নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার চিন্তা ভাবনার খোলা খাতা আপনাদের সবার ভালো লাগলে ভালো না লাগলে দুঃখিত

মুর্খদের সাথে তর্ক করতে ভাল্লাগেনা,মুর্খ দের এভয়েড করতে ভাল্লাগে

ধ্রুব অন্যকোথাও

আমাকে অমানুষ ডাকুন

ধ্রুব অন্যকোথাও › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুধুই আরেকটা রাত

০৩ রা মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪৫

ছেলেটা ব্যস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে।এইখানে জীবন নিষ্ঠুর তাই অন্ধকার আয়নায় টায় জ্বলে থাকা টিমটিমে আলোর মুঠোফোনের দিকে একনিষ্ঠ ভাবে কেউ তাকিয়ে থাকেনা।সবাই দানবের মতন ছুটে আসা পাবলিক বাস গুলার অপেক্ষায় থাকে।একটা বাস আসে আর সবাই ছুটে যায় একটু জায়গা পাবার আশায়।ঘরে,হলে,মেসে যেতে হবে যে।
বাস আসলো।ছেলেটার চিরপরিচিত রাস্তা দিয়েই ছুটে যাবে সে।ছেলেটা উঠে বাসটা মোটামুটি খালিই পেলো।বাসটার পিছে কোনার একটা সিট ধরে জানালার পাশে চুপচাপ বসে গেল।সাথে সাথেই পাশের সিটের জানালার পাশে গিয়ে একটা মেয়ে বসে গেল।তখনই বাসটা ছেড়ে দিল।সেইদিন অবাক করা ব্যাপার হল বাসের মাঝখানের দাঁড়ানো এর জায়গাটা ছিল সম্পূর্ন খালি।
ছেলেটা আশেপাশে তাকাতে গিয়ে মেয়েটার দিকে চোখ নিয়ে গেল।মেয়েটা মোবাইলের দিকে নিবিষ্ট দৃষ্টিতে তাকিয়ে।ছেলেটা চোখ ফিরিয়ে নিল।ছেলেটার পাবলিক বাসের মানুষদের কে দেখতে বেশ লাগে।তাদের জীবন সম্পর্কে কল্পনা করে তার সময়টাও সুন্দর কেটে যায়।সামনের সিটে এক আপাদমস্তক বোরকা পড়া এক মহিলা মুরগী নিয়ে যাচ্ছে।সেই মুরগী ধরে রেখেছে একটা ছোট মেয়ে। তার সামনেই দামী শার্ট প্যান্ট পড়া ভদ্রলোক ফোনে একদম শুদ্ধ বাংলায় কথা বলছেন।ওইদিকে বাসের কন্ডাকটর জানালা দিয়ে মাথা বের করে আশে পাশের রিকশা ওয়ালাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছেন।
আবারো,মেয়েটার দিকে চোখ গেল।দীর্ঘ কালো চুল,চশমা দেওয়া।মায়াকাড়া চেহারার সাথে বাংগালী সংগ্রামী নারীর চেহারার একটা আদল মিশ্রিত।পোশাক আশাকে পরিপাটি,দারুন রুচির ছাপ এবং নিয়মিত রাস্তায় চলাচলে অভ্যস্ত বুঝা যায় পোশাক থেকেই।মিশমিশে কালো চুলে শেষ বিকালের সূর্যের আলোর লালচে আভা।ছেলেটার চোখ আটকে গেলো।মেয়েটা তার মোবাইল টা ব্যাগে রাখলো।মোবাইল টা বেশ দামী।একদমই নতুন বের হয়েছে।ছেলেটার কাছের এক বন্ধু আছে ব্যবসা করে।সে ওর কাছেই দেখেছে।ছেলেটার এসবের শখ কিংবা সামর্থ্য দুটোর একটাও নেই।বাসটা ঘুরে গেল।
সূর্যের আলোর আভাটা সরে গেল।ছেলেটা আরো একবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে গেলো,ঠিক তখনই মেয়েটা মুখ তুলে ছেলেটার দিকে তাকালো।চোখে চোখ পড়লো।দুইজনেই মুচকি হাসলো।তারপর আরো ১০ সেকেন্ড দুই দুইজনের দিকে তাকিয়ে রইল।এরপর মাথা ঘুরিয়ে দুইজনই জানালার দিয়ে বাইরে চেয়ে রইল।
কিছুক্ষন পর বাসটা দাড়ালো।মেয়েটা সিট থেকে উঠলো । কন্ডাকটর কে বললো দাড়াতে।মেয়েটা উঠে হাটা দিলো।হাটা দেওয়ার আগে একবার পিছে তাকালো ছেলেটার দিকে।চোখের মাঝে অদ্ভুত একটা আকুতি।ছেলেটা দেখলো।আবার মুচকি হেসে জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইলো।মেয়েটা জানালার পাশে এসে দাড়ালো এক মূহুর্তের জন্য।আবারো চোখাচোখি হল।এইবার দুইজনের চোখেই বিষাদের দৃষ্টি।বাসটা ছেড়ে দিলো।আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে হারিয়ে গেল মেয়েটা সিএনজি - রিকশা-গাড়ির ভীড়ের মাঝে।
ছেলেটা জানালা দিয়েই চেয়ে রইল।এটা কি ভালোবাসার চিহ্ন ছিলো?নিজেই আনমনে হেসে উঠলো সে।এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষে থাকলে হয়তো বড়,ছোট কিছুই তোয়াক্কা না করে মেয়ের পিছে পিছে নেমে ফোন নাম্বার ,ঠিকানা এমনকি একটা মিটিং টাইম বের করে নিতো। এরপর কি হতো?
এরপর ছেলেটা মেয়েটার সাথে ৪-৫ বছর প্রেম করত।তারপর এম এস করে ছেলেটা চাকরী খুজতো এবং এই চাকরী খুজতে খুজতে মেয়েটার অন্য জায়গা থেকে কেউ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতো।ছেলেগুলো হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,নাহয় ব্যবসায়ী,নাহয় প্রকৌশলী কিংবা ডাক্তার।শেষ পর্যন্ত বিয়েও হয়ে যেতো।
আমাদের গল্পের ছেলেটা এসব ভেবে ভেবে বাসেই ঘুমিয়ে পড়ে।এম এস এর শেষভাগে দাঁড়িয়ে থেকে চাকরী খুজে বেড়াচ্ছে সে।এম এস করেও চাকুরীর সন্ধানে হাবিজাবি সব কোর্স করে,আই বি এ এর কোচিং করে,টিউশন করে ফিরছে।মোবাইল টা পারেনা ছুড়ে ফেলতে।স্মৃতি ও প্রয়োজনীয়তার কাছে বাধা পড়ে মোবাইল ফোন টা পড়ে থাকে অন্ধকার প্যান্টের পকেটে চুপচাপ।
এরকমই এক বিকাল বেলা প্রথম প্রেমে পড়েছিল ছেলেটা।মেয়েটাও ওই জায়গাতেই বাস থেকে নেমেছিল।ছেলেটাও বাস থেকে নেমে গিয়ে মেয়েটার নাম-ঠিকানা-ফোন নাম্বার যোগাড় করেছিল।এখন মেয়েটার বিয়ে ঠিক হচ্ছে।ছেলে কানাডা প্রবাসী।পি এইচ ডি করছে।দারুন প্রতিষ্ঠিত।ওইখানকার বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক হয়ে যাবে যেকোনদিন।মেয়েটাও ওই পথেই হাটছে।
ছেলেটার চোখ খুলে গেল।মোবাইলের দিকে তাকায় ছেলেটা।নিজের প্রতিবিম্ব দেখে।আপন মনেই বলে উঠে শালা চামাড়,কোমর সোজা করে দাড়াতে পারিস না আবার প্রেম করবি।নিজেকে দেখছিস একবার?তোর সাথে প্রেম করার চেয়ে রাস্তার কুকুর কে রুটি খাওয়ালেও কাজে আসবে।শালা ধ্বজভংগ...
ছেলেটা বাস থেকে নামে। চারিদিকে অন্ধকার।পা গিয়ে পড়ে নর্দমায়।পাশের রাস্তায় শুয়ে থাকা ফকির হেসে দেয় "আপনে ৫ নাম্বার আজকের সন্ধ্যায়"
ছেলেটা অন্ধকার আকাশে তাকায়।জীবনের ভিত্তি গুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে আর এতো সামান্য নর্দমা।এতো শুধুই আরেকটা রাত মাত্র...জীবন নতুন কষ্ট নিয়ে কালকেই হাজির হবে।চিন্তার কারন নেই।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৫৬

