নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আধা পাগলের লেখা লেখি... হয়তো শুধুই মস্তিস্ক বিকৃতি...

ভাবুক তুষার

আমি যেমনটা তেমন ই আছি... সময় আর দৃশ্যপট পালটে গেছে... মুছে গেছে আগের চেনা মুখ গুলো... স্মৃতির অতলে ঠাই করে নিয়েছে কিছু আবেগ-অনুভুতি... ব্যর্থতার শিকল পায়ে হাঁটা বড় দায়...

ভাবুক তুষার › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনন্যা আর একটা কালো গোলাপ

০৯ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:৪৮





দুটো সিঙ্গারা কিনেছিলাম, খাওয়া শেষ করে প্যাকেট টা ফেলে দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। হঠাৎ পা দুটো যেন ভেঙে এল, হাটু ভেঙে পড়ে যাচ্ছি আমি মাটিতে। চারপাশ থেকে রিয়াদ, মনির আরও কয়েকজন ওরা ছুটে আসছে টের পেলাম। দুজন আমাকে ধরে ফেললো। চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে আর কিছু খেয়াল নেই। যখন চোখ মেললাম আমি বাড়িতে রিয়াদ, মনির, সাব্বির এদিক ওদিক বসা, মা মাথার কাছে বসে আছে, কাদছে। কি হয়ছে কিছুই আমি বুঝতে পারছি না। কিছুক্ষণ পর সব স্বাভাবিক হলে আমি খেয়াল করলাম আমি হাটুর নিচে আমার পায়ের কোন অস্তিত্ব পাচ্ছি না, পায়ে কোন সার নেই আমার। পা নাড়াতে পারছি না।



কি হচ্ছে কিছুই আমার মাথায় যাচ্ছে না, ঘোরের মধ্যে আছি। কেমন যেন সব অদ্ভুতুড়ে। আমি প্রায়ই স্বপ্ন দেখতাম হাটতে গিয়ে আমি পড়ে যাচ্ছি, খুব কস্ট হচ্ছে হাটতে, পায়ে জোর ক্রমশ হারিয়ে ফেলছি। তবে কি সেই ভয়ার্ত স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেল? কিচ্ছু মাথায় আসছে না আমার। রিয়াদ কে সব বললাম। কেউই কিছু বুঝতে পারছে না এমন কিভাবে হতে পারে।



নুসরাত কে ফোন দেব ভাবছি, কিন্তু ফোনটাও নেই। যখন পড়ে গিয়েছিলাম তখন হয়তো ফোন টাও কোথাও পড়ে গেছে। যোগাযোগ করাও হল না। ঘটনার ৩দিন পার গেছে। ডাক্তার আর পরীক্ষা নিরীক্ষার পেছনেই সময় চলে গেল। পরীক্ষা নিরীক্ষার ফল আসতে এখনো দেরি। বাবা -মা, শায়লা সবাই চিন্তিত। সামনের মাসে শায়লার বিয়ে, এর মধ্যে আমার এই দশা। এমনিতেই আর্থিক অবস্থার টানা টানি। মাথায় কিছুই ধরছে না কিভাবে কি হবে। কখনো সিগারেট খাই না আমি, খেতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু এই দশায় বাইরেই বা কিভাবে যাব, তা ছাড়া দশটা টাকা নস্ট হবে।



সন্ধ্যায় নুসরাত এল। মুখটা কেমন জানি লাগলো, হাসি খুশি না। দশ/পনেরো মিনিট বসে চলে গেল। বাবা-মা আজ জানলোও না ও এসেছিল। যাবার সময় বালিশের পাশে একটা চিরকুট রেখে গেল। আমার এই অবস্থায় রিয়াদ সব সময়ই সাথে ছিল। ও ই চিরকুট টা খেয়াল করে, আমার দিকে তাকিয়ে বলল হৃদয় দেখতো ওখানে ও কাগজটা কিসের। ঘাড় ঘুরিয়ে কাগজ টা হাতে নিলাম। তাতে কিছু লেখা আছে মনে হচ্ছে। কাগজের ভাজ খুলে মেলে ধরলাম কাগজটাতে কিছু লেখা, লেখাটা নুসরাতের.........।।



