নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভৌতিক মানব

ভৌতিক মানব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসা কারে কয়

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৮

১)গাড়িটা ছুটে চলেছে ঢাকার ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে।কোন এক অজ্ঞাত কারণে আজ রাস্তা একদমই ফাঁকা।প্রায় পাঁচ বছর পর গত সপ্তাহে দেশে ফিরেছে নৈরিতা।সকাল থেকেই বাসায় আত্মীয় স্বজন,বন্ধুবান্ধবদের ভিড় লেগেই আছে।পুরা বাসায় একটা উৎসব উৎসব ভাব। সামনের মাসেই যে নৈরিতার বিয়ে!বর নিষাদ,ওর সাথেই কানাডায় থাকে। থিসিসের জটিলতায় ওর আসতে একটু দেরি হবে।তাই নৈরিতা একাই বিয়ের মার্কেটিং শুরু করে দিয়েছে।আজ বের হয়েছে নাবিলা আর রুমুর সাথে।কতদিন পর যে ওরা তিনজন একসাথে মার্কেটিং এ বের হল!দেশে থাকতে যখনই ওরা মার্কেটে যেত,দোকানের ডিসপ্লেতে রাখা শাড়ি,ব্যাগ,গয়নাগুলো দেখে হারিয়ে যেত কল্পনার রাজ্যে।-আই দেখ তো এই কালারটা বিয়েতে পরলে কেমন হবে?বৌভাতে কোন রঙ নিব?সাথে এই সেটটা মানাবে,তাই না?-কত আজাইরা সব চিন্তা ছিল তিনজনের!আজ কেমন অদ্ভুত লাগছে,এত বছর পর ওরা তিনজন সত্যি সত্যি বিয়ের শপিং এ বের হয়েছে!সারাদিন ঘুরে ঘুরে অনেক কিছু কেনা হল।মার্কেটিং শেষে চারুকলার চিকেন খাওয়ার বায়না ধরল নাবিলা আর রুমু।ওদের আবদার রক্ষা করে দেখে পাশেই রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুষ্ঠান হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানটা ঘিরেও কত্ত স্মৃতি ওদের! কতবার এসেছে এখানে। অনেকদিন পর আবারো ঢুকে পরে।ভিতরে জায়গা নেই,তাই হাসনাহেনার ঝোপের পাশে বসে গান শোনায় মন দেয়।







"ফিরবে না তা জানি, তা জানি--



আহা, তবু তোমার পথ চেয়ে জ্বলুক প্রদীপখানি॥



গাঁথবে না মালা জানি মনে,



আহা, তবু ধরুক মুকুল আমার বকুলবনে



প্রাণে ওই পরশের পিয়াস আনি॥



কোথায় তুমি পথভোলা,



তবু থাক্‌-না আমার দুয়ার খোলা।



রাত্রি আমার গীতহীনা,



আহা, তবু বাঁধুক সুরে বাঁধুক তোমার বীণা--



তারে ঘিরে ফিরুক কাঙাল বাণী॥"







-আজো আগের মতই মনোযোগ দিয়ে গান শুনিস দেখছি!







গলার স্বরে চমকে ওঠে নৈরিতা। ওর চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অর্নব!চার বছর আগে যাকে রেখে পালিয়ে গিয়েছিল দেশ থেকে,হ্যা পালিয়েই গিয়েছিল...।।







২)তখন কেবল ভার্সিটিতে ঢুকেছে। নতুন এ জীবনে কেমন মুক্ত পাখির মত উড়ে বেড়াচ্ছে ওরা কয়েকজন।ঘুম পাড়ানী ক্লাস শেষে বিকেলে একসাথে চা,পুরি চপ।তারপর আড্ডা। এরকমই একদিন সবাই মিলে চলে আসলাম শাহবাগে।গান শুনতে।গান শুনতে শুনতে কখন যে মোবাইলটা হাত থেকে পাশে রেখেছি খেয়ালই নেই আমার।







-এতো তন্ময় হয়ে গান শুনলে তো মোবাইলটা যাবে ম্যাডাম!







