নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমরা ক্ষমতাহীন শক্তি

কিছু লিখতে চেষ্টা করি । যা প্রকাশ করিনি তাই লিখবো । মনের কথা / ক্ষোভ প্রকাশ করবো ।

নব্য ভদ্রলোক

গণতন্ত্রের সৈনিক ।

নব্য ভদ্রলোক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতীয় মুরব্বির বিদায়

১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৪১















মূসা ভাই। এ নামেই তাকে চিনতো বাংলাদেশ। তার কলম সচল ছিল ৬০ বছর। শেষ বয়সে এসে ঝড় তুলেছিলেন টিভি পর্দায়। ক্রমশ সাংবাদিক পরিচয় ছাপিয়ে পরিণত হয়েছিলেন বিবেকের কণ্ঠস্বরে। তিনি ছিলেন আমাদের এক জাতীয় কিংবদন্তি। প্রতিটি দুঃসময়ে মানুষের পাশে ছিলেন। জনঅধিকারের প্রশ্নে তার কণ্ঠ ছিল নির্ভীক, অবিচল। কপটতা ও সংকীর্ণতার দেয়াল ছাপিয়ে তিনি বরাবরই উচ্চারণ করতেন যা সত্য তা। আর তাইতো কখনও কখনও বিরাগভাজন হয়েছেন শাসক শ্রেণীর। সমস্যা, সঙ্কট আর দুর্দিনে তিনি ভূমিকা পালন করেন জাতীয় মুরুব্বির। কিন্তু এমন ভূমিকায় আর কোন দিন দেখা যাবে না তাকে। থেমে গেছে সত্যনিষ্ঠ সে কণ্ঠ। নিভে গেছে আলো। আমাদের প্রিয় কিংবদন্তির সাংবাদিক এবিএম মূসা আর নেই। গতকাল দুপুরে ল্যাব এইড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সোমবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সে সাপোর্ট থেকে আর ফিরতে পারেননি এবিএম মূসা। তার মৃত্যুর খবরে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। সর্ব মহলের অতি আপনজন এবিএম মূসার মৃত্যুর সংবাদে শোকের ছায়া নেমে আসে তার শুভানুধ্যায়ীদের মাঝে। তার বাসায় ছুটে যান বিশিষ্টজন ও তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও অনুজপ্রতিম সাংবাদিকরা। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এক সাক্ষাৎকারে নিজের প্রিয় গানের কথা বলেছিলেন এবিএম মূসা- যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে। এ বাটে তার পায়ের চিহ্ন আর না পড়লেও তাকে বাংলাদেশের মানুষ কখনও ভুলতে পারবেন না। কারণ, সত্য বাবুর মরে যাওয়ার যুগে তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠতার শেষ প্রতিনিধি। নীতি ও আদর্শের সাংবাদিকতার যুগের প্রতিনিধি। নিজের আদর্শ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, সদা সত্য কথা বলিব। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এবিএম মূসার সহকর্মী ছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। এবিএম মূসার মৃত্যুর পর তার এ কথাটিই সবার আগে মনে পড়েছে। সত্য কথা বলার ক্ষেত্রে এবিএম মূসার কাছাকাছি কাউকে এখন আর বাংলাদেশে দেখছেন না ব্যারিস্টার মইনুল। এ সত্যনিষ্ঠাই পরাক্রমশালী কোন কোন শাসকের চোখে তাকে অজনপ্রিয় করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশে বৃহৎ সাধারণ জনগোষ্ঠীর কাছে তাকে এনে