নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সব লেখা

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

চিকিৎসক এবং লেখক

ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেবদাসের প্রত্যাবর্তন

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪৫



আজকের মেনু?

খুব বেশী কিছু নেই। শরীরটা খারাপ করছিল, শুয়ে ছিলাম।

জ্বর?

না। তুমি ফ্রেস হও, টেবিল রেডি করছি।

আমি বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। কথাগুলো কি বলব? নাকি চুপ থাকবো? ব্যাপারটা তো শুধু আমি নিজে জানি। আমি কাউকে না বললে, ব্যাপারটা কারো পক্ষেই জানা সম্ভব না। তবে একথা ঠিক, মনের ভেতর একটা অস্বস্তি থেকে যাবে। হয়তো দেখা যাবে ঘটনা কিছুই না। ছেলেটা হয়তো কোন রোড সাইড রোমিও। রিমি আদৌ তাঁর দিকে কোনদিন চোখ তুলে তাকায় নি। কিংবা, হয়তো ছোট খাট রোমান্স ছিল কিংবা ভুল বোঝাবুঝি। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, পুরো ঘটনা জেনেই বা কি হবে। আর জানতে চাইবো কি ছুতোয়?

শরীর কি বেশী খারাপ?

এইজন্য তোমাকে কিছু বলতে চাই না। চুপচাপ খেতে বস।

তুমি?

একটু পরে খাব।

বস। একটা কথা জিজ্ঞেস করার আছে।

দয়া করে আমার ওপর ডাক্তারি করার দরকার নেই। আমি ঠিক আছি।

ওকে ডাক্তারি করব না। তবে এক রুগীর গল্প করব।

রুগীর গল্প? এই খাবার সময়?

তুমি তো আর খাচ্ছ না। আর আমার অভ্যেস আছে।

গল্পটা কি এখনই বলা জরুরী?

এখনই বলা জরুরী না। তবে তোমার মতামত জরুরী।

আমি চিকিৎসা দিব?

নাহ। এভাবে বলা যাবে না। আসলে রিমিকে হাসপাতালের কোন গল্পই সাধারণতঃ বলি না। নন মেডিকেল লোককে মেডিকেলের গল্প বলে তারপরে আবার তাঁর ভেতরের মজাটা বোঝাতে গিয়ে গল্পের একটা বিচ্ছিরী রকমের সর্বনাশ হয়। তাই রিমির সঙ্গে আমার গল্প বেশীর ভাগই হয় এলে বেলে সব ব্যাপার নিয়ে। হঠাৎ হাসপাতালের গল্প করতে চাওয়া তাই ও ঠিক স্বাভাবিক ভাবে নিবে না। আমার সমস্যা ঠিক সেখানেই। রিমি যদি বুঝতে পারে আমি ওকে সন্দেহ করছি, সংসার একেবারে ওলট পালট হয়ে যাবে। অন্য কোন উপায় খুঁজতে হবে।

চিকিৎসা না। একটা রুগীর গল্প, বেশ করুণ, তাই শেয়ার করতে চাচ্ছিলাম।



আমার আচরণ যে খুব স্বাভাবিক না সেটা আমি নিজেও বুঝতে পারছি। রিমিও বোধহয় বুঝতে পেরেছে। সেদিন জুতো না খুলেই ঘরে ঢুকে গিয়েছিলাম। কাজটা রিমির বেজায় অপছন্দ। আমাদের বিয়ের দুই বছর হতে চলল। গত দুই বছরে এমনটা বড়জোর বার পাঁচেক হয়েছে। তাও একেবারে প্রথম দিকে। তখন দরজা খলার পরে রিমি দাঁড়িয়ে থাকতো। জুতো মোজা খোলার পরে, সবকিছু যথাস্থানে রাখলাম কি না সন্তুষ্ট হয়ে দরজা থেকে সরত। আজকাল করে না। আমি এখন নিয়ম করেই সব কিছু করি। আজকে ঘটনাটা ঘটালাম। সোজা বেডরুমে এসে হুস হল, জুতো পরে এসেছি।

দ্রুত জুতো খুলে হাতে করে রাখতে যাচ্ছি, ধরা পরে গেলাম। রিমি দেখল আমার কাণ্ড কিন্তু কিছু বলল না। ভয়ংকর সংকেত। যেকোনো সময় অগ্নুৎপাত হবে। অপরাধীর হাসি হেসে বললাম, একটু টেনশানে আছি তো, তাই মনে ছিল না।

