নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ বাঁচে আশায়, শূন্যে বাঁধি আশা।

আমার ব্লগ http://dokhinabatas.blogspot.com/

দক্ষিনা বাতাস

আর পড়া নয়, এখন শুধুই ঘোরা। কয়েকদিন শুধু ঘুরব আর ঘুরব।দূর পাহাড়ে যাব, চাকমাদের ব্যাং ভাজা খাওয়া দেখব, মগ মেয়ের ঝরণা থেকে কলস ভরে পানি নেওয়া দেখব। সাগরে যাব, ডলফিনের সাথে সাঁতার কাটব, সুটকি ভরতা আর রূপচাঁদা ফ্রাই দিয়ে ভাত খেয়ে রৌদ্রে গা ড্রাই করে নেব। ভরা নদীতে মাঝিদের সাথে নৌকায় শুয়ে কাঁটাব রুপালী রাত্রি।

দক্ষিনা বাতাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছাতা আবিষ্কার

২৯ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:২৬

কয়েক বছর আগের কথা। সবাই মিলে গ্রামের বাড়ী যাচ্ছি। গ্রামের রাস্তায় তখনো ইট বিছানো হয়নি। আষাঢ় মাসে রাস্তার বুকে হাটু সমান কাঁদা। পান্থজন লুঙ্গি দুই ভাঁজ করে কোমরে জড়িছে পথ চলছে। কৃষক গরু গুলোকে মাঠ থেকে ঘরে ফিরিয়ে নিচ্ছে।সন্ধ্যার কিছু আগে গ্রামের ঘাটে নামলাম । ছাতা মাথায় দিয়ে মাইলখানেক পথ যেতে হবে। গোলজার কাকা লঞ্চঘাঁটে এসেছেন আমাদের এগিয়ে নিতে। ব্যাগগুলো তিনি জোরকরে নিয়ে নিলেন। আমরা ছাতা সামলে কাদায় পা টিপে পথ চলছি।পা পিছলে গেলে কাঁদায় পড়ে আলুর দম হয়ে যেতে হবে। গ্রামদেশে বৃষ্টির দিনে টিপ ছাতার চাইতে কাঠের বাটের ছাতার উপযোগীতা বেশী। দুটো ছেলে মানকচু পাতার মাথায় দিয়ে বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করছে। কাদায় অনভ্যস্ত ভঙ্গিতে আমরা পথ চলছি। ছেলে দুটো কৌতুক মেশানো চোখে আমাদের দেখছে। কাক ভেজা হয়ে দাদাবাড়ি পৌছালাম। আমার ছাতাটা বাতাসে উল্টে গেছে। শিক ভেঙ্গে গেছে একটা। দাদাজানের ছাতা নিয়ে পুকুরঘাটে গেলাম পা ধুতে।





বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য আদিম মানুষ কবে ছাতা হিসেবে কলা পাতা কি কচুর পাতা ছিড়ে ছাতা হিসেবে ব্যবহার করেছে অথবা প্রখর সূর্যালোকে ঘাসের তৈরী ক্যানপি টুপি বানিয়ে মাথায় পরেছে তার কথা আজ বলা সম্ভব নয়। ইতিহাসের সূত্র ধরে এগোলে দেখা যায় খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ সালে মিশরে ছাতা ব্যবহার করা হত। উজ্জ্বল চামড়া মানুষের আভিজাত্যের চিহ্ন হিসেবে ধরা হত। সাদা চামড়া যাতে আতপ তাপে বাদামী না হয়ে যায় সেজন্য ছাতা ব্যবহার করত তারা। আশেরিয়ায় শুধু মাত্র সম্রাটের ছাতা ব্যবহারের অধিকার ছিলো। সম্রাটদের মাথায় যে ছাতা ধরে রাখা হত তাকে বলা হয় প্যারাসল। আমরা বাঙালীরা আমব্রেলা মানেই ছাতা বলি, ইংরেজরা সূর্যের হাত থেকে ছায়া পেতে যে ছাতা ব্যবহার করে তাকে প্যারাসল এবং বৃষ্টির হাত থেকে ব্যবহৃত ছাতাকে আমব্রেলা বলে। পৃথিবীর অনেক স্থানেই ছাতাকে আভিজাত্যের প্রতীক ধরা হত। বার্মার আভা নগরে প্রাপ্ত প্রাচীন পুঁথিতে সম্রাট কে বর্ণনা করা হয়েছে “কিং অফ দ্যা হোয়াইট এলিফ্যান্ট” এবং “লর্ড অফ টুয়েন্টি ফোর প্যারাসল”। আফ্রিকার অনেক স্থানে এখনো ছাতাকে সামাজিক পদমর্যাদা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।



সূর্যের প্রখর উত্তাপ থেকেবাঁচতে মানুষ গুহার ভেতরে, গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিত। তারপর সে ছাতা বানানো শিখল। পৃত্থিবীর প্রথম ছাতা খুব সম্ভবত পাতা দিয়ে তৈরী ক্যানপি টুপি। বাংলা ছাতা শব্দটি এসেছে ছত্র থেকে। ইংরেজী আমব্রেলা শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দআম্ব্রা থেকে। আম্ব্রা অর্থ ছায়া। প্রাচীন গ্রীক শব্দ আম্ব্রোস থেকে এসেছে আম্ব্রা।



