যত আক্ষেপই থাকুক, শেকসপিয়ার তাঁর চরিত্রটিকে হয়তো এভাবেই নির্মাণ করতে চেয়েছেন, জীবনের সীমানা পেরিয়ে যে ভেসে থাকবে লতা-গুল্ম আচ্ছাদিত নদীতে।


মূলত দৃশ্যই অবিস্মরণীয় হয়ে উঠেছে জন এভারেট সিলাইসের রঙ ও তুলিতে। ১৮৫১ সালে তিনি ভাসমান নিষ্প্রাণ ওফেলিয়াকে এঁকেছেন। প্রতিদিন ১১ ঘণ্টা সপ্তাহে ছয়দিন। পুরো পাঁচ মাস সময় নিয়েছেন। ১৯ বছর বয়সী এলিজাবেথ সিডালকে মডেল করে এ ছবি আঁকা। ১৮৫১-এর ১০ ডিসেম্বর শিল্পী ৩০০ গিনির বিনিময়ে ছবিটি বিক্রি করেন হেনরি ফেরার নামে একজন সংগ্রাহকের কাছে।


১৮৬২ সালে হেনরি ছবিটি বিক্রি করেন ৭৪৮ গিনিতে। এ ছবির দাম এখন কমপক্ষে ৫০ মিলিয়ন ডলার। ১৮৯৪ সালে জন উইলিয়াম ওয়াটারহাউজ বড় ক্যানভাসে প্রির্জাফেলাইট ধাঁচে ওফেলিয়াকে আঁকেন। আর্থার হিউজেস ১৮৫৩তে বিষণ্ন ওফেলিয়াকে আঁকা শেষ করেন; তার বয়স মাত্র একুশ। ফরাসি চিত্রশিল্পী আলেকজান্দ্রে ক্যাবানেলের ওফেলিয়া মধ্যযুগের এক নিস্পৃহ রাজকন্যা।


আর্থার হিউজেস ১৮৫২ সালে এঁকেছেন ওফেলিয়াকে। শেকসপিয়ারের নারীদের মধ্যে চিত্রশিল্পীদের কাছে জুলিয়েটের চেয়ে কম মনোযোগ পাননি ওফেলিয়া। যাদের হাতে এ নিঃসঙ্গ কিশোরী ছবি হয়ে উঠে এসেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন— জন বেল, জন হ্যামিল্টন মর্টিমার, বেঞ্জামিন ওয়েস্ট, রবার্ট ওয়েস্টল, ফ্রান্সিস ড্যানবে, দান্তে, গ্যাব্রিয়েল রসেটি, আর্নেস্ট হার্বার্ট, জর্জ ফালকেনবার্গ, মার্কাস স্টোন, মরিস গ্রিফেনহাগেন, হেনরি নেলসন ও’নীল, ইউজিন ডেলাক্রয়, জ্যঁ ব্যাপতিস্ত বার্টান্ড এবং আরো অনেকে।


একটু সূক্ষ্মভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, হ্যামলেট নাটকটি মূলত রাজকীয় অনাচারের পরিণতি ও ন্যায়-অন্যায়ের দ্বন্দ্বের ঘটনাচক্র। কিন্তু অবশ্যই লক্ষণীয় যে, উইলিয়ম শেকসপিয়র-এর ন্যায়-অন্যায় তত্ত্ব অত্যন্ত পরিণত ও অভূতপূর্ব।


স্টিফেন গ্রিনব্লাট বলছেন, শেকসপিয়র তার ছেলেবেলার শোনা শব্দের অন্তর্গত অর্থ যেভাবে অনুধাবন করতে পেরেছেন এমনটা আর কেউ পারেনি। তাঁর আপন আনন্দলোকে তিনি সম্পূর্ণ অবগাহন করেছেন। নিজের মতো করেই তিনি সৃষ্টি করেছেন তার অমর সৃষ্টসম্ভার।


তাঁর অমর সৃষ্টি দেখে অভিভূত হয়ে স্টিফেন গ্রিনব্লাট যে উক্তি করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি বলেন, “Will found himself alone in London, without money or friends. He picked up enough to live on by standing at the playhouse door and holding the horses of those that had no servants” – অর্থাৎ তাঁর নিয়তি তাঁকে নিয়ে এসেছিল সেই “playhouse”-এর প্রবেশদ্বারে যেখানে ছিল তাঁর অনিবার্য ভবিষৎ।


