![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১। তিনি বলেন-
পূর্ববর্তী পয়গম্বরগনের উম্মতদের অবস্থা সাধারণভাবে এই রূপ ছিল যে, যতই নবুয়তের জমানা হইতে দূরে পড়িতেন, ততই তাহাদের ধর্মীয় ব্যাপার এবাদত ইত্যাদি স্বকীয় আসল সত্তা (হাকিকত ও রূহ) হারাইয়া কতগুলি নাম মাত্র রছমে পরিণত হইত এবং এই সম্স্ত প্রাণহীন অনুষ্ঠান রছম হিসাবেই আদায় হইতে থাকিতে। এই গুমরাহী ও ভুল পথ হইতে ফিরাইয়া শুদ্ধি ও সংশোধনের (এছলাহের) জন্য পুনরায় দ্বিতীয় পয়গম্বের প্রেরিত হইতেন, যিনি এই রছমকে মিটাইয়া উম্মতকে দ্বীনের আসল হাকিকত ও শরীয়তের প্রকৃত স্বারূপ সম্বন্ধে সচেতন করিতেন। সকলের শেষে যখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হন তখনও যেই সম্সত কওম কোন আছমানী দ্বীনের সহিত সম্বন্ধ রাখিতেন তাহাদের অবস্থাও এইরূপ ছিল- তাহাদের পয়গম্বরের আনীত শরীয়তের যেই অংশটুকু তাহাদের নিকট বাকী ছিল- তাহাদের পয়গম্বেরের আনীত শরীয়তের যেই অংশটুকু তাহাদের নিকট বাকী ছিল তাহাও কতকগুলি প্রাণহীন রছমের সমষ্ঠিমাত্র ছিল। ঐ সমস্ত রছমকে তাহারা আসল দ্বীন ও শরীয়ত বলিয়া মনে করিত। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সমস্ত রছমকে মিটাইবার আছলী দ্বীনি হাকিকত ও আহকামের তালীম দিয়াছিলেন। উম্মতে মুহাম্মদীও বর্তামানে এই রোগে আক্রান্ত হইয়াছে। তাহাদের এবাদতে পর্যন্ত রছমীয়াত আসিয়া পড়িয়োছে; এমনকি দ্বীনি তালীম যাহা এই সমস্ত খারাবীর সংশোধনের সহায় যন্ত্র হওয়া উচিত ছিল উহাও বহু স্থলে এক রছমে পরিণত হইয়াছে। কিন্তু বর্তমানে নবুয়ত খতম হইয়াছে এবং ঐ প্রকারের কাজের জিম্মাদারী উম্মতের ওলামাদের উপর রাখা হইয়াছে। কারণ তাঁহারাই নায়েবে নবী। সুতরাং এই বিকৃত অবস্থার প্রতিকার ও সংশোধন করা জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করা তাহাদের উপর ফরজ এবং ইহার সম্বল হইতেছে তছহিহ্- এ নিয়ত বা বিশুদ্ধ সঙ্কল্প। কারণ, আমলের মধ্যে যখন লিল্লাহিয়াত ও শানে আবদিয়াতে (আল্লাহর ওয়াস্তে আল্লার বন্দিগী হিসাবে কাজ করার নিয়ত) না থাকে তখনই উহা রছমে পরিণত হয়) আবার নিয়ত ছহীহ হইলেই আমলের গতি শুদ্ধ হইয়া আল্লাহ মুখী ও রছমিয়াতের স্থালে হাকিকত পয়দা হয় এবং প্রত্যেক কাজ আবদিয়াত ও খোদা পরস্তীর জজবায়ে (বিশেষ আকর্ষণে) হইতে থাকে। মোটকথা, বর্তমানে যুগে মানুষের আমলের মধ্যে তাছহীহ্- এ নিয়তের সাহায্য লিল্লাহিয়ারত ও হাকিকত পয়দা করিবার জন্য চেষ্ঠা ও কষ্ট করা উম্মতের ওলামা ও দ্বীনের বাহকদের এক বিষেষ কর্তব্য।
৩। তিনি বলেন-
তরিকতের খাছ উদ্দেশ্য আল্লাহ পাকের আহকাম ও আদেশাবলী স্বাভাবিকভাবে পালনীয় ও নিষেধগুলি স্বাভাবিকভাবে অবাঞ্চনীয় হইয়া যাওয়া। (অর্থাৎ এমন অবস্থায় উপনীত হওয়া যেন আল্লাহর আহকাম ও আদেশ মত চলাতে আনন্দ ও মজা পাওয়া যায়, আর নিষেধাবলীর নিকটে যাইতেও কষ্ট ও খারাপ লাগে।) ইহাই তরিকতের (আল্লাহর পথের) আসল উদ্দেশ্য; বাকী যাহা কিছু (অর্থাৎ জিকির-শোগল ও খাছ রিয়াজত ইত্যাদি) এই উদ্দেশ্য সাধনের উপায় স্বারূপ। কিন্তু বর্তমানে বহু লোক এই উপায়গুলিকেই আসল তরিকত বলিয়া মনে করিয়া থাকে; অথচ উহার কিছু কিছু তো বেদাত। সে যাহা হউক, এই সমস্ত যখন কেবল মাত্র ঔষধ স্বরূপ- আসল মকছুদ নহে- এই জন্যই অবস্থা ও সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্তের সংশোধন, পরিবর্দ্ধন ও পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। অবশ্য শরীয়তের মধ্যে যেই সমস্ত কাজ কোরআন ও হাদীছের দ্বারা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত আছে ঐ সমস্ত সর্বযুগে একইভাবে করিতে হইবে।
২৪। এক বৈঠকে তিনি বলেন-
আমাদের এই আন্দোলনের আসল মসছুদ বা উদ্দেশ্য মুসলমানকে ঐ সমস্ত জিনিস শিক্ষা দেওয়া যাহা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়া আসিয়াছিলেন। অর্থাৎ ইসলামের পূর্ণ এলমী ও আমলী নিজাম উম্মতের মধ্যে পুনর্জীবিত করা। ইহা তো আমাদের আসল উদ্দেশ্য; বাকী রহিল তবলীগী কাফেলার ঘুরাফেরা ও ‘গোশত’ করা ইহা ঐ উদ্দেশ্য সাধনের প্রাথমিক উপায়। কালেমা, নামাজের তালীম ও তালকীন আমারেদ পূর্ণ পাঠ্য-তালিকার ক,খ,গ মাত্র।
ইহাও প্রকাশ্য কথা যে, আমাদের কফেলা সম্পূর্ণ কাজ করিতে পারিবে না। তাহারা শুধু দ্বারা এক আলোড়ন ও চেতনা সঞ্চার করিতে পারে মাত্র। গাফেলদিগকে স্বীনীয় দ্বীনদারদের সঙ্গে মিলাইয়া দিবার ও দ্বীনের দরদী চিন্তানায়করেদ বেচারা আওয়ামদের সংশোধনের কাজে লাগাইয়া দিবার কোশেশ করিতে পারে। প্রত্যেক জায়গায় আছলী কাজ তো স্থানীয় কর্মীরাই করিতে পারে। আওয়ামদের বেশী ফায়দা নিজ জায়গার দ্বীনদারদের নিকট হইতেই পৌছিতে পারে; অবশ্য ইহার তরীকা আমাদের ঐ সমস্ত লোক হইতে শিক্ষা করা যায় যাহারা বহুদিন হইতে এই তরীকার ফায়দা দেওয়া নেওয়া ও শিক্ষা দেওয়া নেওয়ার কাজ সাফল্যের সহিত কলিয়ছে ও বহুলাংশে ইহাকে নিজের আয়ত্বে আনিয়াছে।
২৮। তিনি বলেন-
সেমন ভুল প্রথা প্রচলিত হইয়াছে। অন্য লোকে আমাদের কথা মানিয়া লইলে আমরা উহাকে আমাদের নিজের কৃতকার্যতা বলিয়া মনে করি। আর না মানিলে তাহা আমাদের অকৃতকার্যতা বলিয়া বুঝি। অথচ এই পথে এইরূপে খেয়াল করা একেবারেই ভুল। অন্যের মানা না মানা তো উহাদের কার্য। উহাদের কোন কার্য দ্বারা আমরা কেন কৃতকার্য বা অকৃতকার্য বলিয়া অভিহিত হইব? আমাদের কৃতকার্যতা ইহাই যে, আমরা নিজের কাজ পুরাপুরি করিয়া দেই, অন্যেরা না মানিলে তাহা তাহাদের অকৃত কার্যতা। উহারা না মানিলে আমরা কেন অকৃতকার্য হইব? মানুষ ভুলিয়া গিয়াছে, তাহারা মানাইয়া দেওয়াকে (যাহা প্রকৃত প্রস্তাবে খোদার কাজ) নিজের কাজ ও নিজের জিম্মদারী বলিয়া বুঝিয়া নিয়াছে; অথচ আমাদের জিম্মাদারী সুন্দরভাবে শক্তি প্রয়োগ করা। মানাইয়া দেওয়ার কাজ তো পয়গম্বর দেরও সোপর্দ করা হয় নাই। অবশ্য না মানিলে এই শিক্ষা লইতে হইবে যে, সম্ভবতঃ আমাদের কোশেশে শিথিলতা রহিয়া গিয়াছে, আমরা হক আদায় করিতে পারি নাই, যার জন্য আল্লাহ পাক এই কুফল আমাদিগকে দেখাইলেন। তাৎপর নিজের কোশেশের দোয়া ও আল্লাহর সাহায্য মদদ চাওয়ার পরিমাণ ও কইফিয়ৎ আর বাড়াইয়া দেওয়ার নিয়ম করিয়া লওয়া চাই।
