নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমরা ক্ষমতাহীন শক্তি

কিছু লিখতে চেষ্টা করি । যা প্রকাশ করিনি তাই লিখবো । মনের কথা / ক্ষোভ প্রকাশ করবো ।

নব্য ভদ্রলোক

গণতন্ত্রের সৈনিক ।

নব্য ভদ্রলোক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুমারেরজবানবন্দি

২৩ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৩

২০০৮ সালে আমার গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হয়। দীর্ঘ শিক্ষা জীবনে অনেক প্রেম, বিরহ, লাঞ্ছনা ও লালসার কীর্তি, ক্লাইম্যাক্স দেখেছি। সহপাঠী, অগ্রজ ও অনুজদের প্রেমলীলা দেখে আমারও মনে চাইতো, দেখি না একবার প্রেম সাগরে ডুব দিয়ে কেমন লাগে! কিন্তু পরক্ষণেই বিবেকের ছড়ি দেখে বেয়াড়া আবেগ সুবোধ হয়ে যেতো।

মাঝে মধ্যে আবার মাথায় একটু দর্শন খেলে যেতো, এ তো দেহ ও মনোজাগতিক বিনোদন মাত্র। করলে দোষ কি? সবাই তো করছে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার বিবেক জানিয়ে দিতো, তুমি তো একজন পাঠশীল ছাত্র। তুমি কেন একজন মেয়ের রূপ-রওনকের মোসাহেবি করে ওর মনের অন্দরে ঢুকতে চাইবে? তুমি বরং তোমার ব্যক্তিত্ব আগলে ধরে চলো। তাহলে তাদের মধ্যে অধরা ও আরাধ্য থাকতে পারবে। ফলে তুমি হবে বহুভুজ প্রেমের প্রেমিক।



এ তো গেল যৌবনের দ্বিধা ও দোদুল্যতার তর্ক এবং দর্শন নির্ভর কিছু রূপ। এছাড়া ছিল সামাজিক ও ধর্মীয় বিধি-নিষেধ। তাই স্বাধীন যুবক হয়েও সৎ কুমার থেকে গেলাম। সমসাময়িকদের মতো বিয়ে বহির্ভূত যৌন অভিষেক আর আমার হলো না।



আমি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে অন্যদের মতো গতানুগতিক বেকারত্বের শিকার হইনি।



আমার বাবা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তাই তার ভাবী উত্তরাধিকারী রূপে আমিও উতরে গেলাম। অঘোষিত ভাবে বাবার অফিসে প্রধানের কিছু দায়িত্বও পেলাম। আমার কর্মজীবনের অভিষেক হলো। কিন্তু যৌন জীবন? তা আগেরই মতো মরুময় রয়ে গেল।



আর এভাবে থাকা যায় না। তাই লাজ-শরম ও দ্বিধা-দোদুল্যতার সব বাধা অতিক্রম করে বাবাকে জানালাম, বাবা, বিয়ে করতে চাই।



বাবার সাফ আলটিমেটাম, এখনই কোনো বিয়ে নয়। বয়স আর কতো হয়েছে? তাছাড়া তোমার বড় ভাইও তো এখনো বিয়ে করেনি।



আমি নাছোড়বান্দা টিকতে পারলাম না। কয়েকদিন সময় নিয়ে বাবাকে সব খুলে বললাম। আমার অতীত জীবনের সততা ও বর্তমানের সীমাহীন যৌন উম্মাদনার কথা তার কাছে তুলে ধরলাম।



আমার বুদ্ধিবৃত্তিক ও চিন্তানৈতিক কথা শুনে বাবার মন ইতিবাচক সাড়া দিল। কিন্তু বড় ভাইয়ের চরম বিরোধিতায় আর এগোতে পারলেন না। বাবা তার এক রোখা বাধার মুখে নতি স্বীকার করলেন।



