![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত আড়াইটা, বেলকনির রকিং চেয়ারটা উঠা নামা করছে, সাথে হাতে ধরে থাকা লাল আগুন টাও। আজ প্রায় ৩ মাস ধরেই এভাবেই চলছে। তিন রুমের একা বাসিন্দা রাফি। কার জীবন যে কখন কিভাবে বদলে যায় বলা ভারি মুশকিল !
জীবনটা এমন ছিল না, হয়তো আমিই নিজেকে নিয়ে সুখি ছিলাম না। মিতুর সাথে গত ছয়মাস ধরে বনি বোনা হচ্ছে না। দিন চারেক পর ডিভোর্স টাও পাকা পাকি ভাবে হয়ে যাবে। মিতুকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম না সে নিজে থেকেই চলে গেল ঠিক মনেও পড়ছে না।
মিতুর সাথে পরিচয় সেই ২০০৮ সালে, আমার তখন অনার্স শেষ, পার্ট টাইম একটা জব করি আর এমবিএ করবো। মিতুর সাথে পরিচয় হয়েছিল হাবিব এর মাধ্যমে। হাবিবের কোন এক মেয়ে ফ্রেন্ড এর ফ্রেন্ড ছিল সে। হাবিব, রাকেশ, সাইফ, রুমি, রাশেদ ১০/১২ জনের সার্কেল ছিল আমাদের। আমিই ওদের থেকে কিছুটা আলাদা ছিলাম তবে একসময় আমিও ওদের মত ভাবতে শুরু করি। ওদের সাথে অনেক মেয়ের ই সম্পর্ক ছিল। কেউ কেউ আবার দুই তিনটা করে প্রেম ও করতো, আসলে সেগুলো প্রেম না কি ছিল ওরাই ভালো জানতো। সাইফ আর রাকেশ এর ছ্যাকা খাওয়ার এক্সপেরিয়েন্স আবার সেই রকম, বাকিদের ব্যাপারে অতটা জানতাম না, আসলে জানার চেস্টাও করি নাই। মিতাকে প্রথম দেখেই ভালো লাগে আমার। আমার মধ্যে কিছু একটা হচ্ছিল। নানা ভাবে ট্রাই করি মিতার সাথে কথা বলার কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠছিলাম না। আর মিতুও সেরকম মেয়ে ছিল না।
অনেক চেস্টার পর ও ব্যর্থ তখন রাকেশ, রাশেদ ওরা টের পেয়ে যায় আমার ঘটনা। ভীষণ রকম পচানি খেলাম সবার হাতে। রাকেশ বলে ওঠে আরে মামা এত সিরিয়াস ক্যান? ভালোবাসা বইলা কিছু নাই, টাইম পাস কর, ফ্ল্যার্ট কর, টাইম মত খাইয়া ছাইড়া দিবি। ওদের কথায় প্রথমে ধাক্কা খেয়ছিলাম, পড়ে সেটাই মেনে নিলাম। ফ্ল্যার্টিং শুরু করলাম তাতেও লাভ হল না। নানা ট্রিক্স ট্রাই দিলাম। হাল ছেড়ে দিয়ে বন্ধুত্ব করলাম। ততদিনে বন্ধুত্ব ভালোই হয়েছে, বছর দেড়েক পার হয়ে গেছে.....................।।
মিতুর মনে ধীরে ধীরে আমি যায়গা করে নিতে থাকলাম। মাঝে আমি ফোন হারিয়ে ফেলি। দিন তিনেকের জন্যে যোগাযোগ বন্ধ থাকে। তারপর যখন তার সাথে যোগাযোগ করি তখন তার অবস্থা ছিল ভয়াবহ। অবশ্য আমার কিছুই হয় নি কারন তার প্রতি অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করতো সেটা যে ভালবাসা কিংবা ভাললাগা ছিল না তা বুঝতাম। সে আমাকে বলে ফেলে সে আমাকে ভালবাসে, সাথে ওপাশ থেকে ফুপিয়ে কান্নার শব্দ আসছে। যাক এতদিনের চেস্টা অবশেষে সফল, আমিও রাজি হয়ে গেলাম।