ছাতার আরেকটি নাম হলো বর্ষাতি। যদিও ব্যবহারিক জীবনে এই নাম ব্যবহার করা হয় না। বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় একই জিনিসের বিভিন্ন নাম প্রচলিত থাকলেও ছাতা কিন্তু সব জায়গায় ছাতা নামে পরিচিত। ছাতার বেশ কয়েকটি ইংরেজী নাম আছে। আমব্রেল্লা, প্যারাসল, ব্রোলি, প্যারাপ্লুয়ি, রেইন শেড, সান শেড, গ্যাম্প, বাম্বারশট, আম্ব্রলি। গ্রামীন বাঙালী সমাজে অবশ্য ছাতাকে ছাতি বলা হয়।



মূর্তিপূজারীদের দেবতাদের ছাতা ব্যবহার করতে দেখা যায়। প্রাচীন মিশরের দেবতাদেরও ছাতা ব্যবহারের কথা জানা যায়। দেবতা অসিরিসের ছাতা ছিলো। ভারতবর্ষে হিন্দুদের দেবতা বিষ্ণু তার পঞ্চইন্দ্রিয় ব্যবহার করে নরক থেকে বরুনের বৃষ্টিদায়ী ছাতা ফিরিয়ে আনেন। গ্রীক এবং রোমানদের দেবতা দায়ুনিসিস এবং বাচ্চুস সম্পর্কে একই ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। তারা বৃষ্টির দেবতা ছিলেন। গ্রীকদের হাতেই ছাতার বিস্তৃতি ঘটে। গ্রীকে দায়ুনিসিয়াসের পূজা হত। উৎসবের সময় দেবতার মাথায় একটা প্যারাসল ধরা হত। শীঘ্রই অন্য দেবতাদের মাথায়ও প্যারাসল ধরা হলো। এরপর এথেন্সের রমনীরাও ছাতা ব্যবহার শুরু করে। মেয়েদের ব্যবহার্য সামগ্রীর ভিতরে ছাতা অপরিহার্য অংশ হয়ে যায়।



আমার জন্মের দুইশো বছর আগে ১৭৮৬ সালে বাটের সাথে শিক লাগানো বৃত্তাকার ছাতার প্যাটেন্ট অর্জন করেন জন বিয়ালে। উনবিংশ শতাব্দীতে এই ছাতার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জেন্টলম্যানেদের হাতে কালো সিল্ক বা সুতোর কাপড়ের ছাতা ফ্যাশানের অংশ হয়ে উঠেছিল।



একবিংশ শতাব্দীর মানুষ আমরা। ছাতা এখনো আমাদের অপরিহার্য অংশ।



মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:৩৬

অপ্‌সরা বলেছেন: আর সুন্দর সব জাপানিজ ছাতা যেসব নিয়ে জাপানিজ মেয়েরা নাচ করে সেই ছাতাগুলাই পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর ছাতা আমার কাছে।


ভালো লাগলো ছাতা ইতিহাস।

২৯ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:১৩

দক্ষিনা বাতাস বলেছেন: ওটা প্যারাসলের আধুনিক সংস্করন। ধন্যবাদ।

২| ২৯ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:০১

লিঙ্কনহুসাইন বলেছেন: দাদাবাড়ি যাওয়া পর্যন্ত পড়ে ভালো লাগলো , তার পর ছাতার ইতিহাস পড়ে তেমন মজা পিলামনা :( +++++

২৯ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:১৪

দক্ষিনা বাতাস বলেছেন: স্বয়ং বিধাতা মানুষকে পূর্ণ তৃপ্তি দিতে পারেন না আমি কোন ছার!

৩| ২৯ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২২

বোকামন বলেছেন:
ভালো লাগলো ছাতা ইতিহাস।
ভালো থাকবেন ভাই

৩০ শে মে, ২০১৩ সকাল ৮:৩৩

দক্ষিনা বাতাস বলেছেন: আপনিও ভালো থাকবেন।

৪| ৩০ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৮

এরিস বলেছেন: পান্থজন কি কারো নাম??? আমরা বাঙালীরা আমব্রেলা মানেই ছাতা বলি, ইংরেজরা সূর্যের হাত থেকে ছায়া পেতে যে ছাতা ব্যবহার করে তাকে প্যারাসল এবং বৃষ্টির হাত থেকে ব্যবহৃত ছাতাকে আমব্রেলা বলে চমৎকার তথ্য। এই ব্যাপারটা আগে জানতাম না। উৎসবের সময় দেবতার মাথায় একটা প্যারাসল ধরা হত। শীঘ্রই অন্য দেবতাদের মাথায়ও প্যারাসল ধরা হলো। এরপর এথেন্সের রমনীরাও ছাতা ব্যবহার শুরু করে। মেয়েদের ব্যবহার্য সামগ্রীর ভিতরে ছাতা অপরিহার্য অংশ হয়ে যায়। এই অংশটুকু মজা পেয়েছি। খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ তে ছাতার ব্যবহার শুরু হয়!! মানুষ আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে কতো আগে!! ছোটখাটো নিত্যদিনের ব্যবহার্য জিনিসগুলোর এতোসব ইতিহাস জানার আগ্রহ কোনকালে ছিল না। আপনার লেখা পড়ি আর অবাক হই, কতো কিছু আছে চোখের আড়ালে...!! ভালোলাগা।

০১ লা জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৮

দক্ষিনা বাতাস বলেছেন: না, পান্থজন কারো নাম নয়। পান্থ হলো পথিক। এই লাইনটা নিশ্চই দেখেছেন, হে পান্থ, ক্ষান্ত হও কেন হেরি দীর্ঘপথ।

আপনার মত একজন নিয়মিত পাঠক পেয়ে আমার লেখাগুলো স্বার্থক হলো। যদিও এখানে আমার লেখা খুব কম মানুষে পড়ে তাই বিজ্ঞান রিলেটেড লেখাগুলো আমি টেকটিউনসে আমার চেইন টিউনে লিখি। সাথে থাকবেন । ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.