নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছেলেটা..।

ধ্রুব ফাহিম

এখনো নিজের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি।

ধ্রুব ফাহিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

নশু!

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৭

১৯৭৫ সন।

কয়েকদিন ধরে বিরামহীন বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির মাত্রা এতই প্রবল যে ফসলের মাঠে কোমর পরিমান পানি জমে গেল। তখন ধানের মৌসুম, সব ধান পানির নিচে ডুব সাঁতার দিচ্ছে।

বন্যার আবির্ভাব সুনিশ্চিত হলো, যার বদৌলতে ধান সহ সব ফসলে পচন ধরলো। দেশের সরকার ঠিক সময়ে ধান আর গম আমদানি করতে পারলোনা।

যশোর জেলার প্রত্যন্ত এক ভদ্র পল্লির শেষ সীমানায় এক বিধবা, তার দুই ছেলে এবং চার মেয়ে বিবর্ন তালপাতার ঘরে কোন রকম মাথা গুজে থাকে।

পিতৃহীন বাড়ির বড় ছেলের নাম নাজিরুদ্দিন সরদার। পড়ালেখায় ছেলেটা ভালো নয়, বেশ ভালো। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় হুট করে পড়ালেখা ছেড়ে দিলো। এই ভেবে "গরীবির ছাওয়ালের পড়ালেহা দিয়ে হবে কি, আগে পেট বাচানু লাগবে না!"
বাড়ির প্রথম ছেলে, মায়ের খুব আদরের। "ছোট বেলা তার মা তাকে মাথায় রাখেনি উকুনে খাবে বলে, মাটিতে রাখেনি পিঁপড়াতে খাবে বলে, সব সময় বুকের পাঁজরের সাথে মিশিয়ে রেখেছেন।"

সময়টা এখন খুব খারাপ। জমিতে ফসল নাই, ঘরে চাল নাই। বাড়ির সবাই ভুখা। মানুষ এখন কারো বাড়িতে ভাত চায় না, চায় ভাতের মাড়। ভাত চাওয়ার মত দুঃসাহস কেউ দেখায় না।

চার পাশে শুধু একটা কথাই প্রতিধ্বনিত হয় "ভাত দে!" "ভাত দে!" "ভাত দে!" "ভাত দে!"
ভাতের অভাবে নাজিরুদ্দিনের মা আর তার দুই বোন মারা গেলো। নাজিরুদ্দিনের চোখ দিয়ে দু ফোটা পানিও পড়লো না। শুধু ছেলেটা ভাত খাওয়া ছেড়ে দিলো।

এরপর থেকে সবাই তাকে নশু নামে ডাকে। কেনো ডাকে সে নিজেও জানে না। কোনো বাড়িতে কোন অনুষ্ঠান হলে সে একটা মাটির মালশা নিয়ে হাজির হয়। সবাই আনন্দের সাথে তাকে খাবার দেয়।

গ্রামের পিচ্চি পিচ্চি ছেলেমেয়ে গুলো তাকে দেখলেই ডাক দেয় "এই নশু বিড়ি খাবি?" নশু তার কালো দাঁত বের করে হাসে।
নশু সেই খাবার গুলো নিয়ে যায় তার মায়ের জন্য। মা নিশ্চই না খেয়ে আছে। তার না হয় ভাত লাগে না, কিন্তু মাতো ভাত না খেয়ে থাকতে পারে না।
নশু গভীর মমতায় তার মায়ের কবরে ভাত ঢেলে দেয়। আর কবরের মাটিতে হাত বুলাতে বুলাতে বলে "মা দেখ, তোর জন্যি ভাত নিয়ে আইছি। খা মা, ভাত খা।"

তখন নশুর চোখ দিয়ে অশ্রুধারা নেমেছিলো কিনা কেউ তা খেয়াল রাখেনি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫২

চাঁদগাজী বলেছেন:


'৭৪ সাল বাংগালীর বুকে ক্ষত হয়ে রয়ে যাবে।

২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৮

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
যুদ্ধবিধ্বস্ত নবগঠিত যুদ্ধ বিজয়ী সরকার। শুন্য রাজকোষ, বৈরি চীন, আরব ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদিদের রোষানলের ভেতর সুরু করা,
প্রথম বছর ভারতীয় মুদ্রায় সরকারি বেতন দিতে হয়েছে, পরে ভারত ও ফ্রান্স বিনামুল্যে কিছু বাংলাদেশী টাকা ছাপিয়ে দিয়েছিল, নিম্নমানের হওয়ায় টাকা জাল হতে থাকে, বার বার টাকা অচল ঘোষনা করা হতে থাকে। আবার নুতন নোট ছাপাতে হয়। চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ। চাল-গম জরুরি আনা দরকার, চালনা বন্দর দিয়ে আনার চেষ্টা। চট্টগ্রাম বন্দর মাইনমুক্ত করে চালু করতে ২ বছর লাগে। বিনামুল্যে মাইনমুক্ত করে দেয় মহান সোভিয়েট ইউনিয়ন। ২ বছরে মাইন দুর্ঘটনায় প্রান হারিয়েছিলেন ডজন খানেক অকুতভয় সোভিয়েট নাবিক, পতেঙ্গায় এখনো সেই বীর সোভিয়েট নৌসেনাদের সমাধী আছে।
কিন্তু তখনো বিপুল সংখক সেনা, পুলিশ, সরকারি স্টাফ সহ ৪ লক্ষ বেসামরিক বাংগালী তখনো পাকিস্তানে আটক। ৩বছরের বেশী সময় আটকে জিম্মি করে রেখেছে ভুট্টো। ১৯৫ যুদ্ধাপরাধী পাকি সেনা অফিসারের সাথে বিনিময় করে চড়া মুল্য দিয়ে ৪ লাখ আটক বাংগালী ছাড়িয়ে আনা হয় ১৯৭৪এ।
৭৩ এ দেশটি মোটামোটি দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। তখই বিপর্যয়। কিন্তু ৭৩ এ মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আরব ইসরাইল যুদ্ধ, তেলের মুল্য ৩ ডলার থেকে ১২ ডলারে উন্নিত হলে সব দ্রব্যমুল্য, খাদ্যমুল্য ৩-৪ গুন বেড়ে যায়। এরপর জরুরি অবস্থা জারি করতে হয় বাধ্যহয়েই।
এখন ২০১০ থেকে বাংলাদেশ খাদ্যে সয়ংসম্পুর্ন। রপ্তানীও করে।

৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৭

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: পিচ্চি গল্প - শেষে বোমাকৃতির এক টুইস্ট।
সত্যিই ভাবিনি যে, মা মরে গেছে। :( সত্যিই খারাপ লাগলো।

সনটা মনেহয় ১৯৭৪ হবে। ঐবছর দুর্ভিক্ষটা হয়েছিল। দুর্ভিক্ষের মাত্রাটা ভাল করে বুঝেছিলাম - ঐটার উপর বেজ করে তৈরি করা ভাত দে সিনেমাটা দেখে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.