নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোর ধরতে চোর

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:০৯

মাসের প্রথম আসলেই ইদানীং একটা ভীতি মনের ভেতর উঁকি ঝুঁকি দেয়া শুরু করে। বিদ্যুৎ বিল কত আসবে। কিছু স্মৃতি রোমন্থন করি, গত মাসে বড় মাপের বিদ্যুৎ খরচের কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা। শখ করে ওভেন চালিয়ে কেক রান্না করা হয়েছে কি না? বিদ্যুৎ বিল হাতে পাওয়ার পরে মনে মনে একটা ছোট খাট প্রার্থনা সেরে নিই। এরপরে ধীরে ধীরে মার্কশিট খুলে দেখি, আর মনে মনে একটা হিসাব কষি এই বাড়তি বিল সামাল দিতে এমাসের বাজেট থেকে কি কি বিলাসিতা বিসর্জন দিতে হবে।

বিদ্যুতের বিলে বিভিন্ন ধরনের সিলিং সিস্টেম করে যে চেষ্টাটা করা হচ্ছে তো হল এই খাতে ভর্তুকি কমানো। ভোক্তার পকেট থেকেই যেন বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের বেশীর ভাগটাই আসে। অন্ততঃ তাই বলা হচ্ছে সরকারী তরফ থেকে। বিদ্যুতের চাহিদা যে হারে বাড়ছে, সে হারে যোগান বাড়াতে সরকারের চেষ্টার বর্ণনা, কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উতপাদিত হল তাঁর পরিমাণ বিভিন্ন টক শো’র বদৌলতে প্রায় ঠোটস্থ। এই কারণে যে সরকারকে ব্যায় করতে হচ্ছে প্রচুর অর্থ, তৈরি করতে হচ্ছে প্রচুর পরিকল্পনা এসব কথাও মুখস্থ করানো হচ্ছে প্রতিদিন। বিরোধী দলও সরকারী পদক্ষেপের ভুল ধরছে, সমালোচনা করছে, তবে বেজায় মৃদু স্বরে। নিজেদের আমলে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন না করার যে একটা অভিযোগ তাঁদের গলায় ঝুলছে, তাঁর ভয়ে।

শুধু কি তাই? বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে এই সরকার এতোটাই আত্মপ্রসাদে ভুগছে যে এই নিয়ে নালিশ কিংবা সমালোচনা করার চেষ্টা করলেই আকারে ইঙ্গিতে বোঝানো হচ্ছে, ‘তাহলে কিন্তু আবার লোড সেডিং শুরু করে দিব’। প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক ভাবেই ঘোষণা দিয়েছেন পরীক্ষায় পাশের জন্য পাঠ্য বইয়ের পড়া মনে রাখা যেমন জরুরী, না ভোলার জন্য যেমন ভাবে বারবার পড়তে হয়, ‘লোড শেডিং’ কেও তেমনি ভাবে মনে রাখতে হবে বা রাখানো হবে দিনে দুই ঘন্টা লোড শেডিং করে। মোদ্দা কথা, এই ব্যাপারে কোন সমালোচনা সহ্য করা হবে না। করলেই ‘লোড শেডিং’।

আচ্ছা, বিদ্যুতের অপচয় কিংবা চুরি নিয়ে কথা বলা কি অনুমোদিত? কিংবা তাঁর জন্য ‘লোড শেডিং’ বাড়িয়ে দেয়া হবে এমন কোন হুমকি আছে? আমার জানা মতে তো নেই। যদি থাকে, আর আমার এই লেখার অপরাধে দেশে যদি ‘লোড শেডিং’ বাড়ে, আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। যতদূর জানি ‘সিস্টেম লস’ ই হচ্ছে সেই বাহানা যার মাধ্যমে বিদ্যুতের বিভিন্ন চুরি লুকিয়ে রাখা হয়। যে কয়টি ঘটনা চোখের সামনে দেখেছি তাঁর একটি হচ্ছে অবৈধ সংযোগ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলে দেদারসে ব্যবহার হওয়া হিটার এবং এর মাধ্যমে তৈরি হওয়া রান্না, সরকারী কোয়ার্টারে দেদারসে ব্যবহার হওয়া বিদ্যুৎ এবং নির্দিষ্ট মাসিক বিদ্যুৎ বিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বোধহয় বিভিন্ন কারখানায় নেয়া অবৈধ সংযোগ এবং মিটার রিডারের সঙ্গে আঁতাত।

