নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দামাল ছেলে ৭১

দামাল ছেলে ৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই রায়ে আইনের শাসনের দৃঢ় ভিত প্রমাণিত হলো

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৫১

তিন বছর আগে নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন তুলেছিল। এই সাতজনের মধ্যে ছিলেন কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ আরো পাঁচজন।

হত্যাকাণ্ডের পর নানা তথ্য-প্রমাণ থেকে বিভিন্ন সময়ে বেরিয়ে আসে যে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরই কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে। হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন। পরে নূর হোসেনের পালিয়ে যাওয়া নিয়েও সমালোচনা ওঠে। নূর হোসেন ভারতে ধরা পড়লে সরকার তাঁকে ফিরিয়ে আনে। হত্যাকাণ্ডে নিহতদের স্বজনদের করা দুই মামলায় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ৩৮টি শুনানির পর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক গতকাল এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি ৯ আসামির সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা ২৩ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৭ জনই ছিলেন র‌্যাবের সাবেক সদস্য।

নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর এই সাত খুনের মামলায় রায়ে কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হলো—প্রথমত, দেশে আইনের শাসন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত। দীর্ঘদিন ধরে বিচার বিভাগ নিয়ে জনমনে নানা শঙ্কা, দ্বিধা, সমালোচনা বিরাজ করছিল। নিম্ন আদালতের এই রায়ের কারণে তা পুরোপুরি নিঃশেষ হলো। এই রায়ে দেশে আইনের শাসনের যে দৃঢ় ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত, তা প্রমাণিত হলো। দ্বিতীয়ত, নিম্ন আদালতগুলো যে স্বাধীন, স্বতন্ত্র এবং সরকারি প্রভাব থেকে মুক্ত, তা-ও পুরোপুরি এ রায়ে প্রমাণিত হলো। তৃতীয়ত, নিম্ন আদালত নিয়ে যারা বলছে যে সরকার থেকে নিম্ন আদালতের পৃথক্করণ এখন বাক্সবন্দি এবং নিম্ন আদালত এখনো সরকার দ্বারা প্রভাবিত, তাদের উক্তি এই রায়ের মাধ্যমে ভুল প্রমাণিত হলো। চতুর্থত, এই রায়ে আরো প্রমাণিত হলো, ব্যক্তি যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে। অপরাধ করলে সবাইকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।

এ রায় কতখানি সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত, সে ব্যাপারে আমি মন্তব্য করতে পারব না। পারব না এ জন্য যে বিষয়টি এখনো বিচারাধীন। কেননা হাইকোর্ট পুরো বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করবেন, দণ্ডপ্রাপ্তরা আপিল করুক আর না-ই করুক। এই রায়ে সত্যিকার অর্থে এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণের বিষয় যে নিম্ন আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে এ রায় দিয়েছেন, যে কারো দ্বারা প্রভাবিত হননি।

এবার আসি এ রায় উচ্চ আদালতে গেলে সম্ভাব্য কী হতে পারে, যদিও সেটা সাক্ষ্য-প্রমাণ না দেখে বলা যাবে না। উচ্চ আদালতে গেলে তাঁরা দেখবেন যে প্রসিকিউশন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যুক্তিসংগত সন্দেহের ঊর্ধ্বে প্রমাণ করতে পেরেছেন কি না! এর জবাব যদি হয় ইতিবাচক, শুধু তাহলেই নিম্ন আদালতের—যে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে যে রায় দিয়েছেন, তা সঠিক বলে উচ্চ আদালত নির্ধারণ করতে পারেন। এর পরে আসবে সাজার বিষয়টি। সাজা তো পাল্টাতেই পারে। এখন সাজা মৃত্যুদণ্ড, সেই সাজা যাবজ্জীবনও হতে পারে। সেই ক্ষমতা হাইকোর্টের আছে।

আমাদের ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, কোনো আসামির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার দুই ধরনের সাজা হতে পারে—মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এখন কোন পরিস্থিতিতে কোন সাজা দেওয়া উচিত, তার ওপর বিস্তারিত গাইডলাইন রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে। আপিল বিভাগ প্রদেয় বিভিন্ন মামলার রায়ের আলোকে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, কোন পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড এবং কোন পরিস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড উপযুক্ত হবে।

যদি হাইকোর্ট দেখেন যে এটা সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত, তাহলে যে রায়, সেটা বহাল থাকবে। আর যদি দেখেন যে দোষী নয়, তাহলে সেই রায় থাকবে না—এটা প্রথম কথা। দ্বিতীয়ত, ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়েছে। এই ২৬ জনের প্রত্যেকের মামলা আলাদা করে দেখবেন হাইকোর্ট। সবার রায়ই সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত কি না, সেটা দেখা হবে। এই ২৬ জনের সবার দোষ সাক্ষ্য-প্রমাণের ঊর্ধ্বে হয়েছে কি না, এটাও দেখবেন হাইকোর্ট।

আমাদের বিচার বিভাগের ইতিহাসে ২৬ জনের একত্রে মৃত্যুদণ্ডের রায় খুবই বিরল। সেদিক থেকে এ রায়কে আমরা যুগান্তকারী ও নজিরবিহীনও বলতে পারি। তবে এই রায়ের মধ্য দিয়ে সবচেয়ে বড় যেটা প্রমাণিত হলো তা হলো, আমাদের দেশে আইনের শাসন রয়েছে। যে যত বড়ই হোক না কেন, সে আইনের অধীন। নিম্ন আদালত এ রায়ের মাধ্যমে যে কারো দ্বারা প্রভাবিত হননি, সেটা রায়েই প্রমাণিত। কারণ খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সাজা হয়েছে যে এটা থেকে পরিষ্কার প্রমাণিত, এখানে জজ সাহেব সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে, সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে রায় দিয়েছেন। যদি বিচার বিভাগ স্বাধীন না হতো, তাহলে এমন একটি রায় দেওয়া খুব কঠিন হয়ে যেত।

এখন উচ্চ আদালত রায়টিকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তা সন্দেহের ঊর্ধ্বে কি না, তা প্রমাণ করবেন। এরপর নিম্ন আদালতের যে রায় মৃত্যুদণ্ড, তা বহাল থাকবে, না যাবজ্জীবন রায় হবে, তা দেখবেন। আর এটা দেখার ক্ষমতা হাইকোর্টের রয়েছে। এ জন্য আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

তবে চাঞ্চল্যকর এই রায়ের ফলে জনমনে যে আশার সৃষ্টি হয়েছে, মানুষের বিচার বিভাগের ওপর আস্থা বেড়েছে, তা খুবই ইতিবাচক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.