![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনের একটি ইউনিক অধ্যায়। বৈশিষ্ট্যগত কারণেই সেসময় এ যুদ্ধ বিশ্বে সাড়া ফেলেছিল। আমাদের পূর্বসূরীদের সাহসিকতাই এ জাতিকে বীরের জাতি হিসেবে পরিচিত করিয়েছে। একদিকে নিমর্মতা, নিষ্পেষণের শিকার হয়েও অন্যদিকে একটি সুকৌশলী প্রতিরোধ গড়ে তুলে সফল হওয়ার দৃষ্টান্ত বিশ্বে বিরল। সেই যুদ্ধ আজ আমাদের এ প্রজন্মকে কতটুকু প্রেরণা দেয়?
কষ্ট করে কোনো কিছু পাওয়া আর কষ্ট না করে কোনো কিছু পাওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম এ দেশটাকে রেডিমেট পেয়েছি তারা কীভাবে ঐ সময়ের ত্যাগের মহিমা এবং মর্মবেদনা অনুভব করবো?
কেনই বা করবো আমরা? দিবসকেন্দ্রিক যেটুকু করি তা করতে হয় দেখেই করি। এদেশ মাতৃকার জন্য অন্তর থেকে ভালোবাসা কজনের অনুভব হয়? বরং কথায় কথায় এদেশকে খারাপ বলায় সদা প্রস্তুত আমরা।
বর্তমান জেনারেশনকে বলা হয় ইয়াং জেনারেশন। আর এ ইয়াংদের কাছেই মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা সবচেয়ে মর্যাদায় ও ভালোবাসায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সেটা সামগ্রিকভাবে আছে? মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি মর্মস্পর্শী বিষয় উঠতি প্রজন্মের কাছে প্রেরণাদায়করূপে কতটুকু তুলে ধরা হয়েছে? উপরন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এমন সব কথা শোনা যায় যা শুভ নয়। সেদিন পথে একজনের সাথে কথা হলো। বয়সে তরুণ। যুদ্ধ সম্পর্কে বললেন—মুক্তিযুদ্ধ, সে আর কী, এতো বছর হয়ে গেছে, আর হিংসা বিদ্বেষের প্রয়োজন কী? পাকিস্তানের সাথে এখন মিলে গেলেই ভালো। তাকে বলেছি—কে রেখেছে হিংসা বিদ্বেষ? তারা তো এখনো আমাদের কাছে ক্ষমা চায়নি। উত্তর শুনে তিনি আমার দিকে সন্দিহান চোখে এক পলক দেখে চুপ হয়ে গেলেন। আরেকটি ঘটনা। একজন শিক্ষক ভারত পাকিস্তানের সাংবিধানিক আইন বিষয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। একদিন ক্লাসে এসে জিজ্ঞেস করেন—
আচ্ছা, আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগে? কেন ভারত, পাকিস্তানের সংবিধান পড়ানো হচ্ছে? পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ হয়েছে..! শোনেন এসব যুদ্ধ-টুদ্ধ কোন ব্যাপার না। এখন সময় এসেছে ভুলে যাওয়ার। শিক্ষকের এসব কথা শিক্ষার্থীদের ভাবিয়ে তোলে। বরং তিনি বলতেই যদি চান বলতে পারতেন, আমরা জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়তে এসেছি, সে দৃষ্টিভঙ্গিতেই অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সংবিধানও আমরা পড়বো। কেন তা না বলে ঐসব কথা বলেছিলেন জানি না। তবে এটি বোঝা যায় যে, সুশীল সমাজের ভিড়ে কিছু কপট জ্ঞানপাপী রয়েছেন যারা ফাঁকে ফাঁকে এমন কিছু চুটকি কথা ছাড়ছেন যা ইয়াং জেনারেশনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিরূপ মনোভাব তৈরিতে সহায়ক। তবে আশাব্যঞ্জক কথা হলো, এখন এই সংখ্যাটি (যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিরূপ কথা বলেন) কমে এসেছে। কিন্তু এরা যে ডালপালা বিস্তারের চেষ্টায় আছে সেটা ভাবনার বিষয়। বিজয়ের ৪৫ বছর কেটে গেল। আজো মুক্তিযুদ্ধের বিতর্কবিহীন ঘটনাপ্রবাহ আমরা আমাদের জ্ঞানগর্ভে যুক্ত করতে পারলাম না! মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে কেউ কেউ বিতর্ক করেছে এবং এখনো সেটা বিদ্যমান আছে। মূলত সেই বিতর্কেরই আপডেট ভার্সন হচ্ছে এ প্রজন্মের কারো কারো মুখে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে পাইকারি কথাবার্তা। ছোট্ট প্রাণী পিপীলিকার সামনেও অস্থায়ী প্রতিবন্ধকতা ফেললে পথ ঘুরে যায় অর্থাত্ সে স্বাধীনতা চায়। আর আমরা ছিলাম মানুষ। হাজার মাইল দূর থেকে এসে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাদেরকে কেবল প্রতিবন্ধকতাই দেয়নি, আমাদের পূর্বসূরীদের অতর্কিত নিধন করছিল। তা থেকে বাঁচতে মুক্তিকামীরা মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিলেন। আমরা আক্রমণকারী হিসেবে এ জয় অর্জন করিনি, আক্রান্ত হয়ে অনেক রক্তের বিনিময়ে বিজয়ী হয়েছি। পেয়েছি স্বাধীনতা। এই বিষয়টিই আমাদের এ প্রজন্মকে হূদয় দিয়ে সমভাবে অনুভব করতে হবে। কেবল তাহলেই মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্তান প্রসঙ্গ নিয়ে সুযোগ সন্ধানীদের কোনো বিশ্লেষণ আমাদের প্রভাবিত করবে না। আমরা কোনো বিতর্ক চাই না। বরং প্রমাণ রাখতে চাই, আমরা এ প্রজন্ম আমাদের পূর্ববর্তী নিহত ও জীবিত মহাবীরদের অর্জন বয়ে নিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা রাখি।
©somewhere in net ltd.