![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ,আমার বুদ্ধি ও একটু কম, বোকাই বলা চলে।আমি কল্পনা প্রবন ও সহজাত বিবেচনাবধ সম্পন্ন ব্যক্তি। কল্পনা অনুযায়ী সব কিছহু না চললে আমি ভীত হয়ে পরি। কনো আঘাত বা প্রতিকুলতার সম্মুখীন হলে নিজেকে নিজের মাঝে গুটিয়ে ফেলি। আমি অত্তন্ত অনুভুতি প্রবন ও সহজেই মনে আঘাত পাই।সচরাচর কল্পনা শক্তির প্রভাবের জন্য আমি সফতা অর্জন করি।সপ্ন দেখতে ভালবাসি। অত্যন্ত অনুভুতিশীল বলে সহজাত গুলাবলি প্রকাশ করার জন্য অন্যের প্রশংসা চাই।সপ্ন কে বাস্তবে রুপ দেবার জন্য নিজেকে যথেষ্ট স্বাধীন রাখতে ভালবাসি……।। হয়ত আমাকে দেখে আপানার পাগল মনে হতে পারে কিন্তু আমি এমন ই……… আবেগের উত্তাল আটলান্টিক মহাসাগরে প্রতিনিয়ত ডুবছি আর ভাসছি... খুঁজছি যদি তল খুজে পাই, Email : [email protected] . fb: www.facebook.com/shihab.dipu
নারী জাতি খুব স্বার্থপর। যেখানে বেশি কদর পাবে সেখানে যেতে বিন্দু মাত্র দ্বিধাবোধ করেনা।হয়ত কোন কারণে প্রেমিকের সাথে ঝগড়া হয়েছে তখন নতুন কেউ একটু ঢোলের বাড়ি দিতে পারলেই হয় বুড়ির নাচতে সময় লাগে না। তবে সবাই এক নয়।
নারীর প্রেম! এক মহিমাময় জিনিস। একমাত্র নারীই জীবনের ভাঙ্গা গড়ার অন্যতম কারণ। কবি সাহিত্যিক গণ জীবনের কোন না কোন একসময় প্রেমে পড়েছেন।আর তাতেই মনে হয় তাদের ছন্দের বা কথার অপার সুশ্রী তাদের লেখনীতে ফুটে উঠেছে।অন্তত আমার তাই ধারণা। এই আগোছালো কথা গুলো কোন প্রয়োজন ছিলো না। শুধুই নিজস্ব মতামত
নষ্ট হবার ডাক এসেছে নষ্টতে সব কাজ।
নষ্টতে তাই সব ভেসেছে নষ্ট আমি আজ।
নষ্টতে আজ বাস্তুভিটা, পুড়ছে মানব প্রেম!
অক্সিজেন তাই তিক্ততিতা রক্তে নষ্ট হেম।
নষ্ট নগর, নষ্ট বাড়ী, নষ্ট গাছের ফুল।
নষ্ট প্রেমে নষ্ট নারী, নষ্ট যে তার দুল।
নষ্ট মনের ভ্রষ্ট চোখেই নষ্ট রঙের খেলা।
নষ্ট হাতের নারীর মুখেই নষ্ট সকল মেলা। ন
ষ্ট সকাল নষ্ট বিকাল নষ্ট রাতের হাওয়া।
নষ্ট চাঁদের আলোয় মাতাল নষ্ট তারায় ছাওয়া।
নষ্ট হৃদয়, নষ্ট বায়ু, নষ্ট সকল প্রণয়।
নষ্টতে তাই নষ্ট আয়ু, নষ্ট হবার সময়।
প্রথম অংশঃ
তারিখঃ ০৭/০৪/২০১২
নামঃ এইচ এম অপু বয়সঃ ২৪
গায়ের রংঃ উজ্জল শ্যামলা
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলো। অতিরিক্ত মানসিক শক পাবার কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। প্রিয় রঙ......... ইত্যাদি
প্রীতি অপুর পুর্ব পরিচিত। কিন্তু বেশ কয়েক বছর দেশের বাইরে থাকার ফলে যোগাযোগ হয়নি। দেশে ফিরেই শোনে অপুর এই অবস্থা। তাই নিজেই মানবতার তাগিদে বোনের বন্ধুকে সুস্থ করার দায়িত্ব নিয়ে নেয়। অপুর বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সাথে কথা বলে তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে সকলের ধারণা তিনা নামের দু’বছর জুনিয়র এক মেয়ের সাথে রিলেশন ছিল।
নভেম্বরের পড়ন্ত বিকেল, প্রীতি অপুর বাসায়- অপুর রুমের সব কিছু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। ছিম-ছাম রুম। পড়ার টেবিল, কম্পিউটার টেবিল, ওয়ারড্রপ। এক কোনায় গীটার আর কিছু ছবি আকাঁর সরঞ্জাম। ছোট বেলা থেকেই ছবি আকাঁর টুকিটাকি শখ অপুর সেটা প্রীতি জানত। ঘুরতে ঘুরতে টেবিলের ড্রয়ারে চোখ পড়ে গেল তার। খুলতেই দু’টো কালো নীল ডায়েরী। সে অপুর মা’র কাছে বলে বাসায় নিয়ে আসল ডায়েরী দু’টো-যদি কিছু জানতে পারা যায় সেখান থেকে।
রাতের খাবার শেষ করে গাঁ’টা বিছানায় একটু এলিয়ে দিতেই অপুর ডায়েরীর কথা মনে পড়ল প্রীতির।সাধারণত কারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কৌতুহল নেই,কিন্তু এবার বিষয়টা অন্য বলেই ব্যাগ থেকে বের করে পড়া শুরু করল প্রীতি—
অদ্ভুত সুন্দর রঙ প্রতিটি পাতায় হয়ত বিদেশ থেকে আনিয়ে নেয়া। হাতের গোটা গোটা লিখা গুলোর সাথে অদ্ভুতভাবে মিলে গেছে। এক কথায় প্রতিটি পাতার সৌন্দর্য না দেখলে বলে বিশ্বাস করানো যাবে না।
৯ অক্টোবর ২০১০ ( খুব সম্ভবত এই দিন থেকেই ডায়েরি লিখতে আরম্ভ করেছিল অপু। শুরুর পাতায় এই দিনটিই লিখা।
আমি অপু। সাদা সিধে ছেলে। যদিও কিছুটা রগ চটা। তবুও বন্ধুরা ভালোই বলে।এইচ এস সি দিয়ে মাত্র ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি। বেশ ভালোই কাটছিল দিন গুলো। আমার এই সুন্দর সময়কে আরো সুন্দর করে দিয়েছিল তিনা ।আমার পাশের এলাকাতেই বাসা, পরিচয়টা যদিও কিছুটা অদ্ভুত ভাবে হয়েছিল আমাদের তবুও বেশ ভাল ।
আমার বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা খুব নগন্য ।স্কুলের কিছু বন্ধু আছে যারা বরাবরের মতই ক্লোজ। শিহান তেমনই একজন বন্ধু আমার। শত ঝগড়া ঝাটি যাই হোক দিন শেষে আমরা- আমারাই হয়ে যাই। তখন নতুন নতুন সবাই প্রেম করছে। আমিও ঝড়ে বকে এক ঢংগী নারী জুটিয়েছিলাম কপালে।যদিও তিন দিনের বেশি যায়নি সে রিলেশন।
এ কিছুদিন আগে শিহানের বাল্যকালের ভালবাসা তাকে ফিরিয়ে দেয়। ফিরিয়ে দেবার কারণ হিসেবে জানায় তার সাথে প্রেম করতে হলে অঢেল সম্পত্তির মালিক হতে হবে। সেদিন শিহান বেশ ভেঙ্গে পড়েছিল। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে কিছুদিন পরে ঠিক হয়েছিলও তারপরও যার জন্য চার বছর অপেক্ষা করে এই কথা শুনতে হয় তাকে আর কি বা বলার আছে। মনে মনে শিহান প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছিল কপালে যাই হোক এই মেয়ের থেকে ভাল মেয়ে কে নিয়ে ঐ মেয়ের নাকের ডগা দিয়ে ঘুরবে সে। কয়েক দিনপরে এক বিকেলে কোচিং শেষে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখনো এইচ এস এসি পরিক্ষা শুরু হয়নি।
-দোস্ত! একটা হেল্প কর?
-কি বল?
-তোর তো অনেক ফ্রেন্ড ! মানে ইয়ে মেয়ে ফ্রেন্ড আর কি!
-হুম! তো? কি করব?
