নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন মেয়ে থেকে মায়ের জন্মের গল্পগাঁথা, প্রতিদিন নিজের \'ভাল মা\' হয়ে ওঠার চেষ্টার গল্প।

মেয়ে থেকে মা

একজন ডাক্তার মা আমি যে মাতৃত্বের এই রঙ্গিন সময়টাতে সন্তানকে খাঁটি মানুষ করে গড়ে তুলতে চাই আমার পেশাগত জ্ঞ্যান আর স্নেহ মমতার মিশ্রণে

মেয়ে থেকে মা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সবাই যখন ডাক্তার

০৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:০৪

প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস সময়টুকু নিজের শারীরিক পরিবর্তন , আনন্দ , সন্তানের জন্যে আশংকা সব কিছুর সাথে মানিয়ে নেয়ার সাথে সাথে নতুন অভিজ্ঞতা হয় আশেপাশের সব মানুষের 'ডাক্তার' হয়ে যাবার ! বলা হয়ে থাকে ব্যাপারটা 'out of care, out of love' । যারা হবু-মা তারা ব্যাপারটা জানেন আর মেনেও নেন । কিন্তু কিছু কিছু উপদেশ হয় খুব যাকে বলে 'কেমন যেন'; উদাহরণ দেই

১) টক ফল খাবে না একদম , বাচ্চার ব্রেইন ভাল হবে না ।
বাস্তবতা ; দেশীয় টক ফলে প্রচুর ভিটামিন সি বা ফলিক এসিড থাকে, যা গর্ভাবস্থায় শিশুর নিউরাল টিউবের ডেভেলপমেন্টে সহায়তা করে এবং জন্মগত ত্রুটি রোধ করে,
হ্যা, অনেক বেশি খাওয়া হলে সেটা এসিডিটি বা প্রচলিত ভাষাইয় যাকে বলি 'গ্যাসের সমস্যা' তাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে ।
কিন্তু পরিমিত পরিমাণে অবশ্যই খাওয়া উচিত

২) দই খাবেনা, এবরশন হয়ে যেতে পারে।
বাস্তবতাঃ প্রতিদিন খাওয়া শেষে একটু দই ক্যালশিয়ামের চাহিদা পূরণে সাহায্য করবে সন্তানের, এতে করে তার হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য হবে । এসময়ে একটু খেলেই হাঁসফাস লাগে, একটু ঠান্ডা-মিষ্টি দই খেলে মন্দ লাগবে না কিন্তু, চাই কি লাসসি বানিয়ে খেতে পারেন।
আমি যে এতো বুদ্ধি দিচ্ছি , প্রথম সন্তানের বেলায় এক ফোঁটা দইও খেতে দেননি আমার মা আমায় । আমার চেয়ে বড় ডাক্তার তখন তিনিই ছিলেন ;)

৩) ডিম খাবেনা, পেট খারাপ হতে পারে
বাস্তবতাঃ ডিমের ক্যালশিয়াম আর প্রোটিন সন্তানের হাড়-মাংস গঠনে সাহায্য করে। কাঁচা বা পোচ খাবেন না, সিদ্ধ করে খাবেন । অনেকেই নুডুলস বা স্যালাড খেতে ভালবাসেন , তারা সিদ্ধ ডিম এতে দিয়ে খেতে পারেন । রুচির পরিবর্তনও হয়ে যাবে।

৪) বড় মাছ খাবেনা,
বাস্তবতাঃ চাষের মাগুর , রাক্ষুসে মাগুর জাতীয় মাছ আসলে প্রেগন্যান্ট না হলেও ক্ষতিকর, নারীর পক্ষে যেমন ক্ষতিকর পুরুষের পক্ষেও তেমনি ক্ষতিকর । সব ধরনের মাছ বা lean flesh লৌহ বা আয়রনের উতস যা মা ও অনাগত সন্তান উভয়েরই প্রয়োজন ।

৫) প্রেগন্যান্সিতে ঘর মুছতে হয়, তাহলে নরম্যাল ডেলিভারি হয়
বাস্তবতাঃ আপনার সন্তানের মাথা যদি সঠিক সময়ে নিচে থাকে আর জড়ায়ুর মুখ খুলে যায় তবে ঘর না মুছলেও নরম্যাল ডেলিভারিই হবে । ইয়োরোপে নরম্যাল ডেলিভারি করানোর ব্যাপারে ডাক্তার-রোগী সবাইই বেশ সচেতন থাকেন , কিন্তু তারা ঘর মুছেন না বাঙ্গালী কায়দায় ।
আবার এই ঘর মোছার চক্করে পরে যদি আপনার amniotic fluid leak করে বা পানি ভেঙ্গে যায় আর হাসপাতালে নিতে দেরী হয় তবে কিন্তু সন্তানের প্রাণ সংশয় হয়ে দাঁড়াবে । আর আল্ট্রাসোনো রিপোর্ট অনুযায়ী আপনার প্ল্যাসেন্টার অবস্থান যদি নিচের দিকে হয় তবে ঘর মোছার পরামর্শদাতা/ দাত্রী যতই আপন হোন না কেন, পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে চোখ কান বন্ধ করে শুয়ে রেস্ট নেবেন শুধু।

আমি নিজে মা হবার সময়ে কিছু অদ্ভুত ডাক্তারীকে অগ্রাহ্য করে নিজের জানা কথা ডাক্তার সাহেবদের বোঝাতে পেরেছি আর কিছু কিছু কথা মেনে নিতে হয়েছে, ওই যে বললাম out of care , out of love!! অনাগত সন্তান যেহেতু সবারই ভালবাসার বস্তু , আর ভালোবাসার উপরে 'দাবী' ব্যাপারটা বেশ প্রবল হয় । তাই কখনো বুঝিয়ে আর কখনো নিজেই বুঝে নিয়ে, কখনো একটু খানি মেনে নিয়ে আর কখনো আরেকটু খানি মানিয়ে নিয়ে এবং অবশ্যই একজন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ মত, নিরাপদে কাটুক সবার 'মা-বেলা'

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.