![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Dipak Ray, Kalirhat, Krishnagar, Nadia, WB, India, Ph. 9775179985 Mail. [email protected]আমি লিখি, লেখার চেষ্টা করি। যা বিশ্বাস করি না, তা লিখি না। শিক্ষকতা আমার পেশা, লেখালেখি-সাংবাদিকতা নেশা। আমার লেখার সমালোচনা হলে, আমি সমৃদ্ধ হই।
চিরুনি প্রথম তৈরি করেছিলেন মিশরের মানুষ, ঐতিহাসিকভাবে এটাই সত্যি। যতদিন চিরুনি মানুষের হাতে আসেনি, ততদিন জটাধারী মানুষের সংখ্যা বেশি ছিল, সন্দেহ নেই। প্রাচীন মানুষের মাথায় চিরুনির অভাবে পোকা জন্মে রোগ হত এবং মৃত্যুও ঘটতো- এগুলো জানা কথা। তবে মিশরে চিরুনির আবিস্কার হয়েছিল খ্রিষ্টজন্মের অনেক আগে, ভারতে সেই চিরুনি এসেছিল তারও কিছুটা পরে। মোটামুটি খ্রিষ্টজন্মের পাঁচ-সাতশ বছর আগে। কিন্তু সেই চিরুনির সাথে বর্তমান চিরুনির কোন সম্পর্ক নেই। মোটামুটি ব্যবহারযোগ্য, ভদ্রস্থ, চিরুনি এদেশে এসেছিল ব্রিটিশ শাসনের আগে দিয়ে। সেগুলি ছিল কাঠ, পশুর হাঁড়, মোষের সিং, হাতির দাঁত, কচ্ছপের খোলা ও পিতল দিয়ে তৈরী। আর সেগুলি ছিল রাজা-উজিরদের ব্যবহারের জন্য। অষ্টাদশ শতাব্দীতে কলকাতা-ঢাকায় পশুর হাঁড় থেকে সামগ্রী তৈরীর কারিগরেরা চিরুনি বানাতো। কিন্তু তখনো চিরুনি শিল্প হিসাবে উঠে আসেনি। ১৮২৪ সালে ব্রিটিশ রসায়নবিদ লাইন সাহেব ইংল্যান্ডে প্রথম রাসায়নিক দিয়ে চিরুনি তৈরী করেন। সেই চিরুনি উনিশ শতকের মাঝামাঝি অবিভক্ত ভারতে আসে। তবে সেই সময় জার্মানির গাটাপার্চারের চিরুনি সারা বিশ্বে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। উনিশ শতকের শেষের দিকে সেলুলয়েডের চিরুনি জাপানে কুটিরশিল্প হিসাবে ছড়িয়ে পড়ে।
তারপরে তা ছড়িয়ে পড়ে চীন ও ইউরোপের দেশগুলিতে। তখনো ভারতীয় উপমহাদেশে চিরুনি শিল্প গড়ে ওঠেনি। অন্ততঃ ইতিহাসে এমন কোন তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। চিরুনি শিল্পের সাথে যেই মানুষটির নাম জড়িয়ে আছে, তিনি হলেন মন্মথনাথ ঘোষ। যশোরের ঝিনাইদহের মথুরাপুরের মন্মথবাবু ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অনুপ্রানিত হয়ে কারিগরী বিদ্যা শিখে স্বদেশী কারখানা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ১৯০৬ সালে জাপানে গিয়েছিলেন। যাবার আগে তিনি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের পরামর্শ নিয়েছিলেন। বহু কষ্টে তিনি সেখানে চিরুনি নির্মানের কৌশল শিখে ১৯০৯ সালে দেশে ফিরে এসে যশোর শহরে ১৯১০ সালের মাঝামাঝিতে প্রথম চিরুনি কারখানা স্থাপন করেন। এই কারখানার সব যন্ত্রাদি এসেছিল জাপান থেকে। এই কাজে তাঁকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন যশোরের জমিদার প্রমথভূষন দেবরায়, কাশিমবাজারের মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দা ও বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাপ বাহাদুর মহাশয়। কারখানার নাম দেওয়া হয়েছিল, ‘যশোর কম্ব বাটন এন্ড ম্যাট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড’। এলাকার প্রচুর যুবককে এই কাজে তিনি নিয়োগ করেছিলেন। এই চিরুনি সারা বাংলা, সারা দেশে জনপ্রিয়তা পায়।
বিদেশের চিরুনির বিক্রি কমে যায়। মন্মথবাবু কলকাতা, হাওড়াতে পরিচিত বন্ধুদের চিরুনি কারখানা গড়ায় উৎসাহ দিতে থাকেন। কিন্তু তার এই স্বদেশী কাজকে সহ্য করতে পারেননি দেশের অনেকেই। তাঁর জাত গিয়েছে বলে, তাকে একঘরেও করা হয়েছিল তখন। ব্রিটিশ পুলিশও পিছনে লেগেছিল তার। শেষ পর্যন্ত ১৯১৯ সালে তিনি তার চিরুনি কারখানা নিজের ভাই ফনীভূষনের হাতে সঁপে দিয়ে কলকাতায় গড়পাড় রোডে চলে যান। কলকাতাতে গিয়ে তিনি চিরুনি তৈরীর মেসিন বানানোর কারখানা গড়েছিলেন। কিন্তু সেই কারখানায় উৎপাদন শুরুর আগেই তিনি ১৯৪৪ সালে প্রয়াত হন। তার সেই কারখানা আজো আছে মানিকতলার খালপাড়ে।
আগামী ২০ শে মার্চ ভারতের, বাংলাদেশের, ভারতীয় উপমহাদেশের চিরুনি শিল্পের জনক মন্মথনাথ ঘোষের ৬৮ তম মৃত্যুদিন। একজন প্রচারের আলোয় না থাকা শিল্পদ্যোগীর মৃত্যুদিনকে মনে রেখে উভয় দেশের সরকার, চিরুনি শিল্পের সাথে যুক্ত মানুষেরা সম্মিলিতভাবে ভাবুন, এই শিল্পকে কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায়। আর সেটাই হবে মন্মথ বাবুর প্রতি সকলের শ্রদ্ধার্ঘ্য।
©somewhere in net ltd.