-আমার জন্য একটা বউ খুজেঁ দে রাতে আর কষ্ট পেতে ভাললাগে না।
- আরে দোস্ত তুই চাইছিস আর হবে না মানে? অবশ্য হিন্দু মেয়ে জোগাড় করা একটু কঠিন কিন্তু ব্যাপার না হয়ে যাবে।
যেই বলা সেই কাজ। দুই বছরের ছোট একটা মেয়ের সাথে পরিচয় ছিল। নাম স্মৃতি ,ওকেই বলে বসলাম যে আমার বন্ধুর জন্য ভাল মেয়ে লাগবে!! ব্যবস্থা করে দে। স্মৃতিও বলেছিল করে দিবে।
নাহ! আজ আর না মনে মনে বলছে প্রীতি। অনেক রাত হয়েছে। আর পড়তেও ইচ্ছে করছে না ।কারণ পড়ের কাহীনি প্রীতি জানে। স্মৃতির বড় বোন প্রীতি । ঘনিষ্ঠতা বেশি হওয়ায় জীবনের সবই দু’বোন একে অপরের সাথে শেয়ার করে।
পরের দিন দুপুরে, হসপিটাল থেকে অপুকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে প্রীতির ব্যক্তিগত অনুরোধের কারণে। অপুর হসপিটালে খুব অসুবিধা হয় তাই। প্রীতি নিজের বাসায় যেয়ে আবার অপুর ডায়েরি নিয়ে বসল।
স্মৃতি শিহানের জন্য শিমি নামের এক মেয়ে খুজেঁ দেয়। মেয়েটে ভাল। শিহানের খুব পছন্দও হয়েছে। শিহান আর শিমির মাঝে মানের একটা অদ্ভুত মিল আছে। শিহান রায় আর শিমি রায় । আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে শিমির আরেক নাম নাকি শিহান। যদিও ছেলেদের নামের মত কিন্তু দুজনের নামই এক। তারপর বেশ কিছুদিনের মধ্যে দু’জনের রিলেশন হয়ে যায়।
শিমির একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড হচ্ছে তিনা। প্রায় সব কিছুই তিনার সাথে শেরার করে শিমি। শিহান আর শিমির রিলেশনের জন্য শিহান তিনাকে বেশ তেল মারাম উপর রেখেছিল।
একদিন দুপুরে শিহান শিমিকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। আমিও যাই ।শিমির সাথে তিনাও থাকে । কথাবার্তা বলে বেশ ভালো লাগলো সবার সাথে। তিনা আমাকে ওর নাম্বারটা দিয়ে বলল যে আমরা যেন বন্ধু হই। আমিও রাজী হয়ে গেলাম। রাতে ফোনে কথা হত তিনার সাথে আমার।
বেশ কিছুদিন পরে এক রেস্টুরেন্টে শিহান,শিমি ,আমি আর তিনা যাই। প্রায় সব শেষে ওখান থেকে বের হবার সময় শিহান শিমিকে জড়িয়ে ধরে। আমরাও একটু দুষ্টামি করি । কিন্তু এখানে শেষ হলে ভাল হত। তিনা এরপর আমাকে বলে যে আয় আমরাও ফ্রেন্ড আমরাও একে অপরকে জড়িয়ে করি ।আমি কিছু বলে ওঠার আগেই ও জড়িয়ে ধরল খুব শক্ত করে। আমি খুব লজ্জা পাচ্ছিলাম যে সল্প পরিচিত একটা মেয়ে এরকম কেন করছে। বিল দেয়া হয়ে গেসে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হবার সময় তিনা প্রায় সব লোকের সামনেই গালে একটা চুমু দিয়ে বসে!! আমি তখন পুরো স্তম্ভিত হয়ে গেছি। এটা কি করে সম্ভব। অনেক রাগ হয়েছিল যে, এ কেমন মেয়ে যে এরকম একটা কাজ করতে পারে। একটু খারাপ ধারণাও জন্মেছিল মনে।
বেশ কিছু দিন হয় তিনা আমার উপর বেশ এডিকটেড এর মত হয়ে উঠেছে। সারা দিনই ফোনে কথা বলতে চায়। টেক্সটিং তো আছেই। দিন গড়াতে গড়াতেই আমি কিছুটা দুর্বল হয়ে যাই তিনার উপর। সেই দুর্বলতার ফল স্বরুপ একদিন প্রেমেই পরে যাই এই মেয়েটির। জানতামও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু বেশি বেগ পেতে হয়নি নিজেই আমাকে দিয়ে ওকে প্রপোজ করিয়ে নেয়। আমাদের রিলেশনের শুভ সূচনা হয়।
রিক্সায় একদিন ঘুরতে বেরিয়েছি আমি আর তিনা অনেক কথার মাঝে হঠাৎ করেই কেদেঁ ফেলে তিনা।
-এই শোন আজকে তোকে কিছু কথা বলব , রাগ করবি না তো?
>আরে তোর কথায় কি আমি কোন দিন রাগ করেছি? বল…
-এই ব্যাপারটার পরে আমাকে ছেড়ে চলে যাবি না তো?
>নাহ! বোকা কখনো না, তিনা বলতো কি হয়েছে! এতো ভনিতা করা লাগবে না।
-নাহ ! পরে বলব
>হুট করেই রিক্সা থামিয়ে আরেকটা রিক্সা নিয়ে বাসার দিকে রওনা দেয় তিনা। কারণ জানতে ফোন দিয়ে বন্ধ পাই তিনার মোবাই, রাতে সাড়ে এগারটার দিকে একটা কল টেক্সট আসে-
‘’ তুমি আমাকে ভুলে যাও অপু, আমি তোমার জন্য পারফেক্ট না’’
আমি বেশ থতমত হয়ে গিয়েছিলাম । পরে অনেকবার ফোন দিয়েছি কথা বলার জন্য কিন্তু ধরেনি। ৩৭ নম্বর কলে তিনা ফোন ধরে!
-তিনা কি হয়েছে বল। তুমি যদি না রাখতে চাও রেখোনা রিলেশন ! কিন্তু না বলা কথা গুলো একবারের জন্য হলেও বলে যাও প্লিজ!!
->দেখ এরকম কর না! আমি বলতে পারব না।
-তাহলে আমি মরে যাব। এখনি ঘুমের ওষুধ খাব
>উফফ!! প্লিজ!
কল কেটে গেল! আমি অনেক চিন্তায় পরে গেলাম। চিন্তায় পড়ার মতই বিষয়। রিলেশনের মাসখানেক পরে কি এমন হল যে রিলেশন রাখতে চাইছেনা।
আমি আবার ফোন দিলাম- তিনা কাদছেঁ
-তিনা বল, কি হয়েছে আমি কিচ্ছু মনেকরব না। কাউকে কোন দিন বলবোও না।
->শোন আজ, তোমাকে আমার জীবনের সব কথা শেয়ার করব, কারণ তোমাকে আমি ভালবাসি! কিন্তু সব কিছু শোনার পর তুমি আর আমাকে ভালবাসতে পারবেনা।
-ধুর আগে বল তুমি এরপর দেখতেছি, কি এমন মহামারি বিষয়।
তিনার তখন একটু স্বাভাবিক হয়ে গম্ভির গলায় বলতে লাগল-
>দেখ আমার বাবা থাকতেও নেই। উনি নেশা করে। আমার মা আমাদের দুই ভাই বোন কে মানুষ করেছে। আমি যে দিন জন্ম নিই, সেদিন আমার বাবা ব্যবসায় অনেক লস হয়। তার সব কিছু বিক্রি করে দিতে হয়। তার পর থেকে মা মনে করেন আমি নাকি অশুভ তাদের জন্য। তিনি আমাকে আমার ছয় দিন বয়সের সময় লবণ খায়িয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। তার পর থেকে আমি খালার কাছে মানুষ। বাবা’র সাথে মা’র সম্পর্ক খুব একটা নেই।বাবার নেশার কারণে। এমন কি এক দিন বাবা মদ খেয়ে মাতাল হয়ে এসে সিগারেট এর আগুন দিয়ে সারা শরীরে ছেকা দিয়ে ছিল আমাকে এখনো ছোট বেলার সেই দাগ গুলো রয়ে গেছে। তখন খুলনায় ছিলাম পরে মা আমাদের ঢাকায় নিয়ে আসেন। মা ব্যাংকে চাকরি নেন। তার আগে আমাদের নিয়ে এক বস্তিতে থাকতেন আম্মু আর ভাইয়া। অনেক কষ্ট করে ভাইয়াকে লেখা পড়া করাচ্ছিলেন আম্মু। ব্যাংকের শু’বাদে মা একটি কলোনিতে বাসা পান সরকারি ভাবে। তারপর থেকে একটু স্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করেছিল। আমি তখনো খালার বাসায় ছিলাম। কিন্তু খালা বলতে গেলে আমাকে কাজের মেয়ের চেয়েও খারাপ ভাবে রাখত। লেখা পড়া করাত ঠিকই কিন্তু দুর্ব্যবহারের শেষ ছিলো না। এই সময় গুলা তে ভাইয়াই একমাত্র আমার ভাল বন্ধু ছিল । সব কিছু শেয়ার করতাম ভাইয়ার সাথে। আমার জীবনে কেউ নেই, শুধু এই ভাইয়া ছাড়া….
তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি, ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে, একদিন খালারা সবাই রাত নয়টার দিকে আমাকে দোকান থেকে চিনি আনতে বলল। আর বলল যে চিনি এনে যেন ভালো করে দরজা বন্ধ করে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যাই। উনার কোথায় যেন যাবেন রাতে ফিরবেন না। আমি আর তেমন কিছু না ভেবে বলি ঠিক আছে এরকম অনেক বারই হয়েছে। নতুন কিছু না। আমি আসছিলাম বাসায়, খালাদের বাসাটা ছিলো এক কলোনিতে সন্ধ্যের পরই ফাঁকা হয়ে যেত সব অনেক গাছ গাছালিও ছিল সেখানে। আমি বাসার সামনে আসতেই হেচকা টান দিয়ে মুখ বেধে এক প্রকারের কোলে করে কিছু ছেলে আমাকে ধরে নিয়ে যায় পাশের ঝোপের আড়ালে। ঐখানে এই রাতের বেলায় কোন কুকুরঅ আসে না ।এক পর্যায়ে জংলের মত । তার পর আমি আর কিছু বলতে পারব না। ছয় ছয়টা হায়েনা আমার দেহটাকে খুবলে খুবলে খেয়েছে। যন্ত্রনায় শরীরের সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম চিৎকার করার শক্তিও ছিল না আমার মাঝে। প্রায় মাঝ রাতে আমাকে আমার বাসার সামনে ফেলে যায় ওরা। যখন ফেলে যায় তখন ওদের আমি চিনতে পারি ওরা এলাকারই মাস্তান টাইপের ছেলেপেলে।আমাকে অনেকবার প্রেমের প্রস্তাবও দিয়ে ছিল। আমি কোন রকমে বাসায় যাই । কাউকে কিছু বলার মত অবস্থায় ছিলাম না আমি। একে তো আমার নিজের মা’ই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে আর খালাদের তো কোন ভাবেই বলা যাবে না। তখন একটি ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল। লিখন নামের ওকে বাসার টি এন্ড টি থেকে ফোন দিয়ে আনিয়ে সব খুলে বলি। কারন তখন আমার কিছুই করার ছিল না। লিখন এসে আমাকে সেই রাতেই ওষুধ সহ সুস্থ হবার সব কিছু কিনে দেয়। মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয়। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই লিখন আমাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে সেদিনের কথা সবাইকে বলে দিবে বলে প্রায়ই আমাকে হুমকি দিত ঐ সন্ত্রাসীরা, বেশ কিছু রাত তাদের সাথে থাকতে বাধ্য করেছে আমাকে। তখন নিজেকে নষ্টা মনে হচ্ছিল। অনেকবা আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি।ছাঁদ থেকে একবার লাফ দিয়েছিলাম ডান হাত আর পা ভেঙ্গে গিয়েছিল তবুও এই দুনিয়া থেকে খোদা আমাকে তুলে নেয় নি। এরপর সব কিছুর হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম সব । এর মধ্যেই ভাইয়া মা কে বলে আমাদের নিজের বাসায় নিয়ে আসল। আমার সব খরচ ভাইয়াই বহন করত। এর পর থেকে আজ পর্যন্ত আমি নষ্টা একটা মেয়ে। তুমি হয়ত আজকের পর আমার সাথে আর কোন কথাই বলবে না জানি । জীবনের যেন লিখনের মত তুমিও ভুল বুঝে না ঘেন্যায় আমাকে ছেড়ে না যাও আমি সব কিছু বললাম তোমাকে। জানি এটা কখনোই সম্ভব নয় আমার মত একটা মেয়ের সাথে রিলেশন করার। তুমি যেতে পার আমি কিছুই মনে করব না। শুধু আমাকে মাফ করে দিও , আমি আগে তোমাকে এগুলো বলতে পারিনি……। ভাল থেকো তুমি।
আমি অঝোরে কাদছিঁ । তিনা খেয়ালও করেনাই সেটি। একটুপর আমি কোন কথা বলছিনা দেখে বুঝে ফেলল। আমি তখন সব কিছু চিন্তা করে বললাম ‘’ ওরে পাগলি , আমি তোকে ছেড়ে কোথাও যাব না। তুই যেরকমই হইস না কেন। আমি আছি তোর পাশে কেউ থাকুক আর নাই বা থাকুক ।সারাজীবন তোকে আগলে রাখব আমি। আমি যে তোকে কতটা ভালবাসি আজ থেকে তার প্রমান তুই পাবি’’।
তিনা শুধু একটা কথা বলেই ফোন রেখে দিল- ‘’ কাল বিকেল পার্কে এস’’
আমি পরের দিন বিকালে পার্কে যেতেই দেখলাম ও আমার পছন্দের রঙের জামা পরে এসেছে। আমাকে দেখতেই জড়িয়ে ধরে কেদেঁ ফেলল। সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমরা একসাথেই আছি। একবাহু ডোরে আছি।অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এ কয়েক দিনের।
-২০১১
বেশ ভালোই কাটছিলো দিন গুলো এর মধ্যে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেলাম।ক্লাসও হচ্ছে দারুন। নতুন বন্ধু নতুন নতুন সব কিছু। আর দিন শেষে তিনার সাথে সারা রাত কথা টেক্সটিং আরও কতো কি।
ভাল আছি বেশ ভালো আছি আমি। ভাবছি কিছুদিনের মধ্যেই বাসায় জানাব আমাদের সম্পর্কের কথা।
ডায়েরির শেষ পাতার আগের পাতা এটি। শেষ পাতায় লিখা –
‘’স্বপ্ন যখন দেখেছি সেই স্বপ্ন সত্যি আমি করবই’’।
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এল প্রীতি অপরের ডায়েরিটা ব্যাগ থেকে বের করে রাখল রাতে পড়বে বলে, কিন্তু সেদিন আর পড়া হয়নি কিছু কারণে।
পরের দিন সকাল বেলা প্রীতি অপুর বাসায় গিয়ে অপুকে দেখে আসল, আগের থেকে একটু ভালোর দিকে। যদিও কারো সাথে খুব একটা কথা বলেন একটানা সারা দিন ছবি আকেঁ আর গীটারে করুন সুর বাজায়। অপুর মা ছেলের অবস্থা দেখে নীরবে শুধু কাদেনঁ।
রাতে ঘুমুবার আগে অপুর দ্বিতীয় ডায়েরীর কথা মনে পরল প্রীতির।জানালার পাশে হেলান দিয়ে শুরু করল আবার- কোন তারিখ বা তেমন কিছু নেই আগেরটার মত,
বাসায় বলব বলব করেও বলা হচ্ছে না। আজ কাল তিনার যেন কি হয়েছে। আগের মত মনে হচ্ছে না ওকে। আগের মত যোগাযোগটাও ঠিক মত হচ্ছে না।যেখানে সারাদিন কথা বলে পার করে দিতাম। দিনে ত্রিশ মিনিটই যেন খুব বেশি এখন। আর দেখা করার কথা নাই’বা বললাম। এরকম হবার কারণ জিজ্ঞাসা করলে নানা ব্যস্ততা আর ফ্যামিলির সমস্যার কথা বলে এড়িয়ে যায়।সম্পর্কটা দিন দিন তেতোঁ হচ্ছে। আমি ঠিক বুঝতে পারতেছিনা কি করব। কি’ই বা করা উচিত আমার। এভাবে প্রায় মাস খানেক কেটে গেল।
নাহ! আমি আর সহ্য করতে পারতেছিনা। আবার কিছু বলতেও পারতেছিনা আমি। অনেক ভালোবাসিযে তিনাকে তাই হয়ত। কিন্তু এবার ওর সাথে দেখা করে বিষয়টা পরিষ্কার করতেই হবে। আজই করব। ফোন করে তিনা কে বললাম দেখা করার জন্য। সেই আগের জায়গায়। তিনা এক নিশ্বাসেই বলে দিল ও পারবে না। ওর নাকি কি কাজ আছে। অনেক কষ্টেও রাজি করাতে পারলাম না তিনাকে।
ফেইসবুকে চ্যাট করতেছিলাম, কিছুক্ষন পরেই রাশেদ একটা ছবি আমাকে ইনবক্স করলো। সে ছবিটিতে তিনার সাথে অনেকটা আলিঙ্গন করা ভাবে একটা ছেলে কে দেখতে পেলাম। খুব রাগ হল তিনার উপর। কিন্তু পড়ে ভাবলাম ওর পরিবারেরও কেউ হতে পারে। তাই রাশেদ’কে জিজ্ঞাসা করলাম সে ছবিটি কোথায় পেয়েছে। বলল যে তিনার এক বান্ধবির কাছ থেকে।
তিনাকে জিজ্ঞাসা করলাম পরের দিন ছবিটার ব্যাপারে। তিনা বলল যে ওর নাকি খালাত ভাই হয়। বয়সে নাকি ছোট। আমিও আর পাত্তা দিলাম না ছবিটাকে…… কিন্তু সন্দেহ একটু থেকেই গেল। কিছুদিন পড়েই তিনা আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। প্রায় তের দিন কথায় হয়নি। একদিন বারান্দায় বসে সিগারেট ধরানোর জন্য বের করেছি। তখনি একটা ফোন আসল-
-হ্যালো ! - হুম!! আ আ আমি তিনা!! - তুমি!! এতো দিন পরে? কথায় ছিলা? যোগাযোগ কর নাই কেন? তোমার ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলেও তোমার কোণ খবর পাই নাই। কি হয়েছে? বলবা তো! - আসলে, আমি আর তোমার সাথে রিলেশন রাখতে পারবোনা। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। টুট ! টুট! টুট?
