নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডলুপুত্র

লিখে খাই, ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে।

ডলুপূত্র

গ্রামেতে জন্ম আমার বাঁচায় নগর! সারাদিন পথে পথে ধোঁয়া-ধুলো খাই সন্ধ্যায় অফিসে বসের বকা-ঝকা খাই মাঝরাতে বাসায় ফিরে বউয়ের মুখ ঝামটা খাই অবশেষে ক্ষুধাহীন পেটে ঠান্ডা ভাত খেয়ে সামুতে লুকাই।

ডলুপূত্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাফি কামাল-এর নতুন গল্প `প্রতিশোধ'

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:১৮

প্রতিশোধ

কাফি কামাল



বয়সে ভাটার টান। হৃদয়ে জোয়ারের উচ্ছ্বাস। দেহ ও মনের এ জোয়ার ভাটায় খেলা করছে খবিরউদ্দিনের লালসার বাইন। ক’বছর ধরেই মনের ইচ্ছায় চলছে না তার ঊনষাটের ঝড়-ঝঞ্জা পেরুনো শরীর। বয়সের ঝড়ো হাওয়ায় রীতিমতো বিধ্বস্ত। আর উপকূলের দীঘল নারকেল গাছের ঝড়ো হাওয়ায় দুলতে দুলতে এখনও অটুট তার মন। লম্বা সময় সরকারি চাকরি করছেন। চষে বেড়িয়েছেন দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। নিজের পুকুর খনন করতে করতে দীঘি তো বানিয়েছেনই সুযোগ পেলে সাঁতার কেটেছেন অন্যের পুকুরেও। স্রোতস্বিনী নদী থেকে মজা কুয়ো সবখানেই তার সমান আগ্রহ। শীতল স্থির জলে গা ডুবিয়ে যেমন মজা পান তেমননি বেগবান নদীতে ঢেউ তুলে। সাতঘাটের জলে মিটিয়েছেন তৃষ্ণা। দীর্ঘদিনের এ আস্বাদন অভ্যাস এখনও বিষপোকার মতো কামড়ায় তার শরীর।



আঠারো বছর আগের কথা। খুলনায় বদলীটা এড়াতে চেয়েছিলেন খুব করে। ঢাকা ছেড়ে যাবার সময় মনে হয়েছিল স্বর্গ ছাড়ছেন। একটি মোড়ের কথা মনে পড়ছিল খুব। চেনা গলির পরিচিত মুখগুলো চোখের পর্দায় ভাসছিল বারবার। খুলনায় কি সহজে কোন মোড় মিলবে? আর ঢাকার আভিজাত্য পেয়ে বসেছিল তার স্ত্রী মর্জিনা বেগমকে। সন্তানের পড়াশোনার খাতিরে তিনি থেকে গিয়েছিলেন রাজধানীতে। কিন্তু খুলনার বদলীটাই ঘুরিয়ে দেয় খবিরউদ্দিনের জীবনের মোড়। আগে গল্প শুনতেন বাতাসে টাকা উড়ে। খুলনা বদলীর পর খবিরউদ্দিন পেয়েছিলেন দিব্যদৃষ্টি। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি দেখতে পেয়েছিলেন বাতাসে টাকা উড়ছে। বৈষয়িক বুদ্ধিতে পাকা খবির সুযোগ হাতছাড়া করেননি। কেবল ধরেছেন আর ভরেছেন। তখনই মর্জিনা বেগমের পরামর্শে রাজধানীর প্রান্তসীমায় কিনেছিলেন সাতকাটা নিষ্কন্টক জমি। যেখানে এখন দাঁড়িয়ে আছে তার ছয়তলা উঁচু বাড়ি সুখমহল। যার উঠোনে গোলাপ ঝাঁড়ের পাশে কাঁঠালচাপা গাছের তলায় এখন অবসর কাটে খবিরউদ্দিনের। নিচতলার সামনের দিকে একটি কক্ষে তখন বাতের ব্যথায় ককায় মর্জিনা বেগম। তিনতলার ভাড়াটিয়ার বউটি বাইরে যাওয়া-আসার পথে চাঁপাতলায় ইজি চেয়ারে দোল খাওয়া খবিরউদ্দিনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেই পিত্তি জ্বলে যায় মর্জিনা বেগমের। যদিও নিজের বাড়িওয়ালী ভাব ধরে রাখতে ঠোঁট কামড়ে সেটা হজম করেন। পরক্ষণে খবিরউদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে ঘ্যানর ঘ্যানর শুরু হয় তার। মর্জিনা বেগম বলে, ডুবসাঁতারের বদঅভ্যাসই ডুবিয়েছে খবিরউদ্দিনকে। সারাজীবন নানা জায়গায় খননকাজে দু’হাতে টাকা না উড়ালে খবিরের নামটি উঠতো কেউকেটাদের তালিকায়। স্ত্রীর ঘ্যানর ঘ্যানর শুনে খবিরউদ্দিন মনে মনে স্মৃতিরোমন্তন করে। মোগল সম্রাটদের জন্য তার তখন মায়া হয়। তার অনেক বন্ধুই অবসরে গিয়ে স্মৃতিকথা জাতীয় ইটাকৃতির বই লিখেছে। খবির জানে তার ডুবসাঁতারের গল্পগুলো প্রকাশিত হলে বইমেলায় তরুণদের ভীড় বাড়বে। ভাবে আর গোঁফের রেখায় হাসি ফুটিয়ে মর্জিনার কোমরে তেল মালিশরত আলেয়ার দিকে তাকায়। আলেয়া তার পাতানো জেঠার মুখে দুষ্টুমীভরা হাসির রেশ দেখে মর্জিনা বেগমের কোমরের দিকে মনোযোগ দেয়। আলেয়া জানে এ সময়টায় একটু অমনোযোগী হলেই বুড়ির কলাগাছের মতো ভারী পা এসে আঘাত করবে তার শরীরে। এমনিতে একাৎ থেকে ওকাৎ হতেই ডাক চিৎকার পাড়ে বুড়ি। কিন্তু লাথি কষার সময় বুড়ির শরীরে যেন কালী এসে ভর করে।



