নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বদমেজাজী মন্দ লোক (www.meetmamun.com)

ডি মুন

এস এম মামুনুর রহমান - www.meetmamun.com

ডি মুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিরে দেখাঃ নজরুলের কিছু পরিচিত গান, পর্ব-২

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১৩

২।



ডাগর চোখের একটি বাঁকা চাহনি মনকে করে দিতে পারে অনেকখানি এলোমেলো উদাসীন। নিমেষেই হৃদয়ে এঁকে দিতে পারে গভীর প্রেম-আকাঙ্ক্ষা। চোখের বাণেই তো মন প্রথম ঘায়েল হয়। মনের গহীনে প্রথম সুখ-স্বপ্ন-বীজ অঙ্কুরিত হয় । চোখ যেন যাদু জানে। তাই নজরুলের চোখে চোখ পড়তেই তিনি সুনয়নাকে বলে ওঠেন...



চেয়ো না সুনয়না আর চেয়ো না এ নয়ন পানে

জানিতে নাইকো বাকী সই, ও আঁখি কী যাদু জানে।।



একে ঐ চাউনি বাঁকা সুর্মা আঁকা, তা’য় ডাগর আঁখি

বধিতে তা’য় কেন সাধ? যে মরেছে ঐ আঁখি বাণে।।



কাননে হরিণ কাঁদে সলিল ফাঁদে ঝুরছে শফরী,

বাঁকায়ে ভুরুর ধনু ফুল অতনু কুসুম শর হানে।।

জ্বলিছে দিবস রাতি মোমের বাতি রূপের দেওয়ালী

নিশিদিন তাই কি জ্বলি ‘পড়ছে গলি’ অঝোর নয়নে।।



মিছে তুই কথার কাঁটায় সুর বিঁধে হায় হার গাঁথিস’ কবি

বিকিয়ে যায় রে মালা আয় নিরালা আঁখির দোকানে।।




সুনয়না, তুমি আর চেয়ো না কবির চোখের পানে। তোমার চোখের বাণে কবির হৃদয় যে রক্তাক্ত। তোমার চোখ যে যাদু জানে। হ্যাঁ, কবি জানেন এ কথা। কবি জানেন যে তার চোখে সুনয়নার চোখ পড়লে তিনি কিছুতেই নিজেকে বেঁধে রাখতে পারবেন না। তিনি ঐ চোখের যাদুতে সম্মোহিত হয়ে যাবেন। তাই তো তিনি সুনয়নাকে মিনতি করে বলছেন–



চেয়ো না সুনয়না আর চেয়ো না এ নয়ন পানে

জানিতে নাইকো বাকী সই, ও আঁখি কী যাদু জানে।।




কিন্তু সে আঁখি কী যাদু জানে? কি আছে সেই আঁখিতে? সেই আঁখি কেমন যে তা কবিকে মোহগ্রস্থ করে ফেলেছে? জবাব মিলবে তারপরেই পংক্তিতেই। কবি সে আঁখির বর্ণনা দিয়ে বলছেন-



একে ঐ চাউনি বাঁকা সুর্মা আঁকা, তা’য় ডাগর আঁখি

বধিতে তা’য় কেন সাধ? যে মরেছে ঐ আঁখি বাণে।।




সে আঁখি সুর্মা অঙ্কিত। সে আঁখি ডাগর আঁখি। আর সে চাউনি কোন সহজ চাউনি নয়। সে হলো বাঁকা চাউনি। যে আঁখি দিয়ে সুনয়না কবির মনকে বধ করতে চাইছে তা যে সুর্মা আঁকা চোখের তির্যক চাউনি। কিন্তু কবির মন তো আগেই ধরা দিয়ে বসে আছে। তাই কবি প্রশ্ন করছেন- বধিতে তা’য় কেন সাধ? যে মরেছে ঐ আঁখি বাণে। কেন মিছে আঁখির বাণ নিক্ষেপ! আমি তো আগেই ধরা দিয়েছি ঐ চোখের তারায়। শুধু কি কবিই এমন উতলা? না । সুনয়নার চোখ যেখানে পড়ছে সেখানেই ঘটে যাচ্ছে এমনই ভাঙচুর। সম্মোহিত হয়ে পড়ছে প্রকৃতি। কবি তাই সেই প্রকৃতির ছবি আঁকলেন নিপুণ শব্দমাধুর্যে।