হঠাৎ করেই যেন ধ্যান ভাঙ্গে আমার,দেখি আমাদের ব্যাচেরই ছেলে,অর্নব।







-আমিও ঠিক এমন ধ্যান করতে গিয়েই হারিয়েছি আমারটা।







সেই থেকে পরিচয় ওর সাথে।দুজনের মধ্যে ছিল অনেক মিল। দুজনই হা করে গান গিলতাম,কোন কিছুরই খেয়াল থাকত না আমাদের। গানের জগত নিয়ে গল্প যেন ফুরাতো না আমাদের।এভাবেই গান থেকে একসময় সবকিছু শেয়ার করতে শুরু করি ওর সাথে,ও হয়ে ওঠে আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ,প্রাণের বন্ধু।







৩) আমার কাছে ভালবাসার আরেক নাম বন্ধুত্ব,মনের মিল। যাকে আমি ভালবাসব,বয়সের ব্যবধান যাই হোক না কেন,তার সাথে আমার থাকবে বন্ধুত্বের মত সুন্দর একটা সম্পর্ক।মনের গভীরের সব কথা নির্দ্বিধায় শেয়ার করতে পারব তার সাথে।সময়ের সাথে সাথে কখন যে অর্নবকে আমি মনে ঠাই দিয়ে বসে আছি তা নিজেও বুঝিনি। বুঝলাম যেদিন ওর মুখে ভালবাসার সংজ্ঞা শুনলাম।ওর কাছে ভালবাসা মানে বন্ধুত্ব নয়,ভালবাসা মানে কারো জন্য পাগলামী,কাওকে দেখে হারিয়ে যাওয়া,কারো চিন্তায় জীবনটাকে বদলে দেয়া।সেখানে আমি তো ওর জীবনে নিয়মিত হয়ে যাওয়া একজন।ঠিক এই অনুভুতিই অর্নবের জীবনে নিয়ে এসেছে মিথিলাকে।ওর সাথেই পড়ে ও।ক্লাসের ফাঁকে প্রতিদিন আড়চোখে দেখা আর ফেসবুকে ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট।অর্নব তখন বাতাসে উড়ছে।আমাকে যখন কথাগুলো বলত,ওকে খুশি দেখে ভাল লাগত,কিন্তু অভিমান যে হত না তা নয়।মুখে হাসি ফুটিয়ে ওর মুখে মিথিলার গল্প শুনাটাও যেন হয়ে দাঁড়ালো আমার ভালবাসার পরীক্ষা,ধৈর্যের পরীক্ষা।পহেলা বৈশাখে লাল শাড়ি পড়া মিথিলাকে দেখে অর্নবের তখন মাথা নষ্ট।সেই বর্ষাতেই মিথিলাকে প্রোপজ করে অর্নব।আজো মনে আছে,সে দিনটার কথা । এক মাস ধরে আমার মাথা ধরায় দিয়েছিল ঘ্যান ঘ্যান করতে করতে।







-বলনা ক্যামনে বলব?



-ক্যামনে আবার!সামনে গিয়ে বলে দিবি!



-কি দিব বল তো? মিথিলা কি পছন্দ করবে?



-সেটা আমি কিভাবে বলব!!



-ফুল দিব?আচ্ছা তোরা মেয়েরা কোন ফুল পছন্দ করিস?



-আমি দোলনচাঁপা পছন্দ করি,অন্যরা কি পছন্দ করে তা তো জানিনা!







যেদিন অর্নব মিথিলার হাতটা ধরে আমার সামনে এল,ওইদিনো আমি হাসিমুখেই দাঁড়িয়ে থাকলাম।আমার ফুলে থাকা কাজলহীন চোখজোড়ার ভাষা অর্নব বুঝলনা।আমি শুধুই দেখছিলাম,মিথিলার হাতে তখন আমার পছন্দের ফুল,দোলনচাঁপা।







৪) "দিনেকের দেখা, তিলেকের সুখ,



ক্ষণেকের তরে শুধু হাসিমুখ–



পলকের পরে থাকে বুক ভ’রে চিরজনমের বেদনা।"......