৩৪। এক বৈঠকে তিনি বলেন-
যতই উত্তম হইতে উত্তম কাজ করিবার তওফিক (সম্বল সামর্থ) আল্লাহ পাক দেউক না কেন সদারসর্বদা উহার পরিসমাপ্তি (খাতেমা) এস্তেগফরের (খোদার নিকট ক্ষমা চাওয়ার) উপরই করিবে।
ফলকথা, আমাদের প্রত্যেক কাজের শেষ অংশ এস্তেগফার (ক্ষমা চওয়া) হওয়া চাই। অর্থাৎ এই কাজ করিতে নিশ্চয় কোন খাতা (কছুর) হইয়াছে এই চিন্তা করিয়া সেই খাতা (কছুর) হইয়াছে এই চিন্তা করিয়া সেই খাতা (কছুরের) মাফীর জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাহিবে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ শেষ করিয়াও আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাহিতেন। সুতরাং তবলীগের প্রত্যেক কাজ সর্বদা এস্তেগফারের (ক্ষমা চাওয়ার) উপর খতম (শেষ) করিতে হইবে। বান্দা দ্বারা কিছুতেই আল্লাহর কাজের হক আদায় হইতে পারে না। তদুপরি এক কাজ করিতে থাকিলে আরও অনেক কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়া থাকে। সুতরাং সেই সমস্ত কাজের ক্ষতিপূরণের জন্য প্রত্যেক নেক (ভাল) কাজ শেষ করিয়া এস্তেগফার করা (ক্ষতা চাওয়া) উচিত।
--
৩৫। একদিন ফজরে নামাজের পর নিজামুদ্দিনের মসজিদে বহু তবলীগী কর্মীদের সমাগম হইয়াছিল। কিন্তু হযরত মাওলানার দুর্বলতা এত বেশী হইয়াছিল যে, বিছানার উপর শুইয়া শুইয়াও উচ্চৈঃস্বরে দুই চার কথা বলিবার শক্তি ছিল না। এক খাছ খাদেমকে বিশেষভাবে ডাকাইয়া তাহার মধ্যস্থতায় সকলকে বলিয়াছিলেন-
“আপনারা যদি তবলীগী কাজের সহিত দ্বীনের এলম ও আল্লাহর জিকিরের প্রতি বিশেষ মনোযোগ না দেন তাহা হইলে আপনাদের ঘুরাফিরা, চ্ষ্টো চরিত্র ও কষ্ঠ মেহনত সমস্তই বেকার হইবে। ধরিয়া লউন যে, এই এলম ও জিজির দুই বাহু যাহা ব্যতীত তবলীগী আকাশেখ কেহ উড়িতে পারিবে না; বরং বিশেষ ভয় ও সংশয়ের কথা যে, এলম ও জিকির হইতে গাফের হইলে এই চেষ্ঠা চরিত ও কষ্ট মেহনত, ফেৎনা ও গোমরাহীর এক নূতন দারওয়াজায় পরিণত হইবে। দ্বীনের এলম না হইলে ইসলাম ও ঈমান শুধুমাত্র নাম রছমে পর্যবসিত হইবে। আবার আল্লাহর জিকির ব্যতীত এলম হইলেও তাহা কেবল অন্ধকার (জুলমত) হইবে। তদ্রুপ আবার এলমে দ্বীনে ব্যতীত আল্লাহর জিকির বেশী হইলেও তাহাতেও বড় বিপদ আছে। মোটের উপর এলমের মধ্যে জিকির হইতে নূর আসে, আবার দ্বীনের এলম ব্যতীত জিকিরের প্রকৃত সুফল ও বারাকাত পাওয়া যায় না; বরং অনেক সময় এইরূপ মূর্খ ছুফীদিগকে শয়তান নিজের কুকাজে যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে। কাজেই এই তবলীগী কাজের মধ্যে কোন অবস্থাতেই এলম ও জিকিরকে ভুলিলে চলিবে না, বরং সদাসর্বদাই ইহার জন্য বিশেষ মনোযোগ দিতে হইবে ও যতœ নিতে হইবে। অন্যথায় আপনাদের এই তবলীগী আন্দোলও এক ভূয়া ও ভ্রান্ত আন্দোলনে পর্যবসিত হইবে। আর খোদা না করূন আপনারা অতি বড় ক্ষতিগ্রস্ত হইবেন।
--------->
হযরত মাওলানার মতলব এই হেদায়ত (উপদেশ) হইতে ইহা ছিল যে, তবলীগী কর্মীরা যেন তবলীগ ও দাওয়াত সম্পর্কিত কষ্ট মেহনত, ছফর ও হিজরত, কুরবানী ও ইছারকেই আসল কাজ বলিয়া মনে না করে; যেমন আজকাল সাধারনথ ঃ লোকেরা বুঝিয়া থাকে; বরং দ্বীন শিক্ষা দেওয়া ও শিক্ষা করা এবং আল্লাহর জিকিরকে অভ্যাসে পরিণত করা ও এই সমস্তকে নিজের কর্তব্য করিয়া লওয়াকে আপনার প্রয়োজনীয় ফরিতজা (কর্তব্য) বলিয়া মনে করে, অন্য কথায় তাহাদিগকে শুধু সিপাহী ও স্বেচ্ছাসেবক হইলে চলিবে না, এলমে দ্বীনের তালেব ও আল্লাহর ইয়াদকারী বান্দাও হইতে হইবে।
৩৮। তিনি বলেন-
মানুষ আমার তবলীগের বরকত দেখিয়া মনে করে যে, কাজ হইতেছে, অথচ কাজ এক জিনিস আর বরকত অন্য জিনিস। দেখুন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুবারক জন্ম হইতেই বরকত প্রকাশ পাইতে থাকে, কিন্তু কাজ অনেক পরে আরম্ভ হয়। এইরূপভাবে ইহাও বুঝিয়া লও, আমি ঠিক সত্য বলিতেছি, এখনও আসল কাজ শুরু হইয়া যাইবে মুসলামন সাত শত বৎসর পূর্বের অবসস্থায় ফিরিয়া যাইবে। আর যদি কাজ শুরু না হয় বরং বর্তমানে যেই অবস্থা আছে সেই অবস্থায় থাসে, লোকেরা ইহাকেও অন্যান্য আন্দোলনের মত এক আন্দোলন বলিয়া মনে করে ও কর্মীরা ভুল ভ্রান্ত পথে চলে তাহা হইলে যেই ফেৎনা ফাছাদ শত শত বৎসর পরে আসিত তাহা কয়েক মাসের মধ্যে আসি পড়িবে। এই জন্য ইহাকে বুঝিবার জরুরত আছে।
৪১। একবার তিনি বলেন-
মাওলানা! আমাদের তবলীগে এলম ও জিকিরকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ব্যতীত আমলও হইতে পারে না এবং আমলের জ্ঞান বা পরিচয়ও হইতে পারে না। আবার জিকির ব্যতীত আমল অন্ধকার, ইহাতে নূর আসেতে পারে না। কিন্তু আমাদের কর্মীদের মধ্যে ইহার অভাব।
আমি আরজ করিলাম, হবলীগ নিজেই অতি বড় ফরিজা; এই জন্য ইহাতে জিকিরের কমি বা স্বল্পতা এইরূপে যেমন, মহহুম হযরত সৈয়দ ছাহেব ব্রেলভী যখন জেহাদের প্রস্তুতির সময় নিজের মুরিদদের জিকির শোগলেন পরিবর্তে তীরান্দাজী ও ঘোড় সওয়ারীতে মশগুল করিয়া দিয়াছিলেন। তখন কেহ কেহ এইরূপ শেকায়েত করিয়াছিলেন যে, বর্তমানে পূর্বের মত নূর নাই। হযরত সৈয়দ ছাহেব বলিয়াছিলেন যে, বর্তমানে পূর্বের মত নূর নাই। হযরত সৈয়দ ছাহেব বলিয়াছিলেন, হাঁ; বর্তমানে জিজিরের নূর নাই বটে, কিন্তু জেহাদের নূর আছে, যাহা এই সময়ে বিশেষ প্রয়োজন।
মওলানা বলিলেন, কিন্তু আমি এলম ও জিকিরের স্বল্পতায় অস্বস্থি অনুভব করি। আর এই স্বল্পতাও এই জন্য যে, আহলে এলম ও আহলে জিকির এই কাজে লাগেন নাই্ যদি এই হযরতেরা আসিয়া এই কাজ হাতে লন তাহা হইলে এই অভাবও পূরণ হইয়া যাইবে। কিন্তু ওলামা ও পীরেরাও এই কাজে এখন পর্যন্ত খুব কমই আসিয়াছেন।
এখন পর্যন্ত যেই সমস্ত তবলীগী জমায়াত বাহির (রওয়ানা) করা হয় তাহাতে আলেম ও পীরগণ যদি এই জমায়াতে শামির হইয়া কাজ করিতেন তাহা হইলে কতই ভাল হইত, সঙ্গে সঙ্গে অভাবও দূর হইত। আলহামদুলিল্লাহ (আল্লাহরই সমস্ত প্রশংসা) তবলীগের কেন্দ্রে আহলে এলম ও আহলে নেছবত (আলেম ও পীর) আছেন; কিন্তু তাহাদের সংখ্যা অতি অল্প; তাহারা প্রত্যেক জমাতের সহিত বাহির হইলে কেন্দ্রের কাজ কে করিবে।
৫২। একবার তিনি বলেন-
মুসলমানদের চার নিয়তে ওলামাদের খেদমত করা উচিতঃ
