![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজকের দিনই শেষ দিন মনে করতে হবে..কারন হঠাৎ করেই একদিন মরতে হবে.. কেয়ামত পর্যন্ত কবরে থাকতে হবে.. হাশরের মাঠে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে.. জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত কর্মকান্ডের হিসাব দিতে হবে.. পুলসিরাত পার হতে হবে.. তারপর....... জান্নাত অথবা জাহান্নামই হবে আসল ঠিকানা....
রমজান মাসের ত্রিশ রোজা নারী-পুরুষ উভয়ের ওপর ফরজ। রোজা রাখার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে রোজার দায়িত্ব-কর্তব্য ও আমলের দিক থেকে নারীদের বিষয়টি একটু আলাদা।
ঘরোয়া পরিবেশে রমজানের পূর্ণাঙ্গ দাবি পূরণ, আল্লাহর কৃত ওয়াদার সর্বোচ্চ প্রাপ্তি ও রমজানের পবিত্রতা রায় তাদের সুযোগ পুরুষদের তুলনায় একটু বেশিই বলা যায়। কেননা পুরুষরা বাইরের নানা দিক সামাল দিতে গিয়ে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও রমজানের পরিপূর্ণ দাবি পূরণে অনেকাংশে ব্যর্থ হয়।
সাধারণত মহিলাদের বাইরের ব্যস্ততা কম থাকে। বাইরে বেরুলেও বেশি সময় বাইরে থাকতে হয় না। ঘরোয়া পরিবেশেই কাটে রোজার দিনগুলো। ফলে তাদের পক্ষে রমজানের পূর্ণ ফায়েজ ও বরকত লাভ করা অনেকাংশে সহজ। যেহেতু নারীদের জন্য কিছুটা বাড়তি সুযোগ রয়েছে তাই তাদের জন্য উচিত হলো রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে জীবনের সফলতার দ্বার উম্মোচন করা।
১. পরিকল্পনা প্রনয়নঃ
রমজানের দিনগুলোর সদ্ব্যবহার করতে হলে রমজানের শুরুতেই রমজান কাটানোর একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলে সময়ের সদ্ব্যবহার সম্ভব হয় না। কাঙ্ক্ষিত সফলতা পেতে হলে নারীদের রমজান মাসে কিছু জিনিসের প্রতি গভীরভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
২. ইবাদতঃ
ইবাদতের ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য আনতে হবে। রমজানে প্রতিটি ইবাদতেই সত্তর গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। রোজাই হচ্ছে রমজানের প্রধান ইবাদত। তবে রোজার চেয়ে নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। রোজা রাখার ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে এটা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু অনেকেই আছেন রোজা রাখেন কিন্তু নামাজ ঠিকমত পড়েন না-এটা খুবই অন্যায়। অন্য সময় তো নামাজ পড়বেনই, রমজানে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়বে। তাছাড়া অন্যান্য ইবাদতের মাত্রাও বাড়িয়ে দিতে হবে। বাকসংযমী হওয়া রোজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত।
৩. কথা কম বলাঃ
অধিক বাকপ্রবণ বলে মহিলাদের একটি বদনাম আছে। পরচর্চা, কুৎসা, নিরর্থক বিষয় নিয়ে মাতামাতি ইত্যাদি তাদের চিরায়ত অভ্যাস। এগুলো রোজার জন্য খুবই ক্ষতিকারক। না খেয়ে উপোস থাকার যেমন রোজার অংশ তেমনি বাকসংযমও। তাই রমজানে মহিলাদের জন্য উচিত হলো যথাসম্ভব বাকসংযম করা।
৪. চালচলনঃ
চলাফেরা ও চালচলনে শালীন হতে হবে। জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকা ও এ ধরনের যে কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন না হওয়া রোজার একটি অংশ। মহিলাদের খোলামেলা চালচলন তাদের নিজেদের রোজার পবিত্রতার জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি পর পুরুষের রোজা নষ্ট কিংবা হালকা করার জন্যও দায়ী। এজন্য রমজানের দিনে মহিলাদের বাইরে বের হতে হলে শালীনতার সঙ্গে বের হওয়া উচিত।
৫. দান-সদকা করাঃ
এ মাসে অধিক হারে দান-সদকা করার প্রতি জোর দেয়া হয়। কেননা অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় রমজানে দান-সদকার ফজিলত অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রেও নারীদের সুযোগ বেশি। সংসারের নিয়ন্তা হিসেবে তারা ইচ্ছে করলে এ মাসে গরিব-দুঃখীর দিকে সহানুভূতির হাত প্রসারিত করতে পারেন।
৬. মেজাজ ঠিক রাখাঃ
