নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর রবি

নূর রবি

নূর রবি

সাধাসিধা মানুষ।একজন প্রকৌশলের ছাত্র।রুয়েটে পড়ি তড়িৎকোশল নিয়ে।ব্লগে এত অসাধারন সব মানষ,তাদের অসাধারন চিন্তা চেতনা আমাকে মুগ্ধ করছে প্রতিনিয়ত।মনের উৎকর্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যম যেন।মায়ায় জড়িয়ে গেছি ইতোমধ্যে

নূর রবি › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুমি হুমায়ূন তুমি অমর

২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:২২

একবার এক গল্পে পড়েছিলাম- ‘মেয়েটা মন খারাপ করিয়ে দেয়ার মতো সুন্দর।’ সেই কলেজপড়ুয়া আমি সারাদিন এর অর্থ খুঁজে ফিরি চারদিকে, কোনভাবেই ধরতে পারি না। সুন্দর কিছু দেখলে মন খারাপ হবে কেন? তারপর,একদিন, নাদের আলীর দাদাঠাকুরের মতো যখন আরেকটু বড়ো হয়ে উঠি, তখন বুঝে যাই এর অর্থ। এই খুব ছোট ছোট ডিটেইলসগুলো দুর্দান্তভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন তিনি।



তিনি হুমায়ূন আহমেদ, বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম লেখক। গল্পের জাদুকর।



আমরা৯০ দশকের বালক- কিশোরের দল, বড্ড একা হতে শুরু করেছি... প্রিয় বন্ধুরা সব এক আলোকবর্ষ দূরে, প্রিয়মুখেরা রাতের আকাশের তারা, প্রিয় খেলোয়াড়েরা অবসরে, প্রিয় নায়কেরা পর্দায় আসেননা তেমন, প্রিয় গায়কেরা গিটারের ছয় তারে টুংটাং করেন না .. আমাদের ছোটবেলা শেষ হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যেবেলায় মাঝেমাঝে বড্ড বিষন্ন লাগে!



এমন এক বিষন্ন বর্ষার দিনে আমাদের আরো একা করে তিনি চলে গিয়েছিলেন।



হুমায়ূনকে আমি মনে রাখব, দুপুরের ভাতঘুমের বদলে একটা বই নিয়ে কাটিয়ে দেয়া অলস দুপুর কিংবা বৃষ্টিভেজা বিকেল আর মনখারাপের রাতের সঙ্গী হিসেবে।



আমাদের মত শহুরে তরুণদের তিনি বৃষ্টিতে ভিজতে শিখিয়েছিলেন,জ্যোৎস্না দেখতে শিখিয়েছিলেন। কত কিশোরী চুপচাপ চোখের জল ফেলেছে তাঁর বই পড়ে অভিমানে।



আমাদের অস্বচ্ছল সংসারের ‘এইসব দিনরাত্রি’র ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র টানাপোড়েন আর মৃদু অনুচ্চার অনুভূতি ফুল হয়ে ফুটেছে তাঁর হাতে। আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনের মায়াকে আমাদের ভাষাতে আমাদের মতো করে ভাষা দিয়েছিলেন।



আজ বলতে দ্বিধা নেই, হুমায়ূন স্টাইলে বাক্য লেখার একটা সচেতন বা অবচেতন প্রকাশ সবসময়ই থাকত। একদম সহজ সরল ঘরোয়া ভাষায় গল্প বলে যাওয়ার যে স্টাইল হুমায়ূন জনপ্রিয় করেছেন, এর প্রভাব কাটানো মোটামুটি অসম্ভব। আমার নীলরঙা ডায়েরির বহু পৃষ্ঠা ভরে আছে তাঁর বই থেকে টুকে নেওয়া প্রিয় লাইন দিয়ে।



আমাদের সবচে প্রিয় মানুষদের একজন ছিলেন বলে হুমায়ুন আহমেদের কাছে প্রত্যাশা ছিল অনেক, আর প্রিয় মানুষের প্রতি অভিমানটাও সবচে বেশি হয়।



ঈদের রাতগুলোতে তাঁর নাটক না দেখলে তখন ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণতা পেতোনা; ঈদসংখ্যাতেও তাঁর লেখা থাকতেই হবে। আবার, তাঁকে একনজর দেখতে, একটা অটোগ্রাফ নিতে বইমেলার স্টলে হাজার পাঠক ভিড় জমাতো।



হূমায়ুনের লেখায় কেন জানি পুরোপুরি খারাপ কোন চরিত্র নাই; দুর্ধর্ষ খুনীও হঠাৎ কোন এক সময় মানবিক আচরণ করে ফেলতো। তিনি মানুষের ত্রুটিগুলো এঁকেছেন মমতার তুলি দিয়ে।