(১) ইসলামের জন্য; কেননা কোন মুসলমান যদি শুধু ইসলামের খাতিরে অর্থাৎ কেবল আল্লাহর ওয়াস্তে, ছওয়াবের জন্য মুসলমানের সহিত সাক্ষাত করে তাহা হইলে সত্তর হাজার ফেরেথমা তাহার পায়ের নীচে তাহাদের পাখা ও পালক (বাজু) বিছাইয়া দেয়। যখন প্রত্যেক মুসলমানের সহিত সাক্ষাতে এই ফজিলত পাওয়া যায় তখন ওলামাদের জিয়ারতেও এই ফজিলতে নিশ্চয়ই পাওয়া যাইবে।
(২) এই জন্য যে, তাহাদের শরীর ও মন এলমে নববীর বাহক ও ধারক। এই দিক দিয়াও তাহারা খেদমত ও তাজীমের যোগ্য।
(৩) এই জন্য যে, তাহারা আমাদের দ্বীনী কাজের তত্ত্বাবধায়ক।
(৪) তাহাদের জরুরিয়াত ও অভাব অভিযোগের অনুসন্ধান করিবার জন্য সক্ষম ধনী লোকের যদি তাহাদের জরুরিয়াত জানিয়া লইয়া তাহা পূরণ করিয়া দেন; তাহা হইলে তাহারা যেই সময় এই সমস্ত জরুরিয়াতের জন্য খরচ করিতেন তাহা বাচাইয়া এলমে দ্বীনের খেদমতে খরচ করিবেন এবং মালদারেরা তাহাদের এই সমস্ত কাজের ছওয়াব পাইবেন। কিন্তু বিশ্বস্ত ওলামাদের তরবিয়ত করা উচিত্ কেননা কোন ব্যক্তি বেশী সাহায্যের যোগ্য ও কোন ব্যক্তি কম সাহায্যের যোগ্য তাহা তাহারা না-ও জানিতে পারেন। (আর যদি কাহারও নিজের অনুসন্ধানে তাহা জানা সম্ভব হয় তা হইলে তিনি নিজেই অনুসন্ধান করিবেন।)
৫৪। একবার তিনি বলেন-
যে সমস্ত জমায়াত দেওবন্দ, ছাহারান পূর প্রভৃতি জায়গায় যাইতেছে তাহাদের সঙ্গে দিল্লীর ছাওদাগরদের চিঠি এই মর্মে নম্র সুরে বিনয়ভাবে লিখিয়া দেওয়া হউক যে, ইহারা আওয়ামের মধ্যে তবলীগে করিবার জন্য যাইতেছে। আপনাদের সময় অতি মূল্যবান, যদি কিছু সময় এই জামায়তের সহিত দিয়া ইহাদের পৃষ্ঠপোষকতা করিতে পারেন যাহাতে আপনাদের ও তালেব এলমদের কোন অসুবিধা না হয়; তাহা হইলে তাহাদের ছেরপরস্তী করিবেন ও তালেবে এলমদের এই কাজে আপনাদের নিজে তত্ত্বাবধানে সঙ্গে লইবেন। তালেবে এলমদের নিজ নিজ ওস্তাদের তত্ত্বাবধান ছাড়া এ কাজে অংশ নেওয়া উচিত নহে।
তবলীগী জামায়াতেকেও অছিয়াতে করা হইক যে, যদি ওলামারা কম মনযোগ দেন তাহাদের মনে যেন কোন খারাপ ধারণা না আসে, বরং ইহা বুঝা উচিত যে, ওলামা হযরত আমাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত আছেন। অন্যেরা যখন রাত্রে সুখে নিদ্রা যায় তখনও তাহারা এলমের খেদমতে মশগুল থাকেন। তাহাদের অমনোযোগিতাকে নিজের অক্ষতমা ও দোষ বলিয়া মনে করিবে যে, আমরা তাহাদের নিকট আসা-যাওয়া কম করিয়াছি। এ জন্য তাহারা আমাদিগ হইতে ঐ সমস্ত লোকের দিকে বেশী মনোযোগ দেন যাহারা বৎসরের পর বৎসর ধরিয়া তাহাদের কাছে পড়িয়া আছে।
পুনরায় বলেন- এক সাধারণ মুসরামানের বিরুদ্ধে বিনা কারণে বদগুমানি (খারাপ ধারণা) রাখা ও পোষণ করা মানুষকে ধ্বংসের পথে নেয়; ওলামার বিরুদ্ধে কথা বলা আরও কত বড় সঙ্গনি ব্যাপার।
পুনরায় বলেন- আমাদের তবলীগের তরিকা মুসলমানের ইজ্জত ও ওলামার হুরমত এক বুনিয়াদী জিনিস। প্রত্যেক মুসলমানকে ইসলামের খাতিরে এবং ওলামাদের দ্বীনি এলমের খাতেির সম্মান করা চাই।
পুনরায় বলেন- এলম ও জিকিরের কাজ এখন পর্যন্ত আমাদের মুবাল্লেগদের আয়ত্বে আসে নাই। ইহার জন্য আমি বড়ই চিন্তিত। ইহার তরিকা এই যে, তাহাদিগকে আহলে এলম ও আহলে জিকিরের নিকট পাঠাইয়া দেন, যেন তাহাদের তত্ত্বাবধানে থাকিয়া তবলীগের কাজও করে এবং তাহাদের এলম ও ছুহবত হইতেও ফায়দা উঠায়।
(১০)
৫৫। একদিন আমি আগন্তুক মেহমানদের সহিত কথাবার্তায় বেশী ব্যস্ত ছিলাম; মওলানার নিকট বেশীক্ষণ বসি নাই। জোহরের পর খেদমতে হাজির হইলে; তিনি বলিলেন, তোমার বেশীক্ষণ আমার নিকট থাকা চাই। আরজ করিলাম, আজ আগন্তুকদের বড় ভিড় ছিল; তাহাদিগকে আমার নিকট রাখিয়া।
পুনরায় বলেন- নিজের খালী হাত হওয়ার উপর একীন হওয়াই কৃতকার্যতা, কেহই নিজের কাজের দ্বারা কামিয়াব (কৃতকার্য) হইবে ন্ াকেবলমাত্র আল্লাহর ফজল দ্বারাই কৃতকার্য হইবে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেনঃ
“কেহই নিজের আমলের (কার্যের দ্বারা বেহেশতে যাইবে না। তাহারা (ছাহাবায়ে কেরাম) বলিলেন, আয় আল্লাহর রাসূল! আপনিও কি নহে? রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইলেন, যদি আল্লাহর রহমত আমাকে ঢাকিয়া না লয় আমিও নহে।”
এই হাদীছ পড়িয়া মওলানা নিজেও কাঁদিলেন, অন্যকেও কাঁদাইলেন।
৬২। তিনি বলেন-
দুইটি জিনিসের জন্য আমি বড়ই চিন্তিত। এই দুইটির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার। এক জিকির, ইহার অভাব আমাদের জামায়াতে অনুভূত হইতেছে। তাহাদিগসে জিকির শিক্ষা দিতে হইবে। অপরটি মালদারদিগষে জাকাতের ‘মাছরাফ’ বা খরচ করিবার জায়গা বুঝাইয়া দিতে হইবে। তাহাদের অধিকাংশ জাকাত বরবাদ যাইতেছে। উপযুক্ত স্থানে খরচ হইতেছে না। আমি এইরূপ ৪০ জন লোকের নাম লিখাইয়া দিয়াছি যাহাদের লোভ-লালসা নাই, তাহাদিগকে জাকাত দিলে তাহাদের মধ্যে লোভ লালসা হইবে না। (কামনা বাসনা বাড়িয়া যাইবে না।) তাহারা আল্লাহর উপর ভরসা করিয়া তবলীগী কাজে লাগিয়া আছে, তাহাদের সাহায্য করা অত্যধিক প্রয়োজন। কাহার কত জরুরত আছে তাহার অনুসন্ধান মালদারের করা দরকার। তাহারা যে পেশাদার ভিক্ষুক ও আম চাদা আদায়কারীদের জাকাত দিয়া থাকেন অনেক সময় উহা দ্বারা তাহাদের জাকাত ‘মাছরাফে’ খরচ হয় না।
৬৫। তিনি বলেন-
আমার মনে আমার উপর ‘ইস্তিদরাজের’ (আরজ বা শাস্তি দেওয়ার জন্য নেয়ামত ও সময় দেওয়ার) আশঙ্কা ও ভয় হয়। আমি আরজ করিলাম, এই ভয়ই প্রকৃত প্রকৃত ঈমান বা ঈমানের চিহ্ন। (ইমাম হাছান বছরী) বলিয়াছেন, “নিজের উপর ‘নেফাকের’ (বাহিরে ইসলাম ও ভিতরে কুফরের) ভয় বা আশঙ্কা কেবল মাত্র মুুমিনেরই হইয়া থাকে।” কিন্তু যৌবনকালে ভয় বেশী থাকা ও বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহর প্রতি ভাল ধারণা, (হুছনে জন) আশা বেশী থাকা ভাল। তিনি বলিলেন- “হাঁ, ঠিক বলিয়াছেন।”
৮৫। তিনি বলেন-
আমাকে যখন মেওয়াতও যাইতে হয় তখনও আমি সর্বদা আহলে খাইর ও আহলে জিকিরের জমায়াতও লইয়াই যাই। তথাপি সাধারণের স্েঙ্গ মেলামেশায় কলবের অবস্থা এতই পরিবর্তন হইয়া যায় যে, যতক্ষন পর্যন্ত ‘এতেকাফ’ করিয়া উহাকে ধৌত না করি অথবা কিছু দিনের জন্য ছাহারানপুর অথবা বায়পুর যাইয়া খাছ জমায়াত ও খাছ পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে না থাকি ততক্ষণ পর্যন্ত কলব নিজের পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়া আসে না।