ফোন কেটে দিল তিনা। এর পরে সারা দিনে কম করে হলেও শ’দুয়েক ফোন দিয়েছি; প্রতিবারই একই উত্তর, আপনার কাঙ্খিত নাম্বারটিরে আর সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। কি করব আমি এখন? কোন কারণই জানালো না কেন সে এরকম করলো। আমি পাগল প্রায়। দু’চোখ দিয়ে পানি পড়ছে…
পরের দিন থেকে অনেক চেষ্টা করেও তিনার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি আমি। কিছুদিন পরে বিষয়টা আমার কাছে সম্পুর্ণ পরিষ্কার হয় উঠল। তিনার বাসার কাছা কাছি আমার এক বন্ধু থাকত। ওর সাথে দেখা হবার পর কথায় কথায় শুনতে পারলাম তিনা ওর গার্লফ্রেন্ড ছিলো। ইজ্জত নেয়া বাদে প্রায় সব রকম সম্পর্কই তাদের মাঝে ছিলো।
আমি নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মাথাটা ঘুরে উঠল আমার। সেদিন বাসায় চলে আসলাম। কিন্তু তিনার ভূত মাথায় রয়েই গেলো। নাহ সব কিছু আমাকে জান্তেই হবে। পরের দিন আবার চলে গেলাম তিনাদের বাসার ঐ দিকে খোজঁ নেবার জন্য- আরে!! হ্যা সবাই একই কথা বলছে। কিন্তু সঠিকটাই একটু ঘুরিয়ে বলছে। যেমন কেমন মেয়ে জিজ্ঞেস করলে বলে ভালোই তবে একটু সমস্যা আছে, আরেক জন- ফাকাঁ বাসায় একলা মেয়ে থকে, মেহমান বেশি আসে আর কি। এবার সত্যিই আমার মনে হলো আমি ভুল মানুষের পাল্লায় পড়েছিলাম। ঘেন্যায় দু’দিন অন্ন মুখে দিতে পারিনি। যে দিকে তাকাই শুধু তিনার স্মৃতি ভেসে উঠে।
লেখা গুলো আগোছাল ভাবে এ পর্যন্তই। শেষের পৃষ্ঠা গুলো খালি….
হুম! প্রীতি এখন মূল কারণতা বুঝতে পারলো। অপুর এ ধরনের মানসিক সমস্যার কারণ কি।তিনার কারণেই অপুর আজ এ অবস্থা। মেয়েটা যে এতো খারাপ তা জানা ছিলো না প্রীতির। মনে মনে ভাবতে লাগলো প্রীতির। আস্তে আস্তে অপুকে সুস্থ করে তোলা হল।সব রকম পুরোনো স্মৃতি ভোলার জন্য যা যা করার প্রয়োজন ছিলো সবাই মিলে তার সবই করেছে। বিন্দু মাত্র চেষ্টা বাদ রাখেনি
প্রীতির এখন বেশ ভালো লাগছে। কারন অপু সম্পুর্ণ সুস্থ। উচ্চতর শিক্ষার জন্য পরের সপ্তাহে অপু আমেরিকায় যাবে। জীবনকে নতুন করে শুরু করবে।
দ্বিতীয় অংশঃ
অপুর বিদেশ চলে যাবার পর প্রীতির আর তেমন কোন ব্যস্ততা নাই। ছোট ভাইয়ের মত দেখত অপুকে। একটু একটু মিস করা শুরু করল প্রীতি। হঠাৎ করে কয়েকদিন আগের পত্রিকার একটা পাতায় চোখ আটকে গেলো প্রীতির। যেন নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছে না।ছবিটাত তিনা’র । তাও নিশ্চিত হতে স্মৃতিকে ডেকে পাঠালো প্রীতি,
-এই দেখ তো, এটা তিনার ছবি ? তাই না?
- হ্যা! রে আপু, কত দিন খোজ খবর নেই তিনার! কি হইছে একটু পড় তো?
- এখানে তো লিখা ‘’নিজ বাসায় আততায়ীর হাতে নৃশংস ভাবে তরুনী খুন’’
- বলিস কি? তাড়াতাড়ি পর…
প্রীতি পড়তে থাকলো এভাবে, গত কাল রাজধানীর বাসাবো’তে ***/** নিজের বাসায় খুন হয়েছেন এক তরুনী। ধারনা করা হয়, খুনের সময়কাল প্রায় রাত তিনটা নাগাদ। এ ব্যাপারে তরুনীর বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
তরুনীর নাম তিনা( ২০)। নিজের বাসায় নিজের শোবার ঘরেই রক্তাক্ত মৃত দেহ পাওয়া যায়। তার মা সকালে মেয়ে কে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে এসে এ দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
তিনার মৃতুর সু-নির্দিষ্ট কারন এখনো জানা যায়নি। কিভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে, তবে হত্যার সময় শ্বাস রোধ করা হয়েছে বলে ফরেন্সিক বিভাগ আমাদের জানান। তরুনীকে হত্যার পর তার চোখ উপড়ে ফেলা হয়। নাক, কান কেটে ফেলা হয়। বুক এবং পশ্বাৎ দেশের মাংস ধারালো অস্ত্র দ্বারা কেটে ফেলা হয়। হাত পায়ের রগ কেটে তাতে লবন ও মরিচ দিতে নৃশংস ভাবে হত্যার আলামত পাওয়া যায়। ।
ঘটনার পর ওই এলাকার পরিবেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
অপুর বিদেশে যাবার কিছুদিন আগের ঘটনা। স্মৃতি হাউ মাউ করে কেদে ফেলে। এতো ভালো বান্ধবি ছিলো তার। এ কি হলো? কেই বা এতো খারাপ ভাবে খুন করলো তিনাকে। প্রীতির মনে শুধু একটা বিষয়ই ডালা পালা বিস্তার করছে, তা হলো হয়ত অপুর মত অন্য কাউকে প্রেমের ফাদে ফেলে বোকা বানিয়ে ছিলো, তাই হয়ত প্রতিশোধ নিতে এ কাজ করেছে কেউ।
স্মৃতি অপুর অসুথ হবার খবর জানলেও জানত না তার কারন। তাই স্মৃতি সেই পত্রিকার রিপোর্টারের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে তিনার বাসায় গেলো। স্বভাবতই প্রীতি সাথে গেলো, কারণ ছোট বোন কখন কি হয়ে যায়।
কিন্তু ঘটনাটা এরকম অয়ে যাবে প্রীতি বুঝতেও পারেনি। তিনার মা’র সাথে কথা বলার স্ময় জানতে পারে তিনার সাথে অপুর রিলেশন ছিলো ঠিকই কিন্তু তার কিছু দিন যেতে না যেতেই ওদের মাঝে প্রায়ই ঝগড়া হত। তিনা যদিও ওর মার সাথে বেশি ফ্রি ছিলো না কিন্তু তাও একটু আকটু বলত মা’র কাছে। অপু নাকি তিনাকে অহেতুক সন্দেহ করত। এ নিয়ে প্রায় দিনই লেগে থাকত দুজনের মাঝে। স্মৃতি তিনার রুমে ঢুকে ওদের স্কুল লাইফে তোলা পুরোনো ছবি দেখতে পায়। হাউ মাউ করে কেদে ওঠে । কান্না শুনে তিনার মা আর প্রীতি দু’জনেই ছুটে যায়। স্মৃতিকে শান্ত করে। প্রীতির মাথায় তখন অন্য কিছুর একটা সন্দেহ উকি দিচ্ছে।