কাননে হরিণ কাঁদে সলিল ফাঁদে ঝুরছে শফরী,

বাঁকায়ে ভুরুর ধনু ফুল অতনু কুসুম শর হানে।।

জ্বলিছে দিবস রাতি মোমের বাতি রূপের দেওয়ালী

নিশিদিন তাই কি জ্বলি ‘পড়ছে গলি’ অঝোর নয়নে।।




সুনয়নার চোখের তীরে ঘায়েল হয়ে বনে বনে হরিণ কেঁদে ফিরছে। সলিল ফাঁদে ঝুরছে শফরী অর্থাৎ পানিতে শফরী(পুঁটিমাছ) অশ্রুপাত করছে। কি চমৎকার চিত্রকল্প। কিন্তু কেন কাঁদছে? কাঁদছে, কারণ সুনয়না তার ধনুকের মতো বাঁকা ভুরুর থেকে অনবরত কুসুমের তীর নিক্ষেপ করে চলেছে। আর তাদের হৃদয় সেই তীরে বিদ্ধ হচ্ছে। সে যে দিকেই তাকাচ্ছে সমস্তই তার চোখের যাদুতে ভেসে যাচ্ছে। তার কুসুম-শর-হানা নয়ন প্রত্যাশি হয়ে সমস্ত প্রকৃতি যেন কাঁদছে বেদনায়। সে রূপ যেন মোমের বাতি হয়ে আলো বিলাচ্ছে দিবানিশি। আর সেই মোম অশ্রু হয়ে গলে পড়ছে বনের হরিণ আর সরোবরের শফরীর অঝোর নয়নে।



যে নয়নে এতো যাদু। যে নয়নের আশায় কেঁদে মরছে সমস্ত প্রকৃতি। সেই নয়ন লাভ করা তো সহজ কথা নয়। মিছে শুধু তার চোখে নিজেকে ধরা দিয়ে দুঃখ-যন্ত্রণায় দগ্ধ হওয়া ছাড়া আর তো কিছু পাওয়ার নেই। তাই কবি নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন-



মিছে তুই কথার কাঁটায় সুর বিঁধে হায় হার গাঁথিস’ কবি

বিকিয়ে যায় রে মালা আয় নিরালা আঁখির দোকানে।।




কথায় কাঁটায় সুরের পরশ দিয়ে কবি যতো সুন্দর মালাই গাথুক অর্থাৎ যতো মর্মভেদী সংগীতই রচনা করুক না কেন সুনয়নার আঁখির দোকানে তা নিমেষেই বিকিয়ে যাবে। তার সুর্মা আঁকা বাঁকা চাউনির ক্ষমাহীন সৌন্দর্যের সম্মুখে তা নিতান্তই তুচ্ছ নগন্য। কবি জানেন যার একটি চাউনি মনকে এমন মদির করে তোলে সে দুষ্প্রাপ্যকে পাওয়া কবির পক্ষে সম্ভবপর নয়। তাই আর কেন মিছে এই নয়নের কুসুম তীর নিক্ষেপ? কবি-হৃদয়ের আর্তনাদ তাই করুণ মিনতি হয়ে_ গান হয়ে ফিরছে - চেয়ো না সুনয়না আর চেয়ো না এ নয়ন পানে।



সুনয়না, কবির মিনতি রাখো। তার চোখের দিকে তাকিয়ে তাকে আর ব্যাকুল করে তুলনা।



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: একে ঐ চাউনি বাঁকা সুর্মা আঁকা, তা’য় ডাগর আঁখি
বধিতে তা’য় কেন সাধ? যে মরেছে ঐ আঁখি বাণে।।

কি দারুন তাঁর উপমা, কি দারুন তার সহজতা......

++

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৯

ডি মুন বলেছেন: আমি অবাক হয়ে ভাবি, যে নজরুল এতো সুন্দর সুন্দর কথামালা দিয়ে গানের ডালি সাজিয়েছেন_ তার গানগুলো যেন কেমন আড়ালে থাকে। কেউ যেন সামনে নিয়ে আসতে চায় না। দুর্বোধ্য বলে এড়িয়ে যায়।
অথচ এই রকম ভয়াবহ সুন্দর গান আর কি কোথাও পাওয়া যাবে!!!!!

২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৯

নীল আকাশ আর তারা বলেছেন: মনে হইল বাংলা ১ম পত্র ক্লাসের পড়া পড়লাম B:-) B:-) । একটা সুন্দর গানের এত জটিল বিশ্লেষন পড়তে ইচ্ছা করতেছিলনা।বাট ভাল হইসে।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৩

ডি মুন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ :)

৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪১

মামুন রশিদ বলেছেন: গানটা অসম্ভব প্রিয়! বিশ্লেষণ সুন্দর হয়েছে ।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩০

ডি মুন বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.