নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বদমেজাজী মন্দ লোক (www.meetmamun.com)

ডি মুন

এস এম মামুনুর রহমান - www.meetmamun.com

ডি মুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

“ কাবুলিওয়ালা, ও কাবুলিওয়ালা …” :)

২৮ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৯

“ কাবুলিওয়ালা, ও কাবুলিওয়ালা …”





পড়ছিলাম রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছে’র ‘কাবুলিওয়ালা’। গল্পটা কমবেশি সবাই পড়েছি আমরা আবার টিভিতে ছবিও দেখেছি। কিন্তু আজ দেখলাম অন্যজিনিস… দেখলাম কিভাবে অস্তিত্ববাদী দর্শনের মুলসুর “Existence precedes essence”-এর সাথে একাত্ব হয়ে যাচ্ছে গল্পের ভাব। জীবনের সুক্ষ মানবিক বোধ কিভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে এই গল্পে - তা ভাবলে সচেতন পাঠক মাত্রেই শিহরিত হবেন। আর গল্প তো শুধু গল্প নয় - তা তো জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। আমাদের আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-সুখের সুসংগত প্রকাশ। প্রসংগত, গল্পটা একটুখানি বলি…



লেখকের কৌতুহলী কন্যা মিনির বয়স পাঁচ। একদিন জানালার ধারে দাঁড়িয়ে কৌতুহলের বশেই ডাক দিলো ঢিলেঢোলা আলখাল্লা পরিহিত কাধে ঝোলাওয়ালা এক লোককে-“কাবুলিওয়ালা, ও কাবুলিওয়ালা।” ডাক দিয়েই আবার লুকিয়ে পড়লো ভয়ে। যাহোক কাবুলিওয়ালা বাড়িতে এলো এবং মিনির ভয় ভাঙ্গাতে ঝুলি থেকে কিসমিস বের করে মিনির হাতে দিলো।



তারপর থেকে প্রায়ই আসে কাবুলিওয়ালা রহমত আর মন্ত্রমুগ্ধের মতো মিনি’র পায়ের কাছে বসে তার কথা শোনে। মিনিকে পেস্তাবাদাম, কিসমিস ঘুষ দেয়। মিনিকে সস্নেহে ভাঙ্গা বাংলায় বলে- “খোখী, তোমি সসুরবাড়ি কখুনু যাবে না”।



প্রতিদিন শতব্যাস্ততার মাঝেও আসে কাবুলিওয়ালা, আর তাকে দেখলেই

মিনি বলে ওঠে- “ কাবুলিওয়ালা, ও কাবুলিওয়ালা, তোমার ও ঝুলির ভিতর কী।”



কাবুলিওয়ালা উত্তর দেয়- হাতিঈঈঈ ।

আর তারপর একটি বয়স্ক এবং একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক দুজনেই শিশুর সারল্যে হেসে ওঠে। এভাবেই দিন কাটতে থাকে।



একদিন হঠাৎ প্রতিবেশী একজনের সাথে দেনা-পাওনা নিয়ে গন্ডগোলের একপর্যায়ে কাবুলিওয়ালা ছুরি মেরে আহত করে তাকে এবং বিচারে ৮ বছর জেল হয়ে যায় কাবুলিয়ালা রহমতের। জেল থেকে ৮ বছর পর ছাড়া পেয়ে কাবুলিওয়ালা রহমত আসে মিনির বাড়িতে। মিনির সেদিন বিয়ে, সে আর সেই ছোট্টটি নেই। মিনি সত্যি সত্যিই শ্বশুরবাড়ি যাবে। রহমতের অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও আজকের এই শুভদিনে লেখক মিনির সাথে তার দেখা করতে দিতে অসম্মতি জানান। তখন কাবুলিওয়ালা পেস্তাবাদাম আর কিসমিস হাতে নিয়ে বলে-



“ বাবু, তোমার যেমন এক লাড়কী আছে, তেমনি দেশে আমারো একটি লাড়কী আছে।আমি তাহারি মুখখানি স্মরণ করিয়া তোমার খোখীর জন্য কিছু কিছু মেওয়া হাতে লইয়া আসি, আমি তো সওদা করিতে আসি না” – এই বলিয়া সে আপনার মস্ত জামাটার ভিতর হাত চালাইয়া দিয়া বুকের কাছে কোথা হইতে এক টুকরা ময়লা কাগজ বাহির করিল। বহু সযত্নে ভাজ খুলিয়া দুই হস্তে আমার টেবিলের উপর মেলিয়া ধরিল।

দেখিলাম, কাগজের উপর একটি ছোট হাতের ছাপ। ফটোগ্রাফ নহে, তেলের ছবি নহে, হাতে খানিকটা ভুষা মাখাইয়া কাগজের উপর তাহার চিহ্ন ধরিয়া লইয়াছে। কন্যার এই স্মৃতিচিহ্নটুকু বুকের কাছে লইয়া রহমত প্রতি বৎসর কলিকাতার রাস্তায় মেওয়া বেচিতে আসে- যেন সুকোমল ক্ষুদ্র শিশুহস্তটুকুর স্পর্শখানি তাহার বিরাট বিরহী বক্ষের মধ্যে সুধাসঞ্চার করিয়া রাখে।



