![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন বিষাদময় বলেই আমরা অকারণে শুধু হাসতে চাই, আনন্দ পেতে চাই। তাই যেকোন রম্যরচনা আমাদের কাছে যতটা আদর পায়, বাস্তবধর্মী কোন রচনা ঠিক ততটাই অনাদরে উপেক্ষিত হয়- এ সত্য আমার অজানা নয়। তবুও বাংলা কবিতা ও কবির গভীর ভাব ও বোধ আমাকে ভীষণরকম তাড়িত করে বলেই এরকম নীরস রুক্ষ লেখায় অকারনে উৎসাহিত হই।
ব্যবচ্ছেদ: 'বলিল অশ্বত্থ সেই'
প্রথমেই জীবনানন্দ দাশের লেখা 'বলিল অশ্বত্থ সেই ' কবিতাটির প্রথম কয়েকটি চরন পাঠ করা যাক ...
"
বলিল অশ্বত্থ ধীরে ; ' কোন
দিকে যাবে বলো-
তোমরা কোথায় যেতে চাও?
এতদিন পাশাপাশি ছিলে, আহা,
ছিলে কতো কাছে;
ম্লান খোড়ো ঘরগুলো আজও
তো দাঁড়ায়ে তারা আছে;
এই সব গৃহ মাঠ ছেড়ে দিয়ে
কোন দিকে কোন পথে ফের
তোমরা যেতেছো চলে
পাইনাকো টের! '
কল্পনা করুন তো, যে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষ নির্মিত কোন এক খড়ে-ছাওয়া ঘরে এতদিন ছিলাম। আর পাশেই ছিলো পরম আত্মীয়ের মতো এক অশ্বত্থ গাছ। যে আমাদেরকে গ্রীষ্মের দাবদাহে তার প্রকান্ড ডালপালা বিস্তৃত করে ছায়া দিয়েছে, দিয়েছে নির্মল বিশুদ্ধ বায়ু। যে গাছের লাল লাল ছোট ছোট ফলে ভরে গিয়েছে আমাদের উঠোন। আমাদের শিশুরা সেই ফল কুড়িয়ে নিয়ে আমোদে আহ্লাদে হেসেছে।
অথবা ধরুন এই অশ্বত্থ গাছ, মাঠ আর খোড়ো ঘর মিলে আমাদের দেশ। কল্পনা করুন, আমরা হঠাৎ নতুনতর সুখের আশায় সেই অশ্বত্থের ছায়া আর খোড়ো ঘরগুলো ছেড়ে দুরে কোথাও অজানা দেশে যাচ্ছি । আর ঠিক তখনই আসন্ন সম্পর্কচ্ছেদের ব্যথায় আর স্মৃতিকাতরতায়- অশ্বত্থ বলিল ধীরে; ' কোন দিকে যাবে বলো -
তোমরা কোথায় যেতে চাও? '
কবিতার এই প্রথম চরনে এসেই কবির ভাবনার অতলতা অনুভব করে আমি চমকে উঠি। আমরা আসলে কোথায় যেতে চাই নতুন সুখের আশায় ? এর পরপরই কবি অশ্বত্থের জবানিতে বলছেন -
' পঞ্চাশ বছরও তো হায় হয়নিকো - এই তো সেদিন
তোমাদের পিতামহ, বাবা, খুড়ো, জেঠা মহাশয়
আজও, আহা ; তাহাদের কথা মনে হয়!'
এই সুদীর্ঘ ও সুগভীর আবেগময় সম্পর্কের আসন্নাবসানে তাই অশ্বত্থ আমাদের কাছে আকুতি জানাচ্ছে ...প্রশ্ন রাখছে -
' এখানে তোমরা তবু থাকিবে না?
যাবে চলে কোন পথে?
সেই পথে আরো শান্তি -
আরও বুঝি স্বাধ?
আরো বুঝি জীবনের গভীর আস্বাদ?
তোমরা সেখানে গিয়ে তাই বুঝি
বেধে রবে আকাঙ্খার ঘর ! '
প্রশ্নগুলো চিরন্তন এক গভীর ভাবনার উদ্রেক করে। এক অত্যাশ্চর্য দোলায় দুলতে থাকি আমরা। তবে কি আমরা এই অশ্বত্থের আঙিনা ছেড়ে স্বদেশ ছেড়ে নতুন কোন ঠিকানায় যেয়ে সুখের সন্ধান করবো না ?
এবং এই প্রশ্নের চমৎকার উত্তর কবি জীবনানন্দ দাশ নিজেই দিয়েছেন এই কবিতার শেষ চরনগুলির মধ্য দিয়ে। কবি জানেন যে মানুষের তৃষ্ণার কোন শেষ নেই। তার ক্ষুধা অসীম। তাই নিজের অবস্থানে সে সন্তুষ্ট নয়। কিন্তু অন্য কোথাও গেলেই কি সেই কাঙ্ক্ষিত সুখ মেলে? দেখি, কবিতাটির শেষ চরনগুলি পাঠ করা যাক ..."
' যেখানেই যাও চলে,
হয়নাকো জীবনের কোন রুপান্তর
এক ক্ষুধা এক স্বপ্ন এক ব্যথা-
বিচ্ছেদের কাহিনী ধূসর
ম্লান চুলে দেখা দেবে
যেখানেই বাধো গিয়ে
আকাঙ্খার ঘর '- বলিল অশ্বত্থ সেই,
নড়ে নড়ে অন্ধকারে মাথার উপর।
কবি বলে দিলেন আমরা যেখানেই যাই না কেন জীবনের কোন রুপান্তর হয় না, যদিও আমরা রুপান্তরের আশায় ক্রমাগত স্থানান্তরিত হই ... গ্রাম থেকে শহরে, দেশ থেকে বিদেশে। আর অন্ধকার রাতে মাথা নেড়ে নেড়ে অশ্বত্থ যেন সে কথাই আমাদের বলে চলেছে।কিন্তু আমরা আর বুঝতে পারছি কই?
এভাবেই বাংলার কবিরা তাদের কবিতায় নিগুঢ় জীবনদর্শনের কথা এমনি সাবলীলভাবে প্রকাশ করেছেন। আমাদের সমৃদ্ধ করেছেন ভাব ও ভাষার নৈকট্যে। নুতন চিন্তা ও চেতনায়।
কিন্তু হায়! আমাদের যে অমৃতে অরুচি। আর আমাদের অনেকেরই ব্যক্তিজীবন বিষাদময় বলেই আমরা অকারণে শুধু হাসতে চাই, আনন্দ পেতে চাই। তাই যেকোন রম্যরচনা আমাদের কাছে যতটা আদর পায়, বাস্তবধর্মী কোন কবিতা ঠিক ততটাই অনাদরে উপেক্ষিত হয়- এ সত্য তো আমার অজানা নয়। তবুও বাংলা কবিতা ও কবির গভীর ভাব ও বোধ আমাকে ভীষণরকম তাড়িত করে বলেই এরকম নীরস রুক্ষ লেখায় অকারনে উৎসাহিত হই।
২৭ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:১১
ডি মুন বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৫৭
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: লেখায় ভাললাগা রেখে গেলাম,,,,,,,,,,,,