নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দামাল ছেলে ৭১

দামাল ছেলে ৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এমডিজি অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বাংলাদেশের

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৪৫

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) আটটি লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত ২১টি টার্গেটের মধ্যে ১৩টি নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জন করেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি বনায়ন ছাড়া অবশিষ্ট টার্গেট অর্জনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। এসব ক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও আফগানিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে অসমাপ্ত এমডিজি পূরণে দারিদ্র্যের বিস্তার কমানো, বেকারত্ব হ্রাস, শিশুদের খর্বাকৃতি সমস্যার সমাধান করা, আয় বৈষম্য দূর করা, শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে মনোযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস : অ্যান্ড-পিরিয়ড স্টকটেকিং অ্যান্ড ফাইনাল ইভালুয়েশন রিপোর্ট (২০০০-২০১৫)’ শীর্ষক চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম। বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের চিফ ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন ও জাতিসংঘের রিপ্রেজেনটেটিভ সুদীপ্ত মুখার্জি প্রমুখ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক নম্বর লক্ষ্যের অধীন টার্গেটগুলোর মধ্যে দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনা, দারিদ্র্যের আনুপাতিক হার, কম ওজনের ৫ বছর বয়সী শিশুদের সংখ্যা কমানোর টার্গেট বাংলাদেশ পূরণ করতে পেরেছে। এমডিজিতে দারিদ্র্যের হার ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২৯ শতাংশে নামিয়ে আনার টার্গেট ছিল। ২০১৫ সালে দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশে। একইভাবে দারিদ্র্যের আনুপাতিক হার ১৭ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ নামিয়ে আনার অঙ্গীকার করে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে এ হার দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। কম ওজনের ৫ বছর বয়সী শিশুদের সংখ্যা ৬৬ শতাংশ থেকে ৩২ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এমডিজিতে এই টার্গেট ছিল ৩৩ শতাংশ। সুষম খাদ্য গ্রহণের হার বৃদ্ধির টার্গেট পূরণের কাছাকাছি ছিল বাংলাদেশ।

দুই নম্বর লক্ষ্যের অধীন টার্গেটের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের শতভাগ ভর্তির টার্গেট পূরণ হয়েছে। ২০১৫ সালের হিসাবে প্রাথমিকে শিশু ভর্তির হার ছিল ৯৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তান, ভুটান ও আফগানিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। এমডিজিতে সাক্ষরতার টার্গেট ছিল শতভাগ। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারী-পুরুষের মধ্যে সাক্ষরতার হার ২০১৫ সালে ৭৫ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো।

নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গভিত্তিক সমতা অর্জনের তিন নম্বর লক্ষ্যের ক্ষেত্রেও সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা গেছে। এমনকি উভয়ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা এখন বেশি। মাধ্যমিক পর্যায়ে লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতার টার্গেট এখনও পূরণ হয়নি। উচ্চশিক্ষায় বর্তমানে ছেলে-মেয়ের অনুপাত ১ : ০.৬৫। কৃষি বাদে অন্যান্য খাতে নারীর মজুরি হারের ক্ষেত্রে এমডিজিতে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং ভুটানের চেয়েও ভালো।

চার নম্বর লক্ষ্যের অধীন টার্গেটের মধ্যে নবজাতক ও পাঁচ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। এমডিজিতে প্রতি এক হাজার নবজাতকের মধ্যে মৃত্যুহার ৩১ জনে নামিয়ে আনার টার্গেট ঠিক করা হয়েছিল। ভিত্তিবছরের মৃত্যুহার ৯২ থেকে এ হার এখন ২৯ জনে নেমে এসেছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার কমে ১৪৬ জন থেকে (প্রতি এক হাজারে) ৩৬ জন হয়েছে। এমডিজিতে এই টার্গেট ছিল ৪৮ জন।

মাতৃ-স্বাস্থ্যের উন্নতির পাঁচ নম্বর লক্ষ অর্জনের ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মাতৃমৃত্যু হার প্রতি হাজারে ১৪৩ জনে নামিয়ে আনার টার্গেট থাকলেও বাংলাদেশে এ হার এখনও ১৮১ জন। গর্ভনিরোধক প্রাদুর্ভাব হার, দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর দ্বারা সন্তান প্রসব, গর্ভকালীন মাতৃস্বাস্থ্য পরিচর্যার নির্ধারিত টার্গেট অর্জনে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছয় নম্বর লক্ষ্যের অধীন ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুহার কমানো এবং ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের কীটনাশক যুক্ত মশারির ব্যবহার এবং যক্ষা শনাক্তকরণ ও সরাসরি তত্ত্বাবধানে মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে যক্ষ্মা নিরাময়ের হার বৃদ্ধি ইত্যাদির জন্য এমডিজি নির্ধারিত টার্গেট বাংলাদেশ পূরণ করতে পেরেছে। এইচআইভি এইডস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রয়াস দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাত নম্বর লক্ষ্যের অধীন টার্গেটগুলোর মধ্যে জলবায়ুর জন্য হুমকিস্বরূপ ওজোন হ্রাস এবং সুপেয় পানির উন্নত উৎস ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমডিজি নির্ধারত টার্গেট পূরণ করা গেছে। এক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। তবে বনায়নের টার্গেট পূরণ করা যায়নি। এমডিজি অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের মোট আয়তনের ২০ শতাংশ বনভূমিতে উন্নীত করার কথা ছিল। বর্তমানে এর পরিমাণ ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এছাড়া শতভাগ উন্নত স্যানিটেশন নিশ্চিত করার টার্গেটের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন বর্তমানে ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে আফগানিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান এবং কম্বোডিয়ার তুলনায় উন্নত স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

আট নম্বর লক্ষ্যের ব্যাপারে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলো এমডিজির সময়কালে উন্নত দেশগুলোর দেয়া প্রতিশ্রুত আর্থিক সহায়তা পায়নি। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের প্রতিবছর ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রয়োজন ছিল। অথচ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হিসাব অনুযায়ী গত পনের বছরে বৈদেশিক সহায়তার গড় পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, পৃথিবীর কম দেশই আছে যারা লক্ষ্যমাত্রার আগেই অনেক গোল পূরণ করতে পেরেছে। কিন্তু আমরা পেরেছি। এসডিজিতেও সফল হতে পারব আমরা। চ্যালেঞ্জ থাকলেও এটি সম্ভব হবে। জিএসপি সুবিধা না থাকলেও মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেশি হচ্ছে। তৈরি পোশাক থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হবে।

অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়াতে হবে এবং তা বিনিয়োগ আনতে হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, এমডিজির বেশিরভাগ সূচকে আমরা ভালো করেছি। কয়েকটিতে এখনো অর্জন করা যায়নি তবে আমরা সঠিক পথেই আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের যে রূপকল্প ঠিক করেছেন তাতে আমাদের পথ হারানোর কোনো আশঙ্কা নাই। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে ভারত এবং চীন বিশ্বে পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। নিকট প্রতিবেশি হিসেবে এজন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই তাদের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশকে এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

উল্লেখ্য, এমডিজির জন্য নির্ধারিত হয়েছিল ৮টি লক্ষ্যমাত্রা। এগুলো ছিল- ১. চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর করা। ২. সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ৩. নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গভিত্তিক সমতা অর্জন ৪. শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস ৫. মাতৃ-স্বাস্থ্যের উন্নতি ৬. এইডস, ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য ছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধ ৭. টেকসই পরিবেশ গড়ে তোলা এবং ৮. উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধি। প্রতিটি লক্ষ্যের অধীনে ছিল একাধিক টার্গেট। Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.