![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে একক নাটক। টিভি চ্যানেলগুলোতে তার আর আগের মতো কদর নেই। বিশেষ কোনো দিন কিংবা বিশেষ উৎসবেই থাকছে এ নাটক। তবে ইদানীং ঈদ আয়োজনেও খ- নাটক প্রচারিত হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, একক নাটক আর কিছুদিন পর হয়তো শূন্যের কোটায় চলে আসবে। দেশে টিভি চ্যানেল বেড়েছে, বেড়েছে ব্যসত্মতাও। কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়েনি টিভি নাটকের মান। এক ঘণ্টার খ- নাটক দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হলেও চ্যানেলগুলো যেন ধারাবাহিক নাটক প্রচারের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। মানহীন ও ছকে বাঁধা গল্প নিয়ে নির্মিত এসব ধারাবাহিক নাটকের বেশির ভাগ নাটকই পুরোটা দর্শকরা দেখে কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমাদের দেশে এক ঘণ্টার নাটকে রয়েছে উজ্জ্বল অতীত। আফজাল হোসেন, হুমায়ুন ফরীদি, সুবর্ণা মুসত্মাফা, তৌকীর আহমেদ, আজিজুল হাকিম, বিপাশা হায়াত, শমী কায়সারসহ অসংখ্য অভিনেতা-অভিনেত্রী এক ঘণ্টার নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমেই জনপ্রিয় হয়েছেন। নাটকের নির্মাতা ও চ্যানেলের কর্তা ব্যক্তিরা সবাই জানেন, খ- নাটকের জনপ্রিয়তার কথা। তারপরও কেন চ্যানেলগুলো একক নাটক প্রচার করছে না, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রবীণ অভিনেতা ও পরিচালক আবুল হায়াত বলেন, চ্যানেলগুলো অল্প টাকায় নাটক বানাতে চায়। অল্প টাকা খরচ করে কিছু নির্মাতাকে দিয়ে তারা নিম্নমানের কিছু ধারাবাহিক নির্মাণ করে প্রচার করছে। খ- নাটকের বেলায় ঘটনা আবার অন্য রকম। যেসব নির্মাতাখন্ড নাটক বানান তারা কিন্তু মানহীন নাটক বানাতে রাজি নয়। চ্যানেলের প্রসত্মাবে একমত হতে না পারায় অনেক নির্মাতাই এ নাটক বানানো কমিয়ে দিয়েছেন। মাঝে মধ্যে ভালো প্রসত্মাব পেলে ২-১টি নাটক হয়তো নির্মাণ করছেন কিন্তু সেটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এসব কারণেই খ- নাটকের নির্মাণ ও প্রচার কম হচ্ছে বলে আমি মনে করি। বিশেষ কোনো উৎসব বা দিবস উপলড়্গে চ্যানেলগুলো খন্ড নাটকের প্রচারে মেতে ওঠে। এই যেমন সামনে ঈদ আসছে। পত্রিকার পাতা উল্টালেই দেখা যাবে ডজন ডজন খ- নাটক নির্মাণের খবর কিংবা চ্যানেলের নব ঘুরালেই এ রকম অসংখ্য নাটকের প্রমো দেখা যাবে। নির্মাতা ও চ্যানেলগুলোর এসব কার্যকলাপ দেখলে মনে হয় এসব নাটকের নির্মাণ ও প্রচার যেন বিশেষ দিন এবং উৎসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী বলেন, বিজ্ঞাপনদাতা ও চ্যানেলগুলোর অনীহার কারণে এক ঘণ্টার নাটক নির্মাণ হচ্ছে না। বিজ্ঞাপনদাতারা মনে করেন এক ঘণ্টার নাটকের চেয়ে ধারাবাহিক নাটকে বিনিয়োগ করলে পণ্যের প্রচার বেশি হবে। ধারাবাহিক নাটক তো সপ্তাহে ২-৩ দিন প্রচারিত হয়, অন্যদিকে এক ঘণ্টার নাটকের প্রচার ১ দিন এবং ১ ঘণ্টাতেই শেষ। এসব কিছু বিবেচনা করে তারা এক ঘণ্টার নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু তারা বোঝেন না দেশের মানুষের হাতে দিনের পর দিন ধরে ধারাবাহিক নাটক দেখার এত সময় নেই। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই তারা নাটকের সফল পরিসমাপ্তি চান। এক ঘণ্টার নাটক প্রচারের সময় দর্শক ভিড় বাড়ে, টিভি সেটের সামনে বসে থাকে অনেকেই অথচ ধারাবাহিক নাটক প্রচারের সময় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। তখন বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণায় অনেক দর্শকই টিভি সেটের সামনে থেকে উঠে যায়। যাদের জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার সেই তারাই যদি না দেখলো তাহলে আর বিজ্ঞাপনদাতাদের এত টাকা খরচ করার দরকার কি। চ্যানেল ও বিজ্ঞাপনদাতারা যদি এসব কিছু নিয়ে একটুখানি ভাবে তাহলে আমার মনে হয় খ- নাটকের সুদিন আবার ফিরে আসবে। খ- নাটকের জনপ্রিয়তা অনেকটা ছোটগল্পের মতো। ছোটগল্প যেমন সব সময়, সব জায়গা ও সব পরিবেশেই জনপ্রিয়, ঠিক তেমনি খ- নাটকও শুরম্ন থেকে এখন পর্যনত্মও সমান জনপ্রিয়। প্রায় চ্যানেলগুলোই প্রতিদিন ধারাবাহিক নাটক প্রচার করলেও সপ্তাহে মাত্র এক দিন খ- নাটক প্রচার করছে। এ ব্যাপারে স্যাটেলাইট চ্যানেল এনটিভি কর্তৃপড়্গ বলেন, অনেকে মনে করেন বিজ্ঞাপন না পাওয়ায় আমরা খন্ড নাটক প্রচার করি না। ভালো নাটক হলে বিজ্ঞাপন নিয়ে কখনো সমস্যায় পড়তে হয় না। আসলে আমাদের অনুষ্ঠানমালায় এক ঘণ্টার নাটকের প্রচার কম রাখা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে নাটকের সংখ্যা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আর ধারাবাহিক নাটকের মান নেই- এ কথা ঠিক নয়। কিছু ধারাবাহিক নাটক দিয়ে তো আর সব ধারাবাহিক নাটকের তুলনা করা যায় না। জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্রায় সময়ই খ- নাটকে অভিনয় করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর নাটকের জনপ্রিয়তায় যে ভাটা পড়েনি তার কথাও বারবার তারা উলেস্নখ করেন। নির্মাতা ও নাট্যকাররাও এসব নাটকের জনপ্রিয়তার কথা স্বীকার করেন। নাট্যকার, নির্মাতা ও কলাকুশলী সবাই নাটকের ব্যাপারে এক কাতারে দাঁড়ালেও যত সমস্যা চ্যানেলগুলোকে নিয়েই। চ্যানেলগুলো বরাবরই এসব নাটক নিয়ে বিজ্ঞাপনদাতাদের অনীহার কথা বলছে। গল্প যদি হৃদয় কাড়া হয়, নির্মাণে যদি বৈচিত্র্য থাকে তাহলে সেটি খন্ড নাটক নাকি ধারাবাহিক নাটক তা অনেক সময়ই বিবেচনায় নেয়া হয় না। বিজ্ঞাপনদাতারা চান ভালো নাটকে স্পন্সর করতে। সেটি একক নাটকই হোক কিংবা ধারাবাহিক নাটকই হোক। প্রবীণ অভিনেত্রী দিলারা জামান বলেন, চ্যানেলগুলোতে দিন দিন এক ঘণ্টার নাটক দেখানো কেন জানি কমে যাচ্ছে। আমি নিজেও খ- নাটকের একজন ভক্ত। এসব নাটকে যে উত্তেজনাটুকু পাওয়া যায় ধারাবাহিকে সেটি পাওয়া যায় না। ধারাবাহিক নাটক আমার কাছে রস-কষহীন মনে হয়। ব্যসত্মতার যুগে সবাই তো আর সময় করে নিয়মিত টিভি সেটের সামনে বসতে পারে না। এর ফলে ধারাবাহিকের সব পর্ব দেখাও সম্ভব হয় না। তাই চ্যানেলগুলো যদি এক ঘণ্টার নাটক প্রচার করে তাহলে দর্শকরা নাটকের মাধ্যমে আবারো বিনোদন খুঁজে পাবেন। এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম এ প্রসঙ্গে বলেন, খন্ড নাটক আর ধারাবাহিক নাটক এ দুটির আবেদন দুই রকমের। সবাই যদি ধারাবাহিক নাটক বানায় তাহলে খন্ড নাটকের দর্শকরা কি করবেন। সবার জন্য বিনোদন-চ্যানেলগুলোকে এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সব ধরনের অনুষ্ঠান বানাতে হবে। যাতে সব শ্রেণীর দর্শক চ্যানেলগুলোতে বিনোদন খুঁজে পান।
পণ্যের জোগান বেশি হলে দাম কমবে- এটাই স্বাভাবিক দেশে চ্যানেলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নির্মিত হচ্ছে প্রচুর নাটক। এসব নাটকের মান যে একেবারেই নিম্নমানের তা কিন্তু নয়। এত এত নাটকের ভিড়েও কিন্তু ভালো মানের নাটক নির্মিত হচ্ছে। তবে সুখের বিষয় হচ্ছে, সেসব ভালো মানের নাটকের মাঝে খ- নাটকের সংখ্যাই বেশি। নাটকের মাধ্যমেই চ্যানেলগুলো তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। অথচ নাটক যারা দেখেন তাদের পছন্দ-অপছন্দের কোনো মূল্যায়নই করছে না চ্যানেলগুলো। এভাবে চলতে থাকলে এমন এক সময় আসবে যখন দর্শক টিভি সেটের সামনে বসবেন, কিন্তু নাটক দেখবেন না।
©somewhere in net ltd.