১১১। তিনি বলেন-
পয়গম্বরগণ নিস্পাপ (মাছুম), সংরক্ষিত (মাহফুজ) ও স্বয়ং খোদা তাআলা কর্তৃক শিক্ষিত ও দীক্ষিত ও নির্দেশিত হওয়া সত্বেও এই সমস্ত আদেশ নির্দেশ অন্যকে পৌঁছানের সময় সকল প্রকারের লোকের সঙ্গে মেলা-মেশা ও উহাদের নিকট আসা যাওয়া করাতে তাঁহাদের মুবারক ও মুনাওর (বরকত ও আলোকপূর্ণ) অন্তরেও ঐ সমস্ত সাধারণ লোকের (অন্তরের) ময়লা ও আবর্জনার দাগ পড়িয়া যাইত। কাজেই ঐ তাহারা নির্জনে বসিয়া জিকির ও এবাদতের দ্বারা ঐ সমস্ত ময়লঅ আবর্জনাকে বিধৌত করিতেন।
তিনি বলেন- ছুয়ায়ে মুজাম্মেলে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে রাত্রি জাগিয়া তাহ্জ্জাুদ পড়িবার হুকুম দেওয়ার মধ্যে
“হে রাসূল! দিনে আপনাকে অনেক চলাফিরা করিতে হয়।”
এই আয়াতেও এই দিকে ইশারা আছে যে, নবীর ছরদারেরও দিনের বেলায় দৌড়াদৌড়ি ও চলাফেরার গতিকে রাত্রির অন্ধকারে নির্জনে একাগ্রচিত্তে এবাদত করিবার প্রয়োজন ছিল। এই আয়াতের পূর্ববর্তী আয়াতে যে বলা হইয়াছে-
“আর আপনার প্রভুর নাম ইয়াদ করেন ও এককভাবে একাগ্রচিত্তে তাহাতে মনোনিবেশ করেন”
ইহা দ্বারাও এই বিষয়ের আরও অধিক সমর্থন পাওয়া যায় যে, তবলীগী কর্মীদের জিকির ফিকিরের সহিত একাগ্রচিত্তে আল্লাহর এবাদতের বিশেষ প্রয়োজন আছে। সুতরাং আমাদের এইরূপ করিতে হইবে। বরং আমাদের জন্য ইহা আরও বেশী প্রয়োজন। কারণ প্রথমতঃ আমরা নিজে অপরিপক্ক ও অন্ধকারে পূর্ণ, তদুপরি আমরা যে সমস্ত বুজুর্গ হইতে আদেশ উপদেশ লইয়া থাকি তাহারাও আমাদের মত অসংরক্ষিত। আর যাহাদের মধ্যে তবলীগ করিতে যাই তারাও সাধারণ মানুষ। মোটের উপর, আমাদের নিজের মধ্যেও ময়লা আবর্জনা। আর আমাদের উভয় পার্শ্বেও মানবীয় ময়লা ও আবর্জনা যাহার (আছর) প্রতিবিম্ব আমাদের কলবে পড়া স্বাভাবিক ও অবশ্যসম্ভাবী; এই জন্য আমরা এই নির্জন ও অন্ধকারের এবাদতের জিকির ফিকির অত্যধিক মোহতাজ। অন্তরের মন্দ আছর (প্রতিবিম্ব) দূর করিবার জন্য ইহা এক বিশেষ ফলপ্রদ ঐষধ।
--
১১৫। এ সম্বন্ধে আরও বলেন-
কোরআন পাকে আল্লাহর রাস্তায় খরচকারীদের উদাহরণ যে ঐ ব্যক্তির দ্বারা দিয়াছেন যিনি এক দানা বপন করিয়া সাত শত দানা পাইলেন।
“উদাহরণ ঐ সমস্ত লোকের যাহার আল্লাহর রাস্তায় মাল খরচ করে, যেমন একটি দানার সাতটি শিশ, এক শত দানা, আর আল্লাহর যাহাকে চান আরও বাড়াইয়া দেন, আর আল্লাহ অধিক দাতা ও জ্ঞানী।”
ইহা পার্থিব বরকতেরই দৃষ্টান্ত। পরকালে ইহার যে বদলা মিলিবে তাহা অতি দূর ও সুদূর প্রসারী হইবে। তৎপ্রতি ইশারা ইহার পূর্ববর্তী আয়াতে আছে-
.........................................
“যাহারা আল্লাহর রাস্তায় তাহাদের মাল খরচ করেন ও খরচ করার পর খোটা দেন না ও কষ্ট দেন না তাহাদের পারিশ্রমিক (আজর) তাহাদের প্রভুর নিকট আছে। তাহাদের কোন ভয় নাই ও তাহারা দুঃখিত হইবেন না।”
এই আয়াত ...................... এতদ্বারা মৃত্যুর পরে পরকালে প্রাপ্ত আছলী আজার বা প্রতিদানের প্রতি ইশারা করা হইয়াছে।
১২৮। তিনি বলেন-
প্রত্যেক কাজের শেষ অংশ নিজের কছুরী স্বীকার ও কাজ কবুল না হওয়ার ভয় হওয়া চাই। (অর্থাৎ প্রত্যেক নেক কাজকে নিজের দিক হইতে উত্তম হইতে উত্তম রূপে আদায় করিবার কোশেশ করিবে, কিন্তু তৎসত্ত্বেও উহা শেষ করিবার সময় এই অনুভূতি হওয়া চাই যে, যেই রূপ আল্লাহ পাকের হক ছিল ও যেরূপ করা উচিত ছিল সেইরূপ হইতে পারে নাই। এজন্য অন্তরে এই ভয় ও সংশয় হওয়া চাই যে, আমার এই আমল নাকেছ (অসম্পূর্ণ) ও খারাপ হওয়ার দরুণ অগ্রাহ্য হইয়া কেয়ামতের দিন আমার মুখের উপর নিক্ষিপ্ত হইতে পারে। তৎপর এই অনুভূতি, ভয় ও সংশয়ের কারণে আল্লাহর সামনে কাঁদিবে ও বার বার ক্ষমা চাহিবে।
১২৯। তিনি বলেন-
এ'তেকাদাত (বিশ্বাস সমূহ) সম্বন্ধেও উছুল (মূলনীতি) এই যে, নিজের তরফ হইতে এ'তেকাদকে শক্ত ও মজবুতভাবে রাখিবার পূর্ণ কোশেশ করিবে। আর ইহার বিপরীত খেয়ালও অন্তরে আসিতে দিবে না; কিন্তু তৎসত্ত্বেও ভয় করিতে থাকিবে, যথাযোগ্য একীন আমার হাছিল আছে কিনা?
তিনি বলেন- ছহীহ বোখারী শরীফে এবনে-আবি-মলিকা তাবেয়ী হইতে যে হাদীছ নকল করা হইয়াছে-
..................................................
“আমি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ৩০ জন ছাহাবীর সহিত সাক্ষাত করিয়াছি, তাঁহাদের প্রত্যেকেই নিজের উপর নেফাকের ভয় করিতেন।” উহার সারমর্মও ইহাই।
তিনি বলেন- এ'তেকাদ ও একীনের জরুরত এই জন্যও আছে যে, আল্লাহ ও রাসূল যাহা কিছু ফরমাইয়াছেন অন্তরের অন্তস্থল হইতে ভয়, ভীতি সম্মান স¤প্রীতির সহিত তাহা কবুল করিবে। এই অবস্থায় আমলও হইবে, আমলের মধ্যে প্রাণও হইবে।
১৩৩। তিনি বলেন-
আমার নিকট সংশোধনের তরতীব এইরূপঃ (কলেমায়ে তৈয়েবার দ্বারা ঈমানী অঙ্গিকার তাজা করিবার পর) সর্বাগ্রে নামাজ ঠিক ও পরিপূর্ণ করার ফিকির করা চাই। নামাজের বরকতেই বাকী পূর্ণ জিন্দেগীকে ঠিক হওয়ার চিরস্থায়ী ফোয়ারা- নামাজ ছহীহ ও পরিপূর্ণ হইলেই অবশিষ্ট জীবনে যোগ্যতা ও পরিপূর্ণতা (কামাল) আপন হইতেই আসিবে। (এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিবার জন্য মাওলানা মনজুর নো’মানীর ‘নামাজ’ নামক রেছালা দেখুন)।
১৩৪। তিনি বলেন-
আমাদের এই দ্বীনি দাওয়াতের সমস্ত কর্মীদের ভাল করিয়া বুঝাইয়া দেওয়া চাই যে, তবলীগী জময়াতগুলি বাহির হইবার উদ্দেশ্যে শুধু অন্যকে পৌঁছাইয়া দেওয়া ও হেদায়েত করা নহে; বরং এই উপায়ে নিজের (এছলাহ) সংশোধন ও শিক্ষা তালীম তরবিয়তও উদ্দেশ্য বটে। কাজেই বাহিরে থাকা কালে এলম ও জিকিরে মশগুল থাকার বিশেষ ব্যবস্থা করিতে হইবে। দ্বীনের এলম ও জিকিরের বিশেষ ব্যবস্থা ব্যতীত বাহির হওয়ার কোনই মূল্য নাই। ইহাও জরুরী যে, এই এলম ও জিকিরে মশগুল থাকাও এই পথের বুজুর্গদের সহিত সম্বন্ধ রাখিয়া তাঁদের নির্দেশাবলী মানিয়া ও তাঁহাদের তত্ত্বাবধানে হইতে হইবে। পয়গাম্বরদের (তাঁহাদের উপর শান্তি বর্ষিত হউক) তত্ত্বাবধানে এলম ও জিকির আল্লাহর নির্দেশ মত ছিল। ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে এলম ও জিকিরের তালিম পাইতেন ও হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরাপুরিভাবে তাঁহাদের তত্ত্বাবধান করিতেন। এইভাবে প্রত্যেক যুগের লোকেরা নিজেদের বুজুর্গদের নিকট হইতে এলম ও জিকিরের তালিম পাইতেন ও তাঁহাদের তত্ত্বাবধানে ও নেতৃত্বে পূর্ণ করিতেন। এইরূপ আজও আমরা আমাদের বুজুর্গদের তত্ত্বাবধানের মুখাপেক্ষী (মোহ্তাজ)। অন্যথায় শয়তানের জালে আটকাইয়া যাইবার বড়ই সম্ভাবনা আছে।