ড. স্যামুয়েল জনসন তাঁর নাট্যপ্রতিভা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “খুব অল্প সময়েই এই নাট্যশালায় উইলিয়ম পরিচিতি হয়ে উঠেন। ঘোড়া রাখার জন্য সবারই প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। উইলিয়ম শেকসপিয়রকে পেলে আর কারো কাছে কেউ যেতেন না। চূড়ান্তভাবে জনসনের উক্তি, “This was the first dawn of better fortune.” অর্থাৎ ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এটি ছিলো প্রথম সোপান।




শেকসপিয়রের জীবদ্দশায় তাঁর সবগুলো নাটক প্রকাশ ও মঞ্চস্থ হয়নি। ১৬২৩ সালে ফার্স্ট ফোলিওতে প্রকাশিত শেকসপিয়রের ৩৬টি নাটককে উক্ত ফোলিওতে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এগুলি হল: মিলনান্তক (কমেডি), ঐতিহাসিক (হিস্ট্রি) ও বিয়োগান্তক (ট্র্যাজেডি)। তাঁর রচনাসম্ভারগুলোর শ্রেণিকরণ নিচে দেখানো হলো:
মিলনান্তক নাটক বা কমেডি
• অল’স ওয়েল দ্যাট এন্ডস ওয়েল
• অ্যাজ ইউ লাইক ইট
• দ্য কমেডি অফ এররস
• লভ’স লেবার’স লস্ট
• মেজার ফর মেজার
• দ্য মার্চেন্ট অফ ভেনিস
• দ্য মেরি ওয়াইভস অফ উইন্ডসর
• আ মিডসামার নাইটস ড্রিম
• মাচ অ্যাডো অ্যাবাউট নাথিং
• পেরিক্লিস, প্রিন্স অফ টায়ার
• দ্য টেমিং অফ দ্য শ্রিউ
• দ্য টেমপেস্ট
• টুয়েলফথ নাইট
• দ্য টু জেন্টলমেন অফ ভেরোনা
• দ্য টু নোবল কিনসমেন
• দ্য উইন্টার’স টেল


ঐতিহাসিক নাটক বা হিস্ট্রি
• কিং জন
• রিচার্ড দ্য সেকেন্ড
• হেনরি দ্য ফোর্থ, প্রথম ভাগ
• হেনরি দ্য ফোর্থ, দ্বিতীয় ভাগ
• হেনরি দ্য ফিফথ
• হেনরি দ্য সিক্সথ, প্রথম ভাগ
• হেনরি দ্য সিক্সথ, দ্বিতীয় ভাগ
• হেনরি দ্য সিক্সথ, তৃতীয় ভাগ
• রিচার্ড দ্য থার্ড
• হেনরি দি এইটথ


শেকসপিয়রিয় বিয়োগান্তক নাটক বা ট্র্যাজেডি
• রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট
• কোরিওলেনাস
• টাইটাস অ্যান্ড্রোনিকাস
• টিমন অথ অ্যাথেন্স
• জুলিয়াস সিজার
• ম্যাকবেথ
• হ্যামলেট
• ট্রলিয়াস অ্যান্ড ক্রেসিডা
• কিং লিয়ার
• ওথেলো
• অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা
• সিম্বেলাইন


যে দুটি নাটক ফোলিওর অন্তর্ভুক্ত হয়নি, সেগুলি হলো: দ্য টু নোবল কিনসমেন ও পেরিক্লিস, প্রিন্স অফ টায়ার। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই দুই নাটকের অধিকাংশটাই শেকসপিয়রের রচনা। সেই হিসেবে এই দুটি নাটককেও শেকসপিয়রের নাট্যসাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়েছে। শেকসপিয়রের কোনো কবিতাই ফোলিওর অন্তর্ভুক্ত হয়নি।


ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এডওয়ার্ড ডওডেন শেকসপিয়রের শেষ জীবনের চারটি কমেডিকে ‘রোম্যান্স’ নামে চিহ্নিত করেন। যদিও কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এই চারটি নাটককে ‘ট্রাজিকমেডি’ নামে চিহ্নিত করার পক্ষপাতী। ১৮৯৬ সালে ফ্রেডরিক এস. বোয়াস অল’স ওয়েল দ্যাট এন্ডস ওয়েল, মেজার ফর মেজার, ট্রলিয়াস অ্যান্ড ক্রেসিডা ও হ্যামলেট নাটক চারটির জন্য ‘প্রবলেম প্লে’ নামে একটি শব্দ ব্যবহার করেন।


