নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ক্যাপিটেল পালিসমেন্টের বিরুদ্ধে ।মানবতা মানুষের পরিচয় ।।জনগণের বাণীই ঈশ্বরের বাণী । প্রকৃতির সবচে বড় ভুল মানুষ সৃষ্টি । পৃথিবীতে যত অধিকারের আন্দোলন হয়েছে তাতে কিন্তু মানুষকে মানুষ বানাবার আন্দোলন ক্কখোনও হয়নি ৷• বিজ্ঞানে ঈশ্বর নেই । কিন্তু সৃষ্টি আছে •O lf there is no god , create one , সাহিত্য পত্রিকা ※ http://nkkh10.blogspot.com
কটিতে চলেছে প্রায় তিনশো বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল । রাত প্রহালেই উদিত হবেস্বাধীন ভারতের নতুন সূর্য । রাজধানী দিল্লি সহ প্রহর গুনছে পরম আকাঙ্ক্ষিত লগ্নের । পিছিয়ে নেই শহর কলকাতাও । কিন্তু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন এই রুপান্তরের প্রধান নায়ক । প্রশ্ন করছেন নিজেকে , হাজার হাজার তাজা প্রানের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা এলো ,যে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ` জাতির জনক ` সেই লক্ষ্য কি পূরণ হলো? তাঁর নিজের কাছে এর উত্তর 'না' ।
খণ্ডিত এই স্বাধীনতআ তো তিনি চাননি মহাত্মা । অথচ পরিস্থিতির এই বাধ্যবাধকতায় তাঁকেও মেনে নিতে হলো দেশভাগ । যন্ত্রনায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাঁর হৃদয়ে । তাই তিনি দিল্লির মূল অনুষ্ঠানে নেই । স্বাধীনতা উদযাপনের আনন্দ উৎসব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে একাকী বিনিদ্র রজনী যাপন করছেন কলকাতায় বেলেঘাটার হায়দারি মঞ্জিলে । নিঃসঙ্গ নায়ক পায়চারি করছেন অন্ধকার ঘরে । তাঁর সেই যন্ত্রনআর সাক্ষী ছিলেন একজনই । তিনি মহাত্মার দেহরক্ষী এক বাঙালি পুলিশ অফিসার , নাম হেমন্ত সেনগুপ্ত ।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের রাত । হায়দারি মঞ্জিল অন্ধকার গান্ধীর ঘর । সারাদিন কিছুই মুখে তোলেননি শীর্ণকায় বৃদ্ধ । চিত্তশুদ্ধির জন্য অনশনব্রতী তিনি ।এই ঘরের পাশ থেকে উঁকি দিয়ে তাঁকে দেখলেন হেমন্তবাবু । বাপুর মনের এই যন্ত্রণার স্বরূপ অনেকটাই হয়তো জানা হেমন্তবাবুর । কলকাতার পথে পথে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য আর আত্মহারা আনন্দ অবশ্য বাপু নিজেও রাতের অন্ধকারে গোপনে দেখে এসেছেন । দেহরক্ষী হওয়ার সুবাদে এ সবেরই সাক্ষী হেমন্ত সেনগুপ্ত । বাপুজী শান্তি পাচ্ছেন না । অন্যের অনেকের আনন্দে আজ আর সামিল হতে পারছেন না । স্বাধীনতার প্রহরেও অনশনরত তিনি । শোনা যাচ্ছে , নেহরু নাকি বলেই দিয়েছেন , সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে । আর করার কিছু নেই । ১৩ আগস্ট থেকে টানা ২৬ দিন বাপুর সঙ্গে ছায়ার মত লেগে ছিলেন হেমন্তবাবু । সেই ১৯৪৭-এর ১৩ আগস্ট , সেদিন বাপু এলেন বেলেঘাটার হায়দারি মঞ্জিলে ।
কেমন ছিল সেই বাড়ি ? ' দ্য মিরাকল অফ ক্যালকাটা ' গ্রন্থে মনুবেন গান্ধী লিখেছেন,' বাড়িটি একেবারে মলিন , ধূলোয় ধূসর । কোন সুযোগ-সুবিধা নেই । চারদিক খোলা , ফলে বহিরাগতরা চাইলেই ভিতরে প্রবেশ করতে পারে । দরজা জানলা ভাঙা । বাড়িটির মাত্র একটা শৌচালয় । ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে পুর ধূলোর চাদর ।
