![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাকে অমানুষ ডাকুন
পর্দা ১ ম কিস্তি ( Click This Link)
--------------------------------------তো এই দলটার নাম হইতেছে জামাআআত।চিনেন তো নিশ্চয়।স্বাধীনতা বিরোধী,যুদ্ধাপরাধী কুকুরের দল।১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশ রে কুড়ে কুড়ে খাইতেছে।বেশিই খারাপ”। এই বলে আমি থামলাম,চুপ করে তাকালাম সবার দিকে।যাক সবাই এখন জ্বলজ্বল মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।বেশ লাগছে।অনেক উপরে তুলে নিয়ে কোনকিছু নিচে ছুড়ে মারার মজাটাই আলাদা।“তো জামাত টিকে থাকার রহস্য টা আসলে কি?আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী দুইটা দল মিলে জামাতকে যেভাবে পারে সেভাবে নিজের কাজে লাগাইছেন যার ফলে কি হইলো?গতকালের পরজীবি আজকের প্রধান রাজনৈতিক দলের একটি। জয় বাংলা,বাংলাদেশ জিন্দাবাদ”।আকাশ থেকে মাটির তলায় পোকা মাকড়ের সাথে স্থান হলো অডিয়েন্সের।আহা,জীবন কি সুন্দর।"এই লেখক,ধ্রুইব্বা দেখিস গাঞ্জা খাইয়া লিখতাছোস ভালো কথা কিন্তু আমারে আবার মেরুদন্ডহীন বাঙলার বাম বানাইস না”।“আমাদের এখনকার প্রযুক্তিতে হাত পা,হৃদপিন্ড সবই বদলানো যায়।বদলানোর পরেও আমরা আমাদের সত্ত্বাতে বিরাজ করি।কারনটা আর কিছুনা,আমাদের মাথা।জ্বি এটাই সব।মাথার আবার ট্রেনিং লাগে।সেই ট্রেনিং নিতে হয় শিক্ষা গ্রহনের মাধ্যমে। আর আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আজীবনই একটা হাস্যরসের ব্যাপার।আগে ছিল নকলের ছড়াছড়ি আর এখন হইল প্রশ্ন ফাঁসের যুগ এবং এইডা কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী কুত্তার বাচ্চাদের কাজ না।এইডা আমার আর আপনার মতন স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের কাম”। আবার তাকালাম অডিয়েন্সের দিক।এইবার সবকিছুই পরিবর্তিত।সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে।সবার দৃষ্টিতে প্রশ্নবোধক চিহ্ন আঁকা।
আবার শুরু করলাম “শিক্ষা ব্যবস্থার কথা যখন কইতাছিই তখন আরেক কাহিনী কই।দেশে এখন পিএসসি,জে এস সি বহুত পরীক্ষা।আমাদের দেশে তো টাকার চাইতেও দামী হইল জি পি এ।একটা ভালো আইডিয়ার চাইতেও জিপিএ এর দাম টা সমাজের কাছে অনেক বেশি। একটা গল্প কই শুনেন সবাই।এক পোলা ক্লাস ১ থেকে শুরু করে ৭ পর্যন্ত ফার্স্ট বয়। ক্লাস ৫ এ বৃত্তি ও পাইছে।পুরা মহল্লায় সবাই এক নামে। আশে পাশের আন্টিরা তাদের মেয়েদের ঠেলে যা বেটি ওই পোলার লগে বন্ধুত্ব কর।সৎ সংগে স্বর্গবাস,অসৎ সংগে সর্বনাশের একটা ব্যাপার আছেনা। তো এই ছেলের খাতা দেখতে গিয়ে ভুল হওয়ায় ছেলে ক্লাস ৮ এ পাইলোনা বৃত্তি কিংবা এ+। এখনতো সুন্দরী মেয়েদের মায়েরা তারে ধইরা নর্দমায় ফালায় দিলো।