![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Dipak Ray, Kalirhat, Krishnagar, Nadia, WB, India, Ph. 9775179985 Mail. [email protected]আমি লিখি, লেখার চেষ্টা করি। যা বিশ্বাস করি না, তা লিখি না। শিক্ষকতা আমার পেশা, লেখালেখি-সাংবাদিকতা নেশা। আমার লেখার সমালোচনা হলে, আমি সমৃদ্ধ হই।
** আমাদের দেশ ভারতে একজন ব্যক্তিনির্ভর যতগুলি রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার অলিন্দে দাপট দেখিয়েছে, তার মধ্যে একটি অবশ্যই তামিলনাড়ুর জয়ললিতার দল। এই দলের তিনিই শেষ কথা। নীতি, মতাদর্শ সবটাই তিনি। বারে বারে তিনি অসফল যেমন হয়েছেন, সফলও হয়েছেন। ক্ষমতার আসনে যেতে বাম-ডান-সাম্প্রদায়িক শক্তি সবার সাথেই হাত মিলিয়েছেন বারে বারে। কারন একটাই, তিনিই শেষ কথা। তিনি আম্মা। তার কথাই শেষ কথা। তিনি যা চাইবেন, সেটাই চুড়ান্ত। কারন, তিনি সর্বশক্তিমান। হাজারো দূর্নীতির আষ্টেপিষ্টে জড়িয়েও ধরে রেখেছেন ক্ষমতাকে। আদালত দোষী ঘোষনা করেছিল আগেই, তবুও সামান্য কিছুকাল ছাড়া আমৃত্যু জেলের বাইরেই থাকলেন জয়ললিতা। দূর্নীতির বিচার হল, তবে তার মৃত্যুর পরে।
** স্বাভাবিক ভাবেই জয়ললিতার মৃত্যুর পরে উত্তরসূরি নিয়ে গোল বাধাটা ছিল সময়ের অপেক্ষা। কে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসবেন? তাই নিয়ে শশিকলা নটরাজন বনাম পনিরসেলভমের মধ্যে তীব্র লড়াই৷নানা নাটকীয় পরিস্থিতির উদ্ভব৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শশিকলার মুখ্যমন্ত্রিত্বের স্বপ্ন তো বটেই, তাঁর রাজনৈতিক ভাগ্যও এখন বিশ বাঁও জলে৷ দুর্নীতি মামলায় তাঁর চার বছরের জেল এবং ১০ কোটি টাকা জরিমানা হল৷ আইন অনুসারে তিনি ১০ বছর ভোটেও দাঁড়াতে পারবেন না৷ রায় শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি৷ আত্মসমর্পণের জন্য সময় চেয়েছিলেন শশিকলা, কিন্তু আদালত তা মঞ্জুর করেননি৷
** দুই দশক আগের দূর্নীতির ঘটনায় আগেই নিম্ন আদালতে জয়ললিতা, শশিকলা এবং অন্য তাদের দল ও পরিবারের আরও কয়েকজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল৷ কিন্তু আইনী মারপ্যাঁচে প্রভাব খাটিয়ে তাঁরা বেকসুর খালাস পেয়ে যান৷ মামলা যায় সর্বোচ্চ আদালতে৷ কোটি কোটি টাকার হিসেব বহির্ভূত আয় মামলার রায়ে শীর্ষ আদালত মন্তব্য করেছেন, ‘‘রাজনীতিকদের অর্থলিপ্সার এ এক জঘন্য দৃষ্টান্ত৷ জয়ললিতাও সমান দোষী৷ কিন্তু তিনি প্রয়াত, কাজেই তিনি ধরা ছোঁয়ার বাইরে৷'' এই রায় ভারতের বিচারব্যবস্থার হাজারো ত্রুটির মধ্যেও কিছুটা আলো দেখায়।
** ভারতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রীদের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় শাস্তির ঘটনা নতুন নয়৷ ব্যক্তিকেন্দ্রিক আরেকটি দলের নেতা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবকে পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে পাঁচ বছর জেল ও আড়াই লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হয়। এই মামলাতেও ফয়সালা হতে লেগে গিয়েছিল দুই দশক।
** ব্যক্তিকেন্দ্রিক দলের আরেক নেতা হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌ্তালা শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তিন বছর জেল খেটেছিলেন৷ মামলায় প্রমানিত হয়েছিল, কিভাবে দলীয় লোকজনকে টাকা ঘুষ নিয়ে শিক্ষকের চাকরি দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় অনেক শিক্ষক ও সরকারী আধিকারিকও ক্ষতিগ্রস্থ ও শাস্তির মুখে পড়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও আদালতের দীর্ঘসুত্রিতায় কেটে গিয়েছিল অনেকগুলি বছর।
** মনমোহন সিং সরকারের আমলে টুজি স্পেকট্রাম, কয়লার ব্লক বন্টন কেলেঙ্কারিতে এমন ব্যক্তিকেন্দ্রিক দলের অনেক মন্ত্রীকে জেলে যেতে হয়েছিল। পরে তারা জামিনে ছাড়া পেলেও, এখনো মামলা চলছে। আশা করাই যায়, এই মামলাগুলিতেও সুবিচার হবে, দোষীরা শাস্তি পাবে।
** একই দলের অগুন্তি নেতা, বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রী দূর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত ও জেল বাস করে দেশে রেকর্ড গড়েছে আরেকটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল। সেটা পশ্চিমবঙ্গের তৃনমূল কংগ্রেস। সারদা, রোজভ্যালী থেকে নারদা ঘুষ বা শিক্ষক নিয়োগ। আদালতে মামলার পাহাড়। শাসনকালের পুরোটা সময়েই দলের এত নেতামন্ত্রী জেলে গিয়েছেন, তাদের সকলের নাম মনে রাখাও মুশকিল। এবং তারা সকলেই ওজনদার নেতা। কখনোই জেলে দলের কোন ওজনদার নেতা নেই এমন ঘটনা এখনো ঘটেনি। এই মামলাগুলিতেও একদিন না একদিন সুবিচার হবেই। দেশের বিচার ব্যবস্থার ঘটনা পরম্পরা সেটাই ইঙ্গিত করে।
** আমি এমন কথা বলছি না যে, মতাদর্শ ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কেউ দূর্নীতি করেননি। অবশ্যই করেছেন এবং জেলেও গিয়েছেন বা রাজনীতি থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এই ব্যপারে কংগ্রেস দলের ঘটেছে সব থেকে বেশি। কিন্তু বিকল্প নেতা এসে হাল ধরেছেন। বিজেপি'র খোদ জাতীয় সভাপতি বংগারু লক্ষ্মন ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা পড়ে পদ খুইয়েছিলেন।
** হ্যাঁ, এখনো অবধি ভারতে একমাত্র কমিউনিস্ট পার্টি এইসব ঘটনায় কলঙ্কিত হয়নি। তিনটি রাজ্যে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকার সুবাদে, বা পার্লামেন্টর দু কক্ষে শতাধিক সাংসদ থাকলেও বড় কোন কেলেঙ্কারিতে জড়াতে হয়নি বা জেলে যেতে হয়নি কমিউনিস্ট পার্টির কোন বড় নেতা বা মন্ত্রীকে। এখনো অবধি ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে কমিউনিস্ট পার্টির এটা একটা বড় সাফল্য।
©somewhere in net ltd.