(১০)
১৪৩। এ সম্বন্ধে তিনি আরও বলেন-
স্বাধীনভাবে ও নিজের মনমত না চলা বরং নিজকে ঐ সমস্ত বুজুর্গদের পরামর্শের অধীন রাখা যাহাদের উপর সর্বজন মান্য ও স্বীকৃত বুজুর্গেরা আল্লাহওয়ালা বলিয়া আস্থা স্থাপন করিয়া গিয়াছেন- এই ছিলছিলার এক ওছুল। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর ছাহাবায়ে কেরামদেরও সাধারণ মাপকাঠি ইহাই ছিল যে, তাহারা ঐ সমস্ত বড়দের উপর আস্থা স্থাপন করিতেন যাহাদের উপর হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে আস্থা রাখিতেন। তৎপর যাহাদের উপর হজরত আবু বকর ও হযরত ওমর (রাঃ) আস্থা রাখিতেন তৎপর যাহাদের উপর হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর (রাঃ) আস্থা রাখিতেন তাঁহারাই অধিকতর আস্থার যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইতেন। দ্বীনের কাজে আস্থা স্থাপনের জন্য সবিশেষ হুসিয়ারীর সহিত নির্বাচন করা দরকার, অন্যথায় ভীষণ ভুল পথে যাওয়ার ভয় আছে।
১৪৬। সাধারণতঃ কর্মীরা বড় লোক ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের পিছে পড়িয়া থাকে। আল্লাহর গরীব ও নিঃসহায় লোকেরা নিজে নিজে আসিলেও তাহাদের প্রতি মনোযোগ দেয় না। ইহা মাল ও ক্ষমতার পূজা। ভাল করিয়া বুঝিয়া লও; যাহারা নিজে নিজে আসিয়াছে তাহারা আল্লাহর দান ও তাহারাই প্রেরিত; আর যাহাদের পিছে পড়িয়া তুমি তাহাদিগকে আনিয়াছ তাহারা তোমার উপার্জিত। যাহা আল্লাহর খালেছ দান তাহার কদর নিজের উপার্জিত হইতে বেশী হওয়া চাই। যেই সমস্ত দুরবস্থাপন্ন গরীব মেওয়াতী এখানে পড়িয়া থাকে তাহাদের কদর কর।
একবার চিন্তা করিয়া দেখ, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করিয়াছিলেন-
“আয় আল্লাহ! আমাকে মিছকিনী অবস্থায় জীবিত রাখ, মিছকিনী অবস্থায় মৃত্যু দাও এবং মিছকিনদের জামায়াতের মধ্যে আমাকে উঠাও।
১৪৭। তিনি বলেন-
হযরত গাঙ্গুলী (রহঃ) এই যুগের কুতুবে এরসাদ ও মুজাদ্দেদ ছিলেন। কিন্তু মুজাদ্দেদের জন্য ইহা জরুরী নহে যে, তাজদিদের সমস্ত কাজ তাহার হাতে জাহের হয়, এবং তাহার লোকের দ্বারা যে সমস্ত কাজ হয় তাহাও গৌণভাবে তাহারই কাজ। যেমন- খুলাফায়ে রাশেদিনের বিশেষ করিয়া শেখাইনের কাজ। প্রকৃত প্রস্তাবে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজ।
১৫০। হযরত গাঙ্গুলীর (আল্লাহ পাক তাঁহার কবরকে নূরান্বিত করুক) পৌত্র হযরত হাফেজ মুহাম্মদ ইয়াকুব ছাহেব গাঙ্গুলী জিয়ারত ও ইয়াদত (রোগের সময় দেখা) করিবার জন্য আসিয়াছিলেন। তাঁহার সঙ্গে তাঁহার পরিবারের এক স্ত্রীলোকও ছিলেন। (খুব সম্ভব তাঁহার মেয়েই ছিলেন) যিনি হযরত মাওলানার বিমার পুরছির জন্য আসিয়াছিলেন। হযরত মাওলানা তাহাকে পর্দার পিছে কামরার মধ্যে ডাকাইয়া লইলেন। তাঁহাকে সম্বোধন করিয়া ঐ সময় হযরত মওলানা যাহা কিছু বলিয়াছিলেন তাহার কয়েকটা বাক্য লিখিয়া লওয়া হইয়াছিল, যাহা নিম্নে দেওয়া গেল।
তিনি বলেন-
“যে মানুষের শোকরিয়া আদায় করে না সে আল্লাহর শোকরিয়াও আদায় করে না।” আপনাদের পরিবার হইতেই আমি দ্বীনের নেয়ামত পাইয়াছি। আমি আপনাদের ঘরের গোলাম। গোলামের নিকট যদি কোন ভাল জিনিস আসিয়া যায় তাহার উচিত তাহার মুনীবকে উপহার স্বরূপ তাহা পেশ করিয়া দেওয়া। আমি গোলামের নিকট আপনাদেরই ঘর হইতে সংগৃহীত নবুয়্যতের মিরাছের সওগাত আছে। ইহা ব্যতীতও ইহা হইতে উত্তম অন্য কোন উপহার আমার নিকট নাই, যাহা আমি পেশ করিতে পারি। দ্বীন কি? প্রত্যেক অবস্থাই আল্লাহর আদেশ তালাস করতঃ উহার ধ্যান করিয়া নিজের নফছের তাকাজার সংমিশ্রণ হইতে বাঁচিয়া তাহা আদায় করিতে লাগিয়া থাকা। আল্লাহর হুকুম তালাস না করিয়া ও উহার ধ্যান না করিয়া, কোন কাজে লিপ্ত হওয়াই দুনিয়া। এই তরিকায় কয়েকদিনের মধ্যে ঐ জিনিস হাছিল হইবে যাহা অন্য তরীকায় পঁচিশ বৎসরেও হাছিল হয় না। আমি মেয়েলোকদিগকে বলি- তোমরা দ্বীনের কাজে নিজের পরিবারের লোকদের সাহায্যকারিণী হয়। তাহাদিগকে নিশ্চিন্তে দ্বীনের কাজে লাগিতে সুযোগ দাও। পারিবারিক কাজের বোঝা তাহাদের উপর হইতে হালকা করিয়া দাও; তাহারা যেন বে-ফিকির হইয়া দ্বীনের কাজ করিতে পারে। যদি মেয়েলোকেরা এইরূপ না করে তাহা ইইলে তাহারা -------- “শয়তানের জাল হইয়া যাইবে।” (অর্থাৎ শয়তানের জাল ও ফান্দ হইয়া মানুষকে তথায় আটকাইয়া দ্বীনের কাজ হইতে ফিরাইয়া রাখিবে। ইহা হাদীছের বিষয়বস্তু।)
নিজের কামনা ও বাসনাকে আল্লাহর আদেশাবলীর অধীন করাই দ্বীনের হাকীকত। কেবলমাত্র দ্বীনি মাছায়েল জানার নাম দ্বীন নহে। ইহুদীদের ওলামা দ্বীনের কথা ও শরীয়তের মাছায়েল খুব বেশী জানিত, কিন্তু তাহারা নিজের কামনা ও বাসনাকে আল্লাহর আদেশের অধীন করে নাই, এই জন্য অভিশপ্ত ও বিতাড়িত হইয়াছিল।
এই কথাবার্তার মধ্যে কোন বিশেষ বিষয়ের জন্য হযরতের নিকট দোয়ার দরখাস্ত করা হইলে তিনি বলেন- যে হেক আল্লাহর তাকওয়া (ভয়) এখ্তিয়ার করে অর্থাৎ নিজের কামনা ও বাসনাকে আল্লাহর হুকুমরে অধীন করিয়া দেয় তাহার যাবতীয় মুশকিলাত (সমস্যা) আল্লাহ পাক গায়েবের পর্দা হইতে সমাধান করিয়া দেন। আর এমন রাস্তা দিয়া তাহার সাহায্য করিয়া থাকেন যাহা তাহার খেয়াল ও কল্পনায়ও আসে নাঃ- ........................................................................
“যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ যাবতীয় সংকট হইতে বাহির হইবার জন্য তাহাকে রাস্তা করিয়া দেন ও ধারণার অতীত উপায়ে তাহাকে রিজিক দিয়া থাকেন।”
আল্লাহার খাছ মদদ হাছির করিবার নিশ্চিত ও শর্ত-সাপেক্ষ তদ্বীর তাঁহার দ্বীনের সাহায্য করাঃ-
.......................................................