দিয়েছিল বিপুল জনপ্রিয়তা। টকশোতে বলা তার প্রতিটি কথা মুখে মুখে ফিরেছে। টকশো আলোচকদের মধ্য রাতের সিঁধেল চোর হিসেবে অভিহিত করে দেয়া বক্তব্যেরও জবাব দিয়েছেন তিনি বিপুল বিক্রমে। কোন কোন মন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন তার লেখনীতে। লিখেছেন, কার উছিলায় শিন্নি খাইলা মুন্সি চিনলা না। ওয়ান ইলেভেনে ভয়ের সময়েও তিনি পালন করেছেন জাতির বিবেকের ভূমিকা। প্রয়াত ফয়েজ আহমেদ আর আতাউস সামাদকে সঙ্গী করে অভয় দিয়েছেন সাংবাদিকদের। বাংলাদেশের বেশ কয়েক জন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক তাদের যে কোন সঙ্কটে ছুটে যেতেন এবিএম মূসার কাছে। কখনও পিতা, কখনও ভ্রাতৃস্নেহে তাদের বুকে টেনে নিতেন তিনি। সে আশ্রয় আর রইলো না। ৮৩ বছরের জীবনে নানা পরিচয়েই মহিমান্বিত হয়েছেন তিনি। কখনও তিনি সাংবাদিক, কখনও সংসদ সদস্য, কখনও সাংবাদিক নেতা। মুক্তিযুদ্ধের কঠিন সময়েও তিনি ছিলেন সক্রিয়। সেই সদা সক্রিয় মূসা ভাই আর সক্রিয় থাকবেন না। তার নতুন লেখা আর পড়া যাবে না, টিভি পর্দায় শোনা যাবে না সে কণ্ঠ। সাংবাদিকতার এ কঠিন সময়ে তার মতো বুক চিতিয়ে সত্য কথা বলার মানুষটিকে হারিয়ে নির্বাক সাংবাদিক সমাজ। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর ইকবাল রোডের খেলার মাঠে এবিএম মূসার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মোহাম্মদপুর বায়তুস সালাম জামে মসজিদের খতিব মুফতি হাবিবুল্লাহ মাহমুদ জানাজায় ইমামতি করেন। এতে বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ড্যাবের মহাসচিব জাহিদ হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শ্রেণী-পেশার বিশিষ্টজনরা অংশ নেন। জানাজা শেষে এবিএম মূসার মরদেহ বাসায় নেয়া হয়েছে। ৭টা ৪৫ মিনিটে এবিএম মূসার মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি এবিএম মূসার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান। বিএনপি নেত্রী এবিএম মূসার সহধর্মিণী সেতারা মূসার খোঁজখবর নেন। তাকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। এ সময় সেতারা মূসা তার মেয়েদের পাশে থাকার জন্য খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেন। খালেদা জিয়া চলে যাওয়ার পর এবিএম মূসার লাশ ল্যাব এইড হাসপাতালের হিমঘরে নেয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় লাশ জাতীয় প্রেস ক্লাবে নেয়া হবে জানিয়েছেন এবিএম মূসার ছেলে ডা. নাসিম মূসা পরশ। সেখানে জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে লাশ নেয়া হবে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি ফেনীর পরশুরামের কুতুবপুরে নিয়ে যাওয়া হবে প্রয়াত সাংবাদিকের লাশ। ফেনীর মিজান ময়দান ও কুতুবপুরে জানাজা শেষে মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে তাকে।