আমার আর চলে না। রাত কাটে নির্ঘুম, দিন আসে চরম উত্তেজনা ও মনোদৈহিক ক্ষুৎপিপাসা নিয়ে। দীর্ঘ উত্তেজনা ও দৈন্যদশার ক্লান্তির ঘুম এলেও সে রাতগুলো থাকতো এমন সব স্বপ্নে ঠাসা যা নারী ও নারীদৈহিক কামরসে টইটম্বুর। ফলে মাসের অধিকাংশ দিনেই আমার সুপ্রভাত হতো মানবপালের আঠালো পিচ্ছিল নমুনা দূর করার ব্যস্ততায়। পরিণামে দিনে দিনে আমি হয়ে পড়ি মনোদৈহিক এক উদভ্রান্ত কামকাতর তরুণ। ফ্রাস্ট্রেশন, হ্যালুসিনেশন, ইত্যাদি মনোবৈকল্যের মুখপাত্ররা আমাকে সকাল-সন্ধ্যা পরিদর্শন করতো। এক সময় যমগুরু আত্মহনন আমাকে বিনাশের জলচিত্র দেখায়। ফলে কর্মচঞ্চল আমি হয়ে পড়ি নীরব এক তরুণ।



এই চরম নিরাশায় প্রাণপ্রতিম বন্ধু সাদিকের আস্থা খুজে পাই। তাকে প্রবল শক্তিতে চেপে ধরি।



সে আমাকে এক অমিয় বাণী শুনায়। তা দুরারোগ্য ব্যাধির মহৌষধ রূপে কাজ করে। ক্ষমাশূন্য পাপের চেয়ে ক্ষমাপূর্ণ অবাধ্যতাও উত্তম অর্থাৎ আত্মহননের পর আর কোনো ক্ষমা নেই। কিন্তু অন্য পাপের পর ক্ষমা প্রার্থনার ঢের সুযোগ আছে। তার এই বাণী আমার ইন্দ্রিয়গুলোকে সজাগ করে তোলে। তাই আমি যমগুরুকে লাথি মেরে কামগুরুর আচল ধরি।



মধুশালায় সঙ্গ পেলাম এক সচেতন প্রেম বণিকের। সে আমাকে দেহ-মন উজাড় করে কামকলা শেখালো। তার সচেতনতার বিশেষণটি আমাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে হয়। কারণ সে পরম মততায় আমার ওষ্ঠে কামকাতর উষ্ণ চুমু একে বলতো, এ নির্জীব নিরোধকটিই দুটি জীবকে সজীব ও সৎ রাখে, ভবিষ্যতকে কালিমামুক্ত ও সততাযুক্ত রাখে।



এই তো হয়ে গেল আমার দ্বিতীয় জীবনের অভিষেক। কেটে গেল ঘোর। দূর হলো আধার।



অর্থের বিনিময়ে আমি এই সমাজের অন্ধ বিচারপতির কাছে সৎ চরিত্রবান, কর্মঠ তরুণ সেজে রইলাম। তাই আজও আমি সৎ কুমার (?) তরুণ আর আমার ভাইও।



জীবনে অর্থনৈতিক, সামাজিক বুদ্ধিবৃত্তিক, চিন্তানৈতিক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার ছায়ার ফাদে পড়ে ভাই আজ বয়সের চতুর্থ দশকের প্রথমার্ধে এবং আমি তৃতীয় দশকের দ্বিতীয়ার্ধে। এখনো আমাদের বিয়ের বাদ্যবাজনা বা অতিথিদের মিষ্টিমুখ করা, কোনোটিই হয়ে ওঠেনি।



প্রসঙ্গত. আমরা পুরুষ জাতি শতচারী হয়েও সমাজের দৃষ্টিতে সৎ ও আনকোরা কুমার। আর নারী জাতির কেউ আমার মতো হলে হতো কলংকিনী, ব্যভিচারিণী, নষ্টা। কতো কুবিশেষণে ভূষিত! তাদের কলংকিত করতে সতীচ্ছদ, বাসরে রক্তপাত, কতো কি আছে! কিন্তু নেই কোনো রক্ষাকবচ। অথচ আমাদের রক্ষা করতে আছে জন্মনিরোধক আবরণ ও সুগন্ধী টিসু। একটু মুছে নিলেই চলে।



অবশেষে আমার পুরুষ ভাইদের একটি প্রাণের কথা বলে রাখি। বাসর রাতে নববধূর সতীত্ব পরীক্ষার অসভ্যতা থেকে আমাদের ফিরে আসতে হবে। স্রষ্টার অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে পবিত্র দাম্পত্য জীবন সূচনায় ব্রত হতে হবে। তাহলেই এই আদিম সম্পর্ক শুভ পরিণয়ের মাল্যদান মিষ্টিমুখকরণ ইত্যাদি সংস্কৃতি সফল ও পুন্যবাহী হবে।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.