কিছুক্ষন পরে বাড়ি ফেরার সময় যখন তিনার মা’র কাছ থেকে বিদায় নিতে যাবে তার কিছুক্ষনা আগেই প্রীতি কি মনে করে তিনার ঘরে প্রবেশ করে। অজানা কারণে তিনার পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে হাত চলে যাত প্রীতির। ওমা! একি!! অপুর বাসায় যে রকম একটা ডায়েরী পেয়েছিলো ঠিক সে রকমই একই রঙের একটা ডায়েরী পেল প্রীতি। কাউকে কিছু না বলে এক প্রকার চুরি করেই ডায়েরীটা সাথে নিয়ে আসল। অজানা রহস্যের সন্ধানে। স্মৃতিকেও বলল না কিছু।
বাসায় আসতে আস্তে প্রায় বিকাল হয়ে গেছে। সন্ধার দিকে সবাই একটু ব্যাস্ত হবার সাথে সাথেই, রুমের দরজা বন্ধ করে ডায়েরী বের করে পড়া শুরু করলো প্রীতি।
হাতের লিখা গুলো খুব সুন্দর। গোটা গোটা অক্ষরে লিখা।সাধারন প্রতিদিনকার ডায়েরীর মত নয়। খন্ড খন্ড আকারে ছোট ছোট আকারে লিখা। পাতা দু’ইয়েক বাদ দিয়ে মাঝে মাঝে কিছু কবিতার লাইনও লিখা। বেশ ভারিক্কি ধরন আছে বলতে হয়।
প্রথম পাতাটা এভাবেই একটি কবিতা দিয়ে সাজানো-
>রাত্রি যখন নিঝুম হয় নিস্তব্ধ হয় পৃথিবী, ঘুমিয়ে পড়েছে সকল কিছু নিশ্চুপ রয়েছে সবই। মাঝে মাঝে নিস্তব্ধতা ভাঙ্গে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকে, বাঁকা চাঁক উঁকি মারে মেঘের ভেলার ফাঁকে। বনের মধ্যে চলছে যখন আলো আঁধারির খেলা, আকাশজুড়ে বসেছে তখন সহস্র তারার মেলা। রূপালী জোছনা প্লাবিত করেছে সুপ্ত এই প্রকৃতিকে, তারার আলো সাজিয়ে দিয়েছে রাতের নিস্তব্ধতাকে। এরই সাথে যুক্ত হয়েছে ক্ষুদ্র জোনাকীর আলো, কে বলবে আঁধারের রূপ লাগে বড় কালো? নিশাচর পশুরা বেরিয়ে পড়েছে খাবারের সন্ধানে, নদীর পানি ফুলে উঠেছে জোয়ারের প্লাবনে। বাতাস যখন বয়ে চলে বনের ভিতর দিয়ে, বনের বৃক্ষ শামিল হয় মর্মর ধ্বনি দিয়ে। এরই মাঝে একাকী আমি উদ্দেশ্যহীন হেঁটে যাই, নির্জনতার মাঝেই আমি নিজেকেই খুঁজে পাই।
দ্বিতীয় পাতায় লিখাঃ
>আজ অপুর সাথে অফিসিয়াল রিলেশনের পর প্রথম বেড়াতে যাওয়া,
ছেলেটা এতো দিন হয়ে গেল ছেলেটার মাঝে কোন পরিবর্তনই এলো না, পাগল একটা।
আজ লাল গোলাপ না নিয়ে এসে হলুদ গোলাপ নিয়ে এসেছিলো, ইচ্ছে মত বকে দিয়েছি,বেশ করেছি…
এ পাতার নিচে ছোট করে দু’লাইনে বাকা করে লিখা,
>এই পাগলটাকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারি না|অনেক ভালোবাসি এই পাগলটাকে’
পরের পাতায় লিখা অপু কেমন যেন শুধু শুধুই সন্দেহ করে, আমার ভাইয়ার সাথে থাকলেও মনে হয় ওর মনে সন্দেহ জেগে ওঠে, ধুর, আজ কিচ্ছু ভালো লাগতেছে না।
প্রতিটি পাতায় এভাবে একটু একটু করে লিখা……
>আজ আমার সাথে কথা বলে নাই অপু, এই প্রথমবারের মত, আমি নাকি বেস্যাদের মত হয়ে গেসি। ছিঃ কিভাবে বলতে পারলো এটা ও।
>আজ আমার জন্মদিন অপুকে খুব মিস করতেছিলাম , কিন্তু আমার বাবুট আজকে আমাকে এত্থুলা হ্যাপি করে দিছে, নিজেই স্যরি বলেছে, ইয়া বড় একটা টেডি দিয়েছে আমাকে, মুওয়াহ!! আমার বাবুটা সত্যিই লক্ষী, অনেক ভালো বাসে আমাকে
>আজ অপুর সাথে ব্রেকআপ করেছি, প্রায় সময়ই আমরা দিনে তেরবার করে ব্রেকআপ করি কিন্তু আজকে কেন যেন ভয় ভয় লাগছে।
>আমার মন প্রায় সময়ই এখন খারাপ থাকে অপু আগের মত নাই, ও আমাকে এতটুকু বিশ্বাসও করে না। দিনকান পানশে হয়ে গেসে।
>আজ পাশের বাসায় একটা ছেলে এসেছে, বয়সে ছোট একটু কিন্তু অনেক মজা করে কথা বল, অন্যসময় বিকেলে অপু সবসময় আমাকে নিয়ে থাকতো, এখন নাকি সময় হয় না। তাই এই ছেলেটার সাথে বিকেলে ছাদে যেয়ে সময়টা পার করে আসি। সারাদিনে মনে হয় ঐটুকু সময়ই আমি একটু হাসতে পারি।
>আজ অপু আমাকে অনেক জোড়ে চড় মেরেছে, আমি নাকি অনেক গুলা প্রেম একসাথে করি, পাশের বাসার ছেলেটা যাকে ছোট ভাই এর মত দেখি তার সাথে নাকি আজে বাজে কিসব করছি আমি। ছিঃ কিভাবে বলল অপু এগুলো
>অনেক দিন কথা হয়না অপুর সাথে, কিন্তু আমার বান্ধবীদের কাছ থেকে ঠিকই খোজ খবর নেয় আমার। এখনো অনেকটুকুই ভাল বাসে আমাকে।
>আজ ফোনে অপুর সাথে অনেক কথা কাটা কাটি হয়েছে্ আর কখনো ফোন দিব না অপুকে ! আজই এর শেষ, এভাবে সন্দেহ নিয়ে সম্পর্কেটিকে থাকা যায় না।
>বড় ভাইয়ার কারণে বাসাটা কাউকে না বলেই বাসাবোতে চলে এসেছি, যোগাযোগের সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছি। অপুর ছায়া যেন আমাকে মারাতে না হয়। ওর প্রতি আমি যতটা দুর্বল সেটা অপু সামনে থাকলে আমি নিয়ন্ত্রন করতে পারব না। ।
>যদি কখনও কাউকে হারিয়ে ফেল এবং তার জন্য কষ্ট পাও তখন মনে করবে তুমি পৃথিবীতে একাই এসেছিলে। তাই তোমাকে একাই পথ চলতে হবে। আর যদি অনেক কষ্ট পাও তখন কষ্টটাকে সুখ ভেবে মেনে নাও এবং সেখান থেকে শিখ। তারপর আবার পথ চলতে শুরু কর। কারন স্বার্থপর এই পৃথিবীতে কেউ কারো নয়। .........