৬০ বছরের সাংবাদিকতার বর্ণিল অধ্যায়

দেশবরেণ্য সাংবাদিক এবিএম মূসা জীবনের ৬০ বছরই কেটেছে সাংবাদিকতায়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করে খ্যাতি কুড়িয়েছেন। দক্ষতা ও সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। শাসক শ্রেণীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সাংবাদিকতার নীতি ও আদর্শ উচ্চকিত রেখেছেন কর্মজীবনে। তার হাত ধরে অনেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন সাংবাদিকতায়। ১৯৩১ সালের এই দিনে ফেনীর পরশুরাম থানার ধর্মপুর গ্রামে নানাবাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আশরাফ আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। পিতার চাকরির সুবাদে শৈশবের সাত বছর কেটেছে চট্টগ্রামে। তার শিক্ষাজীবন কেটেছে চট্টগ্রামের গভ. মোসলেম হাইস্কুল, নোয়াখালী জিলা স্কুল, ফেনী কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। বিএ প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়েছেন চৌমুহনী কলেজ থেকে। কলেজে পড়াকালে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি চৌমুহনী থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘কৈফিয়ত’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে। এ সময়ই জড়িয়ে পড়েন বাম রাজনীতিতে। নিয়মিত লিখতেন সাপ্তাহিক সংগ্রাম ও পাকিস্তান অবজারভারে। ১৯৫০ সালে লেখাপড়ায় ইস্তফা দিয়ে ঢাকায় এসে যোগ দেন দৈনিক ইনসাফ পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে। একই বছরে মালিকের সঙ্গে বিরোধের কারণে ইনসাফ ছেড়ে একই পদে শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দেন পাকিস্তান অবজারভারে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সংবাদ প্রকাশের অপরাধে পাকিস্তান অবজারভার বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় তিনি চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ হিসেবে যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। বছর তিনেকের পর এখানেই বার্তা সম্পাদক হিসেবে পদোন্নতি পান এবিএম মূসা। ১৯৬১ সালে কমনওয়েলথ প্রেস ইনস্টিটিউটের বৃত্তি নিয়ে লন্ডনে যান। সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা করেন অক্সফোর্ডের কুইন এলিজাবেথ হাউসে। অবজারভারে বার্তা সম্পাদক থাকা অবস্থায়ই তিনি পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের একাধিকবার প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালে তাসখন্দে ভারত-পাকিস্তান শান্তি আলোচনা চলাকালে গভীর রাতে মারা যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। এ খবর উপমহাদেশের অন্য কোন সংবাদপত্র দিতে পারেনি অবজারভার ছাড়া। তিনি তখন অবজারভারের বার্তা সম্পাদক। এ কাজের পুরস্কার হিসেবে তিনি পান জেনেভার ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট (আইপিআই) পুরস্কার। বাংলাদেশের পত্রিকায় কাজ করার পাশাপাশি তিনি বিবিসি, লন্ডন সানডে টাইমস, দি ইকোনমিস্ট টাইমসসহ বিভিন্ন বিদেশী গণমাধ্যমের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গনের অনেক খবর বিদেশী গণমাধ্যমে পাঠাতেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশে ফিরে এলে এবিএম মূসাকে দায়িত্ব দেয়া হয় বিটিভি’র মহাব্যবস্থাপক হিসেবে। যোগদানের কয়েক মাস পর ওই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে মর্নিং নিউজ পত্রিকাকে নতুন করে বের করলেন। তিনি ১৯৭৩-এর সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে হুমকির মুখে দেশ ছেড়ে চলে যান লন্ডনে। সেখানে যোগ দেন সানডে টাইমসের রিসার্চ ফেলো হিসেবে। ১৯৭৬ সালে দেশে ফিরে এসে দৈনিক নিউ নেশনে উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে যোগ দেন জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচিতে। এ চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অনুরোধে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটে। এখানে চার বছর কাজ করার পরে যোগ দেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায়। এখান থেকে এরশাদ সরকারের চাপে অবসর নেন ১৯৮৭ সালে। ফের ১৯৯১ সালে নিউজডে নামক একটি দৈনিকের সম্পাদক হিসেবে বছরখানেক কাজ করেন। ১৯৯৪ সালে ভোরের কাগজে প্রকাশিত আবদুল গাফফার চৌধুরীর কলামের প্রতিবাদ লেখার মধ্য দিয়ে শুরু করেন কলাম লেখা। ২০০৪ সালে অগত্য নিত্যদিন নামক পত্রিকা প্রকাশে সরকার আপত্তি করলে তিনি প্রেস কাউন্সিলে মামলা করেন। পরে তার পক্ষে রায় দেয়া হলেও তিনি আর পত্রিকা বের করেননি। ১৯৫৫ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি এবিএম মূসা বিয়ে করেন। পারিবারিক জীবনে এবিএম মূসা তিন মেয়ে ও এক ছেলের জনক ছিলেন। স্ত্রী সেতারা মূসা এদেশের নারী সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ। সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় এবিএম মূসা বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেন। এর মধ্যে রয়েছে একুশে পদক (১৯৯৯), জেফারসন ফেলোশিপ (১৯৭০), কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়ন ফেলোশিপ (১৯৬১)সহ অসংখ্য পুরস্কার।

বিভিন্ন মহলের শোক: প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বরেণ্য সাংবাদিক এবিএম মূসার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। গতকাল এক শোকবার্তায় তিনি এবিএম মূসার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন স্মরণ করে তাকে দেশের সাংবাদিকতায় উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে অভিহিত করেন। প্রেসিডেন্ট বলেন, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এবিএম মূসার অমূল্য অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার মৃত্যু দেশের সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যমের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। প্রেসিডেন্ট মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য, হাজার হাজার বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এবিএম মূসার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় বলেন, দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে মরহুম এবিএম মূসা বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে ছিলেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জগতে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। এবিএম মূসার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন তার মৃত্যুতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। দেশের বর্তমান ক্ষয়িষ্ণু রাজনীতির প্রেক্ষাপট ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে স্পষ্ট ও জোরালো বক্তব্য রাখায় এবিএম মূসাকে ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়তে হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও প্রধান হুইপ শোক প্রকাশ করেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও শোক প্রকাশ করেছেন পৃথক বার্তায়।

