নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দীপকের খোলা খাতা Dipak Ray

Dipak Ray, Kalirhat, Krishnagar, Nadia, WB, India

দীপক ৭৪ রায়

Dipak Ray, Kalirhat, Krishnagar, Nadia, WB, India, Ph. 9775179985 Mail. [email protected]আমি লিখি, লেখার চেষ্টা করি। যা বিশ্বাস করি না, তা লিখি না। শিক্ষকতা আমার পেশা, লেখালেখি-সাংবাদিকতা নেশা। আমার লেখার সমালোচনা হলে, আমি সমৃদ্ধ হই।

দীপক ৭৪ রায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতীয় উপমহাদেশে বামপন্থী আন্দোলন ও তার ভবিষ্যৎ ।। দীপক রায়

০৩ রা জুলাই, ২০১২ রাত ১০:২৩



ভারতীয় উপমহাদেশে বামপন্থী আন্দোলনের সুচনা হয়েছিল বিগত শতাব্দীর গোড়ায়, যখন অবিভক্ত ভারতে চলছে ব্রিটিশ শাসন। তখন ভারত বলতে বর্তমান ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্থানকেই বোঝাত। পাশাপাশি, নেপালের মত পার্শ্ববর্তী ছোটখাটো রাজা ও নবাবদের এলাকাও ছিল এর মধ্যে। এই বিশাল দেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রধান মঞ্চ ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। দেশের বিভিন্ন বিপ্লবী সংগঠন, বিভিন্ন গুপ্ত ও প্রকাশ্য সমিতি, ধর্মীয় ও জাতিগত সংগঠন এই কংগ্রেসের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখন কংগ্রেসের ভিতরের এই সব গোষ্ঠীর একটাই লক্ষ্য ছিল- ব্রিটিশ শাসনের অবসান। অক্টোবর বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে রাশিয়ায় জারের শাসনের অবসানের পর সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠিত হলে, সেই ছোঁয়া এসে লাগে এখানেও। যেহেতু ব্রিটিশ শাসনের প্রধান কেন্দ্র ছিল কলকাতাকে কেন্দ্র করে, সেই কারনে সমাজতান্ত্রিক বামপন্থী ভাবধারার সুচনাও এখান থেকেই শুরু হয়েছিল।

একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, ব্রিটিশরা একদিকে যেমন কংগ্রেসের আন্দোলনকে প্রতিরোধ করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল, একইভাবে তারা লক্ষ্য রাখছিল যেন কোনভাবেই সোভিয়েতের ছোঁয়া এখানে না লাগে। আর তাই কংগ্রেসের আন্দোলন এদেশে কখনো নিষিদ্ধ না হলেও, বামপন্থী আন্দোলন বা কমিউনিস্ট পার্টি করা বা কমিউনিস্ট পার্টির বইপত্র পড়া ছিল নিষিদ্ধ। তাই খুব সচেতনভাবেই মানবেন্দ্রনাথ রায় বিদেশের মাটিতে তাসখন্দে প্রথম গড়েছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি। আর দেশের মাটিতে গোপনে সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন নোয়াখালীর বরেন্য সন্তান মুজফফর আহমেদ। সেই সময় তার প্রধান সাথী ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ও বিশিষ্ট চিন্তাবিদ আব্দুল হালিম। কিন্তু প্রবল পরাক্রমশালী ব্রিটিশদের চোখ এড়িয়ে সেই কাজ ছিল খুব কঠিন। আর যেহেতু কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ সাধারন মানুষ থেকে জমিদারশ্রেনি সকলেরই প্রতিনিধিত্ব করত, সেহেতু তারাও বামপন্থী পার্টি গড়ার বিষয়টিকে মান্যতা দিতে উৎসাহী ছিলেন না। সেই কারনে মুজফফর আহমেদ কংগ্রেসের ভিতরে থেকেই ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন। ফলস্বরূপ, কংগ্রেসের ভিতরে বামপন্থী ও দক্ষিনপন্থী দুটো শক্তির উদ্ভব হয়েছিল। আর এর ভিতর দিয়েই মুজফফর আহমেদ ভারতের বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন বিপ্লবী দলকে সংহত করতে থাকেন। ১৯২০ সাল থেকে এভাবেই কংগ্রেসের ভিতরে থেকে বাড়তে থাকে বামপন্থী আন্দোলনের শক্তি।