এডওয়ার্ড ডওডেন আরো বলেন, "বিষয়বস্তুগত সমতা ও সমধর্মিতা-সম্পন্ন নাটকগুলিকে নিছক কমেডি বা ট্র্যাজেডি বলা যায় না। তাই আমাদের আজকের থিয়েটার থেকে যথোপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করতে হবে এবং এই নাটকগুলিকে শেকসপিয়রের ‘প্রবলেম প্লে’ শ্রেণির অন্তর্গত করতে হবে।"


সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এডওয়ার্ড ডওডেনের এই শব্দবন্ধটি সেইসময় যথেষ্ট বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলো। কখনও কখনও অন্যান্য নাটকের ক্ষেত্রেই এই শব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হত। তবে স্পষ্ট করে বলা যায়, এর ব্যবহার এখনো বন্ধ হয়নি। যদিও ‘হ্যামলেট’ নাটকটি নির্দিষ্টভাবেই ট্র্যাজেডি শ্রেণিভুক্ত হয়ে আছে।




লন্ডনে বসবাসকালে শেকসপিয়রের সঙ্গে একাধিক নারীর প্রণয় সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিলো। আইনের ছাত্র জনৈক জন ম্যানিংহ্যাম তাঁর ডায়েরিতে লেখেন যে ‘রিচার্ড দ্য থার্ড’ মঞ্চায়নের সময় শেকসপিয়রের সঙ্গে এক নারীর স্বল্পকালীন প্রণয়সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিলো। “Upon a time when Burbage played Richard the Third there was a citizen grew so far in liking with him, that before she went from the play she appointed him to come that night unto her by the name of Richard the Third. Shakespeare, overhearing their conclusion, went before, was entertained and at his game ere Burbage came. Then, message being brought that Richard the Third was at the door, Shakespeare caused return to be made that William the Conqueror was before Richard the Third.”

শেকসপিয়রের জীবনঘনিষ্ঠ এই প্রেমাতুর কাহিনিগুলোর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ছায়া মেলে তাঁর নাটকগুলোতে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে তাঁর ‘হ্যামলেট’ নাটকের হ্যামলেট ও ওফেলিয়ার প্রেমের উঠন্তি সম্পর্ককে নিঃসন্দেহে এগিয়ে রাখা যায়। হ্যামলেট নাটকের কিছু কালজয়ী উক্তি এখানে তুলে ধরা হলো:


1. “Doubt thou the stars are fire;
Doubt that the sun doth move;
Doubt truth to be a liar;
But never doubt I love.”

2. “This above all: to thine own self be true,
And it must follow, as the night the day,
Thou canst not then be false to any man.”

3. “There is nothing either good or bad, but thinking makes it so.”

4. “To die, to sleep -
To sleep, perchance to dream - ay, there's the rub,
For in this sleep of death what dreams may come...”

5. “There are more things in Heaven and Earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy.”

6. “Though this be madness, yet there is method in't.”

7. “Brevity is the soul of wit.”

8. “Listen to many, speak to a few.”

9. “Conscience doth make cowards of us all.”

10. “One may smile, and smile, and be a villain.”

11. “My words fly up, my thoughts remain below: Words without thoughts never to heaven go.”

12. “This above all: to thine own self be true.”

13. “Now cracks a noble heart. Good-night, sweet prince;
And flights of angels sing thee to thy rest. ”

14. “Sweets to the sweet.”

15. “Lord Polonius: What do you read, my lord?
Hamlet: Words, words, words.
Lord Polonius: What is the matter, my lord?
Hamlet: Between who?
Lord Polonius: I mean the matter that you read, my lord.”

16. “When sorrows come, they come not single spies. But in battalions!”

17. “The lady doth protest too much, methinks.”

18. “God hath given you one face, and you make yourself another.”

19. “Madness in great ones must not unwatched go.”

20. “I loved Ophelia. Forty thousand brothers could not, with all their quantity of love, make up my sum.”

21. “Words, words, words.”

22. “I must be cruel only to be kind;
Thus bad begins, and worse remains behind.”

23. “If we are true to ourselves, we can not be false to anyone.”

24. “So full of artless jealousy is guilt,
25. It spills itself in fearing to be spilt.”

26. “Something is rotten in the state of Denmark.”

27. “I am but mad north-north-west. When the wind is southerly, I know a hawk from a handsaw.”

28. “To be honest, as this world goes, is to be one man picked out of ten thousand.”