অর্নব আমার কাছ থেকে দূরে সরতে থাকে ধীরে ধীরে।গানের জগত মিথিলার পছন্দ ছিলনা,তাই অর্নবের সাথে আস্তে আস্তে শিল্পকলা,ছায়ানটের আসরগুলোতে যাওয়া কমতে থাকে।ওর লেখা কবিতাগুলোর প্রথম পাঠক হিসেবে আমার জায়গাটাও একসময় নিয়ে নেয় মিথিলা।এই দূরত্বটুকুও বড় অদ্ভুত।একসময় এই মানুষটার সাথে কথার ফুলঝুরি কোনদিনই ফুরাতোনা।অথচ আজ দুজনেরই কোন কথা থাকেনা।মনে মনে সারাদিন যার সাথে হাজারটা কথা বলি,সে সামনে এলে হারিয়ে যায় সব ভাষা।আর ফেইসবুক মেসেঞ্জার?সে তো ইমোটিকনের মেলা,ওগুলো তো রয়েছেই নিজেদের আড়াল করার জন্য।সব কিছুই মেনে নেয়ার চেষ্টা করছিলাম আমি,কিন্তু এমন সময়ে আমার উপর নেমে আসে আরেক আশীর্বাদ!আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি হঠাৎ করেই।এখনো মরণব্যাধি হয়ে ওঠেনি,তবে ওই ধরনেরই।সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে পরিবর্তন করতে হবে আমার জীবনধারা। এটা খাওয়া যাবেনা,ওটা করা যাবেনা,ঠিক এতটার মধ্যে ঘুমাতে হবে,হাজারটা টেস্ট,ইনজেকশন আর মুঠো ভর্তি ওষুধ, এরকম বিচ্ছিরি কিছু নিয়মের ছকে বাধা পরে আমার জীবন।কোনটা না মানলেই চলে যেতাম হাসপাতালে।না মেনেও উপায় নেই,নাহলে ধীরে ধীরে এটাই হয়ে দাঁড়াবে আমার মৃত্যুর কারন।ওই সময়টা এত কঠিন ছিল!অর্নবের সাথে বেশ কিছুদিন দেখা নেই।পরীক্ষা আর মিথিলাতে ব্যস্ত ও।খুব ইচ্ছে হত ওর সাথে কথা বলি,কষ্টগুলো শেয়ার করি।আমার হঠাৎ বদলে যাওয়া জীবনটার সাথে মানিয়ে নিতে একটু সাহায্য করুক আমাকে।আমি যেন তখন রবি বাবুর গল্পের নায়িকা,সুরীতি,যে কিনা "উৎসুক হয়ে থাকত জানলার দিকে কান পেতে, কিন্তু কোনো পরিচিত পায়ের ধ্বনি কোনোদিন কানে এল না। "







৫)অর্নবের জন্মদিন ছিল সেদিন।ওর প্রিয় রঙের কালো শাড়ি পরে বের হলাম অনেকদিন পর।ওর কয়েকজন বন্ধুবান্ধব সবাই মিলে ছোটখাট একটা সারপ্রাইজ পার্টি।সারপ্রাইজড হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বুঝতে পারছিলাম ওর মন খারাপ।রাত হয়ে যাওয়ায় আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে চলল অর্নব। চুপ করে থাকা ছেলেটা বহুদিন পর যেন মন খুলে কথা বলল। ওর মন খারাপের কারণটা শুনলাম,আর কিছুই না,মিথিলা।গত কয়েকদিন থেকেই ও মিথিলাকে আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়েছে,ওকে এই দিনে কালো শাড়িতে দেখতে চায় অর্নব।কিন্তু পরীক্ষার মধ্যে,পড়াশুনায় ব্যস্ততায় অর্নবের আবদার রক্ষা করা হয় নি,আজ বেশিক্ষন থাকেওনি ও।তাড়াতাড়ি বাসায় চলে গিয়েছে।তাই এই অভিমান।ওর অভিমান ভাঙ্গাতে কি বলব আমি,আমারই মনে তখন অভিমান!লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলেই ফেললাম,







-দুঃখ করিস না।দেখ! আমি কিন্তু আজ কালো শাড়ি পড়ে এসেছি!



