নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক.
আমি ও মামা রুবজ এ রহমান তখন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ি। দু’জনে একই সঙ্গে কলেজে যাতায়াত করি। সেদিন ছিল রবিবার। মামা কলেজড্রেস পরেননি। আর এ কারণে তিনি সবার পিছনের সিটে গিয়ে বসলেন। সামনের বেঞ্চি বরাবরের মতো আমাদের জন্য খালি থাকতো। আমি অনেক বলেকয়েও মামাকে সামনের বেঞ্চিতে বসাতে পারিনি। বাংলার ক্লাস হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি ছুটিতে থাকায় ক্লাসে ঢুকলেন গুরুভজন চক্রবর্তী স্যার। তিনি আমাদের ইংরেজি পড়ান। লম্বায় আনুমানিক ছয়ফুট হবে। উচ্চতা বেশি হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই তাকে লম্বু স্যার বলে আড়ালে সম্বোধন করতেন। তিনি ছিলেন খুবই কড়া মেজাজের। একদিন ড্রেস না এনে কেউ তার চোখ ফাঁকি দিয়েছে এমন রেকর্ড খুব কমই আছে!
তিনি পঠিত বিষয়ের কখনোই গভীরে যেতেন না। কৌশলে গল্প জুড়ে সময় কাটাতেন। তবে গল্পের শেষদিক এমনভাবে উপস্থাপন করতেন যাতে শিক্ষার্থীরা তার কাছে প্রাইভেট পড়ে। আমরাও বুঝতে পারতাম শিক্ষকের ছদ্মবেশে তার বাণিজ্যিক মনের ক্যালকুলাস! যারা প্রাইভেট পড়তো না তাদের নানাভাবে হয়রানি বা অপমান করার চেষ্টা করতেন। প্রাইভেট বলতে একগাদা শিক্ষার্থীর সমাবেশ, বিভিন্ন প্রকারের গল্প, হই-হুল্লোর এবং সবশেষে শিট বিতরণ—এই আরকি! তাঁর এইরূপ আচরণের কারণে অধিকাংশ নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই আড়ালে-আবডালে তার নাম বিকৃত করে ডাকতো—গরু স্যার! বিশেষ করে রুবজ মামাই প্রথম এই বিকৃত নামটির প্রবক্তা। শিক্ষক মহোদয়ের এইরূপ আচরণের কথা আমরা অধ্যক্ষ মহোদয়ের নিকট উপস্থাপন করেছি। মনে মনে ভেবেছি এবার নিশ্চয় স্যারের আমূল পরিবর্তন হবে। ওমা! অধ্যক্ষ মহোদয় তো বিচার করলেনই না—উপরন্তু কেন তার কাছে প্রাইভেট পড়ি না এ নিয়ে রীতিমতো ওয়াজনসিহত করলেন! আমরা একসমুদ্র হতাশা নিয়ে ফিরে আসি। এরপর থেকে আর কেউই গুরুভজন স্যারের বিরুদ্ধে কোনোপ্রকার অভিযোগ নিয়ে অধ্যক্ষ মহোদয়ের সরণাপন্ন হইনি। আশেপাশে আমরা খবর নিয়ে জানলাম অন্যান্য কলেজগুলোতেও গুরুভজনের মতো শিক্ষকদের অভাব নেই! শেষটায় চিন্তাভাবনা করলাম-সকলের যে গতি আমারও সেই গতি!
গুরুভজন স্যার ক্লাসে ঢুকেই হাজিরা ডাকলেন। এরপর তার চোখ গেল দ্বিতীয় বেঞ্চিতে বসা Shohid Ashraf ওপর। সে আজ কলেজড্রেস আনেনি। কলেজড্রেসহীন দেখে স্যার খুবই খেপে গেলেন। ধমক দিয়ে বললেন—এই ছেলে দাঁড়াও। সে দাঁড়াল। তিনি আবারও ভরাট গলায় বললেন—বেঞ্চির ওপর দাঁড়াও। ক্লাসরুম ছেলেমেয়েতে একেবারেই পরিপূর্ণ। সে লজ্জায় দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়েই রইল। স্যার তখন চোখ রক্তবর্ণ করে এমন জোরে ধমক দিলেন যে—সে প্রচণ্ড ভয়ে বেঞ্চিতে উঠতে বাধ্য হলো।
আমি একেবারে পিছনের বেঞ্চিতে বসা মামার দিকে তাকাই। দেখলাম মামা নেই! অবস্থা খারাপ দেখে নিশ্চয় পলায়ন করেছে! স্যার তখন পিছনের দিকে গেলেন। ক্রমানুসারে ড্রেস চেক করতে লাগলেন। প্যান্ট-শার্ট সবগুলোই পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করতে লাগলেন। আমার ভেতরে তখন কাঁপুনি শুরু হয়ে গেল। কেননা, সেদিন কি মনে করে যেনো আমিও কলেজড্রেসের প্যান্ট পরিনি। এখন উপায়? এমন সময় দূর থেকে একটি সিগন্যাল লাইট জানালা ভেদ করে আমার চোখে পড়লো। বুঝতে বাকী রইল না তিনি কে! আমি বইগুলো ব্যাগে ভরে চুপিসারে ভাগলপুরে রওয়ানা দিলাম! আর মনে মনে হাজারবার গালি দিতে থাকলাম—গরু স্যার বলে!
