![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বছরের কিছুটা সময় আমি বিষণ্ণ থাকি, এই সময়টা শুধুই স্মৃতিচারণ করেই কাটাতে ভালো লাগে, একা থাকতে ভালো লাগে,
দাদীটা খুব ভালোবাসতো, কিন্তু কখনো বুঝতে দিতো না, তাতে কি, ভালোবাসার উষ্ণতা আমি টের পাই, ঠিকই বুঝতে পারি...
বাবা যখন জড়িয়ে ধরে আগলে রাখতো বুকে, আমি কান পেতে সেই ভালোবাসার ঝরনার ছল ছল করে গড়িয়ে চলার শব্দ শুনতে পেতাম,
নাহাদিটা, আমার লুকিয়ে লুকিয়ে ফেলা চোখের জলের একমাত্র সাক্ষী, না জানিয়ে দেখতে আসতো আমাকে, কখনো স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে, কখনো বন্ধুর বাড়ি থেকে ফেরার সময়, জন্মদিনে ও আমার সাথে দেখা করা চাই, মাঝে মাঝে এটা সেটা নিয়ে আসতো, এসেই বায়না, আজকে আমার সাথে বাসায় যেতেই হবে, ছোট মানুষ, তাই ভেবেছিল বাসায় নিয়ে গেলেই বোধহয় সব ঠিক হয়ে যাবে, জানিনা নিজের বোন হলেও এতটুকু ভালবাসত কিনা,
বন্ধু আঁখি, একসময় মাথার উপর ছাদ হয়ে ছিল এই মেয়েটা, ওর ঘরে কত দিনরাত কেটেছে হিসেব নেই, সব সময় বিভিন্ন ভাবে আমার সাহায্য করে গেলো, ওর জন্যে কিছু করা আর হলনা আমার...
সুমিও ঠিক তাই, প্রয়োজনে আমার ঢাল হয়ে রুখে দাঁড়াতো। অথচ, তার পৃথিবী ভেঙ্গে পড়ার সময় তার পাশে দাঁড়াতে পারিনি.!
আহমেদ পাগলা টা, জানিনা কত অভিমান তার এখনো আমার উপর! তবু জানি, তার প্রতিটি দৃষ্টিতে এখনো শুভকামনা থাকে...
পরিচয়ের প্রথম দিকে, ফাইনাল পরিক্ষার ২দিন আগে জানলাম রুমন সৌদি থেকে হজ্জ করে কেবল ফিরল, ম্যাথের কিছুই জানেনা, সহপাঠীর সমস্যা সমাধানের জন্যে জোর করে ম্যাথ বুঝানো শুরু করে দিলাম, সব ম্যাথ এক ঘণ্টায় বুঝতে গিয়ে তার মাথায়ও তালগোল পাকিয়ে গেল, আমার রোল ৭৭৬ আর তার ৭৭৭, এক্সাম শুরু হলে কিছু ম্যাথ খাতায় লিখে খাতাটা পায়ের উপর খুলে রেখে এক্সট্রা পেপারে লিখা শুরু করলাম, রুমন খাতা আর মাথায় রাখা ম্যাথ এক করে লিখা শেষ করলো, ১০/১২ দিনের পরিচয়ের এই বন্ধুত্তের এইটুকু আন্তরিকতায় সে মুগ্ধ হয়েছিল সেদিন, তাইতো প্রতিদিন একটু একটু করে আমাকে আরও বেশি ঋণী করে যাচ্ছে...।
সেদিন প্রচণ্ড মন খারাপ করে ভাবছিলাম, বাপ্পিটার অ্যান্টেনা এখন আর আমার নেটওয়ার্ক পায় না, আগে মন খারাপ হলে যখন ঘরের কোনে গুটিসুটি মেরে বসে থাকতাম, তখনি বাপ্পির ফোন আসতো, কি করে টের পেত জানিনা, ফোন করেই বলতো, "বাসায় বসে কি করিস রে? নিচে নাম, আমার গাড়ী তোর গেইটে...",
ভাবতে ভাবতেই দেখি বাপ্পির ফোন, "কিরে? দুইদিন থেকে ফেসবুকে তোর কোনও অ্যাক্টিভিটি নাই, ফোনও অফ...! বাইচ্চা আসোস???",
"শুটিং'এর কাজে ঢাকার বাইরে ছিলাম দোস্ত, ওখানে এয়ারটেলের নেটওয়ার্ক নাই.." বলতে বলতেই হাসি আমার দুকানে গিয়ে ঠেকল...
