| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিয়েরা লিয়নে ১৯৯৯ সালে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেয় জাতিসংঘ। তখন বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ সিয়েরা লিয়নে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগ দেয়। বাংলাদেশ থেকে ৭৭৫ জন সেনাসদস্যের দলটি সিয়েরা লিয়নের দক্ষিণাঞ্চলে দায়িত্ব নেয়। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ থেকে আরো সেনাসদস্য সিয়েরা লিয়ন যান এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ হাজার ৩০০ জন সেনা একত্রে সিয়েরা লিয়নে কর্মরত ছিলেন। এরপর আরো সেনাসদস্য যান সেখানে। সর্বমোট প্রায় ১২ হাজার সেনাসদস্য সিয়েরা লিয়নে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের সেনাদল তাঁদের নিয়মিত সামরিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আরো অনেক উদ্যোগ নেয়। দেশটিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনার জন্য বিবদমান বিভিন্ন জাতির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। তাঁদের মধ্যে আস্থা ও নিরাপত্তাবোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ওই সময়েই ঘটতে থাকে ভাষার আদান-প্রদান। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সেনাসদস্যরা ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষাও ব্যবহার করতে থাকেন। বাংলা ভাষার প্রতি ধীরে ধীরে আগ্রহ প্রকাশ করেন স্থানীয় লোকজন। তাঁরা বাংলা ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন। পরে অনেকেই ভালোবেসে ফেলেন বাংলা ভাষা। ওই সময় বাংলাদেশি সেনারা বিভিন্ন স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন ও মেরামতের কাজ করেন। বিভিন্ন গ্রামে স্থানীয়দের বাংলা অক্ষরজ্ঞান দেন। সহজে রপ্তযোগ্য ভাষা হিসেবে, সেখানকার অনেক মানুষ বাংলায় কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। অনেকে তা আয়ত্ত করে অতি সহজে খুব স্বল্প সময়ে। ভাষার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচিত হতে থাকেন। স্থানীয়রা বিশেষত তরুণ-তরুণীরা বাংলায় কথা বলতে শিখে যান। বিভিন্ন সভায় স্থানীয়রা বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করেন। তখন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয়দের বাঙালি নাচ ও গান পরিবেশন করতে দেখা যায়। বাংলাদেশ সেনাদলের আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের ফলে সিয়েরা লিয়নে বাংলা ভাষা একপর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। স্থানীয়রা কাজ চালানোর মতো বাংলা ভাষা শিখে যান। এর ফলে সিয়েরা লিয়নের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ তেজান কাব্বা বাংলা ভাষাকে দেশটির অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন। বাংলা ভাষার স্বীকৃতির সাথে সাথে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার স্বীকৃতিও দিয়েছে।
©somewhere in net ltd.