![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার ঈদ কেমন ছিলো? এই সময়ে এসে চিন্তা করলে আউলা ঝাউলা লাগে। ফরিদাবাদে যখন ছিলাম তখন ঈদ ছিলো এক রকম। আবার এই মুরাদপুরে আসার পর ঈদ হয়ে গেলো অন্য রকম।
এখন আমরা বলি ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা। কিন্তু ছোটবেলায় বলতাম, রোজার ঈদ, কোরবানী ঈদ। এখন রোজার ঈদের কথাই বলি। ছোট বেলা থেকেই আমি রোজা রাখতে চাইতাম। কিন্তু আম্মু রোজা রাখতে দিতে চাইতেন না। আমার কষ্ট হবে এই ভেবে। যখন একদম ছোট ছিলাম তখন আম্মু বলতোঃ সবাই দিনে মাত্র একটা রোজা রাখে, তুমি তিনটা রোজা রাখবা ঠিক আছে?
আমিঃ এক দিনে তিনটা?
আম্মুঃ হুম
আমিঃ কিভাবে?
আম্মুঃ সেহেরি থেকে সকালের নাস্তা পর্যন্ত একবার। সকালের নাস্তা থেকে দুপুর পর্যন্ত এক বার আর দুপুর থেকে ইফতার পর্যন্ত একবার। মোট তিনবার।
ব্যস, আমি সানন্দে প্রতিদিন তিনটা করে রোজা রাখতে লাগলাম। তবে শর্ত হচ্ছে সেহেরি খেতে হবে। তা হলেই দিনে তিনটা রোজা হবে। সেহেরি না খেলে হবে না। কিন্তু, সেহেরিতে আমাকে ডেকে তোলা আরেক যন্ত্রণার। আমি কিছুতেই উঠতে চাইতাম না। তবু আমাকে ডাকা হতো।
এরপর একটু বড় হলে আমার চেয়ে একটু বড়রা আমাকে বললো, আমার তো আসলে রোজাই হয়না। আমিও বুঝলাম তাই তো দিনে তো তিনটা করে রোজা হতেই পারেনা। তখন আম্মু বললেনঃ আচ্ছা ঠিক আছে তুমি সারা মাস রোজা রাখতে চাও?
আমিঃ হ্যাঁ।
আম্মুঃ ঠিক আছে, প্রথম রোজা আর শেষ রোজা রাখো তবেই তোমার সারা মাস রোজা হয়ে যাবে।
আমিঃ তাই?
আম্মুঃ হুম।
আমিঃ আচ্ছা তাহলে আমি প্রথম রোজা আরা শেষ রোজা রাখে সারা মাস রোজা রাখবো। কিন্তু এই ফাঁকিও বেশি দিন দেয়া গেলো না। এরপর প্রতি দশদিনে একটা করে। এরপর প্রতি সপ্তাহে একটা দুটো করে রোজা রাখতে লাগলাম। আমি রোজা রেখে কাহিল হচ্ছি এই দেখে আম্মু একদিন বললেনঃ ধর তুমি রোজা রেখে কিছু খেয়ে ফেলো আর কেউ তা দেখলো না। তাহলে কিন্তু তোমার রোজা হয়ে যাবে।
আমিঃ এটা হয় নাকি?
আম্মুঃ হুম, ছোটদের জন্য হয় তো।
আমিঃ আচ্ছা, তাহলে তুমিও কিন্তু দেখবা না।
আম্মুঃ আচ্ছা, আমিও দখবোনা। এইবলে খাবার দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে গেলেন। আমিও পেটের চুচু সহ্য করতে না পেরে খেয়ে মুখ মুছে দেদারছে ঘুরতে লাগলাম। ভাব এমন আমিতো রোজা রেখেছি কই, আমারতো কষ্ট হচ্ছে না।
এরপর ইতিমধ্যে আমি জেনে গেছি, এভাবে আসলে রোজা হয়না। তখন শুরু হলো নতুন কৌশল। আমাকে ঘুম থেকে উঠানো যায়না। তাই আমাকে অনেক ডাকাডাকির পরও আমি উঠিনি। তাই রোজা রাখতে পারিনি। আসলে এমন অনেক দিন আমাকে ঘুম থেকে ডাকেইনি।
এভাবেই আস্তে আস্তে রোজাতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। এখন আসি ঈদের আগের রাত চান রাতের কথা। চান রাতের দিন আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম সন্ধ্যার সময়। এর জন্য উঠে যেতাম তিনতলার ছাদে। পশ্চিম দিকে তাকিয়ে থাকতাম, সূর্য ডুবে গেলে উঠবে চাঁদ। চাঁদ দেখতে পেলে সে কি আনন্দ! সেই আনন্দ ধরা দিতো তারাবাত্বি জ্বালিয়ে। এরপর সবারই কেমন একটা ধোয়া মোছা, গোছ-গাছ লেগে যেত। কাল ঈদ তাই আজ রাতেই সব কিছু সুন্দর করে সাজিয়ে পরিপাটি করে রাখতে হবে।
ঈদের জামা অবশ্যই কাউকে দেখানো যাবেনা। এটা খুবই গোপনীয়। ঈদের জামা দেখানো মানেই হলো ঈদ শেষ। আমার ঠিক মনে পরেনা, আমি ঈদে একটার বেশি দুইটা জামা পেয়েছি। কিন্তু রনি-কেয়া আপাদের দেখতাম ওদের দুই-তিন সেট করে ঈদের জামা হয়। একটা সেট হয়তো মামা দিলো, একটা সেট চাচা এই করে ওদের দুই-তিন সেট হয়ে যেত। তাই একটা সেট দেখালেও ওদের ঈদ থেকে যেত।
ঈদের দিন সকালে উঠে আব্বুর সাথে যেতাম নামাজ পরতে। নামাজ পরতে যাওয়ার আগে সেমাই খেয়ে যেতে হতো। কোরবানীর ঈদের নিয়ম হলো, নামাজ পরার পর সেমাই খাওয়া। এখন কোরবানীর পর সেমাই খেতে হয়। নামাজ পরে এসে চলতো সালাম করার ধুম। সালাম করলেই সালামি। তখন সালামি পাওয়া যেত ২টাকা থেকে ১০ টাকা। কদাচিত কেউ বিশ টাকা দিতো। সারা দিন ঘুরতাম এই সালামি আদায় করা যাবে যেখানে সেখান সেখানে। সব বাসাতেই সেমাই, পায়েস, ফিন্নি কিছু না কিছু মিষ্টান্ন খেতে দিতো। এই মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়েই আর দুপুরে খাওয়া হতোনা। অথবা দুপুরেও খেয়ে নিতাম কারো বাসায়। খিচুরি, পোলাও আর মাংস (গরুর অথবা মুরগীর)।
সন্ধ্যায় এসে সব টাকা আম্মুকে দিয়ে দিতাম রাখতে। বলা বাহুল্য, সেই টাকা আর কোনো দিন ফেরত পাওয়া যায়নি। ঈদের দিনের মজা হলো, পড়তে বসতে হয় না। এই দিন যেখানে খুশি ঘোরাঘুরি কর, খেলো কোনো মানা নেই। সন্ধ্যার পর টিভি দেখতাম। নাটক, আনন্দ মেলা, এরপর এক সময় শুরু হলো ইত্যাদি। রাতে খাবার খেতাম আব্বু-আম্মুর সাথে। এরপর ঘুম।
