নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডলুপুত্র

লিখে খাই, ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে।

ডলুপূত্র

গ্রামেতে জন্ম আমার বাঁচায় নগর! সারাদিন পথে পথে ধোঁয়া-ধুলো খাই সন্ধ্যায় অফিসে বসের বকা-ঝকা খাই মাঝরাতে বাসায় ফিরে বউয়ের মুখ ঝামটা খাই অবশেষে ক্ষুধাহীন পেটে ঠান্ডা ভাত খেয়ে সামুতে লুকাই।

ডলুপূত্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘চার দিনের টানা কর্মসূচি, শেষ দিনে কবিতা আবৃত্তি’

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০৭

‘চার দিনের টানা কর্মসূচি, শেষ দিনে কবিতা আবৃত্তি’

রবিবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

Click This Link

কাফি কামাল: সামনে কড়া ও কঠোর কর্মসূচি আসছে। দেশবাসী বিরোধী নেতাদের মুখে এমনই হুমকি শুনছে বছরজুড়ে। শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লুটপাটের মহোৎসব, খুন-গুমের আতঙ্কের মধ্যে বিরোধী দলের কড়া ও কঠোর কর্মসূচির হুমকিতে মানুষের দিন কাটছে চরম অস্বস্তিতে। দেড় মাস আগের কথা। এক পৌষি বিকেল। উত্তুরে হাওয়া বইয়ে দিচ্ছে শীতের আমেজ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমগীরকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ডাকা অর্র্ধদিবস হরতাল শেষ হয়েছে মাত্র। নয়াপল্টনে তখনও পুলিশের সতর্ক অবস্থান। জামার পকেটে হাত ঢুকিয়ে কেবল রাস্তায় বের হতে শুরু করেছে রাজধানীর মানুষ। কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ব্রিফিং রুমটি তখন সরগরম। খবরের তালাশে জড়ো হওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড় সেখানে। সবারই কৌতূহল কি কর্মসূচি আসছে বিরোধীদলের তরফে? ফের বাড়বে কি রাজপথের উত্তাপ, নাকি বিক্ষোভেই প্রশমিত হবে ক্ষোভ? কারণ এক বছর আগে থেকেই কড়া ও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুমকিতে মুখর বিরোধী নেতারা।

কিছুক্ষণ আগেও রুমটির পরিবেশ ছিল স্বাভাবিক। গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতেছিলেন গুটিকয়েক নেতা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কার্যালয়ের ভিড়কে অসহনীয় করে তুলছেন নেতাকর্মীরা টিভিতে এক নজর মুখ দেখানোর বাসনায়। যাদের অনেকেই কিছুক্ষণ আগেও ব্যস্ত ছিলেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা বাড়িতে। জামার ভাঁজ ভাঙেনি তখনও। এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন ভ্যাপসা গরমে তারা ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে। বিরক্তি তুঙ্গে উঠছে অপেক্ষা, হৈচৈ এবং ধাক্কাধাক্কিতে। বিরক্তি কাটাতেই গল্পে মেতে উঠেছেন কেউ কেউ। তাদেরই একজন প্রশ্ন করলেন, ভাই কি কর্মসূচি আসতে পারে? আরেকজন ত্বরিৎ উত্তর দিলেন, চারদিনের টানা কর্মসূচি। প্রশ্নকর্তার কৌতূহল উপচে পড়ছে, কি কর্মসূচি ভাই? মুখে মুচকি হাসির রেখা ফুটিয়ে উত্তরদাতা বললেন, প্রথম দিন সারাদেশে বিক্ষোভ, দ্বিতীয় দিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক ঘণ্টার মানববন্ধন, তৃতীয় দিন মসজিদ-মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা এবং শেষ দিন কবিতা আবৃত্তি। উত্তর শুনে বিরক্তির মধ্যেই হেসে উঠলেন অনেকেই। সে হাসির মধ্যেই দফায় দফায় কারাভোগকারী এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, তাই তো হবে। দেখেন না, সারাদিন ব্যবসা করে ব্রিফিংয়ের আগে কিভাবে কার্যালয়ে ছুটে আসছেন বড় বড় নেতারা। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল তাই, নেতার মুক্তির দাবিতে হরতালের পর বিক্ষোভ কর্মসূচি দিলো বিএনপি।