আজকাল খবিরউদ্দিনের মনটা বড্ড উড়ো উড়ো করছে। চোখের সামনে গিয়ে ফুড়ুৎ করে একটি চড়ুই উড়ে গেলেও তার মন কেমন কেমন করে। ইচ্ছা করে দুহাতে ঝাপটে ধরে। বাতের ব্যথা পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই মর্জিনার শরীর কুকড়ে দিয়েছে। বিগড়ে দিয়েছে মেজাজটাও। ইচ্ছা করলে একটু ধরা ছোঁয়াও যায় না। যেন, চাতক মলো জল পিপাসায় পাশে থাকতে নদী মেঘনা...। ছত্রিশ বছর আগের কথা মনে পড়ে। লক্ষ্মীপুরের ভূঁইয়া বাড়ির মর্জিনাকে হলদে চড়ুই করে ঘরে তুলেছিল খবির। অল্প বয়স, তুলতুলে, আটোসাটো শরীরের বাঁধন। কুকড়ে যাওয়া মর্জিনাকে দেখলে সেদিনের কথা মনে পড়ে খবিরের। প্রথম রাতের। রাত তখন দ্বিপ্রহর। ক্ষুধার্ত বাঘের মতো সে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এত্তটুকু মর্জিনার শরীরে। তার হাতের আঙুলগুলো খুঁজেছিল একজোড়া ডালিম। পুকুরে ডুব দিতে গিয়ে দেখেছিল পুকুর কই চৌবাচ্চা মাত্র। সে কি কষ্ট তার, দুজনের। সেদিন খবির পুকুরে ডুব দিতে না পারলেও নিজের পুকুর খননের আনন্দে অস্থির হয়ে পড়েছিল। তারপর ঘন ঘন খালি পুকুরে নামতো। কিন্তু সে এক আশ্চর্য পুকুর। যতই ডুব দেয় ততই বাড়তে থাকে গভীরতা, পরিধি।