>বাসাটা পরিবর্তন করেছি ঠিকই কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে অপু কোন একভাএ আমার বাসার ঠিকানা পেয়েছে, প্রায়ই আসে পাশে অপুর মত একজন কে দেখতে পাই।
>আজ হঠাৎ জানালা পাশে তাকিয়ে আঁতকে উঠেছি, ঠিক অপুর মত কেউ যেন ফেল ফেল করে তাকিয়ে আছে, নিচ তলায় বাসা তাই সন্দেহটা একটু নাড়াচাড়া দিয়ে উঠল। মুখ ফুটে নাম ধরে ডাক্তে যেতেই দেখি জানার পাশে কেউ নেই।
>অদ্ভুত এক যন্ত্রনার মাঝে পড়েছি, কলিং বেল প্রায় সময় বাজিয়ে কেউ চলে যায়, কোন দিনই কে কাজ টা করে ধরতে পারিনা,
>আজ পরিচিত এক বড় আপুর কাছে শুনলাম অপু নাকি অসুস্থ, পাগলামো করছে, কিন্তু আমার তা মনে হলো না কেন যেন, অপু যে শক্ত মনের মানুষ তাতে ওর এধরনের মান্সিক সমস্যা হতেই পারেনা। তার উপর এ ধরনের পাগলামির অভিনয় করতে ওস্তাদ ছিলো অপু। কেউ কোন দিন বুঝতেই পারত না এ ও ভালো মানুষ
>আজ আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ফোন দেয় কেউ একজন, কন্ঠস্বরটা চেনা চেনা লাগলেও তবুও অচেনা…….
>হুমকির পরিমানটা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে ,কখনো ফোনে কখনো চিঠিতে বা রাস্তায় বখাটে ছেলেদের দ্বারা, কে করাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারতেছিনা
>আজ বাসায় আসার সময় প্রায় রাত হয়ে গেছিলো, সন্ধ্যার পরই আমাদের বাসার গলিটা অন্ধকার হয়ে যায়, কোন লাইটও নাই,হঠৎ করে আমাকে কেউ এজন গলায় ছুড়ি ধরে মুখ চেপে ধর, ভয়ে আমি চিৎকারও করতে পারতেছিলাম। কোন গাড়ি আসার শব্দ শুনে আমাকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে গেলো। মৃদু একটা আলো ছেলাটার মুখের এক পাশে পড়লো। চিনতে একটুও ভুল হলো না আমার, এ যে আমারি অপু, নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, কিছুক্ষন পর পর আবার ভাবছি ভুল দেখেছি, অপু এখানে আসবে কোথা থেকে,
>বেশ কয়েক দিন ধরে রাতের ঘুম হচ্ছে না… দরজার সামনে একটা চিরকুটের মত কেউ রেখে গেছে- তাতে লিখা-
ছাগল যেদিন ডিম পারবে, মুরগী যেদিন ঘাস খাবে, ইঁদুর যেদিন বিড়ালের সাথে প্রেম করবে, কুকুরের লেজ যেদিন সোজা হবে, সেদিন মেয়েরা ভাল হয়ে যাবে
কিন্তু এ লাইনগুলোতো অপু আমাকে ক্ষেপানোর জন্য বলত এগুলো এখানে কি করে?
>আজ আমার জন্মদিন , অপুকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে, আমার জন্মদিন গুলোয় ও ওনেক গুলো করে উপহার দিত আমাকে সাথে আমার লিপ্সটিকের দাগ গায়ে লাগিয়ে নিয়ে যেত, না! আজ একটা ফোন দিতে খুব ইচ্ছে করছে, কিন্তু দিবো না। যদি ও আমাকে সারপ্রাইজ দেবার জন্য চলে আসে………
>আজ মনটা ভীষন খারাপ, কেন খারাপ জানিনা। আপুর কথা খুব মনে পড়ছে, কেমন আছে ও- ধুর, এতোটা ভালো কেন বাস্লাম ওকে……
>সকালে থেকেই মনে হচ্ছে বেশ কয়েকদিন ধরে আমার বাসায় চারপাশে কিছু নতুন মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেছে, শহুরে মানুষ আনাগোনা বাড়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। পাত্তা দিতেও ইচ্ছা করছে ,আবার করছেও না… মনের ভেতর একটা সন্দেহ হচ্ছে কিন্তু কোন ভিত্তি নাই এ সন্দেহের…
>নাহ, প্রতিদিনই মনে হচ্ছে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন সময়ে আমার দিকে লক্ষ্য রাখছে, জিনিসটা ভীতিকর। অস্বস্তি হচ্ছে খুব…
>বাসায় নতুন কাজের বুয়া রেখেছে ভাইয়া, বুয়া খালাটা যেন কেমন কেমন, কেমন করে তাকায়, যেন মনে হচ্ছে উনি গোয়েন্দা সংস্থার কেউ। সব খুটি নাটি বিষয় খেয়াল করে রাখছে।
>আজ বিকেলে উপড়ের তালায় থাকে যে মেয়েটা, ও এসে বলল যে আমাদের বাসার সামনে বেশ কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন লোক ঘোরা ফেরা করে, সামনে দাড়িয়েঁ থাকে ওর নাকি খুব ভয় লাগতেছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করতে এসেছিলো আমি কিছু খেয়াল করেছি কিনা। ওর ভয় দূর করার জন্য আমি তেমন পাত্তা দিই নাই ওর কথা উপরে।
>আজ অপুর সাথে রিলেশনের দিন, ওর সাথে রিলেশন থাকলে আজ আমাকে সবার আগে উইশ করে চমকে দিত। আজকে দিনটা আমি কোন দিনই ভুলতে পারবনা-
>অপুটা নেই আজ, থাকলে কত মজাই না হত, ওর সন্দেহ বাতিকটা খুব বেড়ে গেছিলো , নেশার করলে মানুষ যেমন ব্যবহার করে –সন্দেহ করাটাও ওর তেমন নেশা হয়ে গেছিলো।।ভুলটা বোধহয় আমারই, ওকে একটু নিজে থেকে কাউন্সেলিং করতে পারলেই মনে হয় সব ঠিক থাকত। ভাবছি কাল অপুর ফোন নাম্বার যোগাড় করে ওকে ফোন দিয়ে সব কিছু ঠিক করে নিব। ওকে ছাড়া আমার হবে না। আমি বুঝে গেছি।
ডায়েরির মাঝামাঝি একটি পাতা এবং শেষ লাইন। প্রীতি ঠিক বুঝতে পারছে না যে আসল ঘটনা টা কি। একবার মনে হচ্ছে অপুকে জিজ্ঞাসা করবে আবার মনে হচ্ছে বলবে না। অপু আবার কি মনে করে বসে।
প্রীতির অনেক ঘুম পাচ্ছে, কিন্তু এই চিন্তায় ঘুমুতে পারছে না। প্রায় ঘন্টাখানেক ভাবার পর নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে যায় প্রীতি।
রহস্যে আবৃত দু’টি ঘটনা, প্রীতি কিছুই বুঝতে পারতেছেনা। একবার ভাবলো যে পুলিশের কাছে তিনটা ডায়েরি যেয়ে দিয়ে আসবে যদি তারা কিছু বের করতে পারে। আরেকবার মনে হচ্ছে পড়ে নিজে না অন্য কোন ঝামেলায় ফেসে যায়।
অপু এবং তিনা দু জন দু ধরনের কথা বলছে। নাহ কিচ্ছু বুঝতে পারছে না প্রীতি।কেমন যেন একটা ঘোরের মত লাগছে তার কাছে।
আজ প্রায় ছ’মাস হতে চলল, তিনার খুনের কোন মোটিভ বের করতে পারেনি পুলিশ। প্রীতিও প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো ব্যাপারটা। ওদিকে অপুও ছুটিতে দেশে এসেছিলো একবার। কিন্তু তিনার কোন খোজ়ঁ বা কোন প্রকার কিছু জিজ্ঞাসাও কাউকে করেনি ছেলেটা। বিষয়টা অদ্ভুত হলেও ঠিক এরকমটাই হয়েছে। এতো দিনের প্রেমিকার খবর নেবেনা সে আবার কেমন প্রেমিক।
ভাবতে ভাবতেই একটা ফোন এল প্রীতির কাছে, স্মৃতি ফোন করেছে আজ আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় ফেরার সময় অপু মারাত্মকভাবে আক্সিডেন্ড করেছে।মাথার খুলি’র একটা অংশ খারাপ ভাবে আহত হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে। আই সি ইউ তে নিথর দেহ পড়ে আছে অপুর। ডাক্তার বলেছে বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরে আসলে অপুকে বাচাঁনো সম্ভব নয়।