তোমার মনের কিংবা শরীরের অবস্থা মোটেও ভালো না জানি। তবু বলতে হচ্ছে। তোমার অসুস্থতার ব্যাপারে আমি শুনেছি আমার এক ডাক্তার কাজিনের সাথে আলাপ করেছি, সে কি যেন একটা মেডিকেল টার্মের কথা বলেছিল তা খেয়াল নেই, তবে সারমর্ম দাঁড়ায় তুমি আর কখনো ভাল হবে না যদি হও সেটা মিরাকেল। তুমি বলতে আমি তোমার কথা মানি না, সময় শেষ করে বুঝি সেটা। হৃদয় তুমি বরাবার ই ঠিক ছিলে, আজো আছ। তোমাকে যখন ভালোবাসার কথা বলেছিলাম তুমি ফিরিয়ে দিয়েছিলে বলেছিলে তোমার মত মানুষের ভালোবাসা শোভা পায় না, ওটা বিলাসিতা। বলেছিলে অভাবে পড়লে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায় । তুমি একটা দোকানে সেলস ম্যানের পার্ট টাইম কাজ করতে যা আমার খুব অপছন্দের ছিল, নিজের কাছে নিজেকে অনেক ছোট লাগতো। তোমার যা অবস্থা পড়ালেখাই শেষ হবে কিনা সন্দেহ আছে, আর জব তো অনেক দূরের বিষয়। আমার ফ্যামিলি কখনোই মেনে নেয় নাই তোমাকে আর এখন তো পালিয়ে তোমার কাছে আসলেও যে একসাথে থাকতে পারবো তা নয়। বাসায় ও আর বিয়ের কথা ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বাসা থেকে ইশমাম ভাইয়ের সাথে বিয়ের কথা হচ্ছে, যে কথাটা তোমাকে বলা হয়নি তা হল ইশমাম ভাইকে আমি অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতাম। যাই হোক ভালো থেক। তোমাকে ছেড়ে যাবার কোন ইচ্ছাই ছিল না কিন্তু বাস্তবতার কাছে আমাকে হার মানতেই হল আর স্বার্থপরের মত তোমাকে ছেড়ে যেতে হচ্ছে তাও তোমার অসময়ে। পারলে ক্ষমা কোর যদিও তা সম্ভব নয়।



নুসরাত



কাগজটা পড়া শেষ করে ভাজ করে চুপ চাপ রেখে দিলাম, রিয়াদের অনেক গুলো প্রশ্ন করলো কোন উত্তর দিলাম। রিয়াদ কাগজ টা নিয়ে পড়লো, সেও আমার মত চুপ হয়ে গেল। কস্ট পেলেও নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম যাক মেয়েটাকে কিছু তো শেখাতে পেরেছি অন্তত বাস্তবকে মেনে নিতে।



তারপরের ঘটনা গুলো হয়তো খুব সাধারন ভাবে হয়ে যেতে পারতো কিন্তু তা হতে হতেও হল না। পরের কয়েকটা মাস প্রতিবন্ধীর জীবন ই কাটলো। ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলতে হল। সেলস ম্যানের সেই চাকরি টাও নেই। টেনে টুনে কোন রকমে পার করে দিলাম পড়া লেখার শেষ চ্যাপ্টার। আমার যা দশা তাতে চাকরি ই বা কে দেবে। ভিক্ষুক কে বলতাম কাজ করে খেতে পার না? আজ আমি বুঝি কেন তারা ভিক্ষা করে কিন্তু হায় আমার জন্যে যে ভিক্ষাও জুটবে না।



যখন বড় হয়ে ফ্যামিলির দায়িত্ব নেব তখন আমি ই বাবার ঘাড়ে। মা আড়ালে চুপি চুপি চোখের জল ফেলত আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলত "বাবা তোর কিচ্ছু হয় নাই, সব ঠিক হয়ে যাবে।" আমিও যেন ছোট্টটি হয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে মুখ লুকাতাম। স্রষ্টার হয়তো করুনা হল আমার প্রতি। পরিচয় হয় অনন্যার সাথে। মেয়েটা জুনিয়র ছিল, আমাদের ভার্সিটির। আমাকে চিনতো অথচ তাকে প্রথম দেখছি আমি। জার্নালিজমের স্টুডেন্ট আমরা হাতে গোনা কয়েক জন তাছাড়া কিছু সংগঠনের কারনেও অনেকেই চিনতো। সে আমার কথা শুনে দেখতেও আসতে চেয়েছিল কিন্তু সম্ভব হয় নি। মেয়েটি আমাকে তার সাথে বসে টং থেকেই চা খাওয়ার অনুরোধ করলো, চা খেতে ইচ্ছে করলেও সাহস হয়নি পকেটে মাত্র ৫ টাকা। মেয়েটা আমাকে সিভি দিতে বলে, মনে হল করুণা করছে। তাও দিয়ে এলাম। কত ছোট ভাই বড় ভাইয়ের কত ফুট ফরমায়েশ খেটেছি, কত কাজ করেছি কেউ তো করুনাও দেখাল না। অপরিচিত মেয়েটা আমার জন্যে করুণা করলে তা নিতে এত অসম্মান ই বা কই। সিভি দিয়ে এলাম মেয়েটাকে।



প্রায় মাস দেড়েক পর মেয়েটা আমাদের বাড়িতে এক প্যাকেট মিস্টি নিয়ে হাজির। অভাবের সংসার নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে মিস্টি বেমানান। কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না মেয়েটা আমার বাড়ির ঠিকানা কিভাবে পেল। উনাকে বসতে বললাম, এরই মধ্যে মা চলে আসছে। মা চলে আসতেই নিজে থেকে পরিচয় দিল, আর বললো সে আমার ক্লাসমেট। আমার দিকে একটা খাম এগিয়ে দিল। একটা সংবাদ পত্রের অফিসে। আমার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে শুরু করে। মোটামুটি ভালো চাকরিই বলা চলে আমার মত লোকের জন্যে যেখানে কেউ ফিরেই তাকায় না। মেয়েটা মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসে দেখা করে যায় আমাদের সাথে।