দেখিয়া আমার চক্ষু ছলছল করিয়া আসিল। তখন সে যে একজন কাবুলি মেওয়াওয়ালা আর আমি যে একজন বাঙ্গালী সম্ভ্রান্তবংশীয়, তাহা ভুলিয়া গেলাম- তখন বুঝিতে পারিলাম সেও যে আমিও সে, সেও পিতা আমিও পিতা। ……………………………………… (কাবুলিওয়ালা,গল্পগুচ্ছ,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)



তো এই গল্পের মধ্যে এত বিরহ, এত স্নেহ ভালোবাসা ছাপিয়ে যে সুরটি আমার কানে সবচেয়ে বেশী বেজেছে তা হলো – “ তখন বুঝিতে পারিলাম সেও যে আমিও সে, সেও পিতা আমিও পিতা” এবং সাথে সাথেই আমার মনে পড়ে গেলো অস্তিত্ববাদী দর্শনের জ্যা পল সাত্রের সেই কথা- “Existence precedes essence” অর্থাৎ অস্তিত্ব আগে নির্যাস বা খোলস পরে। (বলে রাখা ভালো অস্তিত্ববাদী দর্শন সম্বন্ধে আমার জ্ঞান এই একলাইনেই সীমাবদ্ধ)



তবুও রবীন্দ্রনাথ আর অস্তিত্ববাদী দর্শন একীভুত হয়ে যেন আমার কানে বলেই চলেছে-



মানুষ আগে, সামাজিক অবস্থান পরে;

স্নেহ প্রেম ভালোবাসা আগে, বাহ্যিক আবরণ পরে;

মানবিকবোধ আগে, আত্ম অহংকার পরে;



আমার মনে পড়ছে চন্ডীদাশের সেই অমর বাণী – “সবার উপরে মানূষ সত্য তাহার উপরে নাই”

আর তাই মিনির মতো আমারো বলতে ইচ্ছে করছে- - “ কাবুলিওয়ালা, ও কাবুলিওয়ালা, তোমার ও ঝুলির ভিতর কী।”





আমরা খোলস ছেড়ে মানবিক হয়ে উঠি , আরো খানিকটা সুন্দর হয়ে উঠি।

শুভকামনা সকলের জন্য । :)



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:১৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: ডি মুন,

অনেক অনেকদিন পরে আপনি হৃদয় মোচড়ানো ক'টি লাইন তুলে আনলেন -

“ বাবু, তোমার যেমন এক লাড়কী আছে, তেমনি দেশে আমারো একটি লাড়কী আছে।আমি তাহারি মুখখানি স্মরণ করিয়া তোমার খোখীর জন্য কিছু কিছু মেওয়া হাতে লইয়া আসি, আমি তো সওদা করিতে আসি না” – এই বলিয়া সে আপনার মস্ত জামাটার ভিতর হাত চালাইয়া দিয়া বুকের কাছে কোথা হইতে এক টুকরা ময়লা কাগজ বাহির করিল। বহু সযত্নে ভাজ খুলিয়া দুই হস্তে আমার টেবিলের উপর মেলিয়া ধরিল।
দেখিলাম, কাগজের উপর একটি ছোট হাতের ছাপ। ফটোগ্রাফ নহে, তেলের ছবি নহে, হাতে খানিকটা ভুষা মাখাইয়া কাগজের উপর তাহার চিহ্ন ধরিয়া লইয়াছে।


কাবুলী্ওয়ালার এটুকু পড়ে যাদের বুকে কষ্ট জেগে ওঠেনা, শ্রেফ পল্পের বাক্যই মনে হয় তাদের ঝুলি আখরোটে, কিসসিসে নয় - ইট পাথরে ভরা । এদের সেই ঝুলি খুললে তো কেবল অন্তসার শূন্যতাই বেরিয়ে আসবে । এই খোলস তারা খুলবে কেন ?
তবু্ও আপনার আকাঙ্খা একদিন বাস্তব হয়ে উঠবে , এই বিশ্বাস রাখি ।
শুভেচ্ছান্তে ...

২৮ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৬

ডি মুন বলেছেন: " কাবুলী্ওয়ালার এটুকু পড়ে যাদের বুকে কষ্ট জেগে ওঠেনা, শ্রেফ পল্পের বাক্যই মনে হয় তাদের ঝুলি আখরোটে, কিসসিসে নয় - ইট পাথরে ভরা । এদের সেই ঝুলি খুললে তো কেবল অন্তসার শূন্যতাই বেরিয়ে আসবে । এই খোলস তারা খুলবে কেন ? "

খুব সুন্দর বলেছেন , অনেক ধন্যবাদ :)

২| ২৮ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:১৯

বোকামন বলেছেন:

প্রথম মন্তব্যে বলা হয়ে গিয়েছে-যা বলার ছিলো.......।
শুভকামনা আপনার জন্য।

২৮ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৭

ডি মুন বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ :) শুভকামনা রইল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.