নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বদমেজাজী মন্দ লোক (www.meetmamun.com)

ডি মুন

এস এম মামুনুর রহমান - www.meetmamun.com

ডি মুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাত্ত্বিক মরমী বাউল সাধকঃ লালন

১২ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৩১



লালন একজন তাত্ত্বিক কবি। কেন?

কারণ তিনি গানে গানে সুর ও ছন্দে প্রকাশ করেছেন তত্ত্বজ্ঞান। প্রকাশ করেছেন জীবনদর্শন, আধ্যাত্ববাদ, আত্মদর্শন। বলেছেন-



“আত্মতত্ত্ব যে জেনেছে

দিব্যজ্ঞানী সে হয়েছে”



তত্ত্বসাধনার এক মুলকথা-আত্মদর্শন। আর এই আত্মদর্শনের সাধনাই তিনি করে গেছেন জীবনভর। কিন্তু আত্মতত্ত্ব কি? দিব্যজ্ঞান কি? কেনইবা এই সাধনা প্রয়োজন? এই একবিংশ শতাব্দীর আধুনিকতায় লালনকে আমরা কেন স্মরন করবো?



খুব সহজে বলতে গেলে নিজের সম্বন্ধে সাধনার মাধ্যমে সম্যক জ্ঞান অর্জনের কঠিন তত্ত্বসাধনাই হলো আত্মতত্ত্ব সাধনা বা আত্মদর্শন। আর এই আত্মতত্ত্ব সাধনার ফলে অর্জিত জ্ঞানই হলো দিব্যজ্ঞান তথা মহাজ্ঞান। তাই নিজেকে জানার মধ্য দিয়েই লালন জগত-সংসারকে জানার কথা বলছেন। একতারা হাতে নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে মেঠো পথে ঘুরে ঘুরে এই বাউল সাধক তার সেই অমিয়বানী প্রচার করছেন-



“চেয়ে দেখনারে মন দিব্যনজরে

পাবিরে অমূল্য নিধি এই বর্তমানে”



এই তাত্ত্বিক সাধক আমাদেরকে দিব্যনজর তথা অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখতে বলছেন এবং জানিয়ে দিচ্ছেন তাহলেই আমরা ‘অমূল্য নিধি’ তথা দিব্যজ্ঞান অর্জন করতে পারবো। আত্মদর্শনের পথ ধরেই আমরা পরমাত্মা তথা অচিন পাখি, আলেক সাঁই, মনের মানুষ, পঁড়শি, অজান পাখি-এর সাথে একাত্ম হতে পারবো। তিনি তার সেই একাত্ম হওয়ার আকুলতা থেকে বলছেন-



“বাড়ির পাশে আরশি নগর

সেথা এক পড়শী বসত করে

আমি একদিনও না দেখিলাম তারে”



লালন চাইছেন তার এই পড়শীর সাথে একাত্ম হতে। তার এই আকুতির কথা ফুটে উঠেছে বিভিন্ন গানে, অপরুপ সব সুরের ইন্দ্রজালে…



“কে বানাইলো এমন রঙমহল খানা

হাওয়া দমে দেখনারে তার আসল বেনা



এ রঙমহল গঠলো যে জন

না জানি তার রূপটি কেমন

সিরাজ সাঁই কয় নাইরে লালন তার তুলনা”



“ঐ রূপ যখন স্মরণ হয়

থাকে না লোক লজ্জার ভয়

লালন ফকির ভেবে বলে সদাই

ও প্রেম যে করে সেই জানে



মিলন হবে কতোদিনে

আমার মনের মানুষেরও সনে”



লালনের সাধনা প্রেমের সাধনা, অসীমের সাধনা , পরমেশ্বরের সাথে একাত্ব হওয়া ও তাতে বিলীন হওয়ার এক মহান সাধনা। সেই পরমেশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা যার কোন তুলনা নেই।



লালনদর্শন আবার শুধু তত্ত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে উর্ধোমুখি নয়। বরং তা খুবই মানবিক ও মানুষ অভিমুখী , মরমী। মানবিক; কারণ তা সমাজ সংস্কারের বেড়াজাল থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে চায় আর মরমী; কারণ তা মানুষের হৃদয়ের কথা বলে, অন্তর্গত নিগুঢ় বেদনাবোধের কথা বলে। মানুষকে সম্মান দেওয়ার কথা বলে, শ্রদ্ধা করার কথা বলে। লালন বলেন-



“এই মানুষ ছাড়া মন আমার

পড়বি রে তুই শূন্যাকার

লালন বলে মানুষ আকার

ভজলে তারে পাবি



মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি

মানুষ ছাড়া খ্যাপা রে তুই মূল হারাবি”



