নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আধা পাগলের লেখা লেখি... হয়তো শুধুই মস্তিস্ক বিকৃতি...

ভাবুক তুষার

আমি যেমনটা তেমন ই আছি... সময় আর দৃশ্যপট পালটে গেছে... মুছে গেছে আগের চেনা মুখ গুলো... স্মৃতির অতলে ঠাই করে নিয়েছে কিছু আবেগ-অনুভুতি... ব্যর্থতার শিকল পায়ে হাঁটা বড় দায়...

ভাবুক তুষার › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসমাপ্ত

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৮

টিপ টিপিয়ে জ্বলছে হাতে ধরে রাখা মোমবাতিটা। একটু জোরে বাতাস বইলেই নিভে যাবে মোমবাতিটা। রাতের আকাশ পরিষ্কার, তারা দেখা যাচ্ছে, এখনো কুয়াশা ধরে আসে নি। শুকনো পাতা মাড়িয়ে হেঁটে চলছে নিশি। ওদিক থেকে মিটি মিটি আলো দেখা যাচ্ছে, কারা যেন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, কিছুটা সামনে এগিয়ে গাছের আড়ালে গিয়ে দাঁড়াল নিশি। বরযাত্রী যাচ্ছে। সামনে টিম টিমে আলোর হারিকেন হাতে ধরে একজন এগিয়ে যাচ্ছে, তার পিছনে পালকি ধরে নিয়ে যাচ্ছে সদ্য বিয়ে হওয়া মেয়েটিকে। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে আনন্দের শব্দ আসছে। এভাবে পালকিতে করে বউ নিয়ে যাওয়া দেখতে খুব ভালো



নিশি, এই নিশি............। মায়ের হাক ডাক শুনে উর্ধ্ব শ্বাসে ছোটে নিশি...



- কোথায় গিয়েছিলে?

- এইতো মা ওদিকে

- ওদিকে কোথায়?

- রাস্তার ওদিকে

- পালকি তে করে বউ নিয়ে যাচ্ছে, দেখতে গিয়েছিলাম

- কদিনের জন্যে এখানে বেড়াতে এসেছ বলে রাত বিরাতে এভাবে ছোটাছুটি করবে নাকি ! খাবার দেয়া হয়েছে, খেতে এস।

- সরি মা



সব দোষ নাদিম ভাইয়ের, আজিব একটা ক্যারেক্টার। কই থেকে যে আসে আর কই হারায় যায় কে জানে ! গ্রামের মানুষ বলে তার সাথে নাকি জীন ভুত আছে। নাদিম এর সাথে মিশতেও থাকে বারন করা হয়েছে। কিন্তু নাদিম ভাইকে তার ব্যাপক ভালো লাগে। নাদিম ভাইয়ের অনেক বড় পাঙ্খা বলা চলে। ভাইয়া তাকে ছোট বলে পাত্তা দেয় না, ঘুরতেও নিয়ে যায় না। ইশ নাদিম ভাইয়ের মত করে এই রকম ভুশ করে হারিয়ে যাওয়া যেত।



---------------------------------

নাদিম, ক্লাসের শেষ সিটে বসা একটা ছেলে, এলোমেলো বড় বড় চুল মাথায়, চোখে চশমা, কাচ ঘোলা ঘোলা দেখাচ্ছে। অশ্রুতে নাকি অন্য কোন কারনে বোঝা গেল না। ক্লাসের বাকি ছেলে মেয়েরা তার থেকে বেশ দুরত্বে বসে আছে, বেঞ্চের হিসেব করলে তার থেকে ৩/৪ বেঞ্চ সামনে।



একা একা ক্লাসে আসে, একাই চলে যায়, কারও সাথে ভালো আছ? ভালো আছি এর বেশি কথা হয় না। ক্লাস ভালো লাগে না ছেলেটির, তার স্বপ্নে ভাসে দিগন্ত জোড়া কোন সুবজ মাঠ, নরম সবুজ ঘাসের উপর মাথা রেখে শুতে পারবে কিংবা রৌদ্র জ্বলা কোন সকালে কোন এক জেলে নৌকায় বসে নদীর জলে পা ডুবিয়ে রাখতে কিংবা গোধূলি বেলায় নদীর পারে বসে গাঙচিল দের বাড়ি ফেতে যেতে দেখা। কিংবা কোন হাই ওয়ের পাশ ধরে হেঁটে চলা।



ক্লাসের মধ্যে একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড বলতে গেলে অবন্তী, সেই কেবল তাকে বোঝে। পাগলে পাগল চেনে বলে একটা কথা আছে, ওদের বেলায় ১৬ আনাই তা খাটি।



- নাদিম আজ প্র্যাকটিস আছে যাবি না?