এবিএম মূসার মৃত্যুতে জাতীয় প্রেস ক্লাব, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ডিক্যাবসহ সাংবাদিকদের আঞ্চলিক বিভিন্ন সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই অংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব এমএ আজিজ ও আবদুল জলিল ভূঁইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই অংশের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ এক শোকবার্তায় বলেন, এবিএম মূসা ছিলেন সাংবাদিকতা জগতের অনন্য প্রতিষ্ঠান। তার নিষ্ঠা, সাধনা, আদর্শ ও পেশার প্রতি অঙ্গীকার তরুণ সাংবাদিকদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।’

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এক শোকবার্তায় পূর্বসূরি এবিএম মূসার স্মৃতির প্রতি গভীর জ্ঞাপন করেন। শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক কমান্ডের সভাপতি আকরাম হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চ্যাটার্জি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শাহেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মহসিন ও সাধারণ সম্পাদক মীর আহমাদ মীরু, ঢাকাস্থ বৃহত্তর কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সৈয়দ আখতার ইউসুফ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম তালুকদার। ল’ রিপোর্টাস ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। ফেনীর কৃতিসন্তান এবিএম মূসার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ‘ফেনী সাংবাদিক ফোরাম ঢাকা’র নেতারা। ফোরামের যৌথ সভাপতি মীর আহম্মদ মীরু ও সোহেল হায়দার চৌধুরী, সদ্য বিদায়ী সভাপতি মোতাহের হোসেন মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক লোটন একরামসহ নেতৃবৃন্দ গতকাল এক বিবৃতিতে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

এবিএম মূসার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তার বাসায় ছুটে যান প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, অপর অংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, প্রেস ক্লাব সেক্রেটারি সৈয়দ আবদাল আহমদসহ সাংবাদিক নেতারা। এরপর এবিএম মূসার মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. একে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিকি, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। বিকালে এবিএম মূসার মরদেহ দেখতে যান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি মরহুমের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান। সেখানে উপস্থিত সাংবাকিদের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবিএম মূসার বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় খুব সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করতেন। তিনি রাজনৈতিক নেতাদের পরামর্শ দিতেন। তিনি গণমাধ্যমের তারকা ছিলেন। আমাদের অভিভাবক ছিলেন। তিনি সকলের সমালোচনা করতেন ও ভুল ধরিয়ে দিতেন। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাছে তিনি অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবেন।

