![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) অযোগ্য ও অদক্ষ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার কাজ শেষ করেছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এনসিটিবি এ সংক্রান্ত গোপন প্রতিবেদন শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছে। প্রতিবেদনে চলতি বছরের পাঠ্যবইয়ের কাজে কার দায়িত্ব কী ছিল এবং কার কী ভুল হয়েছে তাও চিহ্নিত করা হয়েছে।
একই সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের ভুলগুলো এখন কোন প্রক্রিয়ায় সংশোধন করে স্কুলগুলোতে পাঠানো হবে তার নির্দেশনা চেয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে এনসিটিবি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ৩ দিন ধরে সরকারি সফরে সিলেটে রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আজ সকালে মন্ত্রণালয়ের ফেরার কথা তাঁর।
এ ছাড়া কারিকুলাম পরিবর্তনের বিষয়ে গত শনিবার অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের নেতৃত্বে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে একটি বৈঠক করেছে শিক্ষামন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি। এদিকে পাঠ্যবই কেলেঙ্কারির হোতাদের চিহ্নিত করতে রুহী রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব খবর পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা ভোরের কাগজকে বলেছেন, ‘পাঠ্যবইয়ের ভুলগুলো সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধনীগুলো এখন কীভাবে স্কুলে পাঠানো হবে তা জানতে চেয়ে আজকালের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হবে।’ এ ছাড়া ভুলের সঙ্গে যারা যারা জড়িত তাদের নামের তালিকাও শিক্ষামন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পাঠ্যবই ছাপানোর প্রক্রিয়ায় কাদের অদক্ষতা এবং কারা ভুলের সঙ্গে জড়িত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এনসিটিবি থেকে তাদের নামের তালিকা মন্ত্রণালয়ে চলে গেছে, আপনারা সেখান থেকে তাদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে পারেন’। এনসিটিবি চেয়ারম্যানের সঙ্গে একমত পোষণ করে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেছেন, ‘এনসিটিবি থেকে ভুল এবং অদক্ষতার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে একটি তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসেছে। তবে শিক্ষামন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর এনসিটিবির দেয়া তালিকার ওপরে কাজ শুরু হবে।’ কাদের কাদের নাম রয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘পাঠ্যবইয়ের ভুলগুলো সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে।’ একই সঙ্গে দায়িত্বে অবহেলার জন্য শাস্তির প্রক্রিয়াও চলছে বলে তিনি জানান।
তদন্ত কমিটির পরিবর্তন : পাঠ্যপুস্তকে ভুলত্রুটি নির্ণয় ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে গত ৯ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষামন্ত্রণালয়। কিন্তু কমিটি গঠনের ৩ দিনের মাথায় কমিটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত ১২ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমানের নেতৃত্বে ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে আগের সদস্যের সঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব
ড. তরুণ কান্তি শিকদারকে যুক্ত করা হয়। কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবস সময় দিয়ে বলা হয়েছে, পাঠ্যবইয়ে ভুল-ত্রুটির জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিতে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে নির্ভুল পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য সুপারিশও দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে।
জানতে চাইলে কমিটির প্রধান রুহী রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, ‘ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে এবং নির্ধারিত ৭ দিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে।’ কমিটিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি যুক্ত হওয়ায় ভালো হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ভুলের দায় কি শুধু এনসিটিবির?
পাঠ্যবইয়ের কারিকুলাম নিয়ে কলেঙ্কারি হলেও এখন পর্যন্ত কাজের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত মন্ত্রণালয়ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মূল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চলতি বছরের পাঠ্যবইয়ের ভুল ও কারিকুলাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে এনসিটিবির ভূমিকা নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক সংবাদ প্রচার হলেও বিতর্কিত এ কারিকুলাম যে কমিটি (ন্যাশনাল কারিকুলাম কোর্ডিনেশন কমিটি বা এনসিসিসি) অনুমোদন করেছে সেই কমিটির কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এর ফলে নানা প্রশ্ন ওঠতে শুরু করেছে।
অভিযোগ ওঠেছে, নিজেরা রক্ষা পেতেই ভুলত্রুটির জন্য এনসিটিবির প্রীতিশ কুমার সরকার ও লানা হুমায়রা খান নামে দুজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বোর্ডের আর্টিস্ট কাম ডিজাইনার সুজাউল আবেদিনকে। অথচ ‘পাঠ্যবইয়ে ছাগলের আম খাওয়ার ছবি’ ‘ও’-তে ওড়না চাই’ ‘বিখ্যাত কবিতার লাইনে বিকৃতি’ অধিকাংশ বিষয়ের অনুমোদন এসেছিল এনসিটিবির সদস্য কারিকুলামের (প্রাথমিক) হাত ধরেই। এমনকি আগের বছরের পাঠ্যবইয়ে কবিতার লাইন ঠিক থাকলেও এবার সেখানে বিকৃতি ঘটানো হয়েছে।