কেন যেন এই ব্যাপারগুলো নিয়ে পত্র পত্রিকায় খুব একটা লেখালেখি হয় না। ঘটনাগুলো খুব আকর্ষণীয় হয়তো না। মাঝে মাঝে কিছু মিটার রিডারের কোটিপতি হওয়ার গল্প পত্রিকায় আসে ঠিকই, তবে হ্যালির ধুমকেতুর মত পচাত্তর বছর পর পর। আরও একটা কারণ হতে পারে, দেশে বড় বড় দুর্নীতির অভাব নেই। সব দুর্নীতি ছাপতে গেলে প্রায় একশ পাতার পত্রিকা করতে হবে। তাই প্রিয় লেখকের নির্বাচিত গল্পের সঙ্কলনের মত নির্বাচিত দুর্নীতি গুলো আমাদের জন্য পেশ করা হয়।

দেশে সবাই যখন দুর্নীতি করছে, তখন এই দুই একজনের দুর্নীতি বন্ধ করে এমন কোন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে না। বরং বসুন্ধরায় নেয়া এঁদের নতুন প্লটের কিস্তি দিতে সমস্যায় পড়তে হবে। তা আমি নিজেও চাই না। আমার প্রস্তাব ভিন্ন। দুর্নীতি যেহেতু নির্মূল বা কমানো যাবেই না, দুর্নীতি মেনে নিয়েই এগোনো যায় কি না? ব্যাপারটা খুব বিচ্ছিরি শোনাচ্ছে তো? একটু বুঝিয়ে বলি।

বিখ্যাত ব্র্যান্ড ‘অ্যাপল’ এর মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম একসময় খুব সহজেই আনলক করা যেত। একবার তাই ‘অ্যাপল’ এর কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু হ্যাকার কে ডাকলেন, বললেন অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বল অংশ খুঁজে বের করার জন্য, সোজা ভাষায় হ্যাক করতে বললেন। তাঁরা বেশ কিছু দুর্বল অংশ খুঁজে দিল। ‘অ্যাপল’ কর্তৃপক্ষ তাঁদের পুরস্কৃত করলেন। গত প্রায় বছর খানেক ধরে ‘অ্যাপল’এর অপারেটিং সিস্টেম আর সফটওয়ার দিয়ে আনলক করা যাচ্ছে না।

বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়ে বসা বড় বড় আমলারা এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছেন হিসাব মেলাতে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কত খরচ হচ্ছে আর সেই বিদ্যুৎ বিক্রি করে কত ফেরত আসছে। যে অংশটি হিসেবে আসছে না তো হচ্ছে চুরি হওয়া বিদ্যুৎ। যার দাম প্রথমটায় দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে, ট্যাক্সের টাকা থেকে দেয়া ভর্তুকির মাধ্যমে পরে সৎ বিদ্যুৎ গ্রহীতাকে, দাম বাড়ানোর কারণে। এই প্রক্রিয়া থামবে এমনটা আমার মনে হয় না। দাম বাড়াবার ঘটনাই বরং নিত্য দিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

যে কাজ ‘অ্যাপল’ এর প্রোগ্রামাররা করে দেখাতে পারে নি তা করে দেখিয়েছে কিছু হ্যাকার। দাম বাড়াবার পরেও সরকারকে এখনও বিদ্যুতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, ফলে ভবিষ্যতে দাম হয়তো আবার বাড়বে। আর বিদ্যুতের দাম যত বাড়বে, বিদ্যুৎ চুরি ততই বাড়বে। আর আমাদের মত সৎ (অন্ততঃ এখনও আছি) মধ্যবিত্তের ঘাড়ে অতিরিক্ত বা চুরি যাওয়া বিদ্যুতের দামের বোঝা চাপতেই থাকবে। চোরদের সঙ্গে একটা বোঝাপড়ায় গেলে কেমন হয়? এঁদেরই অনুরোধ করা হউক, এই চুরি রোধের কিংবা কমানোর কোন উপায় বাতলে দিতে। ‘অ্যাপল’ এর উদাহরণ থেকে মনে হচ্ছে, এই চুরি রোধ যদি কেউ করতে পারে, এরাই পারবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.