কংগ্রেস নেতৃত্ব যেনতেন প্রকারে যতটা ছিল ব্রিটিশদের থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেবার পক্ষে সক্রিয়, কিন্তু ততটা ছিল না অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতার পক্ষে। পাশাপাশি কংগ্রেসের ভিতরে হিন্দু ও মুসলমান শক্তির বিভাজনেও ছিল বৈষম্য। আর তাতেই হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগের সৃষ্টি হয়েছিল। এমনকি মহম্মদ আলি জিন্না, কবি ইকবালের মত অসাম্প্রদায়িক মানুষও কংগ্রেস নেতৃত্বের দ্বিচারিতার জন্য পাকিস্থান গড়ার দিকে অগ্রসর হয়ে গেলেন। দেশ বিভাজনের জন্য দেশবাসীর আবেগপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলনকে হেলায় দমিয়ে দিয়ে ভারতের ক্ষমতার মসনদে বসে গেলেন। তৈরি হল দেশের দুদিকে দুটি এলাকাকে নিয়ে পাকিস্থান। তৈরি হল বৈরিতা। কাশ্মীরের মানুষকে প্রাধান্য না দিয়ে, রাজা হরি সিংহের সাথে চুক্তির মধ্যে দিয়ে জন্ম নিল অনন্তকালের কাশ্মীর সমস্যা।

সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল, যে ব্রিটিশরা শেষ পর্যন্ত বারবার মুজফফর আহমেদ সহ অন্যান্য বামপন্থী নেতৃত্বকে জেলে পুরেও স্বীকৃতি দিয়েছিল বামপন্থী আন্দোলনকে, কমিউনিস্ট পার্টিকে- দেশ স্বাধীন হবার ঠিক পরেপরেই বেআইনি ঘোষণা করা হল কমিউনিস্ট পার্টিকে। ভেঙ্গে দেওয়া হল যাবতীয় বামপন্থী আন্দোলনের প্রচেষ্টাকে। যেহেতু, বামপন্থী আন্দোলন বিহার, উড়িষ্যা, আসাম, ত্রিপুরাসহ অবিভক্ত বঙ্গদেশ, দক্ষিন ভারতে ও পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রে বড় শক্তি ছিল, সেহেতু এই জায়গাগুলিতে বামপন্থী নেতা-কর্মীদের উপর নেমে এসেছিল ভয়াবহ অত্যাচার। যা ছাপিয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশদের অত্যাচারকেও। ঠিক একইভাবে পূর্ব পাকিস্থান ও পশ্চিম পাকিস্থানেও কমিউনিস্ট পার্টি করার মত উপযুক্ত পরিবেশ এবং নেতৃত্ব কোনটাই ছিল না। ফলে পূর্ব পাকিস্থানে পাকিস্থানে কিছুটা টিকতে পারলেও পশ্চিম পাকিস্থানে একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে থাকে।

কিন্তু কংগ্রেস সরকার ভারতে বেশিদিন নিষিদ্ধ রাখতে পারেনি কমিউনিস্ট পার্টিকে। ১৯৫২ সালে হাইকোর্টের আদেশে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে আবার সক্রিয় হয় তারা। নির্বাচনে জিতে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে, সংসদে প্রতিনিধি পাঠিয়ে উঠে আসে মূল রাজনীতির ধারায়। কেরালা, পশ্চিমবঙ্গে, ত্রিপুরায় সরকার গঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্য ও সংসদে প্রতিনিধি বাড়াতে থাকে। কিন্তু মতাদর্শগত প্রশ্নে চিন-ভারত যুদ্ধের পরে পার্টি বিভাজিত হয়। পার্টি নিষিদ্ধও হয়েছিল আবার। আবার বিভাজিত হয়। ফলে বারংবার বিভাজনের কারনে ভারতে বামপন্থী আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বামপন্থী পার্টিগুলোর মধ্যে একমাত্র মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টিই অঙ্গরাজ্যে সরকার গড়া ও জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীকালে অন্যান্য পার্টিগুলোর একটা বড় অংশকে নিয়ে বামফ্রন্ট গঠিত হয়ে এখনো জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারছে তারা। কিন্তু বামপন্থীদের আরেকটি অংশ, যারা সশস্ত্র সংগ্রামের ভিতর দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায়, নকশাল নামেই যাদের ছিল পরিচিতি, তারা ক্রমশঃ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দীর্ঘ কয়েক দশক পরে সেইসব নকশাল পার্টিগুলো এখন আবার মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি নাম নিয়ে নেমেছে সশস্ত্র সংগ্রামে। জঙ্গল, পাহাড়, পিছিয়ে পড়া আদিবাসী এলাকাগুলোতে বাড়িয়েছে তাঁদের কার্যকলাপ। খুন, সন্ত্রাস, লুঠ, অপহরণের ভিতর দিয়ে এক নতুন ধরনের রাজনীতির সুচনা করেছে তারা।