রাতে সার্কেলের সবাইকে জানালাম, আমাদের পার্টি চললো আমাদের সে রাতে। মিতুর সাথে মাঝে মধ্যে বাইরে দেখা করতাম। যখন সুযোগ পেতাম তার সাথে ঘেষে বসতে চাইতাম। রাকেশ এর "খেয়ে ছেড়ে দে" কথাটা মাথায় ঘুরতো, ফ্রেন্ড সার্কেল এর খোচাও খেতাম "শালা কি পোলা হইছস একটা মাইয়ার কাছে নাকানি চুবানি খাইতেছস?" কথা গুলো আরও জিদ চাপিয়ে দেয়, আর মিতু যখন আমাকে প্রথমে ফিরিয়ে দিয়েছিল সে সময় রাগ হয়নি আমার কিন্তু কেন যেন এখন রাগ হচ্ছে। মিতুর সাথে দেখা করবো বললাম ফোন দিয়ে। যদিও তার পরীক্ষা আছে জানতাম তাও করলাম। ঝগড়ার মত করলাম, বলে দিলাম "পরীক্ষা না আমি কে আগে?" মেয়েটা ৩ঘন্টার পরীক্ষা দেড় ঘন্টা দিয়ে চলে আসে। মিতুকে নিয়ে রিকশায় উঠলাম প্ল্যান সেই ফ্রেন্ডদের কথা মত। মিতুর গায়ে হাত রাখবো বলেই মনস্থির করলাম। হঠাৎ ই মিতু আমার ডান হাত ধরে আমার কাধে মাথা রাখলো। নিমিষে আমার মনের মধ্যে ঘুরতে থাকা কুচিন্তারা হারিয়ে গেল। খুব খারাপ লাগছিল নিজের কাছে। এরপরেও বেশ কয়েকবার এরকম চেস্টা করেছিলাম, প্রতিবারই কিছু না কিছু হয়েছে আর আমার প্ল্যান ব্যর্থ হয়েছে।
এমবিএ শেষ, জব খুজছি, ফ্রেন্ড সার্কেলের সাথেও যোগাযোগ কমে গেছে একেবারে। জব পেলেও ঘুষের জন্যে হচ্ছে না। এবার বেশ ভালো একটা জবই পাই কিন্তু ঘুষ চাই ! খুব ডিপ্রেসড হয়ে মিতুর সাথে কথা বলছিলাম, মিতু বলে আমি জানতাম এরকম একটা দিন আসবে আমি জানতাম আর তার ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি। আমি অবাক হয়ে যাই !
ঘুষের ৮০% টাকা মিতু আমাকে দেয়, মেয়েটা মাসের পর মাস টিউশনি করে টাকাটা জমিয়েছে, আর তার সৎ ভাবে আয় করা টাকা দিয়ে ঘুষ দিতে হচ্ছে ! আমার খুব চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল, যে আমার জন্যে তার সবটুকু নিঃস্বার্থ ভাবে দিচ্ছে তার সাথে আমি কি করার কথা ভেবেছি মনে করে নিজের কাছে নিজেকে আরো ছোট মনে হল।
বিয়ে করি মিতুকে, ভালোই চলছিল। মিতু একটা জব নেয়, মাঝে মাঝে ফিরতে দেরি হয় জ্যামের কারনে কিন্তু আমার সন্দেহ হত। সন্দেহ টা ঢুকিয়েছিল হাবিব আর রাকেশ। আমিও সন্দেহ করি তার সাথে কি অন্য কারো সম্পর্ক আছে কিনা ! মিতুর অফিস নিয়ে প্রায়ই আমি তার সাথে ঝগড়া করতাম, যদিও মিতু কখনোই কিছু বলতো না, শুধু ঠান্ডা গলায় আমার ভুল ভাঙ্গানোর চেস্টা করত। আমি চিল্লিয়ে তাকে চুপ করিয়ে দিতাম।
মিতুর প্রেগন্যান্সির খবর শুনে আমি আরও অবিশ্বাস করতে শুরু করি তাকে, এতটা অবিশ্বাস আর সন্দেহ নিয়ে এক ছাদের নিচে থাকা যায় না। আমি বলে বসি এই সন্তানের বাবা আমি না অন্য কেউ, কথাটা হয়তো মেয়েটাকে অনেক আঘাত করেছিল, আর করবেই বা না কেন মিতুর মত মেয়ে এরকম কথা ডিজার্ভ করে না, কখোনই না, মিতুর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেই। একই ছাদের নিচে দুজন অথচ তার মুখটাও আমি দেখি না। মিতুর সাথে সেদিন আবার কথা কাটা কাটি হয় , তাকে অ্যাবোরশন করতে বলি কিন্তু সে রাজি হয় না, আমার আরও রাগ উঠে যায়। যা মুখে আসে তাই বলে যাই, তার বাবা মা নিয়েও বাজে কথা বলি। মিতু বাসা ছেড়ে চলে যায়।