-ধুর!তুই তো প্রায়ই শাড়ি পরিস!তোকে আর কি দেখব! মিথিলা তো খুব একটা শাড়ি পরতেই চায় না!







অনেক যত্নে ওর জন্য সেজে যে মেয়েটা পাশে বসে আছে রিকশায়,তাকে কোনদিনই চোখে পড়ল না ওর। পড়বেওনা কোনদিন।ওই মুহুর্তে প্রচণ্ড অভিমানেই পালানোর সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিলাম।অর্নবের কাছ থেকে পালানোর,পুরানো জীবন থেকে পালানোর।







৬)ক্রেডিট ত্রান্সফার্ম করে চলে এলাম কানাডায়।মা কিছুতেই আমাকে এই অবস্থায় একা ছাড়বেন না।কিন্তু আমি কোন কথাই কানে না তুলে পোটলা বেধে পালালাম। পড়াশুনায় মোটামুটি ভালই ছিলাম,তাই বাঁধাগুলো টপকে গেলাম সহজেই।শুরু করলাম নতুন জীবন।অর্নবহীন জীবন,ঘড়ির কাটায় বাঁধা জীবন।প্রথম প্রথম অসম্ভব কষ্ট হয়েছিল।প্রচন্ড ইচ্ছে হত অর্নবের গলার স্বর একটু শোনার জন্য।ফেইসবুকে অর্নবের প্রোফাইল খুলে ঘন্টার পর ঘন্টা নিঃশব্দ বসে থাকতাম। কিন্তু অভিমান এমনই একটা জিনিস যা দুজন প্রানের বন্ধুকেও আলাদা করে দিতে পারল অবশেষে। ওর সাথে আর যোগাযোগ রাখিনি।ফোন,ফেইসবুক,মেসেঞ্জার কোন কিছুর মাধ্যমেই না।ও খোঁজ নিয়েছিল আমার,কিন্তু মেসেজগুলোর উত্তর দেই নি আমি।প্রথম প্রেম নাকি মানুষ কোনদিন ভুলতে পারে না,আমিও অর্নবকে ভুলতে পারিনি ঠিকই কিন্তু অর্নবহীন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম।অর্নব এখন কেবল আমার মনের এককোনে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটা দরজার নাম।