চিকিৎসকদের বলতেন, আমি আর বেশি দিন বাঁচবো না

দেশের প্রবীণ ও প্রথিতযশা সাংবাদিক এবিএম মূসার চিকিৎসক ছিলেন অধ্যাপক ডা. বরেন চক্রবর্তী। সর্বশেষ তার তত্ত্বাবধানেই তিনি চিকিৎসা নেন। তার সঙ্গে ছিলেন ল্যাব এইড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এমএম হিমেল। ডা. বরেন চক্রবর্তী বলেন, তিনি এবার ভর্তি হয়েছেন একেবারেই ক্রিটিক্যাল অবস্থায়। কোন কথা বলতে পারেননি। প্রথম দিকে ডাকের সাড়া দিয়েছিলেন এবং দৃষ্টি বিনিময় করেছিলেন। কিন্তু পরে অবস্থার আরও অবনতি হয়। কোনভাবেই তার শরীরে রক্ত স্বাভাবিক কাজ করছিল না। ডা. এমএম হিমেল বলেন, মানুষ হিসেবে আমরা চরম অনুভূতিপ্রবণ। সে জন্য আশাবাদী ছিলাম যে, তিনি আবার সেরে উঠবেন। তবে তার শরীরের যে অবস্থা ছিল তা আমাদের আশান্বিত করছিল না। ডাক্তারের চোখে যখন তাকে দেখতাম, তখন বুঝতে পারতাম আর হয়তো বেশি দিন এই মানুষটা আমাদের মাঝে থাকবেন না। কিন্তু একজন আবেগপ্রবণ মানুষ হিসেবে প্রার্থনা ছিল যেন তিনি আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে ওঠেন। আবার টেলিভিশনের পর্দায় গিয়ে দাঁড়ান। আবার দেশের জন্য কাণ্ডারি হয়ে আবির্ভূত হন। তবে তার শরীরের যে অবস্থা তাতে দিনে দিনে আমাদের হতাশা বাড়ছিল। একদিকে বয়সের কারণে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো অকেজো হয়ে পড়ছিল এবং অন্যদিকে তার শরীরে দানা বাঁধছিল বিভিন্ন রকমের রোগ-বালাই। ফলে ক্রমেই তিনি জীবনধারণের অক্ষমতার পর্যায়ে চলে যান। শেষবারের মতো ভর্তির দিন থেকে তার লাঙে পানি জমতে থাকে। রক্ত জমাট বাঁধছিল না অনেকদিন থেকেই। মাইলো ডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোম রোগের কারণে এটা হচ্ছিল। বেশ কয়েকবার রক্ত দিয়েও কাজ হচ্ছিল না। প্রতিবারই রক্তকণিকা ভেঙে যাচ্ছিল। তবুও আমরা আশাবাদী ছিলাম যে, তিনি আবার ফিরে আসবেন আগের অবস্থায়। হিমেল বলেন, শুরু থেকেই আমি তার চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এত বড়মাপের একজন মানুষকে সেবা দিতে পেরে ভাল লাগছিল। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সেবা দিতে। শেষ সময় পর্যন্ত তার পাশে ছিলাম। নিজের হাতে আইসিইউ থেকে তার লাশ বের করে দিয়েছি আমি। মজার মানুষ ছিলেন তিনি। এবার আর তিনি কথা বলেননি। ভর্তি হয়েছিলেন নির্বাক-নির্লিপ্ত হয়ে। আগেরবার হাসপাতালের বেডে শুয়ে নানা সময় নানা কথা বলতেন। দেশ নিয়ে কথা বলতেন। রসিকতাও করতেন। ভাল লাগতো তার সঙ্গে কথা বলতে। নিষেধ থাকলেও এটা-ওটা নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতেন। তিনি বলতেন, তোমরা আমাকে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসা দিচ্ছ না। ভালবেসে চিকিৎসা দিচ্ছ। আমি তো আর বেশিদিন বাঁচবো না। আমার অবর্তমানে এই ভালবাসা যেন আমার পরিবারের সদস্যদের প্রতিও থাকে। তাদের তোমরা দেখে রেখো। ভালবেসো।

‘এবিএম মূসাকে ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়তে হয়েছে’

বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের সমালোচনা করায় দেশের প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসাকেও ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়তে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এবিএম মূসার মৃত্যুতে গতকাল দেয়া এক শোকবাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন। শোকবাণীতে খালেদা জিয়া বলেন, পাকিস্তান আমলে এ অঞ্চলের মুক্তিকামী মানুষের স্বাধিকার আন্দোলনে ও একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসী ভূমিকা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন সাহসী, নির্ভীক ও নিরপেক্ষ কলমযোদ্ধা। তার লেখনীতে মানুষের অধিকার আদায়ের শ্বাশত বাণী নির্বিঘ্ন চিত্তে ফুটিয়ে তুলতে কখনওই দ্বিধাবোধ করেননি, মাথা নত করেননি কোন চাপের কাছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সংসদীয় রাজনীতির একজন একনিষ্ঠ ব্যক্তি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাকে ‘প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ’-পিআইবি’র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। পিআইবি’র দায়িত্ব পালনকালে তিনি সাংবাদিকদের শিক্ষক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। অন্যায়, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সবসমই সোচ্চার কণ্ঠ। খালেদা জিয়া বলেন, সামপ্রতিককালে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষয়িঞ্চু রাজনীতির প্রেক্ষাপট ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে জোরালো বক্তব্য রাখার কারণে তাকে ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। তার এই মৃত্যুকে অকাল মৃত্যু বলা যায় না। তবে তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটকালে তার মতো একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, নিরপেক্ষ, নির্লোভ ও নির্ভীক সাংবাদিকের খুবই প্রয়োজন। মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান খালেদা জিয়া।

এদিকে পৃথক বার্তায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা শোক প্রকাশ করেছেন। এদিকে এবিএম মূসার মৃত্যুতে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী শোক প্রকাশ করেছেন



Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.