মিতুকে ডিভোর্স দেব বলে ঠিক করি, কাগজপত্র ও সব ঠিক করে ফেলি, চাকরি টা মিতুর করুনা মনে হয়,চাকরিটাও ছেড়ে দেই। গত তিন মাস ধরে এভাবেই আছি, আর তিন দিন বাদেই সব সম্পর্ক মিটে যাবে চিরদিনের জন্যে। ভাবতেই ভাবতেই পকেটে থাকা ফোনটা ভাইব্রেশন করছে, গত কয়েকমাসে কেউ আমাকে কল করেনি বললেই চলে। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখি একটা অপরিচিত নাম্বার দেখে কল রিসিভ করার ইচ্ছে হারিয়ে গেল, ফোনটা পাশে রেখে দিলাম। আবার কল আসলো, রিসিভ করলাম।
"আমি আশা বলছি, সেন্ট্রাল হসপিটাল থেকে, মিতুকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়েছে, আপনি কি আসবেন?"
নিজের অজান্তেই "আসছি" কথাটা বের হয়ে গেল, মিতুকে ফিরিয়ে আনার ইচ্ছাটা খুব কস্ট দিচ্ছিল অনেকদিন ধরেই, কেন জানি আজ বলতে ইচ্ছা করছে মিতুর ভেতরের সে আমার সন্তান। হয়তো নিজের সন্তানের আগমন বার্তাই এর কারন। শার্ট একটা গায়ে দিয়ে ড্রয়ার, আলমারি হাতিয়ে যত টাকা পেলাম পকেটে পুরে বের হয়ে গেলাম, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম যেভাবেই হোক ওদের ফিরিয়ে আনবোই। যখন হাসপাতালে গিয়ে পৌছলাম তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। ফজরের আজান দিতে খুব বেশী দেরী নেই। কেবিন খুজে বের করে দেখলাম মিতুর পাশে সে শুয়ে আছে। হাটু গেড়ে বসে পড়ে তার ছোট্ট হাত ধরে চুমু দিলাম। আরেক হাত দিয়ে মিতুর হাত ধরলাম, তিনজনই আমরা কাঁদছি হয়তো সুখের কান্না। আযান শেষ হয়ে গেছে, এরকম ভোর আর কখনো আসেনি আমার জীবনে........................
১৭ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২৬
ভাবুক তুষার বলেছেন:
২| ১৬ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:০৮
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ভালোই হয়েছে , সময় থাকতে মিতুকে ফিরিয়ে আনুন
১৭ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১৯
ভাবুক তুষার বলেছেন: আমি কিভাবে ফিরায় আনবো গল্প তো এইখানেই শেষ
৩| ১৬ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৩৪
নিষ্কর্মা বলেছেন: সত্য ঘটনা হলে বলতে হয় আপ্নে ঠিক শেষ মুহুর্তে এসে ভুল বুঝতে পেরেছেন।
১৭ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২০
ভাবুক তুষার বলেছেন: এইটা কেবল ই গল্প
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:০৫
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: জীবনের গল্প , ভালই লাগল ।