আরেকটা বাপ্পি ছিল, আমার বাসমেট, ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক আমাদের একসাথে ফেরা চাই...ক্লাস শেষে আমার বাসায় ফেরার ঝামেলা আর কষ্টটা ভাগ করে নিতে প্রতিদিন অনেকটুকু পথ ঘুরে বাড়ী ফিরত, জানিনা কেমন আছে এখন পৃথিবীর অপর প্রান্তে বসে...
এইত সেদিন, বানী ফোন করল, প্রায় ৩ বছর পর, “আপু, আমার বিয়ে, তোমাকে আসতেই হবে, তোমার দোয়া না নিয়ে বিয়ে করবনা”... তার ধারনা আমি অনেক লাকি, হোস্টেলে যখন ছিলাম, যেকোনো ছোট খাট কাজ করলেও এসে দাড়িয়ে থাকতো, “আপু দোয়া করে দাও”!
গত বার্থডেতে, প্রথম উইশ আসলো নিউ-ইয়র্ক থেকে, সুমি আপু, আমার কাছে উনার পরিচয় "একজন সফল বাঙ্গালী মেয়ে, একজন উদার আর বড়ো মনের মানুষ", যে কখনও আমাকে দেখেনি, আমার সাথে কথা বলেনি, অথচ...!
ইডেন এ পড়ার সময় সাবলেট এ ছিলাম, একটা ফ্যামিলির সাথে ...
প্রথম দিকটায় অ্যান্টি আমাকে একদমই পছন্দ করত না, আমার সব কাজই তার অসহ্য লাগত, পরে আস্তে আস্তে একসময় কি করে জানিনা, তার প্রিয় একজন হয়ে উঠলাম, তার স্পেশাল রান্নাগুলোর সময়, কিংবা মেহমানদের জন্যে রান্নার সময় আমার রান্নাঘরে থাকা চাই, আমার প্রিয় কোনও খাবার রান্না করলে, তার বেডরুমে ডেকে নিয়ে গিয়ে খেতে দিতো, বলত, "একদম শেষ করে তারপর রুমে যাবা"
আস্তে আস্তে আমাদের রুমের অন্য সব দায়িত্বও দিতে শুরু করলেন, " দিলরুবা, দ্যাখোতো জেসমিন নাকি শ্রাবণীর সাথে কি একটা ঝামেলা করসে", অথবা, "তোমাদের বেডগুলো তো একটু বড় দেখে নেয়া দরকার, আমি সাফা কে পাঠাচ্ছি, তুমি একটু ওর সাথে যাও, একটু দেখে দিও" আর নতুন কোনও মেয়ে রুম দেখতে আসলে একটা হাসি দিয়ে বলতো, “ও আমার এখানের সবচেয়ে পুরনো মানুষ, ওর সাথেই কথা বলে দ্যাখো, কি সুবিধা অসুবিধা!”
যেদিন চলে আসছিলাম, বিদায় নিয়ে আসিনি,খুব কষ্ট হতো তাহলে।!!
