নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসমত আলী ভুইয়াকে আপনারা চিনবেন না। উনি এ ব্লগের সব চেয়ে সিনিয়র যিনি তার চেয়েও হয়তো সিনিয়র। তাছাড়া উনি আজ আমাদের মাঝে আর নেই!
উনাকে কেমন করে চিনতাম সে এক কাহিনি। তখন সদ্য পাশ করে চাকরি শুরু করেছি। ঢাকার ৫৩ মতিঝিলে অফিস, বর্তমান শাপলা চত্তর থেকে সামান্য পশ্চিমে। এক সকালে আমার এক সহপাঠি বন্ধু এল, জিজ্ঞেস করল আসমত আলী ভুইয়াকে চিনি কিনা, তার সাথে দেখা করতে চান। সহকারী প্রকৌশলী, আমাদেরই অফিসে কাজ করে। একটু খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আমাদেরই আরেকটা অফিস আছে আল্লাহ ওয়ালা বিল্ডিংএ, সেখানে কাজ করেন।
কাছেই, বন্ধুকে নিয়ে হেঁটেই রওয়ানা হলাম।
পথে যেতে যেতে বন্ধু বলল, তার এক প্রতিবেশীর মেয়ের সাথে বিয়ের একটা কথা হচ্ছে, ওকে বলেছে একটু দেখতে ও খোঁজ নিতে!
আল্লাহ ওয়ালা বিল্ডিং এ গিয়ে কোথায় বসেন খোঁজ করে রুমে ঢুকে দেখি ঐ রুমে দুজনের বসার ব্যবস্থা, একটাতে কেউ নেই, আরেকটাতে আমাদেরই আরেক বন্ধু শাহাবুদ্দিন বসা। সাধারণ কুশলাদি বিনিময়ের পর ওকে জিজ্ঞেস করলাম ভুইয়া সাহবে কোথায়? ও বলল, সকাল থেকে দেখেনি, কখন আসবে বা আদৌ আসবে কিনা ঠিক নেই! একটু অবাকই হলাম! আমরা কি কাজে এসেছি, ও কোন হেল্প করতে পারে কিনা জানতে চাইলে ব্যাপারটা ওকে বলতে শাহাবুদ্দিন বলল, আসমত আলী ভুইয়া আমাদের ক বছরের সিনিয়র, আর দশ জনের মত সম্পূর্ণ সুস্থ না, কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন, বসেরা সবাই জানে, সেইজন্য তাকে কেউ কোন কাজও দেন না, তিনিও কোন দিন খুশি হলে আসেন, কোন দিন আসেন না। আরো বলল, উনি আগে একটা বিয়ে করেছিলেন, উনার এ অবস্থার কারণে স্ত্রী চলে গেছেন!
এর পর আসমত ভাই এর সাথে আমার অনেক বার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। এক সময় আমাদের সব অফিস স্থানান্তরিত হয়ে রমনায় সড়ক ভবনে আসলে উনি আমার উপর তলায় বসতেন। আসা যাওয়ার পথে দেখা হতো, কখনো বা উনার রুমে গেলেও দেখা হতো। উনি আমাকে বিশেষ স্নেহ করতেন। উনি আমাদেরই এলাকার লোক, পাশাপাশি থানায় বাড়ি।
একদিন বললেন, চাকরির পাশাপাশি ব্যবসার কথা ভাবছেন। জিজ্ঞেস করলাম কিসের ব্যবসা?
জুতার কালি বানাবেন! দু একজনের সাথে কথাও বলেছেন জুতার কালির ফেক্টরী স্থাপন নিয়ে। আমি একটু মজা করার জন্যই বললাম, নাম কি দিবেন, আসমত আলী জুতার কালি? উনি দেখলাম সিরিয়াস, বললেন, কি যে বলেন? আসমত আলী নাম দিলে এ কালি কেউ কিনবে? ভাবছি একটা ইংরেজি নাম দিব। আচ্ছা জেনিথ দিলে কেমন হয়?
এর পর আমি ঢাকা ছেড়ে চলে আসি। কয়েক বছর পর ঢাকা গেলে একদিন সড়ক ভবনে গেলাম আগের বন্ধু বান্ধবের সাথে দেখা করতে। বি ব্লকের দোতালায় সেই আগের রুমেই দেখা পেলাম আসমত আলী ভাই এর। আমাকে দেখে দারুণ খুশি! পিওনকে চা বিস্কুট আনতে বললেন। আমাকে নাকি অনেকদিন ধরেই মনে মনে খুজছেন। আজকাল কি করছেন জানতে চাইলে জানালেন একটা বই লিখছেন, বাংলা ভাষার উপর ! দুই একজন প্রকাশকের সাথে নাকি আলাপও করেছেন। সমস্যা দাঁড়িয়েছে মিনিষ্ট্রীর পারমিশন নিয়ে, সরকারি কর্মকর্তাদের বই প্রকাশ করতে হলে নাকি অনুমোদন লাগে! গত কিছুদিন ধরে এ নিয়েই ব্যাস্ত।
আসমত আলী ভাই এর সাথে সেই আমার শেষ দেখা। এর পর আরো বেশ কটি বছর কেটে গেছে। উনার কথা মনে হতো মাঝে মাঝেই। খোঁজ নেয়ার সুযোগ হয়নি। একদিন সড়ক ভবনে কাজ করা আমাদেরই এক বন্ধুর কাছে উনার কথা বলতে গিয়ে তারই কাছে জানলাম উনি আর নেই, মারা গেছেন বেশ অনেকদিনই হয়ে গেছে!
মনে হলো এ ধরণের লোকেরা অযত্ন অবহেলায় কি তাড়াতাড়িই মারা যান? পরিবার সমাজ কি তাদের প্রতি আরো একটূ সহানুভুতিশীল, আরো একটু যত্নশীল হতে পারতো?
২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:২১
রাজীব নুর বলেছেন: আপনাকে অনুরোধ করবো চাঁদগাজী/সোনাগাজীকে নিয়ে একটা পোষ্ট দিন।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: জীবনের গল্প গুলোই আসল গল্প।