“যদি তোমরা আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য কর আল্লাহ পাক তোমাদের সাহায্য করিবেন।”
যদি তোমরা আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য কর তাহা হইলে ধ্বংসকর বস্তু যাহা তাহাই তোমাদের জন্য জীবনের সুখপ্রদ সামগ্রী হইবে। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) জান প্রাণ দিয়া আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য করিয়াছিলেন, আল্লাহ পাক আগুনকে তাহার জন্য ফুলের বাগান করিয়াছিলেন। এইরূপভাবে হযরত মুছা (আঃ) ও তাঁহার কওমকে যে দরিয়ার স্বভাব ডুবাইয়া দেওয়া সেই দরিয়াই নিরাপদে তেির পৌঁছাইয়া দিয়াছিল।
১৫৩। ঐ সমস্ত ছাত্রদিগকে সম্বোধন করিয়া তিন বলেন-
নামাজ কায়েম করা সমস্ত জেন্দেগী দুরস্তকারী কাজ। কিন্তু তখনই নামাজ কায়েম করা পূর্ণ হইবে যখন নামাজ সম্বন্ধে যে সব গুণের কথা কোরআন হাদীছে বলা হইয়াছে নামাজীর মধ্যে তাহা পয়দা হইবে।
--
১৫৯। ভারতের একজ বিখ্যাত রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের এক বড় নেতা (যিনি ভারতের খুব বড় ও যাদু-গুণ বিশিষ্ট বক্তাও বটে) জেয়ারত ও বিমারের সময় দেখা ও দর্শন লাভের জন্য আসেন। দুই দিন পূর্বে হযরত মওলানার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। সেই জন্য দূর্বলতা এ বাড়িয়া গিয়াছিল যে, অধিকাংশ সময় ঠোঁটের উপর কান রাখিলে কথা শুনা যাইত। যখন তাঁহার আগমনের সংবাদ দেওয়া হইল তখন এই অধীনকে (মলফুজাতের সংস্কলককে) ডাকাইয়া বলিলেন- তাহার সহিত কথা বলা আমার জন্য জরুরী, কিন্তু ছুরুত এই হইবে যে, তোমার কান আমার মুখের নিকটবর্তী রাখ; আমি যাহা বলি তাহা তাঁহাকে বলিয়া যাও।
এইরূপে যখন তিনি ভিতরে আসিলেন, তখন কথা তো আমার মধ্যস্ততায়ই শুরু করেছিলেন, কিন্তু দুই তিন মিনিট পর আল্লাহ পাক এত শক্তি দিলেন যে, প্রায় আধা ঘন্টা পর্যন্ত ক্রমাগত কথা বলিতে থাকেন। এই বৈঠকের যে সমস্ত কথা লিপিবদ্ধ করা হইয়াছিল তাহা নিম্নে উদ্ধৃত হইল।
তিনি বলেন-
মুসলমানে মুসলমানে মিলন শুধু দ্বীনের উন্নতির জন্য, অন্যথায় মুসলমানদের ও অমুসলমানদের মিলনের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? আপনি এখানে কিছুদিন থাকিয়া আমাদের কাজ দেখুন, ইহা ব্যতীত আমার কথা বুঝে আসা ও আমার উদ্দেশ্যে পৌঁছা মুশকিল (অতীব কঠিন)। আসল কথা এই যে, হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহিত আমাদের সম্বন্ধ মরিয়া গিয়াছে। ইহাকে জীবিত করিতে হইবে। এই কোশেশের মধ্যে মরিতে হইবে।
আমি প্রথমে মাদ্রাসায় পড়াইয়াছি (অর্থাৎ মাদ্রাসায় দরছ দিয়াছি)। তথায় তালেবে এলমদের ভীর জমিয়াছিল। অনেক ভাল ভাল উপযুক্ত ছাত্র বেশী সংখ্যায় আসিতে লাগিল। আমি চিন্তা করিলাম, ইহাদের সহিত আমার মেহনতের ফল ইহা ব্যতীত কি হইবে যে, যাহারা শুধু আলেম হইবার জন্য মাদ্রাসা সমূহে আসিয়া থাকে আমার নিকট পড়িবার পরও তাহারা আলেম হইয়া যাইবে ও তাহাদের ব্যবসায়ও উহাই হইবে যাহা আজকাল সাধারণতঃ লোকে পছন্দ করিয়া থাকে। কেহ হেকিমী পড়িয়া দাওয়াখানা করিবে, কেহ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়া স্কুল কলেজে চাকুরী করিবে, কেহ মাদ্রাসায় বসিয়া পড়াইতেই থাকিবে। ইহা হইতে বেশী কিছু আর হইবে না। ইহা চিন্তা করিয়া মাদ্রাসায় পড়ান হইতে আমার মন ফিরিয়া গেল।
ইহার পর এক সময় আসিল যখন আমার পীর ছাহেব আমাকে (মুরীদ করিবার) এজাজত (খেলাফত) দিয়া দিলেন, তখন আমি মুরীদদের জিকির শোগল শিখান শুরু করিলাম। এদিকে আমাদের মনোযোগ বেশী হইল। আল্লাহই সব করিলেন, আগমনকারীদের মধ্যে এত শীঘ্র কইফিয়াত আহ্ওয়াল অবতীর্ণ ও অবস্থার উন্নতি হওয়া আরম্ভ হইল যে, আমি নিজেই বিস্মিত হইলাম। তখন আমি ভাবিতে লাগিলাম, ইহা কি হইতেছে এবং এই কাজে লাগিয়া থাকিলে কি ফল বাহির হইবে? বেশী হইতে বেশী হইলে এই হইবে যে, কতকগুলি ছাহেবে হাল জাকের শাগেল লোক পয়দা হইবে। তখন লোকদের মধ্যে তাহাদের কথা প্রচারিত হইয়া পড়িলে কেহ মোকদ্দমায় জিতিবার জন্য দোয়া করাইতে আসিবে, কেহ ছেলেমেয়েদের জন্য তাবীজ চাহিবে, কেহ সওদাগরী ও ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য দোয়া করাইবে। বেশী হইতে বেশী হইলে ইহাদের দ্বারা ভবিষ্যতে আরও কয়েকজন মুরীদের মধ্যে জিকির ও তালকীনের ছিলছিলা চলিবে। ইহা চিন্তা করিয়া এই দিক হইতেও আমার মন ফিরিয়া গেল এবং আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইলাম যে, আল্লাহ পাক যে আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক শক্তি দান করিয়াছেন তাহা খরচ করিবার ছহীহ জায়গা ঐ কাজ যাহাতে হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের শক্তি সামর্থ খরচ করিয়া গিয়াছেন, আর ঐ কাজ আল্লাহর বান্দাদিগকে বিশেষ করিয়া গাফেল ও বে-তলবদিগকে আল্লাহর দিকে নিয়া আসা ও আল্লাহর কথাগুলিকে প্রচলিত করিবার জন্য (জীবনকে) জানকে বে-কিমত করার প্রথা জারী করা।
বছ্ ইহাই আমাদের আন্দোলন। আর ইহাই আমরা সকলকে বলিয়া থাকি। এই কাজ হইতে থাকিলে বর্তমান সময় হইতে হাজার গুণ বেশী মাদ্রাসা সশরীরে এক একখানা মাদ্রাসা ও খানকাহ হইয়া যাইবে। হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত নেয়ামত এমন বিস্তৃতভাবে বিতাড়িত হইতে থাকিবে যাহা ইহার শানের যোগ্য।
হযরত! আল্লাহ তাআলা আপনাকে এক শক্তি দিয়াছেন, ইহা দ্বারা আমার উদ্দেশ্য কথা বলিবার ও বক্তৃতা দিবার শক্তি নহে, বরং আমার মকছুদ এই যে, আপনি এক জামায়াতের গণ্যমান্য নেতা । হাজারে হাজারে মানুষ আপনার কথা মানে, আপনি আল্লাহ-প্রদত্ত এই নেয়ামতের কদর করুন, ইহাকে আল্লাহর কাজের জন্য তাঁহার আদেশাবলী প্রচলিত করিবার জন্য ব্যবহার করুন।
ইহার ছুরত (প্রণালী) এই যে, যাহারা আপনার কথা মানে তাহাদিগকে আমাদের লোকের সঙ্গে কিছুদিন থাকিয়া আমাদের কাজ বুঝিবার ও শিখিবার জন্য অনুপ্রাণিত করুন। তৎপর নিজের কেন্দ্রের মধ্যে নির্দেশ কাজ করিতেন। ইহা দ্বারা খোদা চাহেত তাহারা অনেক কাজের লোক হইয়া যাইবে।
হযরত, ঈমানের দুইটি বাহু আছে; একটি আল্লাহ ও রাসূলের দুশমনদের প্রতি শক্ত ও কটু ব্যবহার। অপরটি আল্লাহ ও রাসূলের অনুগামী ও প্রেমিকদের প্রতি নরম সদয় ব্যবহার। তাহাদের সামনে নিজেকে বিনয়ী ও অবনমিত করা।
“মুমিনদের প্রতি অবনমিত ও কাফেরদের প্রতি শক্ত ও কুপিত।”
“কাফেরদের উপর পরাক্রমশালী , মুমিনদের উপর দয়াশীল।”
মুমিনদের উন্নতির জন্য এই দুই বাহুরই প্রয়োজন আছে। এক ডানা দ্বারা কোন পক্ষীই উড়িতে পারে না। ঐ বুজুর্গ হজরতের ভক্ত ও বিশ্বাসী ছিলেন। হজরতের কথা শুনিয়া আরজ করিলেন - “ নিজের যৌবন ও শক্তি অন্য কাজে ব্যয়িত হইয়াছে, ঐ সময় কোন বুজুর্গ টানিয়া নিলেন না, এখন আমি বুড়া হইয়াছি, কোন নূতন কাজের সাহস ও শক্তি নাই। এখন হযরত আমা হইতে নিজের কাজ নিতে চাহিতেছেন; এখন আমি কোন কাজের উপযুক্ত নহি।“
হযরত মাওলানা বলেন-
যদি প্রকৃত প্রস্তাবে পূর্বে আপনি নিজের মধ্যে কোন শক্তি সামর্থ আছে ও আপনি কিছু করিতে পারেন বলিয়া মনে করিতে ছিলেন তাহা হইলে তখন আপনি আল্লাহর কাজের জন্য যোগ্য ছিলেন না। এখন যদি আপনার ইহাই একীন হইয়া থাকে যে, আপনার মধ্যে কোন শক্তি সামর্থ্য নাই ও আপনি কিছুই করিতে পারেন না তাহা হইলে বর্তমানেই আপনি আল্লাহর কাজের যোগ্য হইয়াছেন। আল্লাহর কাজ করিবার জন্য ও আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার যোগ্য হওয়ার জন্য শর্ত এইযে, মানুষ নিজেকে শক্তিহীন ও নিরুপায় মনে করে ও শুধুমাত্র আল্লাহকেই কার্যকারক বলিয়া একীন করে; ইহা ব্যতীত গায়েবী সাহায্য হয় না। হাদীছে কুদছীতে আছে -
...................................................................................