১৯৪৬-এর দাঙ্গার ক্ষত তখনও শুকয়নি । স্বাধীনতার এক বছর আগে , ১৬ আগস্ট থেকে কয়েক দিনের দাঙ্গায় অজস্র মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এই কলকাতায় । ঘরছাড়া হয়েছিল লক্ষাধিক মানুষ । তখন কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের দড়ি টানাটানি চরমে । তার একবছর পর স্বাধীনতা ও দেশভাগ আসন্ন , তখন ফের কলকাতায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ।এই পরিস্থিতিতে বেলেঘাটার সেই ধূলোমলিন বাড়িতে এসেছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী । ১৩ আগস্ট ,১৯৪৭ । বাড়ির নাম হায়দারি মঞ্জিল । বাড়ির মালিকের নাম বৃদ্ধা বেগম আম্মা । ঠিকানা ১৫০ বি বেলেঘাটা মেন রোড । কাছেই আলোছায়া সিনেমা হল ।
বেলেঘাটায় তখন টানটান উত্তেজনা । গান্ধীজিকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরী করেছিল ক্যালকাটা পুলিশ । দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অ্যাসিস্ট্যান কমিশনার হেমন্ত সেনগুপ্তকে । তাঁর উপরে পাঁচদিনের ভার ছিল । হায়দারি মঞ্জিল তখন মুখে মুখে হয়ে উঠেছিল গান্ধী ক্যাম্প ।বলা ভাল , স্বাধীন ভারতে তিনিই গান্ধী জির প্রথম দেহরক্ষী ।
গান্ধীজি শীর্ণকায়া , আস্তে আস্তে কথা বলেন । তবু তাঁর প্রতিটি শব্দ কত তেজোদ্দীপ্ত । চোখে এক অসামান্য দীপ্তি । প্রবীন চণ্ডী মনের পাতা উল্টে যান । বালক চণ্ডীর হাত ধরেন । উঠে আসে এমন টুকরো ছবি । জানলায় মাথা গুজে থাকতভিড়ে ঠাসা মানুষ । গান্ধীজি খাটো ধূতি পরে বসতেন । ঘরের দেওয়াল পিঠ দিয়ে । তাঁকে ঘিরে পরিষদরা ।মনুবেন ও আভা গান্ধী থাকতেন সর্বক্ষণ । থাকতেন বাপুর সচিব নির্মল বসু ।রোজ তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতেন মেটা । সামনের সারিতে এসে বসে পড়ল বালক চণ্ডী । গান্ধী জি তখন তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন ? না ,নিজে কখনও বলেননি । তবে অনেকবারই ছোট্ট ছেলেটির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসেছেন । সে হাসি চণ্ডী সেনগুপ্তের ঘরে এক ভার্চুয়াল ফ্রেম বন্দি , ১০০ নম্বর বালিগঞ্জ গার্ডেনে যে স্মৃতিকথা পরিক্রমণ আহ্নিক গতির মতোই অনিবার্য ।
চণ্ডীবাবু গান্ধী জির সামনে গিয়ে বসে থাকতেন । বাপুর ছায়াসঙ্গী হেমন্ত সেনগুপ্তের পুত্রকে সবাই চিনে গিয়েছিলেন । বাপু কথা না বললেও নির্মল বসু ছোট্ট ছেলেটির সাথে কথা বলছেন টুকটাক ; কতকজন আদরও করছেন । তাঁদের সবার নামও জানা নেই চণ্ডীর । গান্ধীজির প্রতিমূহুতএর সঙ্গী ছিলেন হেমন্ত সেনগুপ্ত ।
খুবই নিয়মানুবর্তী ছিলেন বাপু । শেষ রাতে তিনি বিছানা ছাড়তেন আর সূর্যের আলো ফোটার আগে প্রার্থনা সেরে নিতেন বাড়ির ভিতরেই । তারপর পায়চারি । ফিরে এসে কিছুসময় ঘুমোতেন তিনি ।
উঠে ম্যাসাজ- স্নান ও প্রাতরাশ । এরপর তিনি হায়দারি মঞ্জিলের বাঁ-দিকের ঘরটায় গিয়ে বসতেন ।কত লোক আসতেন তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য । সুরাবর্দি থেকে রাজা গোপালচারি , সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ থেকে কৃপালনী- কত বিখ্যাত নাম সেই তালিকায় ।
কলকাতায় তখন অশান্তির আঁচ ।
মূললেখিকা:-পায়েল সামন্ত
অন্যঋচ উৎসব সংখ্যা
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭
বিজন রয় বলেছেন: ++++, বাপুর কথায় ++++