নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আর পড়া নয়, এখন শুধুই ঘোরা। কয়েকদিন শুধু ঘুরব আর ঘুরব।দূর পাহাড়ে যাব, চাকমাদের ব্যাং ভাজা খাওয়া দেখব, মগ মেয়ের ঝরণা থেকে কলস ভরে পানি নেওয়া দেখব। সাগরে যাব, ডলফিনের সাথে সাঁতার কাটব, সুটকি ভরতা আর রূপচাঁদা ফ্রাই দিয়ে ভাত খেয়ে রৌদ্রে গা ড্রাই করে নেব। ভরা নদীতে মাঝিদের সাথে নৌকায় শুয়ে কাঁটাব রুপালী রাত্রি।
চা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে খুব কম কথা বলা হয় নাই। শরৎ, রবি, বঙ্কিম থেকে শুরু করে আজকের আনিসুল, হুমায়ুন পর্যন্ত সবার লেখায় চা খাওয়ার কথা উঠে আসে। চা নিয়ে গান লেখা হয়েছে, “গরম চায়ে চুমুক দিলে”। চা নিয়ে যে ম্যুভি হতে পারে সেটা জানার জন্য “এক কাপ চা সিনেমাটা দেখতে পারেন”। চায়ের জন্মভূমি হলো চিন। চীনের জিনিসকে আমরা বলি চায়না মাল। চায়না মালে এখন বাজার সয়লাব। সেই চীন দেশের মেয়েকে নিয়ে হৃদয় খান গান গেয়েছেন, “”চাইনা মেয়ে তুমি অন্য কারো হও”। হৃদয় খানের বয়স অল্প তাই তিনি চায়না লিখতে গিয়ে চাইনা লিখে ফেলেছেন। সেদিন তার স্ট্যুডিওর বাতি ফিউজ ছিলো তাই শুধরে নিতে পারেন নাই। চায়না মেয়েরা কি ভয়ংকর প্রজাতির মানুষ! তাহলে কেন হৃদয় খান চায়না মেয়েটাকে নিজে না নিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে দিতে চাইছেন। গানের কথা থাক, চায়ের কথায় আসি। মজাদার খাবার খেতে কার না ভালো লাগে। মায়ের হাতের বানানো চা, স্বাদই আলাদা। তবে চা এমনি একটা জিনিস যা হাতের হাতের চেয়ে বউয়ের হাতে বেশী সুস্বাদু হয়। আর সেই খাবার আবিষ্কারের গল্প যদি আরো মজার হয় তাহলে তো কথায়ই নেই। বউকে শুনিয়ে জ্ঞান জাহির করা যায়। আফসোস আমার বউই নেই।
আমাদের অফিসে শুধু নাইট শিফটে চা দেয়া হয়। চা দেয়ার জন্য দুজন ছেলে আছে। আরিফ ও মমিন। মমিনের হাতের চা ভালোই। তার আদা চা টা ভালোই লাগে। আরিফ এর বানানো চা খেলে প্রতিবার বাংলা লিংকের সাম্প্রতিক একটা বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে যায়। ছেলেটাকে এতবার করে বললাম তবু চিনির পরিমান কমাতে পারলাম না। এক কাপ চা বানাতে সে মিনিমাম ১০০ গ্রাম চিনি দেয় বলে আমি নিশ্চিত। তার বানানো চায়ের নামে শরবত খেয়ে এই লেখাটা শুরু করলাম। আচ্ছা, চা যদি না থাকতো তবে তো চায়ের দামে শরবত থিমে বাংলা লিংকের বিজ্ঞাপন থাকতো না। চায়ের কাপ, কেটলি, চা চামচ, চা বিরতি কিছুই থাকতো না।পানীর পরে পৃথিবীতে মানুষেত সব থেকে প্রিয় পানীয়, এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গরম চা।
সৌভাগ্যবান এই পানীয় আবিষ্কার করেন ২৭৩৭ খ্রিষ্টপুর্বাব্দে মহান চৈনিক শাসক শেন নাং( উচ্চারণটা শেনাং হতে পারে। চৈনিক নামগুলো উচ্চারণ করতে গেলে অধিকাংশ সময় আমি ক্লান্ত বোধ করি।)। শেন তার সাম্রাজ্যে এই বলে ডিক্রি করেন যে তার প্রজাদের সবাইকে জলপানের পূর্বে অবশ্যই সেটা ফুটিয়ে নিতে হবে। তিনি নিজেই সবসময় ফোঁটানো পানি পান করতেন। একদিনের কথা, শেন তখন চীনের জুন্নান প্রদেশে অবস্থান করছিলেন। যাত্রাপথে এক বনানীর নিচে যাত্রা বিরতি করা হলো। খোলা প্রান্তরে গাছের ছায়ায় বসে আছে সবাই। কেউ বিশ্রাম করছে, কেউ খাবারের ব্যবস্থা করছে। জলপাত্রে পানি ফুটানো হচ্ছে। রাজকীয় ফরমান সে তো আর বৃথা যেতে পারেনা। বাংলাদেশে সংসদে যারা আইন পাশ করেন তারাই কিন্তু আবার সেই আইনকে অশ্রদ্ধা করেন। শেনের রাজ্যে তা হবার জো নেই। তাই পানিকে ফুটতেই হবে। পানির স্ফূটনাংক ১০০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। মনটাও ফুরফুরে হয়ে গেলো। গলা ছেড়ে গান গাওয়ার জন্য পারফেক্ট সময়।