অপুর পরিবারের সবাই এসেছে অপুকে দেখতে। বন্ধু বান্ধব থেকে নিয়ে শুরু করে পরিচিত সবাই।
প্রীতি রাতের দিকে তার বাসায় ফিরে আসল, কি যেন ভাবতে ভাবতে অপুর চিকিৎসা করার সময়কার একটা ফাইল চোখে পড়ল প্রীতির- আরে হ্যা! এটা তো অপুর সমস্ত কেইস হিস্ট্রি অসুস্থ হবার সময় থেকে শেষ অব্দি। প্রীতি কিছু একটা মনে করে পুরো ফাইলটার প্রতিটি পাতা খুব ভালো করে পড়ল।
প্রীতি মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়লো।
তিনার মৃত্যুর এক মাত্র কারণ অপু ।
অপুই তিনাকে খুন করছে।
অপুকে সবাই অসুস্থ হবার আগে সুস্থ মনে করলেও সে অনেক আগে থেকেই অসুস্থ ছিলো। রোগটির নাম ডিলিউশন অফ ইনফিডেলিটিঃ এটি মূলত ভ্রান্ত ধারনা ভিত্তিক দৃঢ় সন্দেহ প্রবনতা। স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক – প্রেমিকাদের মধ্যে দেখা যায়। এখানে বিশেষ করে তার সঙ্গী বা সংগীনী পরকীয়ায় বা পরপুরুষ বা মহিলার দিকে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছে এরুপ দৃঢ় ভ্রান্ত বিশ্বাস আক্রান্ত পুরুষ/মহিলার মাঝে গড়ে ওঠে। আর এটা প্রমান করার জন্য সে বিরামহীনভাবে চেষ্টা চালিয়ে যায়। কিন্তু বাস্তব ভিত্তি না থাকায় সে সর্বদাই প্রমানে ব্যার্থ হয়। এ রোগের কারনে অনেক সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়, এমনকি দু’জন দু’জনার মারাত্মক শত্রুতে পরিনত হন।
এধনের রোগীরা প্যারানয়েড অবসেশনেও ভোগেন;এক্ষেত্রে রোগী অবশ্য বুঝতে পারে তার সন্দেহ করাটা অমূলক কিন্তু তারপরেও সে বার বার সন্দেহ করতে থাকে এবং অস্থিরতায় ভূগতে থাকে।এ ধাঁচের সন্দেহপ্রবণতা আমাদের সমাজে তুলনামূলক বেশী দেখা যায়।দাম্পত্য কলহ ও প্রেমের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্যারানয়েড অবসেশন একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
অপুর প্রথম থেকেই ডিলিউশন অফ ইনফিডেলিটি ছিলো।যার কারনে তিনার সাথে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়।কিন্তু এতে হিতে আরো বিপরীত হয়। ডিপ্রেশনে ভুগতে ভুগতে অপুর মান্সিস ভারসাম্য হারিয়ে যায়।অপুর দায়েরির কথা গুলো ওর কল্পনার মনে লিখা কথা, কিছুটার বাস্তবতা থাকলেও বেশিরভাগ অংশই ভিত্তিহীন।মন গড়া কথা দিয়ে সাজানো। কিন্তু যখন অপুকে সবাই সুস্থ মনে করেছিলো অপু তখনো সুস্থ ছিলো না। অভিমান, রাগ, সন্দেহ,কেউ ধোকা দিয়েছে ভেবে ভেবে মনের মাঝে ক্ষোভ পুষতে থাকে। এ ধরনের রোগীরা সাধারন মানুষের মতই ব্যাবহার করে। শুধু ওই সন্দেহের মানুষটি বাদে। এই সুযোগটিই অপু ব্যবহার করে। সু-পরিকল্পিত ভাবে মান্সিক ভারসাম্যহীনতার সুষ্ঠ ব্যবহার করে তিনাকে খুন করে সে।
নাহ। আর দেরি করা যাবে না। কিছু একটা করতেই হবে, পরের দিনই প্রীতি পুলিশের কাছে যায়। সব কিছু খুলে বলে। কিন্তু এ খুনটি খুনি সুস্থ মানসিকতায় করে নি তাই তার শাস্তি নাও হতে পারে।
প্রীতি এখন অপুর বেডের কাছে, কেউ নেই আশে পাশে ভাবছে এ অবস্থায় কিছু জিজ্ঞাসা করবে কিনা।অপু হঠাৎ প্রীতি’র হাত ধরে এক টুকরা কাগজ গুজে দেয়। খুব ক্ষীন কন্ঠে প্রীতি কে কাছে ডেকে বলে-‘’ আপু আমাকে ক্ষমা করে দিও’’ ।
এর পরথেকেই অপুর পালস কমতে থাকে প্রীতি ডাক্তার নার্স সবাইকে ডেকে নিয়ে আসে। শেষ রক্ষা আর হলো না অপু’র সবাইকে ফাকিঁ দিয়ে না ফেরার দেশে চলে যায় অপু। কান্নার রোল পড়ে যায় অপু’র বেডের পাশে। প্রীতি’র অপুর উপর অনেক ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও চোখের কোন থেকে জল গড়িয়ে পড়ে তার। ছেলেটা খুব একটা খারাপ ছিলো না বেশ মেধাবী হাস্যোজ্জল ছিলো। কিন্তু আজ তার এই পরিনতি…………
প্রীতি’র দেয়া তথ্যমত পুলিশও হাজির ঘটনা স্থলে। এসে আর কি হবে, যার বিচার সেই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে।
তৃতীয় অংশঃ
রাতে বেলা অপুর দেয়া চিরকুটটির কথা মনে পড়ে প্রীতির। পার্স থেকে বের করে চিরকুটটি। একটি ইমেল এড্রেস আর তার পাসওয়ার্ড দেয়া।হয়ত প্রীতিকে শেষ কোন কথা জানাবার জন্য দিয়েছে।
ইমেলটিতে প্রীতি প্রবেশ করলো।পুরোটাই ফাকাঁ শুধু একটি ইমেইল ড্রাফট করে রাখা-প্রীতি ইমেলটি খুলে পড়া শুরু করলো
আমার এক মাত্র ভালবাসা হচ্ছে তিনা। ওকে নিজের জীবন দিয়ে ভালবাসতাম আমি। কিন্তু ও আমাকে ধোকা দেয়। আমি মানতে পারিনি। পরে শুনি ও আমার মত আরো অনেক ছেলের জীবন নিয়ে এভাবে ছেলে খেলা করেছে। ও নিজের দুঃখে ভরা জীবনের কাহিনী শুনিয়ে সবার কাছ থেকে সিম্প্যাথি নিয়ে তাদেরকে ভালবাসায় মায়া জালে ফাসিয়ে দেয় ।
এলাকার টিন এজ ছেলেদের কাছে থেকে এলাকার সব কিছুরই খবর পাওয়া যায়। বিশেষ করে কোন এলাকায় কয়টা মেয়ে, কোন মেয়ে কি করে প্রায় সবই থাকে তাদের নখ দর্পনে। তিনার সম্পর্কে সব খবর আমি ওর এলাকার ছেলে মেয়ে সবার কাছ থেকে নিয়েছি। ওর ভাই এবং মা দু’জনেই চাকরি করেন। সেই সুবাদে বাসা প্রায় সময়ই ফাকাঁ থাকে।এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনা বিভিন্ন ছেলেকে তার বাসাত নিয়ে এসে লীলাখেলায় মেতে ওঠে। তার অনেক প্রমানও হাতে পেয়েছি।অনেকবার ওকে জিজ্ঞাসা করেছি যে এগুলো কি শুনি। কিন্তু ও বার বারই একতি কথা বলে। একা মেয়ে বাসায় থাকি কত জনে কত কিই তো বলতে পারে। আমি কথাটা শুনে তখন পাত্তা দি নাই। ঘটনা তা বাস্তবিক অর্থে এক প্রকার ঠিক। একা মেয়ে থাকলে এরকম অনেক কিছুই হয়।
তিনা আমাকে এক ঈদেরদিন বলেছিলো আমাকে ওর বাসায় যেতে। যদিন ফাকাঁ থাকবে সে দিন নাকি আমাকে ফোন করে বলবে। আমি যেন ঐ দিন ওর বাসায় যাই।উদ্দেশ্যটা বুঝতে পেরেছিলাম সেদিন। কিন্তু নানা অজুহাত দেখিয়ে ওর বাসায় কোন দিনই যাওয়া হয়নি আমার। সেদিনই প্রথম সন্দেহ হয়েছিলো আমার। যে এক টা মেয়ে কিভাবে এধরনের প্রস্তাব দেয়, যদি সে গতর দেয়া মেয়ে মানুষ না হয়? কিন্তু পড়ে ভেবেছিলাম ও মনে হয় ফাজলামো করেছে। এ নিয়ে কোন কথাও বলি নাই ওর কাছে। সাধারণত ছেলেরাই শারীরিক প্রেম নিবেদনটা প্রথমে শুরু করে কিন্তু তিনা ছিলো তা সম্পুর্ন উলটো। নাচুনি বুড়িকে ঢোলের বাড়ি দেবার মত।
