নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছাত্র রাজনীতির নিয়ম কানুন

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০১

আজ ফেসবুকে আমাদের মেডিকেল কলেজের এক সিনিয়র ভাইয়ের স্ট্যাটাস দেখলাম। পড়েই মেজাজটা বিগড়ে গেল। ছাত্র রাজনীতি নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান। নব্বই এর দশকে ছাত্র রাজনীতি করত। সেই অহংকারে বাঁচে না। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছে, রাজপথে ছিল, নৈতিকতা ছিল এইসব কথাই ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে বলা। তারপর যথারীতি বর্তমান ছাত্র রাজনীতিকে দোষারোপ। আসলে এইটা একটা ফ্যাশান হয়ে গেছে কিছু প্রাক্তন ছাত্র নেতার। নিজেরা কিছু হতে পারে নি, অন্যদের উন্নতি সহ্য হচ্ছে না।

কি এমন ছিলেন আপনি? করতেন তো একটা বামপন্থী দল। ছিল না কোন ক্যাডার বাহিনী। ছিল না কোন অস্ত্র? কোন কি রুম ছিল যেখানে লুকিয়ে রাখা হত সব কিছু? কক্টেল চার্জ করেছেন কখনও? দখল নিতে পেরেছিলেন কোন হল? সব প্রশ্নের উত্তরেই তো জানি, বলবেন ‘না’। ব্যাখ্যা দিবেন যে আপনারা ছিলেন আদর্শ বাদী। একটা আদর্শের জন্য লড়াই করতেন। শোষিত, শ্রমিক শ্রেণীর জন্য লড়াই করছেন—এমন সব তত্ত্ব কথা। কোথায় আপনাদের লড়াই? দেশে শ্রমিক তো কম নাই, দেয় কেউ আপনাদের ভোট?

বেশী তত্ত্ব কপচালে এই হয়। আপনি কি জানেন আপনার দলকে আমরা কি বলতাম? ‘লিপিস্টিক দল’। যত সব মেয়েলি স্বভাব। একটা মিছিল, রাত জেগে দেয়ালে স্লোগান লেখা, এই তো আপনাদের মুরোদ। আপনার দলের কাউকে থাপ্পড় মারলে কি করতেন মনে আছে? প্রিন্সিপ্যালের কাছে নালিশ আর প্রতিবাদলিপি। কিছু হত? ‘তদন্ত কমিটি’ একটা হত যা কোনদিন রিপোর্ট দিত না। আপনার দলের সব ছেলে গুলো কেচোর মত থাকতো। সবার সঙ্গে মানিয়ে। যেন কেউ রেগে না যায়। কখন ঘাড় ধরে রুম থেকে বের করে সিট টার দখল না নিয়ে ফেলে।

পুরাতন কথা না হয় বাদ ই দিলাম। এখন ই বা কি এমন করছেন? গাধার মত এই মরা দলে এখনও পরে আছেন। বড় দুই দলের কোন একটাতে যেতেন, রাজার হালে থাকতেন। ভিপি ইলেকশান করেছিলেন বলে বড় কোন পদও বাগিয়ে নিতে পারতেন। তারপর দু একটা টেন্ডার কিংবা সুপারিশ বাণিজ্য। মাথা তো খারাপ ছিল না, নিজের এলাকায় কিছু কাজ করে, এম পি তেও ট্রাই করতে পারতেন। ট্রাই কি একেবারে করেন নি নাকি পাত্তা পান নি?