মানুষে মানুষে বিভেদ-বিভাজন দেখে এই মরমী সাধকের হৃদয়ে তাই ব্যথা জাগে। তার বিশ্বাস নিজেকে জানার মধ্যদিয়েই মানুষকে জানা যায় আর মানুষকে জানার মধ্য দিয়েই সেই কাঙ্খিত দিব্যজ্ঞান তথা মহাজ্ঞান লাভ করা যেতে পারে যা সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যলাভে অনিবার্য। লালনের সাধনা তাই মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোন বনে যেয়ে নির্জন-সাধনা নয় বরং তা মানুষের মধ্যে থেকে মানুষকে জানার মতো এক গভীর সরব সাধনা। এ কথাই যেন প্রতিধবনিত হচ্ছে তার গানে, সুরলহরীতে। আর তাই লালন মরমী সাধক। তার গান মানুষের মরমের কথা বলে। মানুষের আজন্ম জ্ঞানপিপাসু মনে সুচিন্তার স্ফুরন ঘটায়। মনকে ভরিয়ে তোলে সুর ও ছন্দের এক কাব্যিক আবহে।

আর তাই লালন মানবিক বলেই জাতবিচার ও বর্ন প্রথা তার মরমী মনকে আঘাতে জর্জরিত করে, বেদনাপীড়িত করে। তিনি কেঁদে ওঠেন…



“ভক্তের দ্বারে বাঁধা আছেন সাঁই

হিন্দু কি যবন বলে জাতির বিচার নাই”



সাঁই তথা পরমেশ্বর তো জাতি কুলের বিচার করেন না। তিনি তো ভক্তের ডাকে সাড়া দেন তাই সে উঁচু বা নিচু যে জাতই হোক না কেন। তাঁর তো জাতিকুলের বিচার নাই। তাহলে মানুষে মানুষে বিভেদ কেন?

আবার কখনোবা লালন নিজের জাতি কুলের পরিচয় দিতে গিয়ে বলছেন-



“সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে

লালন বলে জাতের কি রূপ দেখলাম না এই নজরে”



এমন সুন্দর তার মন, এমনি সুগভীর তার সাধনা। তার গানের মধুর বানীতে তিনি আমাদের জন্য আমিয় বহন করে আনেন। আমাদের মানসচক্ষে আমরা দেখতে পাই, এক আধ্যাত্মিক বাউল সাধক একতারা হাতে করে গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে ঘুরে তার তত্ত্বজ্ঞান প্রচার করছেন। প্রচার করছেন সহজ আত্মদর্শন তথা জীবনদর্শন। আমাদেরকে সহজ আধ্যাত্মিক চিন্তাস্রোতের মধ্যদিয়ে অচিন পাখির সন্ধানের পথে আহবান করছেন।



তাই ১৭ অক্টোবর ১৭৭৪ সালে বাংলাদেশের যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার হারিশপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া এই তত্ত্বজ্ঞানী মরমী সাধকটিকে একবিংশ শতাব্দীর এই ব্যস্ত আধুনিক ও যান্ত্রিক জীবনেও বড়ো প্রয়োজন। তিনি মরমী সাধনার পথে, আত্মদর্শনের পথে, সর্বোপরি মংগলময় জীবনের পথে অনিবার্য এক নাম।



“চেয়ে দেখনারে মন দিব্য নজরে

পাবিরে অমূল্য নিধি এই বর্তমানে”















মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৯

বোকামন বলেছেন:





খুবই সুন্দর করে তুলে ধরেছেন মহান আধ্যাত্মিক সাধকের কথা।
কৃতজ্ঞতা রইলো ।

পড়শী যদি আমায় ছুঁতো,
যম যাতনা সকল যেতো দূরে।
সে আর লালন একখানে রয়-
(তবু) লক্ষ যোজন ফাঁক রে।।


লালন এবং আমাদরে মাঝে লক্ষ যোজন ফাঁক রয়েই যাচ্ছে। তাই লালন চর্চা করতে হবে আরো অনেক বেশী :-)

১২ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৪২

ডি মুন বলেছেন: শুনি ম'লে পাবো বেহেস্তখানা
তা শুনে তো মন মানে না
বাকির লোভে নগদ পাওনা
কে ছাড়ে এই ভুবনে।

সহজ মানুষ ভজে দেখনারে মন দিব্যজ্ঞানে


আমাদের আরো অনেক অনেক লালন সাধনা করতে হবে ।

অনেক ধন্যবাদ

২| ১২ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৮

কাফের বলেছেন:

তিল পরিমাণ জায়গার ভিতর
গঠেছেন সাঁই ঊর্ধ্বশহর
এই মানুষ মক্কাতে।
কত লাখ লাখ হাজি করছে রে হজ
সেই জায়গায় বসিয়ে।


ভালো লাগলো পোষ্ট

১২ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:১৮

ডি মুন বলেছেন: আছে আদি মক্কা এই মানবদেহে দেখ না রে মন ভেয়ে ।
দেশ-দেশান্তর দৌড়ে এবার মরছ কেন হাঁপিয়ে ।।

করে অতি আজব ভাক্কা
গঠেছে সাঁই মানুষ-মক্কা
কুদরতি নূর নিয়ে ।
ও তার চারদ্বারে চার নূরের ইমাম
মধ্যে সাঁই বসিয়ে ।


অনেক ধন্যবাদ

৩| ১২ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৯

কসমিক- ট্রাভেলার বলেছেন:





মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি - লালন


ভালো লাগলো

১২ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:২৯

ডি মুন বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৪| ১৩ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৬:৫৪

আমিই মিসিরআলি বলেছেন: পোষ্টে প্লাস +++++

১৩ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৫৬

ডি মুন বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.