আবার অধুনা বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগে থেকেই বামপন্থী দলের ভুমিকা ছিল যথেষ্ট উজ্জ্বল। কৃষক, শ্রমিকদের গণআন্দোলনে তাঁদের ভুমিকা অস্বীকার করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধেও ছিল তাঁদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। কিন্তু ভারতের মত বাংলাদেশেও কমিউনিস্ট ও বামপন্থী পার্টিগুলো ভেঙ্গেছে বারংবার। মতাদর্শের কথা বলে, কিছু নেতৃত্বের অদূরদর্শিতায় পার্টি বিভাজন ক্ষয়িষ্ণু করেছে বামপন্থী আন্দোলনকে। প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে, সরে গিয়েছে মূল ধারা থেকে। সেখানেও কোন কোন বামপন্থী পার্টি সশস্ত্র সংগ্রামের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে বামপন্থার ভুল ব্যখ্যা করে অকালে নষ্ট করেছে অসংখ্য তাজা প্রান। তবুও বামপন্থী বেশ কয়েকটি দলের ভুমিকা বাংলাদেশে যথেষ্ট ইতিবাচক।

অন্যদিকে সম্পূর্ণ ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্থানে কমিউনিস্ট পার্টি প্রথমদিকে কাজই করতে পারত না। ১৯৫১ সালে পাকিস্থানের বামপন্থী নেতাদের জেলে পাঠানো হয়েছিল। এরপর ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগের সাথে জোট গড়ে নির্বাচনে তারা সফলও হয়েছিল। ষাটের দশকে পাকিস্থানের কৃষক আন্দোলনেও তাঁদের ভুমিকা ছিল আশাব্যঞ্জক। আবার সেখানেও চীন আর সোভিয়েত নিয়ে টানাপড়েনে ভেঙ্গে যায় পার্টি। সশস্ত্র সংগ্রামের নামে সেখানেও রক্ত ঝরেছে অনেক সম্ভাবনাময় তরুনের। ২০০২ সাল পর্যন্ত এইভাবে ভাঙ্গন চলার পরে এখন পাকিস্থানের কমিউনিস্ট পার্টি আগের তুলনায় অনেকটাই পরিনত। ক্ষুদ্র শক্তি হলেও জাতীয় রাজনৈতিক আন্দোলনে, কৃষক-শ্রমিক-মানবাধিকার আন্দোলনে তাঁদের ভুমিকা উল্লেখযোগ্য।

তবে একমাত্র নেপালেই বামপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে সমর্থ হয়েছে। সেখানে রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে ক্ষমতায় গিয়েছে বামপন্থীরা। সেখানে বামপন্থীরা নানা ভাগে বিভাজিত হলেও, সরকার গড়ার প্রশ্নে মতভেদ দেখা দিলেও নিজেদের সমর্থন ক্রমশঃ বৃদ্ধি করতে পেরেছে। নেপালের মাওবাদীরা অস্ত্র ছেড়ে ফিরে এসেছে সংসদীয় গনতন্ত্রে। বামপন্থাকে যুগোপযোগী করে ব্যবহার করায় তাঁদের প্রচেষ্টা বেশ উল্লেখ করার মত। এখনো সেখানে বামপন্থীরা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু বামপন্থী শক্তিকে দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।

কিন্তু, আগামিদিনে ভারতীয় উপমহাদেশে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কি? দুনিয়াজুড়ে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর পতনের পরে পুঁজিবাদই যে একমাত্র বিকল্প তা আর আজ মেনে নেবার উপায় নেই। সমাজতন্ত্র থেকে সরে এসে সেইসব দেশ এগতে তো পারেইনি, বরং আরও ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে। রাশিয়া তার জীবন্ত উদাহরন। আবার সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস রেখেই চীন কিন্তু টেক্কা দিচ্ছে আমেরিকাকেও। আর পুঁজিবাদী আমেরিকার গনতন্ত্রের যে হাঁড়ির হাল খারাপ, আর তা একটা শিশুও জানে। কিন্তু সেই শুন্যস্থান তো এমনি এমনি পুরন হবে না। ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলতে সেই আন্দোলন, মতাদর্শকে মানুষের কাছে ঠিকমতো পৌঁছে দেওয়া, মানুষকে কাছে টেনে আনার সেই শক্তি কি আছে এইসব দেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর? কোন কোন পার্টির কিছুটা থাকলেও, কেউ কেউ এখনো পড়ে আছে সেই পুরানো অবস্থানেই। যুগোপযোগী হতে পারছে না। মাওবাদ-সশস্ত্র সংগ্রামের নামে পথভ্রষ্ট হয়ে শেষ করে দিচ্ছে বামপন্থাকে। আজ আবার এসেছে মহান অক্টোবর বিপ্লব বার্ষিকী। সেই বার্ষিকীতে বামপন্থার প্রগতির জন্য কি নতুন চিন্তাভাবনা করেন সেই সব দলের নেতৃত্ব, সেটাই দেখার। আর আগামিতে কি হবে, তা বলবে ভবিষ্যৎ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:৪৪

উদভ্রন্ত বালক বলেছেন: খুবই ভাল লাগল পড়ে। ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.