হঠাৎ বাতাস পাশের ঝোপ থেকে কিছু পাতা উড়িয়ে এনে ফুটন্ত পানির ভিতর ফেলল। পাতাটাকে তুলে ফেলার চেষ্টা করার আগেই সেটা জলে দ্রবীভূত হয়ে গেছে। জলের রং বদলে গেলো। কৃষি এবং ভেষজ চিকিৎসায় শেনের ব্যাপক আগ্রহ ছিলো।
শেন কৌতূহলী হয়ে জলের ঘ্রাণ শুঁকে দেখেন অন্যরকম এক মাদকতা ছড়ানো গন্ধ। তিনি এটার স্বাদ নিলেন। প্রথম মানুষ চায়ের স্বাদ নিলো। তারপর তো রীতিমত চায়ের প্রেমে পড়ে গেলো। টি এর বাংলা হিসেবে আমরা চা ব্যবহার করি। চা কিন্তু বাংলা শব্দ না। চা চীনা শব্দ।
শাং শাসনামলে (১৫০০-১০৪৬ খ্রিষ্টপুর্বাব্দ) চা পাতার রস ঔষধি পানীয় হিসেবে সেবন করা হত। সিচুয়ান প্রদেশের লোকেরা প্রথম চা পাতা সিদ্ধ করে ঘন লিকার তৈরী করা শেখে।
১৬১০ সালের দিকে ইউরোপে চায়ের প্রবেশ ঘটে পর্তুগীজদের হাত ধরে । শীতের দেশে উষ্ণ চায়ের কাপ প্রাণে স্ফুর্তির জোয়ার নিয়ে এলো। আজ থেকে আনুমানিক আড়াইশো বছর পুর্বে এশিয়ার অনেক দেশে চা পাতার তৈরী ইট মুদ্রার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হত। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় তৎকালীন সময়ে চায়ের কদর বোঝা যায়। ১৭০০ সালের দিকে ব্রিটেনে চা জনপ্রিয় হয়। ইংরেজদের হাত ধরে চা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে। তারা ভারতের আসাম রাজ্যে চায়ের চাষ শুরু করে। চা উৎপাদনে চীনের একক আধিপত্যকে খর্ব করতে বিলাতিরা ভারতে চা চাষ শুরু করে। প্রথম দিকে এংলো ইন্ডিয়ানরাই চা ব্যবসা শুরু করে পরে ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর চা শিল্প দেশীয়দের হাতে বিকশিত হয়। আসাম থেকে ছড়িয়ে পড়ে দার্জিলিং, কেরালা, বাংলায়। ভারত পৃথিবীর এখন প্রধান চা উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে আছে নয়নাভিরাম চা বাগান। পৃথিবীর অধিকাংশ বৃষ্টিবহুল দেশে এখন চা উৎপন্ন হয়। ইরানের নাম মনে আসলে আমাদের অবশ্যই চোখের সামনে মরু উদ্যানের কথা ভেসে উঠবে। সেই ইরানের গিলান প্রদেশে আছে শ্যামল চায়ের বাগান।
চা দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে ভিন্ন রুচিতে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় খাওয়া হয়। কেউ লিকার বেশী খায় কেউ খায় কম। লাল চা, দুধ চা, গ্রীন টি, আইসড টি বলে নানা পদের চা আছে। বাংলাদেশে প্রথম দুই ক্যাটাগরির চা বেশী চলে। আপনি কি জানেন লাল চা এর ইংরেজী কি? ব্লাক টি। বর্তমান জমানায় কি চায়ের কদর কমেছে? আপনি ভাবতে থাকুন। আমি আরো এক কাপ চা খেয়ে আসি। আপনার চা খেতে ইচ্ছে করলে আমার সাথে আসতে পারেন।
যাওয়ার আগে আপনাদের জন্য চা বাগানের কিছু চমৎকার সিনারি রেখে গেলাম। কেমন লাগলো জানাতে ভূলবেন না কিন্তু।
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:০৩
দক্ষিনা বাতাস বলেছেন: আমার স্বার্থকতা। ধন্যবাদ।
২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩০
এরিস বলেছেন: চৈনিক নামগুলো উচ্চারণ করতে গেলে অধিকাংশ সময় আমি ক্লান্ত বোধ করি এক কাপ চা খেয়ে আসেন। ক্লান্তি চলে যাবে অল ট্রিবিউট গোজ টু সেই বাতাস। নাহলে ঝোপ থেকে পাতা আসতো না, চাও হতো না। কত অজানারে জানলাম।। পোস্টে +++
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:০৬
দক্ষিনা বাতাস বলেছেন: প্লাসের জন্য ধন্যবাদ।
৩| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:০৭
মৈত্রী বলেছেন:
আপনি থাকেন কই??
২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৯
দক্ষিনা বাতাস বলেছেন: হঠাৎ আমার গৃহের খবর কেন?
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৬
আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: ভাল লাগলো।