দুই.
ক্যাম্পাসের বাইরে যেতেই দেখি মামা। তিনি আমার জন্যই অপেক্ষা করছেন। গম্ভীরগলায় বললেন—ভাগিনা, চল। আমি বললাম—কোথায়? মামা বললেন—ওই সামনে। আঙুল নির্দেশ করে কি যেনো দেখালেন। আমি না বুঝেই বললাম—ঠিক আছে। কিছুদূর গিয়েই চোখে পড়ল রাস্তার পাশে গাছপাকা আম। গুরুভজন স্যারের গাছ। মামা বললেন—দাঁড়া, আমি আসছি। বলেই তিনি প্রথমে চারদিক ভালো করে তাকালেন। কোথাও কেউ নেই।
মামাও অনেক লম্বা। উচ্চতায় ছ’ফুট না হলেও ধারেকাছে হবে। তিনি নিচ থেকেই দশ-পনেরোটি পাকা আম গাছ থেকে ছিঁড়ে ব্যাগে ভরলেন। আমি রাস্তা থকেই বলছি—মামা! একি করছেন? ধরা খেলে ...! আমার বলা শেষ না হতেই দেখি দ্বিতীয় তলার জানালা দিয়ে কে যেনো জোরে চোর চোর বলে চিৎকার দিলো। অবস্থা খারাপ দেখে মামাকে রেখেই আমি দিলাম দৌড়। পেছনের দিকে আর তাকানোর সাহস হয়নি। পাছে চিনে ফেলে বা ধরা পড়ে যাই এই ভয়ে। এইরকম গতি নিয়ে জীবনে আর দ্বিতীয়বার দৌড় দিয়েছি বলে মনে পড়ে না। বিশ্বরোডে আসতেই দেখি সিএনজি পার্ক করা। আমি উঠতে যাবো ঠিক এমন সময় কে যেনো আমার শার্টের পিছনে টেনে ধরলো। আমি প্রচণ্ড ভয়ে চিৎকার করে বললাম—আমি না; আমার মামা!
পিছনের ভদ্রলোক হাঁপানিকণ্ঠে বললেন—চুপ থাক, হারামজাদা! আমি তোর মামা! মামা বলতেই আমি পিছনের দিকে তাকালাম। দেখি—সত্যি সত্যিই তিনি। ব্যাগভর্তি আম নিয়ে এসেছেন। আমি স্বস্থির নিশ্বাস ফেললাম। মামার দিকে তাকিয়ে আমার বিস্ময়ের যেনো শেষ নেই। এই মানুষটায় কী করে যে এতো সাহস পায়—আমি ঠিক বুঝি না। মুচকি হেসে বললাম-জয়গুরু!
মামা বললেন—তোর গুরুর গুষ্টি কিলাই। আগে সিএনজিতে উঠ। পরে তোর খবর হবে! কিছুটা ভয় নিয়েই সিএনজিতে উঠলাম। পিছনের সিটে। সিএনজি চলতে লাগলো। আমার মুখ থেকে আর কোনো কথাই বের হচ্ছে না। কেবল হাঁপানিরোগীর মতো হাঁপাতে লাগলাম। মামা কি মনে করে যেনো আমাকে থাপ্পর মারার জন্য হাত তুললেন। আমি তার হাতের দিকে তাকাতেই দেখি—তিনি জিহ্বায় কামড় দিয়ে হাত নামিয়ে নিলেন। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। কেবল মামার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। মামা কয়েকবার ঢোক গিললেন। তারপর চোখ দিয়ে ইশারা করে দেখালেন—আমার বাম দিকের প্যাসেঞ্জারকে। আমি কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে প্যাসেঞ্জারের দিকে তাকাই। মুহূর্তেই আমার ভেতরে কম্পন শুরু হয়ে গেলো। আমি গুরুভজন স্যারের দিকে তাকিয়ে বললাম-স্যার, আমি না; আমার মামা!
বি.দ্র. : ইহা একটি কাল্পনিক গল্প। এর সহিত কোনো ব্যক্তিনাম বা চরিত্রের কোনরূপ সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য খুঁজিয়া পাইলে তাহা নিঃসন্দেহে কাকতালীয় ঘটনা। :-) এই নিমিত্তে কর্তৃপক্ষকে দোষারূপ মোটেও সমীচীন নহে!
মুনশি আলিম
সিলেট
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:২৬
সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: ???
২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:২৮
কালীদাস বলেছেন: ভালই লাগে আপনার মামাসহ রম্য রচনাগুলো।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২৫
রিএ্যাক্ট বিডি বলেছেন: সাঢারোন