- এই লাশ কাটা কুটি আর আমার ভালো লাগে না

- তোরা যা

- তুই না গেলে আমিও যাব না

- আচ্ছা ঠিক আছে চল



এই লাশ কাটা কুটি টা নাদিমের বড়ই অপছন্দের, ডাক্তার হতে হলে সব আবেগ মাটি চাপা দিতে হয়। চোখের সামনে অহরহ মানুষ মরে, ঘাবড়ে গেলে চলবে না। শক্ত নার্ভের হতে হবে।



নাদিম একটা মেয়েকে পছন্দ করতো। মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দরী ই ছিল। মেয়েটাকে নিয়ে নানারকম জল্পনা কল্পনা চলতো। শেয়ার করার মত এক মাত্র মানুষ অবন্তী। দুই দোস্ত মিলে যত অপকর্মের প্ল্যান পোগ্রাম করতো, কিভাবে কি করা যায়। মাঝে মাঝে নাদিম অবন্তীকে বলতো তুই মেয়ে না হয়ে ছেলে হলে ভালো হত।



নাদিম সোমা নামের একটা মেয়েকে পছন্দ করতো, সে মেয়েটাকে তার ভালবাসার কথা জানানোর আগেই সে জানতে পারে সোমা অন্য কারো। নাদিমের কান্না পেয়েছিল কিন্তু স্যারের সেই কথা "ডাক্তারদের শক্ত নার্ভের হতে হবেম কাঁদতে নেই" প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফেরে নাদিম।



জীবনের পরতে পরতে চমক অপেক্ষা করে, নাদিমের জন্যেও হয়তো ছিল কিছু। সেদিন ও লাশ কাটার কাজ, বিশ্রী একটা গন্ধ এই লাশ রাখার রুমে। আজ গন্ধ টা একটু বেশী ই। লাশ কাটার জন্যে মুখের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে হতবাক নাদিম। লাশটা সোমার ! যে মানুষটাকে সে ভালোবেসেছিল সেই আজ লাশ হয়ে সামনে... আর সেই প্রিয় মানুষটার লাশ তাকেই কাটতে হবে...। কাছের মানুষের চিকিৎসা করতে গেলেই যেখানে ডাক্তারদের হাত কাপে আর সেখানে তার ভালবাসার মানুষটার লাশ কাটতে হচ্ছে তাকে।



---------------------------------------



চারপাশ জুড়ে খোলা মাঠ, মাথার উপর চাঁদটা আলো বিলিয়ে যাচ্ছে, আকাশে নেই কোন তারা, জ্যোৎস্না রাত হলেও কুয়াশার চার পাশা ধোঁয়া ধোঁয়া। নিস্তব্ধ চারদিক, মাঝে মাঝে পাশ দিয়ে জোনাকিরা উড়ে যাচ্ছে। মাঠ না ফসলের ক্ষেত বলাই ভালো, ক্ষেতের কিছুটা দূরে রাস্তার ওপারে কবরস্থান। ছেলেটি চুপ করে এক স্থানে দাড়িয়ে আছে, অবাক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে, হঠাৎ ছেলেটি বসে পড়ল, কাঁদতে শুরু করলো... কেউ হয়তো জানে কেন সে কাঁদছে...



কাধে হাত পড়তেই নাদিম ঘুরে তাকায়...



- ভাইয়া কাদতেছ কেন?

- তুই এখানে কেন?

- বাইরে চাদের আলো, অনেক সুন্দর আর টের পেলাম তুমি বাইরে বের হলে, তোমার পিছু নিয়েছি

- তোর মা দেখলে কি হবে তোর আক্কেল আছে?

- সে যা হোক, তুমি কাদতেছ কেন?

- কিছু না, বাসায় চল

- না বাসায় যাবো না

- বাসায় যাবি না তো কি করবি? গাছের ডালে উঠে পেত্নীর মত পা দুলাবি?

- ওদিকে নদী আছে না, চল ওখানে যাব

- এত রাতে ওখানে কি গিয়ে করবি?

- জিসান বলে জ্যোৎস্না রাতে নদী অনেক সুন্দর লাগে

- জিসান কে?

- জিহ্বায় কামড় দিয়ে কেউ না

- বুঝেছি, চল



ভাইয়ের সাথে নিশি যেতে থাকে......। ভাই বোনের গল্প চলতে থাকে, নিশির চেস্টা ভাইয়ার মত ভুশ হারিয়ে যাওয়া টা শিখতে হবে... এমন পাগলাটে লোকেরা অনেক ভালো, কখনো রাগ করে না আরও কত কি... ।



প্রত্যেকটা মানুষের ভেতরের রূপটা সবাই দেখতে পায় না, বাইরের দুনিয়ার কাছে হয়তো সে অনেক খুশী।









## নোটঃ





#১ নিশি গ্রামে তার কাজিন দের বাড়িতে বেরাতে এসেছিল।

#২ নাদিমের ভুশ করে হারিয়ে যাবার ব্যাকগ্রাউন্ড।

#৩ ধারনা করা হয় সোমা যে ছেলেটিকে ভালবাসত, সে সোমাকে খুন করেছিল।

#৪ নিশি যখন বেড়াতে এসেছিল সে সময় নাদিম তাদের গ্রামের বাড়িতে ছিল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.