“আগেই বলছিলাম পোলার বেসিক ভালো না।মুখস্ত করে পিএসসি তে বৃত্তি পাইছে”।সুন্দরী মেয়েরাও ভুলে গেল তার কথা।বাপ-মার মান-ইজ্জত পুরা এলাকাতেই শেষ এবং বর্বাদ।ছেলে তখন থেকেই মাপা শুরু করল সিলিং ফ্যানের জোর কতদূর।তার ওজন সহ্য করতে পারবে কিনা।এরপর বাপের গামছা দিয়ে দিল ফাঁস।পরেরদিন অবশেষে বাপ-মার মনের আশা পূর্ণ।ছেলের নাম পত্রিকায় এসেছে”।অনেক কথা বলে ফেললাম আমি একটানে।ক্লান্তি তো গ্রাস করছেই না।বরং আরো ভাল লাগছে।সবাই উতসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কিন্তু ধ্রুব তুই যদি এত কিছু লেখোস তুই একটা আবাল লেখক ছাড়া কিছুই হইতে পারবিনা,শালা গাঁজাখোর।
অবশেষে আরো ৫মিনিট স্টেজে থেকে তারপর নামলাম। ওয়ারফেজ উঠলো। স্টেজ থেকে নামার সময় করতালির আওয়াজ কান পেতে শুনলাম।জী আমিও যেকোন পারফর্মার এর মতনই করতালির মরননেশায় আক্রান্ত।ভালো লাগলো।ভালো লাগার রেশ কাটতে সময় লাগলো না। গাল বরাবর চপেটাঘাত পড়লো প্রায় সাথে সাথেই।করতালি শেষ,চপেটাঘাত শুরু। “খা*কির পোলা,মা*রি,চু*#@নি তোকে এই কারণে স্টেজে উঠাইছিলাম?তুই গিয়ে আমাদের দলের বদনাম করবি,এইজন্যে তোরে উঠতে দিছি?হারামি।তুই রাজিবের ছোট ভাই বলে উঠতে দিছি।নাহয় শালার কমেডিয়ান উঠানোর কাম ছিলোনা।বঙ্গবন্ধুরে নিয়া হাসাহাসি করোস?”পাশের আরেকটা কণ্ঠ বলে উঠে “ভাই,ওরে আরো দুইডা লাগান কান বরাবর।হালার কত বড় সাহস কয় বংগবন্ধুর স্বপ্ন ছিল আমি কমেডিয়ান হব,তাই কমেডিয়ান হয়েছি,শালার পুত শালা”।আমি গালে হাত দিয়ে বললাম “ডিজিটাল বাংলাদেশ যদি উনার স্বপ্নের অংশ হয়,আমার কমেডিয়ান হইতে দোষ কই”?বলেই বুঝলাম ভুল হয়ে গিয়েছে।এলোপাথারি চড়-থাপ্পর খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম।এবার প্রথমজন যার পরিচয় গাঁজাখোর লেখক দিতে ভুলে গিয়েছে সেই জন অর্থাৎ অর্গানাইজার ছাত্রলীগ নেতা বাকি ভাই পাশের ক্যাডারের কাছ থেকে পিস্তল নিয়ে আমার মুখে ঢুকায় দিলো। তারপর যা বললো তার সারমর্ম এই যে আমারে সে আর একটা সুযোগ দিবে।এইসব প্রোগ্রাম থেকে বের কইরা দেওয়ার আগে।কিন্তু কোনরকমের রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ।শুধু নর্মাল জোকস।