উৎস: Hamlet Quotes (showing 1-30 of 365)



‘হ্যামলেট’ এমন এক নাট্যাখ্যান যার প্রতিটি দৃশ্য, প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি সংলাপে রয়েছে নানা মাত্রিকতা। তাঁর প্রথম দিকের রচনাগুলি ছিল মূলত মিলনান্তক ও ঐতিহাসিক নাটক। ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে তাঁর দক্ষতায় এই দুটি ধারা শিল্পসৌকর্য ও আভিজাত্যের মধ্যগগণে উঠেছিল। এরপর ১৬০৮ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানত কয়েকটি বিয়াগান্ত নাটক রচনা করেন। এই ধারায় রচিত তাঁর ‘হ্যামলেট’।


১৬২৩ সালে তাঁর দুই প্রাক্তন নাট্যসহকর্মী দুটি নাটক বাদে শেকসপিয়রের সমগ্র নাট্যসাহিত্যের ফার্স্ট ফোলিও প্রকাশ করেন। তাঁর সমকালে শেকসপিয়র ছিলেন একজন সম্মানিত কবি ও নাট্যকার। কিন্তু মৃত্যুর পর তাঁর খ্যাতি হ্রাস পেয়েছিল। অবশেষে ঊনবিংশ শতাব্দীতে তিনি খ্যাতির শীর্ষে ওঠেন। তাঁকে ইংরেজি ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক এবং বিশ্বের একজন অগ্রণী নাট্যকার মনে করা হয়। তাঁকে ইংল্যান্ডের ‘জাতীয় কবি’ এবং ‘বার্ড অফ অ্যাভন’ (অ্যাভনের চারণকবি) নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।


রোম্যান্টিকেরা তাঁর রচনার গুণগ্রাহী ছিলেন। ভিক্টোরিয়ানরা রীতিমতো তাঁকে পূজা করতেন; জর্জ বার্নার্ড শ’র ভাষায় যা ছিল ‘চারণপূজা’ (bardolatry) । বিংশ শতাব্দীতেও গবেষণা ও নাট্য উপস্থাপনার বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর রচনাকে পুনরাবিষ্কার করার চেষ্টা করা হয়। আজও তাঁর নাটক অত্যন্ত জনপ্রিয়ও বহুচর্চিত।



ছবি: শেকসপিয়রের স্বাক্ষর

সাহিত্য-সমালোচকদের দৃষ্টিতে শেকসপিয়রের নাটকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাটক হলো ‘হ্যামলেট’। বিশ্ব নাট্যসাহিত্যের দিক থেকে শেকসপিয়র হলো ‘আলোর বাতিঘর’ তুল্য। নাটকের দৃশ্য, সজ্জা, সময় সন্নিবেশ, ঘটনার ঘনঘটা, কালজয়ী সংলাপ, কাব্যধর্মী, গদ্যধর্মী শিল্প, দেশীয় সংস্কৃতি, রাজনীতি, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, প্রগতিশীলতার ছোঁয়া প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, ট্র্যাজেডি হিসেবে শেকসপিয়রের হ্যামলেট নিঃসন্দেহে বিশ্ব নাট্যাঙ্গনের জন্য মাইলফলকস্বরূপ।




-------------------------
০৫.১০.২০১৬-১৩.১০.২০১৬
মুনশি আলিম
সোনার পাড়া, শিবগঞ্জ, সিলেট
ইমেইল: [email protected].








মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:২০

বিজন রয় বলেছেন: শেকসপিয়র দ্যা গ্রেটর গ্রেটেস্ট অন আর্থ।

ভাল পোস্ট।
+++++++++

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:২৭

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: ধন্যবাদ। হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।

২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২১

উমায়ের আহমেদ বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:২১

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: অশেষ কৃতজ্ঞতা। অনেক অনেক অনেক ভালোবাসা জানবেন।

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২১

উমায়ের আহমেদ বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪৮

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: ভালোবাসা প্রিয়।

৪| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৩

উমায়ের আহমেদ বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো

৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৭

ক্লে ডল বলেছেন: লম্বা পোষ্টটা পড়লাম অবশেষে!

হিন্দি মুভি হায়দার ব্যবসায়িক দিক দিয়ে ফ্লপ হলেও এই হ্যমলেটের কাহিনী তুলে এনেছে অনেকটা।

ধন্যবাদ রাজাদের রাজার এই অমর সৃষ্টি নিয়ে আলোচনার জন্য!

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৭

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: অনেক সময় নিয়ে পুরো প্রবন্ধটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অনেক অনেক ভালোবাসা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.