এনসিটিবির সদস্য কারিকুলাম ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমোদনের পর নির্দেশ অনুসারে বইয়ের প্রচ্ছদ প্রণয়ন ও ছাগলের আম খাওয়ার ছবি শিল্পী আঁকলেও এখন সকল দায় তার ওপরই চাপানো হয়েছে।
নিজেরা রক্ষা পেতে ছোট কর্মকর্তাদের শায়েস্তা করা হলেও এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম-প্রাথমিক) ড. সরকার আব্দুল আবদুল মান্নান বলেছেন, ‘ওই ছবিটি অসাধারণ’। এ কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত ভুলের বিষয়টিকে বড় কোনো সমস্যা মনে করছেন না।
প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা গেছে রীতিমতো থমথমে অবস্থা। কোনো কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি নয়। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, এনসিসিসি, এনসিটিবির চেয়ারম্যান, কারিকুলাম সদস্য, মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটির সুপারিশ ছাড়া বইয়ে কোনো কিছু ঘটেনি। তবে এখন সকল দোষ চুনোপুুঁটির ওপর চাপিয়ে রাঘব-বোয়ালরা পার পেতে চান। এ নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও সাহস করে কেউ প্রতিবাদ করছেন না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঠ্যবইয়ে ভুল এবং সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়ার জন্য এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহাসহ এনসিটিবির সদস্যরা কোনো ভাবেই দায় এড়াতে পারে না।
অথচ তাদের বেলায় এখনো নীরব শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে প্রাথমিকের বইয়ের সকল কাজ করেছে প্রাথমিক কারিকুলাম সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা। বিকৃতি হলে দায় তাদেরই। পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে আরো অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। বোর্ডের অনেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। অনেকের বিরুদ্ধেই শিবিরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের প্রগতিশীল শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই বৈঠকে এনসিটিবির মূলকর্মকর্তা বিশেষত সদস্য কারিকুলামসহ ঊর্ধŸতনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। শিক্ষামন্ত্রীসহ অন্যদের কাছেও তোলা হয়েছে বিষয়টি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রাথমিকের বইয়ের অধিকাংশ পরিবর্তন চূড়ান্ত হয়েছিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এনসিসিসি’র সভায়। অনুমোদন দেয়া কোন বইয়ে কোন কবিতা লেখা থাকবে? কোনটা বাদ যাবে, তাও নির্ধারণ করে ওই কমিটি। সে অনুসারেই ছাপা হয় বই। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গিয়াস উদ্দিন পরিবর্তনের বিষয়গুলো স্বীকারও করেছেন।
জানা গেছে, এনসিসিসির চেয়ারম্যান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত এনসিসিসি কমিটিতে আছেন সদস্য হিসেবে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মো. মোস্তফা কামাল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মো. এলিয়াছ হোসেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র পাল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. ফাইজুল কবীর, মো. জাতীয় শিক্ষা একাডেমির উপপরিচালক আব্দুল ওয়াহাব, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম ছায়েফ উল্যা, এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক ড. সরকার মো. আবদুল মান্নান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সরদার মো. কেরামত আলী, নায়েমের পরিচালক (অব.) মুহাম্মদ আবদুল জাব্বার, শিশু একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন, এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক কফিল উদ্দিন আহাম্মদ, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আলী আসগর, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান, এনসিটিবির ঊর্ধŸতন বিশেষজ্ঞ লানা হুমায়রা খান, বিশেষজ্ঞ মো. মঞ্জুরুল আলম, মো. মোস্তফা সাইফুল আলম, এনসিটিবির গবেষণা কর্মকর্তা মুশীদ আকতার এবং এনসিটিবির সংযুক্ত কর্মকর্তা বাবুল আকতার। ওই সভায় বিনাবাক্য ব্যয়ে পরিবর্তনগুলো চূড়ান্ত হয়েছিল। এখন ভুলগুলো সামনে চলে আসায় এ কমিটির কেউই শাস্তির আওতায় আসছেন না। শুধু এনসিটিবির ওপরে দায় চাপানো হচ্ছে।
কারিকুলাম পরিবর্তনের বিষয়ে সভা : পাঠ্যবইয়ের কারিকুলাম পর্যালেচনার বিষয়ে প্রথম সভা করেছে শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে গঠন করা কারিকুলাম পর্যালোচনা সংক্রান্ত কমিটি। এ কমিটির প্রধান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। গত শনিবার তার নেতৃত্বে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে কারিকুলাম পরিবর্তনের সভা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ। গত ৪ জানুয়ারি এই কমিটি গঠন করে সরকার। একটি সূত্র জানিয়েছে, এ কমিটির সুপারিশের পরই বর্তমানে চলতে থাকা কারিকুলাম পরিবর্তন হয়ে যাবে।
©somewhere in net ltd.