আমি সিনেমার মতন চিৎকার করে বলি নি, না আমি আমার সত্ত্বা বিক্রি করবোনা।আমি সব মেনে জীবন হাতে উঠে এলাম।মুক্তিযোদ্ধারা কি আমার জন্য আজ যুদ্ধ করতোনা আজ?আই মিন,চিন্তা চেতনার স্বাধীনতা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিতর ছিলোনা?হাটা শুরু করলাম।জীবনের দিকে প্রতিবারের মতন আবারো আলোকপাত।আমার বয়স ২৫।এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।পড়ি ফলিত পদার্থবিদ্যা।হ্যা,লেখক ধ্রুইব্বার মতনই। আমার আর ওর অনেক মিল।আমি কালো কুতসিত এবং কিছুটা স্থুলকায়,অর্থাৎ সামাজিক মাপের চেয়ে কিছুটা মোটা।পড়াশোনার চেয়ে অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত অনেক বেশি।কিন্তু বদ্ধ সমাজে মানসিক প্রশান্তি নিয়ে টিকে থাকার জন্য সার্টিফিকেটে ভালো কিছু অক্ষর ও সংখ্যার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক।আসলেই কমেডি,মিউজিক,সিনেমা,গেমস এগুলা তো কাজ নয়।কাজ তো পড়াশুনা আর প্রেম।যদিও প্রেমটা আসলে কাজ হওয়া উচিত নয়।প্রেম হওয়া উচিত প্রেম।মনের টান থেকে আসা।এটা গল্পের বইতেই হয়।বাস্তবতা হল,প্রেম টিকিয়ে রাখা অনেক পরিশ্রমের কাজ।তবে এ থেকে প্রাপ্ত প্রশান্তির তুলনা নেই,এই আর কি।
পকেটে রাখা ফোনটা কেঁপে উঠল।আমার প্রশান্তির নীড়ে কল।কল ধরে বললাম, “হ্যা কি অবস্থা”?ওপাশ থেকে-ফোন করছি কতবার ধরো না কেন?-ব্যস্ত ছিলাম।- কিসের ব্যস্ততা?-এই তো।-কি স্যারের সাথের প্রজেক্ট?-না।স্যার এখন বাড়িতে।-তাহলে পড়তেছিলা?-না,পড়ালেখা সংক্রান্ত কিছু না।-তাহলে?- তেমন কিছুনা।-বুঝছি,বলা লাগবেনা।-কি বুঝলা?-জুনিয়র মেয়ের সাথে ঘুরতেছিলা?-নাহ।পারফর্মেন্স ছিল।আমি কারোর সাথে কথা বলি না এখন আর।কতবার বলতে হবে।-তুমি এখনো পারফরমেন্স করো।তোমাকে কতোবার বলছি বন্ধ করতে।এসব আজাইরা কাজ বাদ দিয়ে,ভালো মতন পড়ো।আমি এখানে এখন আমাদের ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে ভালো স্যারের সাথে,সবচেয়ে ট্যালেন্টেড ভাইয়ার সাথে কত কষ্ট করে রিসার্চ করতেছি আর তুমি কিনা কমেডি করে বেড়াও।আবার আমাকে বিয়ে করার সাধ জাগছে তোমার?-----------নিরবতা আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু এইসব ক্ষেত্রে।তাই চুপ করে গেলাম।ওপাশ থেকে আবারো শুরু হল।-তোমার বাল-ছাল জোক এগুলা মানুষ শুনেও?তাও টাকা দিয়ে।আজাইরা সব জোক তোমার।আমাদের এখানে কমেডির লেভেল তোমার থেকে কত উচুতে তোমার আইডিয়াও নাই।ফালতু।রাখি,তোমার সাথে কথা বললেই তোমাকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে।রেজাল্ট নাই,চেহারাও নাই, কিছুই নাই।রাখলাম।-আই লাভ ইউ।-আই ডোণ্ট।আর কল/টেক্সট দিবানা।
ফোন রেখে রিকশা নিলাম।বাসার দিকে যাবো।জীবন আসলে এভাবেই কেটে যাচ্ছে।হয়তোবা এভাবেই কেটে যাবে।স্বপ্ন গুলো সব জমিয়ে রেখে বাক্স বন্দি কাফনের কাপড় পেঁচিয়ে মাটিতে পুঁতে রেখে যাবো।এরপর কয়েকশ বছর পর আর্কিওলজিস্টরা এটা বের করে সুন্দর করে ফেলে দিবে। বাতিল জীবন আমার,বাতিল আমার স্বপ্নেরাও...(চলবে)
©somewhere in net ltd.