খুব রাগ করেছিলেন উনি,পরে যখন আমার রেজাল্টের মিষ্টি আর এমবিএ তে ভর্তির খবরটা নিয়ে গেলাম, কি খুশি যে হয়েছিলো, আসতেই দেবেনা, শেষে ভরসন্ধ্যায় ডাল-ভাত দুটো খাইয়ে তবেই মুক্তি দিলেন,
এমন হাজার গল্প আছে, মিলি, মুন, তন্তু, যূথী পাশের বাড়ির খালামনিরা, স্কুল আর ভার্সিটির স্যার কিংবা ম্যাডাম,
...
গত তিনদিন থেকে প্রচণ্ড মন খারাপ ছিল, খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ ছিল রীতিমত,
আমার মন খারাপের বেশির ভাগ সময়েই কোনও কারন থাকেনা, থাকলেও সেটা খুবই তুচ্ছ কিছু একটা, পরশুদিন অফিসে গেলাম, কিছু জিনিস-পত্র রেখে আসতে, গিয়েই বকবক করা শুরু করলাম, জেহাদ ভাইয়ার মেজাজ খারাপ দেখেও আমার বকবকানি টা থামলো না, এমনকি সে ফোন এ কথা বলছে দেখেও হাই ভলিউম এ গান শুনছিলাম।
একসময় ভাইয়া বলল, একটু ধানমণ্ডি যেতে হবে,
আমি বললাম, ক্লাস শেষে যাই? একটাই ক্লাস আজকে, তাড়াতাড়িই ছেড়ে দেবে।
বললেন ওকে!
জানতে চাইলাম, আমি কি আবার অফিস আসব? নাকি যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে উঠে পড়ব!
ভাইয়া বলল, আগে তো ক্লাস শেষ করো!
আমি উঠে দাঁড়ালাম, ভাইয়া বলল, কিছু খেয়ে গেলে না?
একটু হেসে বললাম, দুদিন থেকে খাওয়া বন্ধ রেখেছি, কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না!
ঃকেন?
ঃএমনি, মন-মেজাজ ভালো না!
ঃমেজাজ তো আমার খারাপ, আর তোমারে তো দেখে খুব ফুরফুরা মেজাজে আছ মনে হচ্ছিলো...
ঃআমার দুর্ভাগ্য, আমাকে দেখে কখনই কিছু বোঝা যায় না
বলেই বেরিয়ে গেলাম, ক্লাস শেষে দেখি টেক্সট আসছে, "অফিসে আসো"
অফিসে গিয়ে বসতে না বসতেই দেখি একগাদা খাবার চলে এল সামনে...
হয়ত এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার, কিন্তু জানিনা মনটা কেমন যেন করছিল,
কত দিনেরই বা পরিচয় ! অথচ, উনার সাথে যখন থাকি, যেখানেই যাই, নিজের ছোটবোনের মত করে আগলে রাখার চেষ্টাটা দেখে খুব লজ্জা হয়, নিজের ভেতর কুঁকড়ে থাকি, এই ছোট্ট ছোট্ট ভালোবাসাগুলোই আমার কাছে অনেক বড় মানে তৈরি করে, আমি কখনই কারো ভালবাসার প্রতিদান দিতে পারিনা,দিনে দিনে ঋণের বোঝাটা বাড়ে......।
সময়ের স্রোতে যারা হারিয়ে যায়, অথবা নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে যাদের পিছনে ফেলে আসতে হয়, কিংবা পালিয়ে আসি আরো বেশি মায়ায় জড়ানোর ভয়ে, তাদের দেয়া কষ্ট গুলো ভুলে থাকি তাদের এই ভালোবাসায়, কষ্ট দেয়া তো তারই সাজে, যে ভালোবাসে...।
এই সব ছাইপাশ ভাবতে ভাবতেই কাল ক্লাসে যাচ্ছিলাম, চোখ দুটো কখন ভিজে গিয়েছিল টের পাইনি, ক্লাসের সামনে অজয়ের সাথে দেখা, বলল, "কি? ঘুম থেকে উঠে আসলে নাকি?"
বুঝলাম, চোখ ফুলে ঢোল হয়ে আছে...
©somewhere in net ltd.