“আমি তাহাদের সহিত আছি, যাহাদের দিল(অন্তর) ভাঙ্গিয়া গিয়াছে।”
তিনি বলেন -
আমি রাজনৈতিক কর্মীদের নিকটও কৃতজ্ঞ। তাহারা গভর্ণমেন্টকে তাহাদের প্রতি আকৃষ্ট করিয়া রাখিয়াছে। সেজন্য আমি নিশ্চিন্তে এতদিন নিজের কাজ করিতে পারিয়াছি।
বিদায়ের সময় ঐ বুজুর্গ দোয়ার দরখাস্ত করিলে তিনি বলেন- হযরত! প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তাহহার অসাক্ষাতে দোয়া করা প্রকৃতপক্ষে নিজের জন্যই দোয়া করা। হাদীছে আছে, যখন কোন মুসলমান নিজের কোন মুসলমান ভাইয়ের জন্য মঙ্গল ও কৃতকার্যতার কোন দোয়া করে তখন আল্লাহর ফেরেশতাগণ বলেন- “ তোমার জন্য ও ঐরুপ।” অর্থাৎ হে আল্লাহর বান্দা ! আল্লাহ (যেন) ঐ জিনিস তোমাকেও দেয়। সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কোন মঙ্গলের দোয়া করা প্রকৃত প্রস্তাবে নিজের জন্য ফেরেশতা দ্বারা দোয়া করাইবার এক একীনী তদ্বীর বা উপায়।
১৬১। এই সম্বন্ধে তিনি আরও বলেন-
আমাদের কোন কোন খাছ বুজুর্গ আমার এই রীতির জন্য আমার উপর নারাজ যে, আমি এই দ্বীনি কাজের জন্য প্রত্যেক প্রকারের ও আচারের লোকের সহিত ও মুসলমানের প্রত্যেক স¤প্রদায়ের লোকের সহিত মিলামিশা করিতে বলিয়া থাকি। কিন্তু আমি নিজের বুজুর্গদের এই নারাজীকে সহ্য করা ও ইহাদিগকে মাজুর মনে করতঃ ইহাদিগকে এই দিকে আনিবার জন্য পুরা কোশেশ করিতে থাকাকে আমার করনীয় আল্লাহর শোকরের এক অংশ বলিয়া মনে করিঃ
------------------------------
“হক যখন তোমার দিকে তুমি সহিষ্ণু হও।”
এই বুজুর্গদের ধারনা যে, এই কার্যপদ্ধতি আমাদের হযরত পীর ছাহেবের (আল্লাহ তাঁহার কবরকে নুরান্বিত করুক) পদ্ধতির ও প্রবৃত্তির বিপরীত। কিন্তু আমি বলি, যেই জিনিস দ্বীনের জন্য উপকারী ও অতি লাভজনক হওয়া দলীল ও অভিজ্ঞতা দ্বারা জানা গিয়াছে ইহাকে শুধু এই জন্য গ্রহণ না করা যে, আমাদের পীর ছাহেব উহা করেন নাই, বড়ই ভুল। পীর তো পীরই, খোদা তো নহেন?
১৬৪। আমাদের এই আন্দোলনের খাছ মকছুদ ইহা যে, মুসলমানের সমস্ত আকর্ষণের উপর দ্বীনের আকর্ষণকে জয়ী করা এবং এই পথে উদ্দেশ্যের একতা পয়দা করিয়া ও একরামে মুসলিমের উছুলকে প্রচলিত করিয়া পুরা কওমকে নিম্নলিখিত হাদীছের উদাহরণ করাঃ
“সমস্ত মুসলমান এক শরীরের মত।”
১৬৬। কোন কোন মুরিদকে সম্বোধন করিয়া তিনি বলেন-
হযরত ফারুক আজম (রা) হযরত আবু ওবায়দা ও হযরত আবু জরকে (রা) বলিতেন, আমি তোমাদের তত্ত্বাবধানের মুখাপেক্ষী (উর্ধ্বে নহি)। আমিও তোমাদিগকে ইহাই বলিতেছি যে, আমার অবস্থার প্রতি দৃষ্টি রাখিও যাহা সংশোধনের দরকার তাহা সংশোধন করিও।
১৭২। তিনি বলেন-
আমাদের সমস্ত কর্মীদের ভালভাবে বুঝিয়া নেওয়া চাই যে, তবলীগের জন্য বাহিরে থাকিবার সময় এলম ও জিকিরের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে হইবে। এলম ও জিকিরের উন্নতি ব্যতীত দ্বীনি উন্নতি অসম্ভব। সঙ্গে সঙ্গে এলম ও জিকির হাছেল করা ও পূর্ণ করা এই পথের বুজুর্গদের সহিত সম্বন্ধ রাখিয়া তাহাদের পরিচালনায় ও তত্ত্বাবধানে হইতে হইবে। আম্বিয়া (আ)-দের এলম ও জিকির আল্লাহ পাকের পরিচালনায় ও তত্ত্বাবধানে হইত। হযরতের সাহাবায়ে কেরামের এলম ও জিকির হুজুর (সা) এর অধীনে পরিচালনায় ও তত্ত্বাবধানে হইত; তৎপর প্রত্যেক যুগের আহলে এলম ও আহলে জিকির ঐ যুগের লোকের জন্য হুজুর (সা) এর যেন স্থলাভিষিক্ত (প্রতিনিধি)। এই জন্য এলম ও জিকিরের জন্য বুজুর্গদের তত্ত্বাবধানের মুখাপেক্ষী হইতে হইবে। ইহা জরুরী যে, বিশেষভাবে বাহিরে থাকিবার সময় নিজেদের বিশেষ কাজেই মশগুল থাকা চাই। অন্যান্য সমস্ত কাজ হইতে বিরত থাকিতে হইবে। তার ঐ বিশেষ কাজ এই-
(১) তবলীগী গাশত।
(২) এলম।
(৩) জিকির।
(৪) দ্বীনের জন্য ঘর ছাড়িয়া যাহারা বাহির হইয়াছে বিশেষভাবে সেই সকল সাথীদের এবং সাধারণভাবে সমস্ত সৃষ্টিজীবের খেদমত করার মশক (অনুশীলন) করা।
(৫) তছবীহ নিয়ত ও এখলাছ ও এহ্তেছাবে নফছ (নফছ হইতে হিসাব নিকাশ লওয়াকে) নুতন করিয়া লওয়া অর্থাৎ এই কাজের জন্য বাহির হইবার সময়ও ইহার কল্পনা করা এবং ছফরের মধ্যেও বার বার এই কল্পনাকে সজীব করিতে থাকা যে, আমার এই বাহির হওয়া শুধু আল্লাহর জন্য এবং পরকালের নেয়ামতের আশায় যাহা দ্বীনের খেদমত ও নছরতের (সাহায্য ও সেবার) জন্য ও এই পথের কষ্ট উঠাইবার জন্য ওয়াদা করা হইয়াছে। অর্থাৎ, বারবার মনের মধ্যে এই ধ্যান জমাইতে হইবে যে, যদি আমার এই বাহির হওয়া খালেছ হয় ও আল্লাহ পাক ইহাকে কবুল করেন তাহা হইলে আল্লাহ পাকের তরফ হইতে ঐ সমস্ত নেয়ামত নিশ্চয়ই মিলিবে যাহার ওয়াদা এই কাজের জন্য কোরআন পাক ও হাদীছ সমুহে করা হইয়াছে। আর তাহা অমুক অমুক হইবে। সে যাহা হউক, সকল অবস্থায়ই এই খোদায়ী ওয়াদার প্রতি একীন ও উহার আশার ধ্যানকে বারবার সজীব করিতে হইবে ও নিজের সমস্ত আমল এই একীন ও ধ্যানের সহিত বাধিতে হইবে। ইহারই নাম ঈমান ও এছতেছাব। বছ্! ইহাই আমাদের যাবতীয় আমলের রূহ।
(১০)
১৮২। এ সম্বন্ধে তিনি আরও বলেন-
এলমের জন্য যে মুহম্মদী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা) তরীকা ছিল (অর্থাৎ তলব, আজমত ও মহব্বতের সহিত সঙ্গে থাকিয়া মিলিয়া মিশিয়া এলম হাছেল করা ও জিন্দেগী অনুমরণ করিয়া জিন্দিগী গঠন শিক্ষা করা)।
১৯৪। তিনি বলেন-
নামাজকে হাদীছে ----- “দ্বীনের খুটি” বলা হইয়াছে। ইহার মতলব এই যে, নামাজের উপর অবশিষ্ট দ্বীন নির্ভর করে ও নামাজ হইতেই দ্বীন পাওয়া যায়। নামাজের মধ্যে দ্বীনের বুঝও পাওয়া যায়। আমলের তওফীকও দেওয়া হয়। আবার যাহার নামাজ যেইরূপ হইবে সেইরূপ তাহার জন্য তওফীকও দেওয়া হইবে। এই জন্য নামাজের দাওয়াত দেওয়া ও অন্যের নামাজে “খুশুখুজু” (নম্রতা) পয়দা করিবার জন্য কোশেশ করা পরোক্ষভাবে পূর্ণ দ্বীনের জন্য কোশেশ করা।
১৯৭। তিনি বলেন-
যাহারা যত বেশী আহ্লে হক তাহাদের মধ্যে তত বেশী কাজ ও কোশেশ করিতে হইবে; তাহাদের দ্বীনের জন্য উঠা অতি জরুরী। কেননা তাহারা আসল ও বুনিয়াদ হইতে পারে।
১৯৮। তিনি বলেন-
তাবলীগের আদাবের মধ্যে ইহাও যে, কথা যেন বেশী লম্বা না হয় এবং প্রথম প্রথম মানুষ হইতে মাত্র এতটুকু কাজ চাওয়া হয় যাহা তাহারা বড় মুশকিল ও ভারী না বুঝে। কখনও লম্বা কথা ও লম্বা সময় চাওয়াতে মানুষ ফিরিয়া থাকিবার কারণ হইয়া যায়।