বলতে গেলে আমার ফরিদাবাদের ঈদগুলো এমনই ছিলো। পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত আমি ফরিদাবাদে ছিলাম। এরপর চলে আসি মুরাদপুর। মুরাদপুরের ঈদের কথা না হয় হবে অন্য কোনো এক সময়। সকলকে ঈদ মোবারক।
২৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৩০
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই। ঈদ কেমন হলো? আর আমি আসছি আপনার সিলেটে। হয়তো দেখা হবে না। ফোন দিবো নিশ্চয়ই।
২| ২৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৮
নীল জোসনা বলেছেন: ছোট বেলার রোযা রাখার কথা মনে করিয়ে দিলেন । ঈদ এর জামা নিয়েও এক ই অবস্থা কিন্তু আমার সালামি অবশ্য আমার ই থাকতো ।
ঈদ এর অনেক অনেক শুভেচ্ছা ।
২৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৩২
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: ধন্যবাদ নীল জোসনা। ভালো থাকবেন, সব সময়।
৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০৩
সুমন কর বলেছেন: ঈদ স্মৃতিচারণ ভাল লাগল। আমি আমার এলাকার একজন ছোট ভাইকে চিনি। তার মা তাকে ১ম আর শেষ রোজা ছাড়া রাখতে দিতো না।
সংকলনের জন্য নিয়ে গেলাম।
ঈদ মোবারক।
৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:০৮
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন কর।
ভালো থাকবেন।
৪| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:১৮
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো স্মৃতিচারণ। অনেক কিছুই মিলে গেলো।
৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:১২
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: ঈদ মোবারক হাসান ভাই। ভালো লেগেছে, যেনে ভালো লাগলো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
৫| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৩২
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: স্মৃতিচারণ বেশ লাগল!
আমি এখনও রোজার ঈদ, কুরবানির ঈদ বলি। অভ্যাস হয় নাই
৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৪৯
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ। ধন্যবাদ প্রোফেসর শঙ্কু। সাথে থাকার জন্য।
ভালো থাকুন, সব সময়।
৬| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:০৫
অপ্সরা বলেছেন: রোজা তো ছোটদেরকে এইভাবেই ফাকি দেওয়ানো হয়!!!!
০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৬:৩১
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: আলে, আমাল ব্লগে দেখি অপ্সরা এসেছে!!!
অনেক ধন্যবাদ আপি।
ভালো থাকবেন, সব সময়।
৭| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:১২
সায়েম মুন বলেছেন: স্মৃতিময় পোস্টে ভাললাগা রইলো। শুভকামনা।
০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৬:৩১
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: অনেক দিন পর, সায়েম মুন ভাই। ভালো থাকবেন। সব সময়।
৮| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:১৫
আমি তুমি আমরা বলেছেন: স্মৃতিচারণ ভালো লাগলো । ঈদের শুভেচ্ছা রইলো
০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:১৮
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: ধন্যবাদ আমি তুমি আমরা। ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা রইলো।
৯| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:২৮
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
ঈদ স্মৃতি ভালো লাগলো।।
০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:২৪
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: ধন্যবাদ দুর্জয়। ভালো থাকুন। সব সময়।
১০| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:২৬
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ঈদের জামা দেখানো মানেই হলো ঈদ শেষ। এটা সবাই মানে ।
তাইতো জামা লুকিয়ে রাখা হত্। আর লুকিয়ে লুকিয়ে বার বার দেখতাম। সেই ঈদ কোথায় গেল ।
০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:২৯
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: সেই কোথায় গেল? ভালো থাকুন, সেলিম আনোয়ার ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৫৭
মামুন রশিদ বলেছেন: হাহাহা, প্রথম রোজা আর শেষ রোজা রেখে আমরাও ছোটবেলায় সারামাসের রোজাকে বেঁধে রাখতাম ।
স্মৃতিচারণ ভালো লাগলো । ঈদের শুভেচ্ছা রইলো সজীব ।