দলের মহাসচিব কারাগারে। এক মামলায় জামিন পান, জড়িয়ে পড়েন দুই মামলায়। আদালত নামঞ্জুর করেন রিমান্ড এবং জামিন দু’টোই। মহাসচিবের এমন দুরবস্থা দেখে গ্রেপ্তার এড়াতে দলীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছাবন্দি হয়ে আছেন মামলার আরেক আসামি দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। আগেরবার সাহস দেখাতে গিয়ে কারাগারে দুঃসহ দিন কাটিয়েছেন তিনি। প্রকৃতি ও আন্দোলনে তখন ছিল গ্রীষ্মকাল। এবার দু’জায়গাতেই শীতকাল। তাই গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি শুভাকাঙক্ষীদের পরামর্শে গুটিয়ে আছেন দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে বসে সংযোগ স্থাপন করছেন কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের। নেতাকর্মীদের সঙ্গে গল্প করতে গিয়ে প্রকাশ করছেন হা-হুতাশ। মহাসচিব কারাভোগ করছেন দিনের পর দিন। কিন্তু কার্যকর কোন কর্মসূচি নেই বিএনপির তরফে। মহাসচিবের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর নেতৃত্বও সীমাবদ্ধ বিক্ষোভেই। পূর্ণ ও অর্ধদিবস মিলিয়ে কয়েকদিন হরতাল-বিক্ষোভ হয়েছে কেবল উত্তরাঞ্চলে। নেতাকর্মীদের মধ্যে ডালপালা ছড়াচ্ছে নানা গুজব।

মহাজোট সরকারের শেষ বছর চলছে। বিগত চারটি বছর বিরোধী দলের সামনে দিয়ে ছুটে গেছে একের পর এক ইস্যু। কখনও জাতীয়, কখনও দলীয়। গ্রাম দেশে একটি কথা আছে, বাইন মাছ কুটতে গেলে ছাই দিয়ে ধরতে হয়। কিন্তু বিএনপি ছাই যোগাড় করতে করতেই ছুটে গেছে ইস্যুর বাইন। রাজনীতিবিদরা বলেন, আন্দোলনের জন্য চাই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত। একদিন আগে-পরে হলেই নিশ্চিত ব্যর্থতা। কিন্তু ঠিক উল্টো মত ব্যক্ত করে বিএনপি নেতারা প্রায়ই বলেন, দিনক্ষণ ঠিক করে আন্দোলন হয় না। নেতাদের এ বক্তব্যই প্রতিফলিত হয় তাদের সিদ্ধান্তে। বিএনপির আন্দোলনের সাফল্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক মহলে। এমনকি দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও। লোকজন বলেন, বিএনপি নেতারা শীতের দিন ছাতা ধরেন মাথায় আর বর্ষাকালে গায়ে চাপান ভারি কোট। তা না হলে একটি নির্বাচিত সরকার যাদেরকে খোদ বিরোধী দলই শুরুতে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাদের ক্ষমতার তিন বছরের মাথায় কেউ তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয়, আর শেষ বছরে এসে মানববন্ধনে দাঁড়ায়!

রাজনৈতিক কৌশল ও নানা ইস্যুতে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সমালোচনায় মুখর থাকেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী নেতারা। জল্পনা-কল্পনার ডালপালা ছড়িয়ে মাত্র কিছুদিন আগে ভারতে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রকাশ্য উদ্দেশ্য ছিল দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বিরোধী নেতার ভূমিকা পালন। সেটা তিনি করেছেনও যথাসাধ্য। কিন্তু তার এ সফর নিয়ে নাখোশ ছিলেন দলের ভেতরে-বাইরে অনেকেই। তাদের কেউ কেউ ঘরোয়া আড্ডায় টিপ্পনি কেটে প্রশ্ন করেন- ভারতে গিয়ে কি আনলেন খালেদা জিয়া? তেমনই এক আড্ডায় একজন বলেন, ভারত থেকে খালেদা জিয়া এনেছেন কৌশল। ভারতের বেশির ভাগ মানুষ নিরামিষাশী। খালেদা জিয়া দেশটির এ খাদ্যাভ্যাসটি প্রয়োগ করছেন আন্দোলনে।