সৎ মায়ের সংসারে চোখের পানি আর নাকের জল শুকিয়ে সাত মাস আগে ঘর ছেড়েছে আলেয়া। ঢাকা শহরে এসে উঠেছিল দূরসম্পর্কের এক ফুফুর খুপড়ি ঘরে। বেগুনবাড়ির এক চিকন গলির শেষপ্রান্তে রিক্সাওয়ালা স্বামীর সংসার ফুফুর। যেদিন আলেয়া এসে উঠেছিল সে খুপড়িতে সেদিনই তার মনের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে একটি সামুদ্রিক ঝড়। রাতে ছোট্ট ফুফাতো বোন হাসিনাকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছিল মেঝেতে। মধ্যরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে শুনতে পায় ফুফাকে অশ্লীল গালাগাল দিচ্ছে ফুফু। গালাগালের নেপথ্য কারণ যে ফুফার বদনজর সেটা বুঝতে আলেয়ার সময় লাগে না। চোখ বন্ধ করে রাতভর মড়ার মতো পড়েছিল সে। একটুও ঘুম আসেনি। দুইদিন পর ফুফুই তাকে এ বাড়িতে এনে কাজে লাগিয়ে দিয়েছিল। ফুফু চলে যাবার পরপরই মর্জিনা বেগম কড়া ধমক দিয়ে বলেছিল, এই মেয়ে এ বাড়িতে কিন্তু কোন লটর-ফটর চলবে না। কয়েকদিন পরই মর্জিনা বেগমের সে ধমকের মানে বুঝতে পেরেছিল আলেয়া। বাড়ির বুড়ো লোকটির চোখ যেন তার শরীরে খেলা করে। আলেয়াকে দেখলেই তার চোখের তারা নাচন জুড়ে। মুহূর্তে মুহূর্তে বিনা কারণে কাছে ডাকে। উঠোনের চাঁপা গাছের তলায় বসে একবার চশমা আনতে বলে। পরক্ষণে বলে একগ্লাস পানি খাওয়া। দু’য়েকদিনের অভিজ্ঞতায় আলেয়া বুড়োর প্রয়োজনীয় জিনিষগুলো একসঙ্গে এনে রাখে। তখন বুড়ো বলে, তোরে কি এসব আনতে বলেছি আমি? তখন আলেয়া হেসে বলে জেটিমা ডাকছে, যাই।



খবিরউদ্দিনের বড় ছেলে পারভেজের বিয়ের কিছুদিন পরই গুলশানে নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠেছে। তার ব্যাংকার বউ শহরতলীর এ এলাকায় অস্বস্তিবোধ করে। অফিসে যাতায়াতের সুবিধার কথা বলে বুড়ো বুড়িকে ছেড়ে আলাদা হয়ে গেছে তারা। এ নিয়ে মর্জিনা বেগম খুব মনখারাপ করেছিলেন। খবির অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন বুড়ো-বুড়োর অত্যাচার থেকে বাঁচতেই ছেলে আর ছেলে বউয়ের এমন সিদ্ধান্ত। বাস্তববাদি মানুষ তিনি। বুঝেন কড়ি ফেললেই সেবাযত্ন কেনা যায়। অবশ্যই নানা কিসিমের ফলমূল নিয়ে মাসে দুয়েকবার ঢু মেরে যায় পারভেজ। আঙুর পেলে খবিরের দিল খোশ হয়। পত্রিকা পড়তে পড়তে টপাটপ আঙুর গিলেন। তখন চড়ুই পাখি দেখলেই ভেতরটা কেমন কেমন করে।



মর্জিনা বেগম প্রতিবেশীদের কাছে ঠাট বাড়াতেই বড় ছেলের জন্য এনেছিলেন শহুরে মেয়ে। দেমাগি মেয়েটি সে ঠাটে জল ঢেলে তার ছেলেকেই আলাদা করে ফেলে। পারভেজ বউকে নিয়ে গুলশানের ফ্ল্যাটে চলে যাওয়ার কিছুদিন পরই ক্ষুব্ধ মর্জিনা বেগম ছোট ছেলে পাভেলের জন্য ঘরে বউ আনেন। মফস্বলের এক ব্যবসায়ীর মেয়েকে। কিন্তু কপালের লিখন যায় না খণ্ডন। ছোট বউটিও উড়নচণ্ডি। সপ্তাহে কম করে তিনদিন মার্কেটে না গেলে তার ভাত হজম হয় না। প্রথম প্রথম দু’হাত ভরে কেনাকাটা করত, এখন মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে আর হাল ফ্যাশনের খোঁজখবর নেয়। বাড়িতে থাকলেও সারাক্ষণ নিজের ঘরে খিল দিয়ে রাখে। চোখের জল ফেলে, অভিশাপ দিয়ে দিয়ে ক্লান্ত মর্জিনা বেগম এখন আলেয়ার উপর নির্ভরশীল।



