![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন ডাক্তার মা আমি যে মাতৃত্বের এই রঙ্গিন সময়টাতে সন্তানকে খাঁটি মানুষ করে গড়ে তুলতে চাই আমার পেশাগত জ্ঞ্যান আর স্নেহ মমতার মিশ্রণে
আমি মেয়ের মা হবার পর থেকেই ভাবি ঠিক কিভাবে কথা বললে ও একজন ‘মানুষ’ হয়ে গড়ে উঠবে ! ঠিক কিভাবে বুঝালে ও একটা আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে? ঠিক কিভাবে কথা বললে ও আরেকজনকে আঘাত করে কথা বলবে না!!
নিজের শৈশবের সাথে মিলাই, নিজের খারাপ-ভালো অভিজ্ঞতা দিয়ে ওর জন্যে গাইড লাইন রেডি করি, প্রায় রোজ ! যদিও এসব কিছুই যে কাজে আসবে তা না, তা-ও
ভাবি ওকে কার্বোহাইড্রেট কম খাওয়াবো, এক্সারসাইজ করাবো, অনেক বই দেবো, ক্যারাটে শিখাবো আরো কত কিছু !!!
কিন্তু একটা জিনিস মাঝে মাঝে ভেবে শঙ্কিত হই, যেটা আগেও ছিল আর এখন আছে এবং আরো ভয়াবহ হয়েছে Bullying Girls / Public shaming সেটার কোন proper কারণ থাকুক বা না থাকুক।
ধরা যাক আমার কথা, আমি ভিষন আমুদে ছিলাম আর আছিও, প্রচুর বন্ধু ছিল আমার সমবয়সী ছোট এবং বড়, তারা ছেলে ছিল আর মেয়েও । এদের যাতায়াত ছিল আমাদের বাসায় আর আমার মা বাবা তাদের চিনতো এবং জানতোও ।
কিন্তু আশেপাশের মানুষ , দূরের আত্মীয় সজনদের খুবই কৌতূহল ছিল ছেলে বন্ধু / বড় ভাইয়া দের নিয়ে । অনেকেই জাজ করার চেষ্টা করতো আমার চরিত্র নিয়ে, জানিনা তাদের নিজেদের আয়নায় দেখে তারা এমন ভাবতেন না একটা মেয়েকে লতানো , মাথা নোয়ানো মেয়ে হিসেবে না দেখে ‘মানুষ’ হিসেবে দেখতে অসুবিধে হত বলে এমন করতেন।
তাদের নিয়ে আমি ভাবতে চাইনা, আমি ভাবতে চাই ঠিক কিভাবে আমার মেয়ে বড় হবার বেলায় তাকে রক্ষা করবো এসব থেকে তা নিয়ে। ওইসব ভাবনা যে একটা মেয়েকে কতটা কুকড়ে দেয় সেটা আমি জানি, আমার মেডিকেল কলেজ লাইফে ঐসব অভিজ্ঞতার দরুণ খুব বেশি বন্ধু ছিলনা , অথচ গ্র্যাজুয়েশন লাইফে কিন্তু অমন হবার কথা ছিলনা।
যারা না জেনে শুনে অনুমান নির্ভর বাজে কথা বলতেন এবং গুজব ছড়ানোর মত করে যার তার সাথে সমালোচনা করতেন , দুঃখজনক ভাবে তারা বেশিরভাগই মেয়েই ছিলেন !
আচ্ছা, আমরা কি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে এখন পারি কিছু জিনিস বদলানোর উদ্যোগ নিতে ?
১) সন্তানকে ‘ছেলে-মেয়ে’ না শিখিয়ে সবাই ‘মানুষ’ শিখাতে পারি কি?
২) সবার নিজের জীবন নিয়ে নিজস্ব চিন্তা আছে, সেটা নিয়ে অনধিকার চর্চা করার অধিকার আমাদের কারোর নেই, এই কথাটা শিখাতে পারি কি?
৩) চঞ্চল মেয়ে বা ছেলে হলেই সে ‘ক্যারেক্টার লেস’ বা ‘বখাটে ছেলে’ হবে এটা না ভাবতে পারি কি? আর আমরা যখন এসব আলোচনা করবোনা , ওরাও শিখবে না
৪) কোন মেয়েকে তার চরিত্র নিয়ে বা কোন ছেলেকে নিয়ে ‘বখাটেপানা নিয়ে অন্য কেউ কথা বলতে আসলে তাকে নিরুতসাহিত করতে পারি ।
৫) নিজের সন্তানকে ভাল-মন্দ শিক্ষা দেই কিন্তু অন্যরা লজ্জা দিতে আসলে যেন তার পাশে দাড়াতে পারি এবং তার ভুল কাজ যা অন্যের ক্ষতির উপলক্ষ্য তাকে প্রশ্রয় না দিয়ে তখন যেন কঠোর হতে পারি ।
৬) পিরিওড একটা নরমাল শারীরিক ব্যাপার যা মা-বোন-বান্ধবীর হবে এবং এসময়ে তাকে লজ্জিত না করে তার সহায়তা করতে হবে এটা নিজের ছেলেকে শিখাতে পারি ৭/৮ বছর থেকেই, কারণ এর বেশি দেরী করলে সমাজ তাকে নিজের মা-বোন সম্পর্কেও বাজে কথা শেখাবে ।
৭) পিরিওড হওয়া পাপ না যে এটা হলে দোকানে স্যানিটারি ন্যাপকিন চাওয়া যাবেনা বা বাবা-ভাইয়ের সামনে লজ্জায় বলা যাবেনা , রোজা বা পূজার উপবাসে না খেয়ে নিজের শরীরকে কষ্ট দেয়াটা বোকামো সেটা মেয়েদের শিখাতে পারি ।
৮) শাড়ি/শার্ট/প্যান্ট/স্কার্ট যে কাপড়ের টুকরা যা দিয়ে মানুষ শীত-গ্রীষ্ম থেকে বাচতে গায়ে পরে আর সেটার সাথে শালীনতার খুব বেশি সম্পর্ক নেই, বরং শালীনতা সম্পর্ক মানুষের কাজের সাথে; সেটা সন্তানকে শিখাই
এবং বুঝিয়ে বলি যে হাতা-কাটা/লম্বা হাতা জামা বা স্যুট প্যান্ট/শর্টস গেঞ্জি মানুষ আবহাওয়ার তারতম্য আর কাজের সুবিধে-অসুবিধের কথা ভেবে পরে, তার সাথে চরিত্রের সম্পর্ক নেই
৯) নিজের মা-বোনকে বা বাবা-ভাইকে নিয়ে যেকথা হলে খারাপ লাগবে তা কোন অনুমান নির্ভর কারণে অন্যকে কখনই না বলি আর সন্তাকেও তাই শিখাতে পারি আমরা ।
১০) আর এই ইন্টারনেটের যুগের golden rule যেটা শিখাতেই হবে কোন কিছু দেখেই বিশ্বাস করা যাবেনা আর hoax ছড়ানো যাবেনা , নিজের স্বার্থে আর আশেপাশের সবার স্বার্থে ।
আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত আমাদেরই হাতে,
‘Make It A Better Place
For You And For Me
And The Entire Human Race ‘
©somewhere in net ltd.