মহাজোট সরকারের তিন বছরের মাথায় দেশব্যাপী রোড মার্চ করে মানুষকে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল বিএনপি। প্রতিটি গণসংযোগে শ’ শ’ মাইলজুড়ে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত হয়েছিল বিরোধী শিবির। কিন্তু হঠাৎ করেই মাথায় চেপে বসা আলটিমেটামের ভূত এলোমেলো করে দেয় সব কিছু। গুম হয়ে যান একজন কেন্দ্রীয় নেতা। প্রতিবাদে রাজপথে উত্তাপ ছড়াতে গিয়ে মামলার জালে আটকা পড়েন বিরোধী নেতারা। একটি মামলা পাল্টে দেয় পুরো চিত্র। আন্দোলনের গরম ভাতে পড়ে ঠাণ্ডা জল। তারপর একটি বছর ধরে বিরোধী নেতাদের মুখে হুমকির বাক্যবাণ। আসিতেছে, আসিতেছে। কড়া ও কঠোর কর্মসূচি। রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল, সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় আর আতঙ্ক। কিন্তু আসে না। তাহলে কি কঠোর আন্দোলন থেকে কৌশলে সরে এসেছে বিএনপি? কখনও রমজান, কখনও পাবলিক পরীক্ষা ‘সে আসিতেছে’কে বিলম্ব করলেও মানুষের আতঙ্ক কাটছে না। মানুষ চায় শান্তি ও স্বস্তি। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের কৌতূহল আসলে আন্দোলনের কোন পথে এগোতে চায় বিএনপি! কেন কর্মসূচি ঘোষণায় দ্বিধাদ্বন্দ্ব। কেনই বা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর হুমকি? এ নিয়ে নানা কথা নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। কেউ বলছেন, বিদেশী বন্ধুরা চায় না তাই। কারণ বিএনপি বড় বেশি বিদেশী বন্ধুনির্ভর হয়ে পড়েছে। আবার কেউ বলছেন, প্রচলিত আন্দোলনের দিন শেষ। মানুষ রাজপথের নৈরাজ্য দেখতে চায় না। কিন্তু বাস্তবতা যেন অন্যরকম। বর্তমান সরকারের হানিমুন পিরিয়ডে আড়ম্বরপূর্ণ কাউন্সিল করে নেতাদের বিশাল কমিটিতে (জাতীয় নির্বাহী কমিটি) গণহারে পদায়ন করেছে বিএনপি। কিন্তু আন্দোলনের মাঠে তাদের দেখা মেলে না। না হরতালে, না মানববন্ধনে। কর্মসূচি শেষে ব্রিফিংয়ে উপস্থিতি ও সন্ধ্যার পর খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে হাজিরা দেয়াই তাদের রাজনীতি। রাজপথে মিছিল-স্লোগানের চেয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোই তাদের কাছে সহজ। প্রতিটি দিন, প্রতিটি কর্মসূচির এমন দৃশ্য দেখে কর্মীদের তীর্যক মন্তব্য। আসলে ক্ষমতায় থাকাকালে চিকন আলী নেতারা মোটা হয়েছেন। এখন তারা শরীর আর সম্পদ বাঁচাতে ব্যস্ত। প্রতিটি বিকেলে প্রতিবাদ সভার মঞ্চে উঠে সরকারের কড়া সমালোচনায় মুখর হন ঠিকই, রাতের গভীরে পাঁচতারা হোটেলে ছুটে যান সমঝোতার টেবিলে। মিছিল-স্লোগানের চেয়ে তাদের জন্য নিরাপদ টেলিভিশনের টকশো। তাই আন্দোলনের ইস্যু ধরার ছাই জোগাড়ে বিলম্ব। ফলে বিএনপির অবস্থা হচ্ছে সেই গ্রামীণ বালকের মতো। যে না পারছে প্রতিরোধ গড়তে, না মেনে নিচ্ছে হার। প্রতিদ্বন্দ্বীর হাতে মার খাচ্ছে আর বলছে, দেখি আরেকটি মার তো!

বর্তমানে বিএনপির মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ কারাগারে ধুঁকে মরছেন। কেউ কেউ তলে তলে সরকারের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। অনেকেই আবার নিরাপদ দূরত্বে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তাই কড়া ও কঠোর কর্মসূচি আসছে না। সেই আসিতেছে, আসিতেছে’র অপেক্ষা বাড়ছে। পৌষ পেরিয়ে এখন মাঘ মাস। শীত জেঁকে বসেছে প্রকৃতি আর আন্দোলনে। মির্জা আলমগীরকে গ্রেপ্তারের পর দিন অর্ধদিবস হরতাল শেষে যে লোকটি মজা করেই বলেছিল, চারদিনের কর্মসূচি আসছে; যার শেষদিন কবিতা আবৃত্তি। সেটা বাস্তবেই রূপ দিয়েছে বিরোধীদল। পাঠ্যপুস্তক থেকে মওলানা ভাসানীর জীবনী বাদ দেয়ার প্রতিবাদে ৩১শে জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপি সমর্থক একটি দল আয়োজন করেছিল কবিতা আবৃত্তির! প্রধান অতিথি করা হয়েছিল দলের সমন্বয়ক তরিকুল ইসলামকে। তবে শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয় সে আয়োজন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.