সৎ মায়ের সংসারে আলগা হয়ে গিয়েছিল আলেয়ার মাথার চুল। কথায় কথায় চুলের ঝুঁটি ধরে টেনে পিঠের ওপর রাগের ছাতু গুড়ো করতেন সৎ মা শরিফা খাতুন। বাবা ছিলেন স্বাক্ষীগোপাল। প্যাচার মতো চেয়ে চেয়ে দেখতেন আর খুক খুক করে কাশতেন। একটি লায়েক মেয়ের ওপর দ্বিতীয় স্ত্রীর এমন নির্যাতনের পরও তার মুখ ফুটতো না। হাতগুলো আলস্যের জমাট ছড়াতো না। অর্থের অভাবে বিয়ের কথাও ভাবতেন না তিনি। অন্তত আড়ালে আবড়ালেও বাবার মুখে তার বিয়ে নিয়ে কোন উদ্বেগের কথা শুনতে পায়নি আলেয়া। বুকের ভেতর অনেক কষ্টের জমানো পাথর নিয়ে গ্রাম ছেড়েছিল সে। সুখমহলে আসার পর চুলের গোড়া খানিকটা শক্ত হয়েছে। কিন্তু কান দুটো পচে গেছে। তার শরীরে সৎ মা রাগের ছাতু উড়াতেন হাতে, সুখ মহলে বুড়ো বুড়ি রাগ ঝাড়েন পায়ে। কথায় কথায় ধুমধাম লাথি কষেন। বুড়ো তো আদরও করেন লাথি মেরে। যদিও বুড়োর আদরের লাথিগুলো পড়ে আলেয়ার পাছায়। আলেয়া খেয়াল করে সামনে পড়লে বাড়ির ছোট কর্তা পাভেলের চোখও চকচক করে। কিন্তু ছোট বউয়ের চোখ দুটি যেন শকুনীর। সবসময় স্বামীকে চোখে চোখে রাখে। স্ত্রৈণ প্রকৃতির পাভেল বউয়ের দুরবিন গলিয়ে আলেয়ার দিকে পা বাড়াতে সাহস করে না। শুধু একদিন তরকারিতে ঝালের মাত্রা বেশি হওয়ায় জোরসে লাথি কষেছিল ভিতুর ডিমটি।



চার বছর আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন খবিরউদ্দিন। অবসরের পরও দুইবছর দারুন ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন তিনি। কলসালটেন্ট হিসাবে নানা প্রজেক্টে কাজ করেছেন। চাকরিজীবনে পেয়েছেন ডুবসাঁতারের অবাধ সুযোগ। কনসালটেন্ট হিসাবেও নির্ধারিত সম্মানীর বাইরে পেয়েছেন ডুবসাঁতারের আলাদা সুবিধা। শেষদিকে চাঁদপুরের প্রজেক্টে বলতে গেলে তিনি ডাকাতিয়ার এপার-ওপার সাঁতরে বেড়িয়েছেন। পারভেজের বিয়ের পর তার ডানাগুলো কেটে ফেলেছে সামাজিক সম্মানের ভয়। পাভেলের বিয়ের পর আক্ষরিত অর্থেই পরিণত হয়েছে কুনোব্যাঙে। উঠোনে চাঁপা গাছের তলে বসে মাঝে মাঝে খবিরউদ্দিন নিজেই নিজেকে উপহাস করে- আহারে খবির। শেষ পর্যন্ত ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে তোমার খবিস।