রাজনৈতিক ঝাঁঝ তাঁর লেখায় প্রায় নেই বললেই চলে; আশির দশকে যখন বাংলাদেশের রাজনীতি উত্তাল, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসেই লিখে যাচ্ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের দিনলিপি, অথচ সেই টানাপোড়েনের পরিবারে সেসময়কার রাজনীতির উত্তাপ টের পাওয়া যায়না। শেষদিকে এসে এইবিষয় নিয়ে ‘জোছনা-জননীর গল্প’, ‘মধ্যাহ্ন’, ‘দেয়াল’ লিখতে চেয়েছেন; ততোটা সফল হননি।



তিনি বলতে শিখিয়েছিলেন-- 'তুই রাজাকার'; বিলিয়ে দিয়েছিলেন 'তোমাদের জন্য ভালবাসা'। ,আজ রবিবার’ নাটকে আনিসের ''তিতলী ভাইয়া,কঙ্কা ভাইয়া'' ডাক এখনো কানে আসে।



অল্প বেতনের একটা চাকরি পাবার আনন্দ, হঠাৎ একদিন বাসার সবাইকে চমকে দিয়ে একটা বড় মাছ নিয়ে ঘরে ফেরার মধ্যবিত্ত আনন্দটুকু অনুভব করবার সামর্থ্য যুগিয়েছেন তিনি পাঠককে।



যে মানুষটা খামখেয়ালী হিমু হতে চায় খালি পায়ে, সে যুক্তির সৈন্যসামন্ত সাজিয়ে মিসির আলীও হতে চায়। এই অদ্ভূত বৈপরীত্য তৈরি করা তাঁর পক্ষেই সম্ভব ছিল।



চার দশক ধরে বাঙালি মধ্যবিত্ত পাঠকদের একই দক্ষতায় হাসিয়েছেন তিনি; কাঁদিয়েছেন তিনি; হয়তোবা তেমন করে ভাবাননি...

কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রিয়তম লেখক হুমায়ূন। এটাই তা বড় গুণ। এরকম ভাবে আর কেউ পারে নি।



শেষদিকে এসে হয়ত আগের মত ক্ষুরধার ছিল না লেখায়, পারিবারিক জীবন-ও টালমাটাল হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আর কে পারবে এত সহজিয়া ভাষায় আমাদের সবার কথা বলতে? তাঁর কাছে অনেক ঋণ আমার, আমাদের। কত দুপুর,রাত কেটে গেছে তাঁর বই হাতে নিয়ে...



সিনেমা বানিয়েছেন আমাদের জন্য। গান লিখেছেন। সায়েন্স ফিকশন লিখেছেন। ম্যাজিকের প্রতি ঝোঁক ছিল, ছবি আঁকার নেশা ছিল।

এতো কিছু এক নিমিষে কিভাবে হারিয়ে যায় !!

আসলেই কি হারায়? হৃদয়ের নরম ঘরে যাদের স্থান,তারা কি কখনো হারায়?



বলেছিলেন - “চাঁদনী পসর রাতে যেন আমার মরণ হয়।” আপনি মারা গেলেন, দূরদেশের এক হাসপাতালের অন্ধকার কেবিনে... বলেছিলেন, '' বেঁচে থাকার আনন্দ আলাদা। শুধুমাত্র সেই আনন্দের জন্যই দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে হয়। '' পারলেন না আপনি।



কে ভেবেছিল, আপনার এক নাটকের মাস্তান বাকের ভাইয়ের মুক্তির জন্য মিছিল বের করবে সবাই। কে আপনার মত মধ্যবিত্তের টানা-পোড়েন নিয়ে লিখবে 'নন্দিত নরকে', 'শঙ্খনীল কারাগার' ? কে নিয়ে যাবে 'দারুচিনি দ্বীপ'-এ? ‘আগুনের পরশমণি’-র বদির জন্য মনটা উচাটন করে আজও। 'কোথাও কেউ নেই' এর শেষ দৃশ্যে মুনা-কে দেখে নিঃসঙ্গতার সংজ্ঞা জেনেছিলাম একদিন।



আপনি বেঁচে থাকবেন শুভ্রের চশমায়, হিমুর হলুদ পাঞ্জাবীতে, বাকের ভাইয়ের সানগ্লাসে, মিসির আলীর যুক্তিতে, নীল বোতামে, তেতুল বনের জোছনায়, সূর্যের দিনে,শ্যামল ছায়ায়, বৃষ্টিবিলাসে, আমাদের ভালোবাসায়, মুগ্ধতায়, আনন্দ-বেদনার কাব্যে, আমাদের গোপন হাহাকারে, আপন আঁধারে, এই নন্দিত নরকে...



জোছনার ফুলটা কি আপনি ধরতে পেরেছিলেন কোনদিন? এই পৃথিবীর কাছে এর চেয়ে যে বেশি কিছু চাইবার ছিল না আপনার...



শ্রাবণ মেঘের দিনটা সেদিন বহু কষ্টে ভরিয়ে দিয়েছিলেন...



না ফেরার দেশে,অচিনপুরে, ভাল থাকুন,প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ



আর, আমার কৈশোরের হুমায়ূন, আমার খুব কাছেই থাকবেন, সারাজীবন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.