৭)এই কানাডাতেই নিষাদের সাথে আমার পরিচয়।প্রবাস জীবনের একটা মজার দিক হল,বাঙ্গালীরা ঠিকই একে অপরকে খুঁজে বের করে,তারা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলে খুব সুন্দর এক বাঁধন।আমিও এখানকার বাংলাদেশীদের সাথে মিশে গেলাম।সেখানেই নিষাদের সাথে আমার পরিচয়।আমার ভার্সিটিতেই মাস্টার্স করছে ও।লাইব্রেরি,করিডরে প্রায়ই দেখা হতে থাকল আমাদের।অর্নবকে হারিয়ে আমি কেমন জানি নিজের মধ্যেই গুটিয়ে থাকতাম।কারো সাথে কিছু শেয়ার করতে আমার ইচ্ছা হতনা।কিন্তু এই নিষাদই বয়সের ব্যবধানকে পেছনে ফেলে গুটিয়ে থাকা আমাকে খোলস থেকে বের করে আনতে লাগল।আমি চমকে উঠেছিলাম যেদিন নিষাদ সরাসরি আমাকে ভালবাসার কথা বলেছিল।ওর কাছেও ভালবাসা মানে বন্ধুত্ব।ও আমাকে চেয়েছিল জীবনের পথে,সারাজীবনের বন্ধু হিসেবে।আমি রাজি থাকলেই দেশে পারিবারিকভাবে কথা আগাবে।আমি ওকে সব খুলে বলেছিলাম।আমার অতীত,আমার অসুখ,জীবনের ঝুঁকি,সব কথা।আমার যে তখন নিষাদের ডাকে সাড়া দেবার সেই সাহস আর নেই।আমাদের সমাজে এখনো অধিকাংশ পরিবারেরই চাওয়া,ঘরের বউকে হতে হবে সুশিক্ষিতা,সুন্দরী,সর্বগুনে গুণান্বিত এক কথায় নিখুঁত।বিয়ের বাজারে আমার বাবা মাকে যে অপদস্ত হতে হবে আমার জন্য, তা আমি বেশ ভালই জানতাম।অসুস্থ হবার পর থেকেই তাই আমার মধ্যে 'একলা চলরে' নীতির তীব্র বসবাস।আমার ভবিষ্যৎ চিন্তা তখন কেবল আমার মা বাবাকে ঘিরে।পড়াশুনা শেষে একটা ভালো চাকরী পেলেই আম্মু আব্বুকে এখানে নিয়ে আসব,ওরাই আমার পরিবার।মা বাবা বিয়ের কথা বললেই আমি যে যুক্তিটা দিতাম সেটা অনেকটা এরকম- একটা মেয়ে ঠিকই পারে একটা ছেলের জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে,কিন্তু একটা ছেলে তা কখনই পারে না।তাই নিষাদ যে আমার ছকে বাঁধা জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে,সেই বিশ্বাসটুকুও আমার নেই।কিন্তু নিষাদ আমাকে ফেলে চলে যায়নি,ও আমাকে সময় দিয়েছিল। আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম কি করে এই মানুষটা আমার জীবনের কষ্টগুলোকে মুছে দিচ্ছিল,আমার জীবনের সাথে মানিয়ে নিচ্ছিল,আমার বন্ধুত্বটা অর্জন করে নিচ্ছিল!কখন কোন বেলায় কোন ওষুধ খেতে হবে তা থেকে শুরু করে সময়মত ঘুমিয়ে পড়েছি কিনা সবকিছুতেই তার গভীর মনোযোগ। একসময় আমি হেরে গেলাম নিষাদের কাছে,নিষাদ আমার ভালবাসা অর্জন করে নিল।আমি ঠিক যেমনটি চাইতাম একসময়, নিষাদ যেন ঠিক তাই।











৮)ফোনের শব্দে যেন বাস্তবে ফিরে এলাম।অর্নবের ফোন।সেইদিন দেখা হবার পর অর্নব প্রায়ই ফোন করে।আমিও ধরবনা ধরবনা করে ফোন ধরি।তারপর সেই আগের মতই গল্প করে যায় ও,আর আমি চুপ করে শুনি।কিন্তু কোথায় যেন সুর কেটে গেছে। মিথিলার সাথে ওর সম্পর্কটা আর নেই। পাস করার আগেই মিথিলার বাসায় প্রস্তাব আসে,ছেলে আমেরিকার নামকরা ভার্সিটিতে পিএইচডি করছে,বিরাট স্কলার। বিয়ের পর নিয়ে যাবে ওকে।মিথিলারো অনেক ভাল রেজাল্ট।ও সহজেই ওর পি এইচ ডি করতে পারবে।সেখানে অর্নব তখনো পাশ করে বেরই হয়নি,চাকরি তো দূরের কথা।বাবা মার কথা মত মিথিলা বিয়ে করে পাড়ি জমিয়েছে দূর দেশে।আর অর্নব এখন একাই আছে,একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে জব করছে।







-কি করছিলি?



-এই তো,শপিং থেকে ফিরলাম,বাসায় অনেক কাজ,বিয়ে বাড়ি,বুঝিসই তো।







ওই প্রান্তে চুপ করে থাকে অর্নব।নীরবতাটুকু কেমন অদ্ভুত লাগে আজ।







-তুই কি কিছু বলতে চাস আমায়?