ঘরবন্দি হওয়ার পর থেকেই বাড়তে শুরু করে খবিরউদ্দিন উপভোগ। ভাড়াটিয়াদের বউ থেকে বাসার কাজের মেয়ে, পথ চলতি তরুনী থেকে কার্নিশে উড়োউড়ি করা চড়ুই সবখানেই তার গোপন উপভোগ উপচে পড়ে। আগের বয়সি কাজের মেয়েগুলোর দিকে মনোযোগ গিয়ে তাকালেই ঘেন্না ধরে যেতো খবিরউদ্দিনের। আলেয়া আসার পর থেকে সে ঘেন্নাবোধ উবে গিয়ে তৈরি হয়েছে এক মুগ্ধতা। কিন্তু অল্প বয়সি মেয়ে। তার উপর বেশ চালাক চতুর, হাত বাড়াতে ভয় হয়। আলেয়া আসার পর থেকে একটি নিষ্কন্টক সুযোগের অপেক্ষায় দিনেরপর দিন পার করছেন খবিরউদ্দিন। আলেয়াকে দেখলেই তার ভেতরটা লালসায় জুল জুল করে। মেয়েটার পুষ্টবক্ষ, চওড়া পশ্চাৎদেশ, কোমল চাহনি তাকে মাতাল করে রাখে।



চারদিন হলো বউকে নিয়ে থাইল্যান্ড বেড়াতে গেছে পাভেল। তাদের অনুপস্থিতি একধরনের শূন্যতা ভর করছে সুখমহলে। সে শূন্যতাকে বাড়িয়ে দিয়ে পারভেজ সকালে মর্জিনা বেগমকে নিয়ে গেছে নিজের ফ্ল্যাটে। শ্বশুরবাড়ি থেকে নাকি মেহমান আসবে। খবিরউদ্দিন ইচ্ছা করেই যায়নি। তখন ভেবেছিল বেলা করে একটু ঘুরতে বেরুবে। দুপুরে কোন রেস্টুরেন্টে খাবে। মর্জিনা বেগম ছেলের সঙ্গে গুলশান যাবার পর হঠাৎ মত পাল্টে ফেলেন তিনি। শরীরটা তার কেমন কেমন করতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর চাঁপাগাছের তলায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আলেয়াকে ডাক দিলেন। মেয়েটি আসতে এত দেরি করছে কেন? দ্বিতীয়বার ডাক দিতেই ছুটে এলো আলেয়া।



খবিরউদ্দিন কণ্ঠে কৃত্রিম রাগ ফুটিয়ে বললেন, শুনতে পাস না?

আলেয়া জবুথবু হয়ে উত্তর দেয়, জ্বি বলেন- কি করতে হবে।

খবিরউদ্দিন বুঝতে পারে এটাই সুযোগ। তাই কপালে চামড়ার ভাঁজ তুলে বলেন, আমার খুব মাথা ধরেছে। চল রুমে নিয়ে চল।



আলেয়ার কাঁধে হাত রেখে খবিরউদ্দিন উঠে দাঁড়ায়। এ সময় আলেয়ার সামনে টুপ করে একটি চাঁপাফুল খসে পড়ে। খবিরউদ্দিন সেটা তুলে নিতে বলে আলেয়াকে। মেয়েটি নিচু হলেই তার পিঠে হাত রাখে। ফুলটি কুড়িয়ে নিয়ে দাঁড়াতেই আলেয়াকে জড়িয়ে ধরে নিজের রুমের দিকে হাঁটতে থাকে খবির। বাড়ির কার্ণিশ থেকে একটি চড়ুই পাখি ফুড়ুৎ করে পাশের বাড়ির দিকে উড়াল দেয়। সেটা দেখে বুড়োর গোফের রেখায় মুচকি হাসে উঁকি মারে।



নিজের ঘরে ঢুকেই বিছানায় শুয়ে পড়ে খবিরউদ্দিন। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। কিশোরী আলেয়া বুঝতে পারে না বুড়োর ভেতরের খবিস সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সে ভয়ার্ত মুখে জিজ্ঞেস করে, বড় ভাইজানের বাসায় ফোন দেব?

খবির হাত উচিয়ে নিষেধ করে বলেন, ওদের বাসায় মেহমানের ঝামেলা চলছে। ফোন দিয়ে বিরক্ত করিস না।

তাহলে কি ডাক্তার সাহেবের নাম্বারে ফোন দেব?