২০২। তিনি বলেন-
তবলীগী জামায়াতের তালীমের নেছাবের এক আবশ্যকীয় অংশ ‘তজবীদ’। কোরআন শরীফ শুদ্ধভাবে পড়া অতি বড় জিনিস।
“আল্লাহ পাক নবীর সুমিষ্ট সুরে কোরআন পড়া যেমন কান লাগাইয়া (সন্তুষ্ট হইয়া আগ্রহের সহিত) শোনেন তেমন অন্য কোন কিছুর প্রতি কান লাগাইয়া শোনেন না।”
তজবীদ প্রকৃত প্রস্তাবে ঐরূপ শুদ্ধভাবে কোরআন শরীফ পড়া যাহা হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে নকল হইয়া আমাদের নিকট পর্যন্ত পৌঁছিয়াছে। কিন্তু তজবীদ শিক্ষার জন্য যেই সময়ের দরকার জমায়াতে সেই সময় পাওয়া যাইতে পারে না। এই জন্য এই সময় শুধু ইহার কোশেশ করিতে হইবে যেন লোকের মধ্যে ইহার আবশ্যকতার অনুভূতি পয়দা হয় ও কিছু কিছু যোগ্যতা (মোনাছেবাত) পয়দা হয়, তৎপর তাহারা যেন ইহা শিখিবার জন্য পৃথক সময় খরচ করিতে প্রস্তুত হয়।
--
২০৪। তিনি বলেন-
বুজুর্গদের খেদমত করার আসল উদ্দেশ্য এই যে, তাঁহাদের যে সমস্ত সাধারণ ও সামান্য কাজ অন্য লোকেরা করিতে পারে তাহা যেন তাহারা নিজেদের জিম্মায় লইয়া উহাদের সময় ও শক্তি ঐ সমস্ত বড় কাজের জন্য ফারেগ করিয়া দেয় যাহা কেবলমাত্র ঐ সমস্ত বুজুর্গরাই করিতে পারেন; যেমন কোন জামানার পীরের অথবা কোন আলেম ও মুফতীর সাধারণ কাজ যাহা আপনি করিতে পারেন তাহা আপনি আপনার জিম্মায় লইয়া তাহাদিগকে ফারেগ ও বেফিকির করিয়া দিলেন, তাহা হইলে ঐ সমস্ত হযরতেরা দ্বীনের যে সমস্ত বড় বড় কা করিয়া থাকেন (যাহা এছলাহ, এরশাদ, দরছ ও এফতাহ ইত্যাদি) তাহা অধিকতর একাগ্রচিত্ত ও নিশ্চিত মনে সম্পাদন করিতে পারিবেন; আর এই প্রকারে এই খাদেমগণ তাহাদের ঐ সমস্ত বড় কাজের পুরস্কারের অংশীদার হইয়া যাইবে। তাহা হইলে দেখা গেল যে, প্রকৃত প্রস্তাবে বুজুর্গদের খেদমত করা তাঁহাদের বড় কাজে অংশ নেওয়ার এক উপায় স্বরূপ।
২০৮। তিনি বলেন-
ছহীহ কাজ করিবার পদ্ধতি এই - যেই সমস্ত নীচ দরজার লোক হইতে লইতে পারা যায় তাহা তাহাদের দ্বারাই লইবে। যখন নীচের দরজার লোক পাওয়া যায় তখন উচ্চ দরজার লোক ঐ সমস্ত কাজে লাগা বড়ই ভুল কথা; বরং এক প্রকার নেয়ামতের নাশুকুরী ও নীচের দরজার লোকদের উপর জুলুম।
২১০। এ সম্বন্ধে তিনি আরও বলেন-
আমার মর্যাদা এক সাধারণ মোমেন হইতে উপরে বুঝা উচিত নহে। শুধু আমার কথার উপর কাজ করা বদদ্বীনি হইবে। আমি যাহা কিছু বলি উহাকে কেতাব ও ছুন্নতের উপর আরোপ করিয়া এবং নিজে চিন্তা ফিকির করতঃ নিজের জিম্মাদারীর উপর কাজ করে। আমি তো শুধু পরামর্শ দিয়া থাকি।
তিনি বলেন- হযরত ওমর (রাঃ) নিজের সাথীদের বলিতেন- “তোমরা আমার মাথার উপর বড় জিম্মাদারী ঢালিয়া দিয়াছ, তোমরা সকলে আমার কার্য সমূহ দেখা শুনা কর।” আমিও আমার বন্ধুদের সর্বদা সানুনরে এই দরখাস্ত করিয়া থাকি, তাঁহারা যেন আমার তত্ত্ববধান করেন; যেখানে ভুল করি সেখানে বলিয়া দেন ও আমি যেন সৎপথে সততার সহিত চলিতে পারি সেজন্য চলিবার জন্য, দোয়াও করেন।
২১১। তিনি বলেন-
কোন কাজে মশগুল হওয়াতে অন্যান্য অনেক কাজ হইতে ফিরিয়া থাকিতে হয় অর্থাৎ যখন কোন জিনিসে মশগুল হইবে তখন অন্য সমস্ত জিনিস হইতে নিবৃত্ত থাকিতে হইবে; পুনরায় যেই পরিমাণে মশগুল হইবে সেই পরিমাণে অন্যান্য কাজ হইতে নিবৃত্তও হইতে হইবে। শরীয়তে যে ভাল হইতে ভাল কাজ শেষ করিয়া এস্তেগফার করিবার জন্য শিক্ষা দেওয়া হইয়াছে আমার মতে ইহার মধ্যে এক গুপ্ত রহস্য ইহাও যে, সম্ভবতঃ ঐ ভাল কাজে ব্যস্ত থাকার দরুন অন্য কোন আদেশ পালনে শৈথিল্য হইতে পারে, বিশেষ করিয়া যখন কোন কাজের আকর্ষণ অন্তরে লাগিয়া যায় ও মানুষের মনে ও মস্তিষ্কে ঐ কাজ ব্যাপ্ত হইয়া যায় তখন উহা ব্যতীত অন্যান্য কাজে অনেক সময় ত্র“টি হইতে থাকে। এই জন্য আমাদের এই কাজে যাহারা লাগে তাহাদের বিশেষ ভাবে কাজের সময় ও কাজ শেষ করিয়া বেশীভাবে এস্তেগফার পড়া নিজের উপর বাধ্যতামূলক করিয়া লওয়া চাই।
২১২। তিনি বলেন-
ওলামাদের বলিতেছি যে, এই সমস্ত তবলীগী জামায়াতের গুরাফিয়া, পরিশ্রম ও কোশেশের দ্বারা সাধারণের মধ্যে শুধুমাত্র দ্বীনের তলব ও কদর পয়দা করা যাইতে পারে ও তাহাদিগকে দ্বীন শিখিবার জন্য প্রস্তুত করা যাইতে পারে। তৎপর দ্বীনের তালীম ও তরবীয়তের (শিক্ষা-দীক্ষার) কাজ ওলামা ও ছোলাহাদের এই দিকে মনোযোগ দেওয়াতে হইতে পারে এই জন্য আপনাদের মত বুজুর্গদের দৃষ্টিপাতের খুব বেশী জরুরত আছে।
২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৪৩
সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: ওহাবীবাদটা কি জিনিষ ?
উপরের ওনার কথাগুলোর কোনটি ওহাবী মত?
আপনি কোন মতের অনুসারী ?
২| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৮
বাসার০৪২ বলেছেন: আমরা অনর্থক মন্তব্য না করি। জেনে বুঝে মন্তব্য করি। আল্লাহ আমাদের বোঝার তৌফিক দান করুন।
২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৪৫
সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: ভাই কি তবলীগ করেন ?
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:১৫
দাদুভাই বলেছেন: অনেক ভা্লো কথার মাঝেও যে সত্য কথা তা হইল তিনি ভয়ংকর ওহাবীবাদ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমান মুসলিম সমাজের এ করুন অবস্থার জন্য এ ভয়ংকর ওহাবীরা জড়িত। তার বহু অপব্যখ্যা যা মুসলমান সমাজকে বিভক্ত করেছে। তারা মসজিদে মসজিদে ঘুরে বেড়ায়। অথচ তার ঘর ঠিক নাই।
বলা হয় গেলাম আমি তাবলীগে বউ নিয়ে গেল পাবলিকে।
মুসলমানের কাজ শুধু দিনের দাওয়াত না। ইসলাম মানে শুধু নামাজ পড়া না। ইসলামে যে বিজ্ঞান শিক্ষা সেটা এখন নাই, অথচ আমরা দেখি অনেক জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী, নানা চিকিৎসা শাস্ত্রের জনক ছিল মুসলমানরা। আজ কোথায় আমরা। প্রিয় নবী তাবলিগ করেন তবে সেটা মসজিদে বসে নয়। মসজিদ হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান, দেশে বিদেশে সেখানে পুলিশসহ কোন শত্রুর ভয় নাই। তাই তারা সেই নিরাপদ স্থানে বসে ইসলাম প্রচার করে না বসে ইসলাম প্রচার করে নাকি মসজিদকে অপবিত্র করে সেটা আমাদের জানা দরকার।