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: ভাল লেগেছে।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:০২

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: প্রচন্ড ভাল লিখেন আপনি। এর আগের লেখা থেকে জানি।
এটার শুরুটা ঠাল লাগেনি। একটু খাপছাড়া খাপছাড়া লেগেছে, মনে হচ্ছিল কেউ রচনা লিখছে যেন। কিন্তু শেষে এসে পুষিয়ে দিয়েছেন অনেকটা। সমাপ্ত হয়ছে পরিপক্ক হাতে।
তবে ফ্লোটা ছিল না।
যঙি শুরু থেকে শেষ, একরকম হতো!

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:০৪

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: আস্তে আস্তে বিল্ডাপ করার চেষ্টা করেছিলাম।তাই হয়তো এরকম মনে হয়েছে।আমার বড় প্রজেক্ট চিঠি প্রায় শেষের দিকে।ওটার সময় আপনার এই মন্তব্য মাথায় রাখবো।ধন্যবাদ

৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৯

ওমেরা বলেছেন: জীবন মানেই যুদ্ধ ! ধন্যবাদ ভাল হয়েছে ,

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:০৪

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ

৪| ০৩ রা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:০৪

চিন্তিত নিরন্তর বলেছেন: ভাল

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:০৫

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ

৫| ০৩ রা মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২০

কানিজ রিনা বলেছেন: অনেক ভাল লাগল। ধন্যবাদ

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:০৫

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ০৩ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৩৭

ধ্রুবক আলো বলেছেন: ভালো লাগলো

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:০৫

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

৭| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৫

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: ভালো লেগেছে পড়তে।

রাতের পর রাত পার হয় কিন্তু এসের অবস্থার পরিবর্তন হয়না খুব একটা।

০৫ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৪

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: ধন্যবাদ

৮| ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালোই লাগলো পড়তে।

২৩ শে মার্চ, ২০১৭ ভোর ৬:৩৭

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: ধন্যবাদ

৯| ২০ শে জুন, ২০১৯ রাত ১১:১৪

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: বেশ !

২১ শে আগস্ট, ২০১৯ ভোর ৫:৪৯

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.