তার চেয়ে বরং আমার ঔষুধগুলো এনে দে।

আলেয়া ঔষুধের বাক্স আর পানির গ্লাসটি বাড়িয়ে দিলে খবির একটি গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট মুখে পুরে। আলেয়া বুড়োর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

বিছানায় শুয়েই বুড়ো ফের আলেয়াকে ডাকে, মাথাটা একটু টিপে দে তো।

আলেয়া সিথানের দিকে দাঁড়িয়ে মাথা টিপতে শুরু করেছিল। বুড়ো বালিশের পাশে বসে ভালো মতো টিপতে বলে।

বিছানার পাশে বসতেই বুড়ো তার পাকা হাতটি আলতো করে ছুয়ে দেয় আলেয়ার নরম স্তনে।

আলেয়া ত্বরিৎ উড়নাটা ঠিক বসে বসে।

কয়েক মুহূর্ত পর আলেয়ার একটি হাত ধরে হ্যাচকা টান মেরে নিজের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরেন বুড়ো। মুখে তার দুষ্টুমির হাসি।

ঘটনার আকস্মিকতায় আলেয়া মোচড়া কিংকর্তবিমূঢ় হয়ে পড়ে। পরক্ষণে মোচড়া মুচড়ি শুরু করলেও বুড়োর পাকা হাতের বাধন আলগা করতে পারে না। মোচড়াতে মোচড়াতে বলে, আমাকে ছেড়ে দেন। আমি কিন্তু চিৎকার দেব।



খবির জানে, ঢাকা শহরে একজনের আর্তচিৎকার আরেকজনের কানে সহজে পৌছায় না। বাসা-বাড়িতে কাজের মেয়ের চিৎকারতো গা সওয়া। বুড়ো ভাবে আর হাতের চাপ বাড়ায়।

ভয়ে আলেয়ার কলজে শুকিয়ে যায়। হু হু করে কেঁদে ফেলে।

বুড়ো ধমক দিয়ে বলে, এই কাদিস কেন।

আপনি আমার বাপ লাগেন, আমাকে ছেড়ে দেন। আলেয়ার গলা ভেঙে বানের জলের মতো কান্নার শব্দ আসে। আর বুড়ো মেয়েটির মুখে অনবরত চুমো খেতে থাকে। কান্নার শব্দ কমাতে আলেয়ার নিচের ঠোঁটটি মুখে পুরে চুষতে থাকে। তার কপোল বেয়ে গড়িয়ে নামা অশ্রুধারা ঢুকে পড়ে বুড়োর মুখে।

বুড়ো হলেও আঙুর খেকো খবিরউদ্দিনের গায়ের জোর আর রক্তের উষ্ণতা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। তার পুরুষালী বক্ষে চাপাচাপি ও অনবরত চুমুতে আলেয়ার মোচড়ানি কমে আসে। হাজার হোক নারীর শরীর। বুড়ো বুঝে ধীরে ধীরে ছেড়ে দেয় নারীর শরীর। যেভাবে অবাধ্য পশু পোষ মানে।



আলেয়ার বেশ কয়েকবছর আগের কথা মনে পড়ে। পুর্ণিমা রাতে গ্রামের উঠোনে খেলছিল চাচাতো ভাইবোনরা মিলে। চোর পুলিশ খেলতে গিয়ে এক ফাঁকে চাচাতো ভাই করিম তাকে নিয়ে গিয়েছিল পুকুর পাড়ে। সেখানে খড়ের গাদায় লুকিয়েছিল তারা। তার চেয়ে দুই বছরের বড় করিম হঠাৎ ঝাপড়ে ধরে তার বুকের ওপর চড়ে বসেছিল। একটুক্ষণ গা ঘষাঘষি করেছিল শুধু। তারপর এক দৌড়ে দুইজন চলে এসেছিল উঠোনে। ব্যস ওটুকুই। বড় হয়ে কখনো এসব করেনি। কিন্তু নানা জনের কাছে গল্প শুনেছে সোমত্ব নারী-পুরুষ সুযোগ পেলে কি করে। পুরুষ জাতি নাকি মৃত্যুর আগেও বউয়ের হাতে ছোয়া পেতে চায়। খবিরউদ্দিনের কাণ্ডে তার সে কথা মনে পড়ে।