-হুম।দেখ আমি জানি আর কিছুদিন পরেই তোর বিয়ে।কিন্তু কথাটা না বললে যে আমার সারজীবন আক্ষেপ থেকে যাবেরে।



-বল



-তুই যখন হঠাৎ চলে গেলি, তখন অবাক হয়েছিলাম খুব!কিন্তু ধীরে ধীরে তোর অভিমানটুকু বুঝতে পারি আমি।বুঝলাম বিরাট এক গর্ধব আমি! পাশে থাকা তোকে কখনই বুঝতে পারিনা।কালো শাড়ি যখন আমার জন্য পরেছিলি তখন আমি বুঝিনিরে।তার জন্য ক্ষমা চাওয়ার যোগ্যতাও আমার নাই।কিন্তু তারপরো আজ তোর হাতটা ধরতে চাই আমি!তুই ছাড়া জীবনের শূন্যতাটুকু দেখা হয়ে গেছে আমার,আমি এই শুন্যতা নিয়ে বাকি জীবনটুকু আর কাটাতে চাইনা।জানি আমার চাওয়ায় কিছু যায় আসে না তোর,তোকে চাই এই দাবি করার অধিকারো আমার নেই।কিন্তু তুই কি আমায় ক্ষমা করে আমার জীবনে ফেরত আসতে পারিস নারে?আরেকটাবার!!



-আমি রাখি এখন।



-আমি তোর উত্তরের অপেক্ষায় থাকব...







ফোনটা কেটে দিয়ে আমি ঝিম মেরে গেলাম।এ কি শুনছি আমি!একসময় কত দোয়া করেছি আল্লাহর কাছে,ওর চোখে যদি শুধু আমার জন্য ভালবাসার ছায়া দেখতে পেতাম!সারা জীবন লাগবেনা,শুধু একটা মুহুর্তের জন্য !আজ সেই মানুষটাই বলছে ভালবাসি! আমি হ্যা বললেই সেই হাতটা ধরতে পারব আজ?যে হাত কতদিন স্বপ্নের মাঝে ধরেছি গভীর মমতায়!কিন্তু এ কেমন করে সম্ভব!নিষাদ?অর্নব একসময় যা করেছিল আমার সাথে,সেই কষ্টই কি তবে নিষাদকে দেয়া হবে না?নিষাদ যে আমার বর্তমান,ভবিষ্যৎ !আমার বিশ্বাস!আমার জগতটা এলোমেলো হয়ে যায় হঠাৎ।আমি বুঝতে পারিনা আমি কি চাই,কাকে চাই!মনের ভেতরে অনেক পুরানো সেই দরজাটা খুলতে চায়,আবার চোখে ভেসে উঠে আমার বন্ধু নিষাদের ছবি।







৯)গত কয়েকদিন ধরে রাত জাগছি।এতদিন ধরে ঝড় বয়ে যাওয়া মনটা ভোরের বাতাসে যেন ঠান্ডা হয়েছে একটু।আজ নিষাদ আসছে।সকাল ১১টায় ওর ফ্লাইট।কয়েকদিনের অনিয়মে শরীর ভেঙ্গে আসতে চাইছে,কিন্তু আমি খুব দ্রুত তৈরি হয়ে বের হয়ে যাই।গন্তব্য অর্নবের অফিস।রিসেপশনিস্টের কাছে থেকে আমার নামটা শুনে অর্নব নিজেই বের হয়ে আসে,ওর রুমে নিয়ে যেয়ে বসতে বলে।কিন্তু আমার হাতে সময় বেশি নেই।ব্যাগ থেকে বিয়ের কার্ডটা বের করে ওর হাতে ধরায় দেই।নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়া অর্নবকে পেছনে ফেলে বের হয়ে আসি আমি।এয়ারপোর্ট যেতে হবে।যেখানে আর একটু পর সাদা পঙ্খীরাজে করে নেমে আসবে আমার রাজপুত্র।আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু,আমার ভালবাসা অর্জন করে নিয়েছে যে মানুষটা।শত দোষত্রুটি,অসুখ বিশুখের ভিড়েও যার কাছে আমি অমুল্য,সেই নিষাদ….



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.