কিছু বলল না। ঘরে কিছু একটা নিতে এসেছিল। নিয়ে চলে গেল। বাথরুমে ঢুকলাম। আজকের ঘটনাই প্রথম না। একদিন টাই না পরেই বেড়িয়ে গিয়েছিলাম। একদিন মানিব্যাগ ঢোকাতে ভুলে গিয়েছি। এসব সাধারণতঃ আমার হয় না। রিমিকে একটু উইক লাগছে দেখে ওকে নিজের কোন কাজে বিশেষ ডাকি না কয়দিন থেকে।

বাথরুম থেকে বেড়িয়ে প্রথম একটা হোঁচট খেলাম। রিমি বিছানায় বসে। মুখ গম্ভীর। আজকে একটা কিছু ঘটবে। বুঝে ফেলেছে, আমি মানসিকভাবে খুবই ডিস্টারবড। এতদিন হয়তো অপেক্ষা করেছে, আমি নিজে বলি কি না। আজ ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গেছে। আমি তো এখনও গুছিয়ে উঠতে পারিনি। কিভাবে বলব?

তুমি? কি ব্যাপার? রান্নাঘরের কাজ শেষ?

বস।

গুরুতর কিছু?

বল।

কি?

কিছু একটা তুমি বলতে চাচ্ছ আমাকে। কি সেটা?

মোক্ষম সুযোগ। বলে ফেলব? বলে ফেলা তো সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে শুরু করা।

নিজের চেহারা দেখেছ?

কেন?

প্লিজ। এক মুহূর্তের জন্য ভুলে যাও আমি তোমার স্ত্রী। আমাকে বন্ধু ভেবে মনে যা আছে বলে ফেল।

তুমি শুধু শুধু টেনশান করছ।

প্লিজ। আর একটাও মিথ্যা না।

রিমি কেঁদে দেবে মনে হচ্ছে। সিচুয়েশান অনেক ঘোলাটে হয়ে গেছে। পুরো ব্যাপার পরিষ্কার করার একটাই রাস্তা, অনেস্ট কনফেশান। রিস্ক নেয়া ঠিক হবে না। মনে যা আছে সবটাই বলে ফেলি। একজন বন্ধুকে তো বলতেই পারি মনের কথা।



নীহার নামে কাউকে চেন?

এখনই উত্তর দিব? না পুরো গল্প শোনার পরে?

সেদিন এক ভদ্রলোক ভর্তি হয় আমাদের হাসপাতালে। রাস্তায় পরে ছিল সম্ভবতঃ। কেউ নিয়ে এসে ভর্তি করে দেয়। অবস্থা বেশ খারাপ। ওষুধ কেনার পয়সা নেই। আমাদের পুওর ফান্ড থেকে কিছু হেল্প করে ইনিশিয়াল পরীক্ষা করা হয়েছে। টিউবারকুলসিস। বেশ ভালোই ছড়িয়েছে। বেশ ছন্নছাড়া লাইফ লিড করত মনে হয়। ড্রিংক ও করতো। লিভারের অবস্থাও সুবিধার না। যাইহোক চিকিৎসা শুরু হয়ে গেছে। এখন অনেকটা ইম্প্রুভড।

শেষ?

না। সেদিন আমার ওয়ার্ড বয় একটা মানিব্যাগ নিয়ে আসল, বলল স্যার আপনার মানিব্যাগ। জানতে চাইলাম কি করে বুঝলি। বলল, ভেতরে ম্যাডামের ছবি আছে। খুলে দেখি তোমার আরলি এজের ছবি, সালোয়ার কামিজ পরা। কোথায় পেয়েছে জানতে চাইলাম, বলল, সেই রুগীর বিছানার পাশে পরে ছিল।

আর কিছু?

না।

তুমি ভয় পাচ্ছিলা কেন?

মানে?

মানে নীহারদা কে আমি চিনি কি না এই প্রশ্ন করলে আমি ঠিক উত্তর দিতাম না?

তা না। তুমি ভেবে বসতে পারো, আমি তোমাকে সন্দেহ করছি।

রিমি হেসে ফেলল। তা তো করছোই। করছো না?

এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম। এই প্রশ্নটাই অ্যাভোয়েড করতে চাচ্ছিলাম। রিমি বুদ্ধিমতি। ওর চোখ ফাঁকি দেয়া সম্ভব না। স্বীকার করে ফেলি। পরে যা হবে দেখা যাবে।

পুরোপুরি সন্দেহ না। রোড সাইড রোমিও হতে পারে কিংবা একতরফা ব্যাপার সবকিছুই মাথায় এসেছিল।

আর?

আর মানে?

আসল সন্দেহটা আসে নি? আমাদের ভেতর অ্যাফেয়ার ছিল।

এসেছিল।

খোঁজ নিতে পাঠাও নি কাউকে?

নাহ, সেটা মাথায় আসে নি।

শুধু শুধু টেনশান করে এই ক’টা রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছ।

কি করব বল?

তোমার ভয়টা কোথায় বল তো? যদি অ্যাফেয়ার থেকেই থাকে, এখন আমি সব ছেড়ে নীহারদের সঙ্গে ঘর ছাড়বো?

তাই তো? এটা তো ভেবে দেখিনি। নাকি এটাই ভেবেছি? নীহার নামের লোকটা তো আর কয়দিন ওষুধ খেলেই ভালো হয়ে যাবে। আর ওদের ভেতর যদি সত্যিই অ্যাফেয়ার থেকে থাকে, আমি ওদের মাঝে আসবো কেন?

কি ভাবছো?

ভাবছি, উনি কিন্তু কিছুদিনেই সেরে উঠবেন।

অ্যান্ড দেন? আমি তল্পি তল্পা সহ উনার সঙ্গে বেড়িয়ে পড়ব?

মানে?

তোমার ধারণা আমাদের প্রেমের মাঝে তুমি চলে এসে বিশাল অন্যায় করে ফেলেছ? এখন সেই পাপ মোচন করার জন্য, পুরনো প্রেমিক প্রেমিকাকে মিলিয়ে দেয়ার জন্য মহান এক আত্মত্যাগ করতে চাও?

নট এদজ্যাক্টলি। তবে অনেকটা সেরকম।

শোন। নীহারদা আমাদের পাশের বাসায়ই থাকতেন। আমাদের প্রেম ও ছিল। আমাদের ফ্যামিলি মানবে না এও জানতাম। দুইজন দুই ধর্মের। হয়তো পালিয়ে বিয়েও করতাম। শেষ মুহূর্তে রাগারাগি করে নীহারদা বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। একটু পাগলাটে টাইপ তো ছিলই। এরপর তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে। খুব তাড়াহুড়া করে বিয়ে করেছিলে তো, তাই খোঁজ খবর নাও নি। একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারতে।

এখন?

এখন মানে?

এখন কি করতে চাও? শুনতে হিরো গিরি টাইপ মনে হলেও, তুমি যদি চাও, আমি বাঁধা দিব না।

পারবে আমাকে ছাড়া থাকতে?

কথা ঘুরিও না। গিভ মি ইয়োর অনেস্ট আনসার।

আমি কারো সঙ্গে কোথাও যাচ্ছি না। এখানেই থাকব।

তাকিয়ে থাকলাম রিমির দিকে। ও সত্যি বলছে। কারণ টা কি জানতে চাইবো?

কারণ জানতে চাও?

না বলতে চাইছিলাম, কিন্তু কেন যেন হ্যাঁ বেড়িয়ে গেল।

বিকজ আই লাভ ইউ। অ্যান্ড অলসো...

অ্যান্ড অলসো?

অ্যান্ড অলসো, আই অ্যাম এক্সপেক্টিং।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:০১

হাঁসি মুখ বলেছেন: দেবদাসের সাথে আইটেম টা মনে করে ফিরিয়ে আনবেন কিন্তু ;) ;) চন্দ্রমুখী ছাড়া জমবেই না ।

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৪০

আশিক মাসুম বলেছেন: হুম যে দিন পড়ছে কপালে তাই আছে ভাই। বিয়ার পর বউয়ের ২০/২৫ দেবদাস প্রেমিক ও বেরিয়ে আসতে পারে :P :P :P =p~ =p~ =p~

৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৯

শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: খুব সুন্দর গল্প... :)

৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২২

চ।ন্দু বলেছেন: খুবই ভাল উপস্থাপনা, অতি জটিল বিষয়ের। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, আমাদেরকে আপনার লেখা পড়ার সুয়োগ করে দেবার জন্যে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.