নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে জলে আগুন জ্বলে

বালক ভুল করে পড়েছে ভুল বই , পড়েনি ব্যাকরণ পড়েনি মূল বই

দস্যু রত্নাকর

ছাত্র জীবনের একসময় সক্রেটিস , প্লেটো , রুশো , মার্ক্স এর দর্শনের প্রেমে পড়েছিলাম । এখন প্রতিদিন সক্রেটিস , প্লেটো , রুশো , মার্ক্স এর দর্শন পড়িয়ে সেই আনন্দটা ধরে রেখেছি ।

দস্যু রত্নাকর › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্মলেন্দু গুণের...................ছয়টি কবিতা

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:০৮

১.............শুধু তোমার জন্য



কতবার যে আমি তোমোকে স্পর্শ করতে গিয়ে

গুটিয়ে নিয়েছি হাত-সে কথা ঈশ্বর জানেন।

তোমাকে ভালোবাসার কথা বলতে গিয়েও

কতবার যে আমি সে কথা বলিনি

সে কথা আমার ঈশ্বর জানেন।

তোমার হাতের মৃদু কড়ানাড়ার শব্দ শুনে জেগে উঠবার জন্য

দরোজার সঙ্গে চুম্বকের মতো আমি গেঁথে রেখেছিলাম

আমার কর্ণযুগল; তুমি এসে আমাকে ডেকে বলবেঃ

‘এই ওঠো,

আমি, আ…মি…।‘

আর অমি এ-কী শুনলাম

এমত উল্লাসে নিজেকে নিক্ষেপ করবো তোমার উদ্দেশ্যে

কতবার যে এরকম একটি দৃশ্যের কথা আমি মনে মনে

কল্পনা করেছি, সে-কথা আমার ঈশ্বর জানেন।

আমার চুল পেকেছে তোমার জন্য,

আমার গায়ে জ্বর এসেছে তোমার জন্য,

আমার ঈশ্বর জানেন- আমার মৃত্যু হবে তোমার জন্য।

তারপর অনেকদিন পর একদিন তুমিও জানবে,

আমি জন্মেছিলাম তোমার জন্য। শুধু তোমার জন্য।

২.............যাত্রাভঙ্গ



হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে

মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না

এক কে করি দুই।



হেমের মাঝে শুই না যবে,

প্রেমের মাঝে শুই

তুই কেমন কর যাবি?

পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া

আমাকেই তুই পাবি।



তবুও তুই বলিস যদি যাই,

দেখবি তোর সমুখে পথ নাই।



তখন আমি একটু ছোঁব

হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর

বিদায় দুটি পায়ে,

তুই উঠবি আমার নায়ে,

আমার বৈতরণী নায়ে।



নায়ের মাঝে বসবো বটে,

না-এর মাঝে শোবো,

হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ

দুঃখ দিয়ে ছোঁব।

৩............মানুষ



আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,

হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,

মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ।



আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,

গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।

সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না,

অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না ।

কী করে তfও বেঁচে থাকছি, ছবি আঁকছি,

সকালবেলা, দুপুরবেলা অবাক করে

সারাটা দিন বেঁচেই আছি আমার মতে । অবাক লাগে ।



আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে জুতো থাকতো,

বাড়ি থাকতো, ঘর থাকতো,

রাত্রিবেলায় ঘরের মধ্যে নারী থাকতো,

পেটের পটে আমার কালো শিশু আঁকতো ।



আমি হয়তো মানুষ নই,

মানুষ হলে আকাশ দেখে হাসবো কেন ?

মানুষগুলো অন্যরকম, হাত থাকবে,

নাক থাকবে, তোমার মতো চোখ থাকবে,

নিকেলমাখা কী সুন্দর চোখ থাকবে

ভালোবাসার কথা দিলেই কথা রাখবে ।



মানুষ হলে উরুর মধ্যে দাগ থাকতো ,

বাবা থাকতো, বোন থাকতো,

ভালোবাসার লোক থাকতো,

হঠাৎ করে মরে যাবার ভয় থাকতো ।



আমি হয়তো মানুষ নই,

মানুষ হলে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা

আর হতো না, তোমাকে ছাড়া সারাটা রাত

বেঁচে থাকাটা আর হতো না ।



মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ;

অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই,

অবহেলায় মানুষ ভেবে জাপটে ধরি ।

৪..................পূর্ণিমার মধ্যে মৃত্যু



একদি চাঁদ উঠবে না, সকাল দুপুরগুলো

মৃতচিহ্নে স্থির হয়ে রবে;

একদিন অন্ধকার সারা বেলা প্রিয় বন্ধু হবে,

একদিন সারাদিন সূর্য উঠবে না।



একদি চুল কাটতে যাব না সেলুনে

একদিন নিদ্রাহীন চোখে পড়বে ধুলো।

একদিন কালো চুলগুলো খ’সে যাবে,

কিছুতেই গন্ধরাজ ফুল ফুটবে না।



একদিন জনসংখ্যা কম হবে এ শহরে,

ট্রেনের টিকিট কেটে

একটি মানুষ কাশবনে গ্রামে ফিরবে না।

একদিন পরাজিত হবো।



একদিন কোথাও যাব না, শূন্যস্থানে তুমি

কিম্বা অন্য কেউ বসে থেকে বাড়াবে বয়স।

একদিন তোমাকে শাসন করা অসম্ভব ভেবে

পূর্ণিমার রাত্রে মরে যাব।



একদিন সারাদিন কোথাও যাব না।

৫........................তোমার চোখ এতো লাল কেন ?



আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই

কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,

শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরজা খুলে দেবার জন্য।

বাইরে থেকে দরজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই

কেউ আমাকে খেতে দিক। আমি হাত পাখা নিয়ে

কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না।

আমি জানি এই ইলেকট্রিকের যুগ

নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী-সেবার দায় থেকে।

আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুকঃ

আমার জল লাগবে কিনা, আমার নুন লাগবে কিনা,

পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরোও একটা

তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কিনা।

এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই

কেউ একজন ভেতর থেকে আমার ঘরের দরোজা

খুলে দিক। কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক।

কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে

জিজ্ঞেস করুকঃ “তোমার চোখ এতো লাল কেন?

৬.............তুলনামূলক হাত



তুমি যেখানেই স্পর্শ রাখো সেখানেই আমার শরীর৷

তোমার চুলের ধোয়া জল তুমি যেখানেই

খোঁপা ভেঙ্গে বিলাও মাটিকে;

আমি এসে পাতি হাত, জলভারে নতদেহ আর

চোখের সামগ্রী নিয়ে ফিরি ঘরে, অথবা ফিরি না ঘরে,

তোমার চতুর্দিকে শূন্যতাকে ভরে থেকে যাই৷



তুমি যেখানেই হাত রাখো, যেখানেই কান থেকে

খুলে রাখো দুল, কন্ঠ থেকে খুলে রাখো হার,

সেখানেই শরীর আমার হয়ে ওঠে রক্তজবা ফুল৷



তুমি যেখানেই ঠোঁট রাখো সেখানেই আমার চুম্বন

তোমার শরীর থেকে প্রবল অযত্নে ঝরে যায়৷

আমি পোকা হয়ে পিচুটির মতো

তোমার ঐ চোখের ছায়ায় প্রতিদিন খেলা করে যাই,

ভালোবেসে নিজেকে কাঁদাই৷



তুমি শাড়ির আঁচল দিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিলে

আমি রথ রেখে পথে এসে তোমারই দ্বৈরথে বসে থাকি

তোমার আশায়৷ তুমি যেখানেই হাত রাখো

আমার উদগ্রীব চিত্র থাকে সেখানেই৷ আমি যেখানেই

হাত পাতি সেখানেই অসীম শূন্যতা, তুমি নেই৷

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:২৯

খুশবু বলেছেন: :)

২| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৮

কষ্ট - ১ বলেছেন: ধইন্যাপাতা

৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:২৯

শায়মা বলেছেন: :)

৪| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২১

ইশতিয়াক আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ০১ লা মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৮

রাখালছেলে বলেছেন: আমি হয়ত মানুষ নই - আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতা । এত বার পড়ি বা শুনি তারপরও মনে হয় এত সুন্দর করে মানুষ কবিতা লেখে কি করে ।

৬| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৬

আমি বন্য বলেছেন: ভালও লাগা.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.