গল্পটা এখানে শেষ হলেও হতে পারতো, সেদিন বুধবার ছিল আমার বিয়ের জন্যে প্রস্তাব আসে। আমার বিস্ময়ের সীমা থাকে না আমার মত লোকের জন্যে বিয়ের প্রস্তাব। ঘটক নির্ঘাত পাগল না হয় আমার অবস্থার কথা জানে না। মায়ের কথা শুনে হেসে গড়া গড়ি খাচ্ছি আর খাবোই না কেন সব মায়ের কাছেই তার সন্তান অনেক বড় কিছু সে যেমন ই হোক। প্রস্তাব এসেছে সেই মেয়েটার বাড়ি থেকে। আমি রাজি হচ্ছিলাম না, সারা জীবন করুণার পাত্র হয়ে এক ছাদের নিচে থাকা সম্ভব নয়। রিয়াদের থেকে পরে জানতে পারি মেয়েটা আমাকে পছন্দ করতো নুসরাতের কথাও সে জানে। মেয়েটার পরিবারের আর্থিক অবস্থা এখন আমাদের পরিবারের মত, এর মধ্যেও সে আমার পাশে ছিল। কেবলই মনে হতে থাকে আমি তাকে নই সে আমাকে বিয়ে করছে। মেনে নিলাম, যে আমার সবটা জেনেও আমার পাশে থাকতে চায় কিভাবে তাকে ফেরাই। রিয়াদকে কিছুই জিজ্ঞাসা করলাম না কিভাবে কি কি হল। শুধু জড়িয়ে ধরে কাঁদলাম জানি না কেন কাঁদলাম।



বিয়ের পর অনেক গুলো বছর পেরিয়ে গেছে, আমাদের ছোট্ট একটা মেয়ে হয়েছে নাম নামিরা। নামিরা একটা খেলনা ডলফিন নিয়ে খেলছে। নামিরা প্রায়ই বলে বাবা দেখ না মৎস্য কন্যারা পা ছাড়াও কত সুন্দর ভাবে চলাফেরা করে, আর আমিতো অনেক বড় হয়ে গেছি, এত বড় একটা মানুষকে কোলে নেয়া যায়। ছোট্ট একটা বাসায় থাকি আমরা, সাথে বাবা-মাও আছে। এতদিক সামলে কোন দিন ওকে দেখলাম না একটা বারের জন্যে রাগ হতে, একটা বারের জন্যে অখুশি হতে। হাসি মুখে সব সামাল দিয়ে চলছে।



ক্র্যাচে ভর দিয়ে সিড়ি ভেঙ্গে নামা বেশ কস্টকর। তাই ওর নিসেধাজ্ঞা, সেই থেকে খুব দরকার না হলে এই কাজ করা যাবে না। আজ ছুটি আমার ও বাইরে থেকে ফিরবে সন্ধ্যার খানিক আগে। ও আসার আগেই কাজ শেষ করতে হবে। আজ অনন্যার জন্মদিন, কালো গোলাপ ওর ভীষণ পছন্দের। কালো গোলাপ পাওয়া সহজ কিছু না, যে মেয়েটা আমার জন্যে এত কিছু করছে, আমার সবকিছু যাকে ঘিরে তার একটা হাসি দেখার জন্যে এই টুকু কস্ট কিচ্ছু না। গোলাপ টা হাতে দিলে কোমরে হাত রেখে কটমট করে তাকিয়ে থাকবে কিছুক্ষণ তারপর মিস্টি একটা হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরবে আমাকে। ও শান্তিটা দুনিয়ার কোথাও খুজে পাওয়া যায় না। ক্র্যাচে ভর করে দোকান থেকে দোকানে খুজে চলেছি অন্যনার মিস্টি হাসিটা দেখার জন্যে একটা কালো গোলাপ।



----------------------------



সম্পুর্ন কাল্পনিক



----------------------------



গল্পটায় ছেলেটার পরে যাওয়া থেকে যে প্যারালাইজড অবস্থা দেখানো হয়েছে তা মেডিক্যাল টার্মে এই রোগের নাম মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস নামে পরিচিত । মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রোগে মস্তিষ্কের নার্ভ ও স্পাইনাল কর্ডের সমস্যা দেখা যায়। ফলে মাংসপেশীর নাড়াচাড়া ও দৃষ্টিহীনতা সমস্যা দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই প্যারালাইসিস ও দেখা যায়। দেহের কোন অঙ্গ এর সাথে নার্ভাস সিস্টেমের কমিউনিকেশন বন্ধ হয়ে যায়, শারীরিক সমস্যার সাথে মানসিক সমস্যাও অনেক ক্ষেত্রে হয়। এই রোগ এর চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয় নি।



(গুগল আর উইকিপিডিয়া কে খোচা দিলে আরও অনেক কিছু জানতে পারবেন )







November 7, 2013 at 8:57pm

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.