আচ্ছা ঠিক করে বলেন তো কি মনে করে আপনি এখনও বামপন্থী দলে আছেন? মনে কি কোন আশা আছে? দেশে কম্যুনিস্টদের আদৌ কোন ভবিষ্যৎ আছে বলে আপনি মনে করেন? দুই দিন পর পর, হয় দল ভাঙ্গেন আর নাহলে বিক্রি হন। কখনও বড় দলে ঢোকেন কখনও বড় দলের সঙ্গে জোট। লজ্জা করে না যখন দেখেন সংসদে জাতীয় পার্টির আসন আপনাদের চেয়ে বেশী। শিখেছেন তো শুধু বড় বড় বুলি আওড়াতে আর টক শো তে যেয়ে উপদেশ দিতে।

শেখেন আমাদের কাছ থেকে। দলে সবসময় ক্যাডার রাখবেন। নিজেদের দখলে হল না রাখলে দলের কর্মীদের কি দশা হয় তা তো দেখেছেন। মনে আছে আপনাদের দলের একটা রুমে একটা সিট দখল করেছিলাম? মিন মিন করে নিজের দলের ছেলেকেই চুপ করে থাকতে বলেছিলেন। শুধু কি তাই? আপনাদের মিছিলে একটা ধাওয়া দিলেই তো পালাতেন। কোন দলের সঙ্গে কোনদিন মারামারি করেছেন? আপনাদের দলে এমন কেউ ছিল যাকে দেখলে ছেলেরা সালাম দিত? আপনাকেই বা কে দিত? বড় জোর একটা পরিচিতের হাসি পেতেন।

আর দেখেন তো আমাদেরকে। এমন একটা দল করেছি যার ক্ষমতায় আসবার সম্ভাবনা আছে। আর আসলেই আমাদের আর পায় কে? টেন্ডার, সুপারিশ, চাঁদাবাজি যখন যা ইচ্ছা হয়। শুধু ক্ষমতায় আসাই বা বলছি কেন, ক্ষমতায় না থাকলেও আজকাল সময় খারাপ যায় না। ক্ষমতায় আসলে কি কি উপকার করে দিব এই বুলিতেও আজকাল অনেক কাজ হয়। শুধু চাই একটা ভাল পোস্ট। পোস্ট না পেলেও ভালো কোন মন্ত্রীর ডান বা বাম হাত। এলাকার ক্যাডার হলেও সময় খারাপ যায় না।

আজকাল তো আরও কিছু সুবিধা আছে। ছাত্র সংগঠনে থাকার জন্য ছাত্র হওয়া ও জরুরী না। বয়স পঞ্চাশ কিংবা ষাট কোন ব্যাপার না। বিবাহিত, সন্তানের পিতা (কিংবা দাদা) এগুলো কোন সমস্যাই না। শুধু চাই ম্যাডাম কিংবা তাঁর সাঙ্গ পাঙ্গ দের নেক নজর। যত নেক নজর তত ভালো পোস্ট। এরপর অবশ্য কাজ বিশেষ কিছু না। গ্রুপিং করবেন, নিজের জন্য এবং নিজের গড ফাদারের জন্য। বিশেষ দ্বায়িত্ব শুধু একটাই, নিজের দলের কোন আন্দোলন অনুষ্ঠান থাকলে একটু উপস্থিত থাকতে হবে। বিরোধী দলে থাকলে একটা বিশাল মিছিল নিয়ে আসতে হবে। সরকারী দলে হলে অবস্থা বুঝে ব্যাবস্থা। কেবল একটা মিছিল করলেই হবে, তবে বিরোধী দলকে পেটালেও পেটাতে পারেন।

আজকাল অবশ্য উন্নতি হয়েছে। শিক্ষকদের দলবাজিতে ভাড়া খাটি। খারাপ লাগে না। উপরি পাওনা হচ্ছে শিক্ষক পেটানো। চড়, থাপ্পড়, লাঠি যা ইচ্ছা হয়। দুজনের ওপর এসিড ও ঢেলেছি। এসব করলে একটু স্ট্যাটাস বাড়ে। ধরা পড়লে অবশ্য অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাই। তবে যাই বলেন, আপনাদের ঐ মরা দলের আধমরা ছাত্র নেতা হওয়ার চেয়ে এই দুই বড় দলের ছোট খাট পাণ্ডা হওয়া অনেক লাভের। আর কিছু লাভের আশায়ই তো রাজনীতি করছি, তাই না?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.