কিন্তু আমার সব ধারনা ভুল। ওর সমস্ত বানানো মন গড়া কষ্টের কাহিনী আমাকে ওর দিকে এতটাই দুর্বল করে দিয়েছিলো যে ওর সব কথাই আমি বিশ্বাস করতাম। কোন প্রকার সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতামই না।না দেখার আরো অনেক কারন আছে। ওর বানানো কথা গুলোর সাথে ওর পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড মিলে যায়। তাই আর সন্দেহ না করাটাই হয়ত স্বাভাবিক।
তিনা হঠাৎ করেই সব কিছু থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। ওর অনেক গুলো বিষয় আমি জেনে ফেলেছিলাম তাই। একডদিন প্রায় হাতেনাতে ওর অপকর্ম সহ ধরে ফেলি আমি। কিন্তু কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয় না তেমনি বেশ্যার পেটে টান পড়লেই বেশ্যাবৃত্তি করা শুরু করে। তিনার কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ নাই। ও ওর মত স্যরি বলে যাচ্ছে। অনেক ভাবে কনভেন্স করার চেষ্টা করছে।কিন্তু আমার সিধান্ত চূড়ান্ত কোন প্রকার সম্পর্ক আর রাখবনা তার সাথে। এবং করলামও তাই।
তিনা আমাকে ধোকা দিয়েছে, প্রতিটি রাত যেন আমার কাছে একটি নরকের অগ্নি কুন্ড।আস্তে আস্তে তিনার সব কিছুই জানতে পারি। ওর দেয়া ওর জীবন সম্পর্কে সব তথ্য ভুল। ছেলে নিয়ে মেতে থাকা ওর একটা স্বভাব বলা যেতে পারে। রাগে ক্ষোভে আমার পায়ে’র রক্ত মাথায় এসে ঠেকেছে। সেদিনই ঠিক করে ফেলি তিনা’র এ পৃথিবীতে বেচে থাকার কোন অধিকার নেই। আমি ওকে থাকতে দিব না। আর কোন ছেলের জীবন নিয়ে এভাবে খেলতে দিবনা।
আমার মান্সিকভাবে অসুস্থতা সম্পুর্নই অভিনয়। কারন আমি এবার সবার কাছ থেকে একটু সিম্প্যাথি পেতে চেয়েছিলাম। যেন আমার কাজটা আরো সহজ হয়ে যায়। প্রীতি আপু আমার চিকিৎসা করছেন, ভালই হল। ঘটনার তালগোল আরো বেশি করে পাকানো যাবে। বাসায় ইচ্ছা করেই প্রায় সব কিচ্ছুই ঠিক রেখে দু’টো ডায়েরি ফেলে আসলাম।কারন জানি তার কৌতুহলী মন আমার ঐ ডায়েরি খুজে পাবেই। ঘটনার মোড় ঘুরানোর জন্য ওদুটোই যথেস্ট। এর মধ্যেই প্রীতি আপু আমাকে নিজ দায়িত্ব্বে বাসায় নিয়ে আসে। আমাকে কাজ আরো সহজ হয়ে যায়। ডাক্তারী ভাষ্য মতে আমি এখন অসুস্থ। সে সুযোগটাই কাজে লাগালাম আমি। তিনার চরিত্র হয়ে নিজেই একটি ডায়েরি লিখা শুরু করলাম। তিনার বাসায় তাদের কাজের লোককে দিয়ে রেখে আসলাম সে ডায়েরী। যেন ওকে খুন করবার পড় খুনে মটিভ আমার দিকে না আসে, আর আসলেও তা ভুল প্রমান করার জন্য আমার ঐ ডায়েরী আর মেডিকেল সার্টিফিকেটই যথেষ্ট।
আমি তিনাকে খুন করেছি। ঠিক ওর মত করেই অন্য ছেলে সেজে ওর ফাদেঁ ওকেই কাবু করেছি আজ। ওড় বাসায় ঢুকে ওর জন্য কিনে নিয়ে যাওয়া খাবারের ভেতরেই লেডক্রোমেট দিয়ে খাইয়েদিয়েছি। ওর পায়ের রগ কেটে দিয়েছি। হাতের রগ কেটে দিয়েছি। ওর ভাইয়ের খেলার ব্যাট দিয়ে ওর মাথায় পিটিয়ে পিটিয়ে রক্ত বের করে দিয়েছি আজ। মনে হয় বাচঁবে না। সেটাই আমি চাই। ওর দেহের তাজা রক্ত আমার কাছে অমৃত’র মত লাগছিলো। যেন ক্যাডবেরি সিল্ক।তার পর ওর দেহটা নিস্তেজ হলে আস্তে করে বেরি পড়ি ওড় বাসা থেকে। লোকচক্ষুর আড়ালে।
বাসায় এসে মনে হচ্ছিল যেন তীর্থ স্থান থেকে এসেছি।কিন্তু পরক্ষনেই আমার দু’চোখে অঝোরে পানি পড়তে থাকে। আজ আমি আমার ভালবাসার মানুষটিকে খুন করেছি। না হয় ছিলো খারাপ। অনেক কষ্ট দিয়েছে আমাকে কিন্তু আমি ওকে মেরে ফেলেছি আজ। মেরে ফেলেছি।
আমেরিকায় আসার পর থেকে নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি। করবই বা কিভাবে এতো আদরের মানুষটিকে ক্ষত বিক্ষত করে নিজ হাতে মেরে ফেলেছি আমি। আবার পরক্ষনেই মনে তিনার তাজা রক্তের গন্ধ পাই আমি। সেই পিচাশীনির রক্ত। তখন মনে এক অপার্থিব সুখ অনুভুত হয়।
প্রতিটি রাত আমার কাছে অনুশোচনার। কষ্টের রাগের ক্ষোভের। কাউকে বলতেও পারতেছিনা সইতেও পারতেছিনা। ভালবাসার কষ্ট গুলো মনে হয় এরকমই।
প্রীতির চোখ দিয়ে অঝোরে জলের বন্যা বইছে। এরকম ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে জীনবনে ভাবেওনি প্রীতি। যা হবাব্র হয়ে গেছে । এই ঘটনা নিজের মাঝেই চেপে রাখা উত্তম মনে করে কাউকে বলল না প্রীতি। তিনটা ডায়েরি, ইমেইল অপুর সব ডাক্টারী কেইস হিস্ট্রি সব কিছু নষ্ট করে দিল প্রীতি।
ভালবাসা অমর থাকুক।
নারী তুমি একজন কে শোনাও ভালোবাসার কবিতা,
অন্যজন কে শুনাও প্রেমের গান।
কিভাবে পারও তুমি- একসাথে দুই দেবতার পূজা করতে, নারী তোমার কয়টা মন-??
নারী আমি তোমায় যতই দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি,যতই জানছি ততই;
বিস্মৃত ও আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি- কখনও তুমি দিনের আলোর মত পরিস্কার,
কখনও তুমি অম্যাবসার রাতের মত অন্ধকর।
নারী তুমি বন্ধুত্ব চাও কিন্তু ভালোবাসা চাও না- আবার ভালোবাসা চাও কিন্তু বন্ধুত্ব চাও না।
আমি যখন নতজানু হয়ে বসি,
নিজেকে উজারকরে দিবার জন্য,
নারী তুমি মুখ ঢেকে দাও ঘোমটা দিয়ে- যেন মনে হয়;
আমার বেহায়া নৌকা ডুবেছে, তোমার ঐ লাজ নদীতে।
বল তুমি; আমি নাকি অসভ্য পুরুষ।
আবার অসময়ে নিজেকে,
বিবস্ত্র করে দাও অবলীলায় যখন আমি ত্যাক্ত বিরক্ত ইচ্ছা থাকার পরও অনিচ্ছার ভারে ক্লান্ত দেহ,
বল তুমি; আমি নাকি পুরুষোত্তহীন।
নারী তুমি সুখ চাও কিন্তু কষ্ট্ পেতে চাও না- স্পর্শ চাও কিন্তু ভালোবাসা চাও না।
আবার বল তুমি; আমি নাকি তোমায় বুঝিনা-
প্রশ্ন আমার একটাই , নারী; তুমি কি তোমায় বোঝো-? তুমি কি চাও-???
[ ঘটনাটি সম্পুর্ণ কাল্পনিক; যদি কোন ব্যক্তির জীবনের সাথে মিলে যায়, তা সম্পুর্ণ কাকতালীয়। ইহার জন্য Shihab A. Mamun কোন ভাবেই দায়ী নয় ][ তথাপি এই ঘটনাটি'র ৬৪ ভাগ সত্য] :3
Shihab A. Mamun
fb: facebook.com/shihab.dipu
©somewhere in net ltd.