রোজা রাখলে ক্ষুধা লাগবে, পিপাসা পাবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর প্রভাব যেন কোনোভাবেই আচরণে প্রকাশ না পায়। সাংসারিক কাজের ঝামেলার কারণে অনেক মহিলা রোজা রেখে মেজাজ খারাপ করে রাখেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। এর দ্বারা রোজার পবিত্রতা নষ্ট হয় এবং এটা রোজার প্রতি এক প্রকার অবজ্ঞারও শামিল।
৭. সংযমী হওয়াঃ
রোজার আসল শিক্ষাই হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে সংযমী হওয়া। রোজা রেখে অহেতুক কাজ বর্জন করা উচিত। হাদিসে রোজাদারকে নিরর্থক কাজ থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ করা হয়েছে। রোজা রেখে অনেকের দিন কাটতে চায় না-এই অজুহাতে বিভিন্ন আজেবাজে কাজে সময় ব্যয় করেন। কিন্তু এটা সমীচীন নয়। কেননা রোজাদারের সারাদিন হবে ইবাদতের শামিল। বাহ্যিক কোনো ইবাদত না করলেও তার ধ্যান-ধারণা থাকবে ইবাদতের প্রতি।
৮. পবিত্রতা রক্ষা করাঃ
রোজার পবিত্রতা নষ্ট করে এমন কোন কাজ যেন না হয়। সংসারের শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রতি খেয়াল করা। বছরের অন্যান্য সময় থেকে যেহেতু রমজানের রুটিন কিছুটা ভিন্ন সেজন্য সাংসারিক কাজকর্ম কিংবা পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তা নিরসন করার দায়িত্ব মহিলাদের ওপর। অন্যের সুবিধার কথা চিন্তা করে, নিজে কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করে হলেও সংসারের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। পরিবারে শান্তির আবহ থাকলে রোজা পালনে মানসিক প্রশান্তি বোধ হয়।
৯. বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করাঃ
রমজান হচ্ছে কোরআন নাজিলের মাস। এ মাসের সঙ্গে কোরআনের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। রমজানে কোরআন তেলাওয়াতের সওয়াব অনেক গুণ বেশি। যারা কোরআন পড়তে পারেন তারা বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করবেন। আর যারা কোরআন পড়তে পারেন না, তারা এ মাসে তা শিখে নিতে পারেন। খোঁজ নিয়ে দেখুন, হয়ত আপনার আশপাশেই মহিলাদের রমজানকেন্দ্রিক কোরআন শিক্ষা প্রশিক্ষণ কোর্স চালু আছে। এ সুযোগ কাজে লাগান।অপচয় রোধ করা।
১০. খরচ কম করাঃ
রমজানে যত খুশি খরচ কর, তাতে কোনো বাধা নেই এ ধরনের একটি কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত। এর ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেকটি পরিবারেই খরচের মাত্রা বেড়ে যায়, যা অপচয়ের গন্ডি স্পর্শ করে। কিন্তু মূলত এ কথাটি ঠিক নয়। রমজান সংযমের মাস হিসেবে সব কিছুতেই সংযমতা আনতে হবে। রমজান মাসেও অপ্রয়োজনীয় খরচপাতি থেকে বেঁচে থাকতে হবে। ইফতার ও সাহরিকে কেন্দ্র করে যে অপচয় ও অপ্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা হয়ে থাকে তা রোধ করার ক্ষেত্রে মহিলাদের যত্নশীল হতে হবে।
১১. শপিং করাঃ
রমজান মাসে প্রায় প্রতিদিন শপিং-এ যাওয়া এখন ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে, যা প্রচন্ড রকমের অন্যায় একটি কাজ। ঈদেও কেনাকাটা যথাসম্ভব রোজার আগে সেরে ফেলা উচিত, যাতে করে রমজানে বেশি শপিং-এ যেতে না হয়। এ বিষয়টি মহিলাদের মাথায় রাখতে হবে।
১২. ইতিকাফ করাঃ
শেষ দশকে ইতিকাফ করা। ইতিকাফ রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। মহিলারাও ইচ্ছে করলে ইতিফাক করতে পারেন। তবে তা অন্দরমহলে পূর্ণ পর্দা বজায় রেখে। এর দ্বারা রমজানের দাবি যেমন ভালোভাবে আদায় করা যায় তেমনি মহিমান্বিত রাত শবেকদরের ফয়েজ ও বরকত লাভে ধন্য হওয়া যায়। তাই নারীদের জন্য এ সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়।
মহিলাদের রমজান উদযাপনের ব্যাপারে এখানে মোটামুটিভাবে কিছু বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে মাত্র। তাদের জন্য উচিত হলো রমজান যেন কোনোভাবেই গতানুগতিক ধারায় প্রবাহিত না হয়ে যায় সে দিকে দৃষ্টি রাখা এবং রমজানের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যাশিত সাফল্য নিশ্চিত করা।
(দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত মেহের নিগার এর কলাম থেকে সাজিয়েছি। আশাকরি সকলের উপকারে আসবে)
©somewhere in net ltd.