আলেয়া নিচু স্বরে বলে, না, আমার খুব ভয় করছে।

ধুৎ, ভয়ের কিছু নেই। এখানে কেউ দেখবে না।

আমি পারব না। আমাকে ছেড়ে দেন।

আরে পাগলী ভয়ের কিছু নেই। আমি তোকে একটি ভালো ছেলের কাছে বিয়ে দেব।

আলেয়া ফের কেঁেদ উঠে।

বুড়োর পাকা হাত কিশোরীর স্পর্শকাতর প্রদেশে ভ্রমণ করে বেড়ায়। অনেকক্ষণ দলাই-মলাইয়ের পর বুড়ো এক হাতে আলেয়া ইজরের গিট খুলতে খুলতে বলে, আমি তোকে অনেক কিছু দেব। তোর কোন ক্ষতি হবে না। শুধু একবার।



আলেয়া কিছুটা ক্ষান্ত দেয়। জানে, যতই চিৎকার করুক এখানে কেউ তাকে বাঁচাতে আসবে না। ভাড়াটিয়ারা মালিকের বাড়ির দরজায় নক করার সাহস পাবে না। তাই অনন্যোপায় হয়ে নিজের ‘আপনা মাংসে হরিণাবৈরী’ শরীরকে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেয়। সুযোগটি পুরোপুরি কাজে লাগায় ডুবসাঁতারে অভিজ্ঞ বুড়ো খবির। ততক্ষণে আলেয়ার সালোয়ার, কামিজ, ব্রা সব খুলে ফেলে। তার সামনে এখন শুয়ে আছে একটি কুমারী দেবী।



ভয়ে ও আতঙ্কে আলেয়ার চেহারাটা প্রথমে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আলেয়া দুহাতে দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললেও বুড়ো তার কুমারী দেবীর ওষ্ঠ আরাধনায় সে হাত সরিয়ে ফেলেন।

আগে কোন পুরুষের হাত পড়েনি আলেয়ার শরীরে। অনেকক্ষণের ঝাপ্টাঝাপ্টিতে কিশোরীর অনভিজ্ঞ শরীরটা প্রথম আদিম স্পর্শের স্বাদ ও শিহরণে আগুনের মত হয়ে উঠে ততক্ষণে। কেঁপে কেঁপে ওঠে। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসে। ক্ষুধার্ত বাঘের মতো হরিনীর ওপর হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন খবিরউদ্দিন। আরাধনায় মেতে উঠে বুঝতে পারলেন তিনি এখন মাথা মোটা। ভোতা। অভূতগম্য গুহা পথে মাথা গলিয়ে ঢুকতে পারছেন না স্বর্গে। আকস্মাৎ সমস্ত শক্তি হারিয়ে অসহায়ের নিস্তেজ হয়ে পড়লেন তিনি।



মুহূর্তেই পাল্টে গেল আলেয়ার চেহারা। প্রথমবার রক্তের স্বাদ পাওয়া ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মতো ক্ষিপ্র হয়ে উঠল সে। সাতমাস ধরে সুখমহলে কাজ করতে গিয়ে ছোটখাট ভুলেও তার শরীরে জুটেছে সবার লাথি। আজ তার দিন। হঠাৎ সে ঝেড়ে লাথি কষল বুড়ো খবিরউদ্দিনের অণ্ডকোষে। ‘মাগো’ বলে একটি অস্ফুট শব্দ বের হয় বুড়োর গলা বেয়ে। পরমুহূর্তে কাটা নারকেল গাছের মতো বিছানায় লুটিয়ে পড়ে তার বয়সী শরীর।

অলঙ্করণ: শতাব্দী জাহিদ, দৈনিক যায়যায়দিন

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২২

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
পড়েছিলাম আগেই আজ জানিয়ে গেলাম ভাললাগাটুকু ৷ মনে হল বড়গল্প ৷ অনেকচরিত্রের আগমন ও তাদের স্বভাবের কিঞ্চিৎ রেখাপাত ৷ সাথে লেখকের দৃশ্যের বর্ণনা ৷ এককথায় পরিতৃপ্তির একঢোক জলের সমাপ্তি ৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.