![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আলাপচারিতা কি আমারই শুরু করা উচিৎ?
তাই তো নিয়ম। বলুন কি জানতে চান।
আচ্ছা বলুন তো পানির রাসায়নিক নাম।
এবার মেয়েটা হেসে ফেলল। দারুণ মিষ্টি হাসি। পছন্দ হল। যদিও খুব উৎসাহ নিয়ে মেয়ে দেখতে আসি নি তারপরও মেয়েটার সঙ্গ মন্দ লাগছে না। নীচে আমাদের পরিবার আর কন্যা পক্ষের পরিবার ‘তারপর দেশের অবস্থা কি বুঝছেন’ টাইপ আলাপ আলোচনা করছেন। আমদের দুইজনকে পাঠানো হয়েছে দোতলার ব্যাল্কনিতে। ‘নিজেদের মধ্যে কথা’ বলতে এসেছি। আসলে এই ধরনের কথা বার্তায় যে তথ্যটা শোনার ভয়ে পাত্র এবং পাত্রী দুজনই ভীত থাকে তা হচ্ছে, ‘আই অ্যাম সরি’। কিংবা ‘আমার অন্য একজনকে পছন্দ’।
আমাদেরকে ওপরে পাঠানো হয়েছে। আমিও হয়তো তেমন কিছু শোনার অপেক্ষা করছি। মেয়েটা সম্পর্কে আগেই খোঁজ খবর নিয়েছি। বেশ ভালো মেয়ে। শান্ত স্বভাবের, পড়াশোনায় বেশ ভালো। দেখতে অপ্সরা না হলেও সুন্দরী বলতে কেউ কার্পণ্য করবে না। এমন একজন মেয়ে ইউনিভার্সিটি তে পড়বে আর এতদিন পর্যন্ত প্রেমের প্রস্তাব পাবে না, তা তো হয় না। ক্ষীণ যে সম্ভাবনার ওপর ভর করে এসেছি তা হচ্ছে, মেয়েটির কাউকে মনে ধরছে না কিংবা প্রেম করবার সাহস নেই। ‘ফ্যামিলি কনজারভেটিভ’ বা ‘প্রেমে আপত্তি’ এমনও কদাচিৎ পাওয়া যায়। এ মেয়ের ক্ষেত্রে ঘটনা ভিন্ন।
একজন ছেলের সঙ্গে প্রায়ই ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। বেশ বড় ধরনের রটনা আছে, সম্পর্কটা প্রেমের। তবে তাঁরা দুজনই অস্বীকার করে। ‘উই আর জাস্ট ফ্রেন্ড’ জাতীয় বক্তব্য দিয়ে চলেছে দুজনই। ঘটক সাহবে যেদিন মেয়ের ছবি দেখিয়ে মেয়েটির গুণকীর্তন করছিলেন সেদিনই মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম, মেয়েটির খুব গভীর প্রেম না থাকলে এই প্রস্তাবনা কে গন্তব্যে নিয়ে যাব। পরিচিত আর বন্ধু বান্ধবের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে যা জানলাম তার সারাংশ হচ্ছে একটি জিজ্ঞাসা চিহ্ন মেশানো সম্পর্ক।
খোঁজ খবর করে পাওয়া বাকী তথ্যের ভিত্তিতে মেয়েটির প্রতি সম্ভবতঃ ‘মৃদু প্রেম’ জন্মে গেছে। মেয়েটির মুখে ‘না’ শোনার আগে পর্যন্ত তাই আমি আশায় আশায় আছি। ‘অন্য মেয়ে দেখো’ বলতে মন এখনও সায় দিচ্ছে না। সম্ভাবনা কম জেনেও একবার চেষ্টা নিতে খুব ইচ্ছে করল। কনে দেখতে যাওয়ার প্রস্তাবে তাই সায় দিলাম। আজ সেই দিন। আর আমি দারুণ উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছি কখন মেয়েটি বলে, ‘আই অ্যাম সরি, আমার পক্ষে এ বিয়ে করা সম্ভব না।‘
এটা কি আপনার প্রথম মেয়ে দেখতে আসা?
বর্তমানে ফিরলাম। মেয়েটা ‘পানি’র প্রশ্নটা শুনে মিষ্টি হেসে জবাব দিল। এটা অবশ্য ঠিক জবাব না, আমার সম্পর্কে জানতে চাওয়া। শুভ লক্ষণ? দেখি না লাক ট্রাই করে।
যদি ছবি দেখা কে মেয়ে দেখা না বলেন। আপনার?
আমার প্রথম না। অনেকগুলোই ইন্টারভিউ দিয়েছি। রীতিমত এক্সপেরিয়েন্সড বলতে পারেন। কোচিং ক্লাস খুলবো ভাবছি।
মন্দ বলেন নি। এমন একটা কোচিং থাকা উচিৎ। কিছু প্র্যাকটিস এক্সাম দেয়া থাকলে এভাবে ঘামতাম না।
আপনি ঘামছেন গরমের জন্য। ঘরে যাবেন?
না। আই অ্যাম ওকে।
আমার সম্পর্কে কিছু জানবার আছে?
কি জানতে চাওয়া উচিৎ? আই মিন, সাধারণতঃ সবাই কি জানতে চায়।
অনেক ধরনেরই প্রশ্ন করা হয়।
যেমন?
যেমন প্রিয় রঙ কি? প্রিয় কবি কে। কিংবা কোন সাবজেক্ট ভালো লাগে। এসবই বেশী।
আর কম কোনগুলো?
সবগুলো মনে নেই। হ্যাঁ, কয়েকজন প্রশ্ন করেছিল রাজনীতি করি কি না।
একটু নতুনত্ব আছে। আর?
আপনি কি পরবর্তী কনে দেখার প্র্যাকটিস কোশ্চেন জোগাড় করছেন?
মেয়েটা আবার মিষ্টি করে হাসল। মৃদু প্রেমটা মনে হচ্ছে শিকড় বিস্তার করছে। কি উত্তর দিব ভাবছি এমন সময়
বলে ফেলুন কি জানতে চান।
মানে?
মানে আমার অ্যাফেয়ার আছে কি না এমন কিছু তো জানতে চান?
গলা কেমন শুকনো লাগছে। মেয়েটা কি অন্তর্যামী টাইপের কোন ক্ষমতার অধিকারী? নাকি ‘পানি’ প্রশ্নের মানে হচ্ছে মেয়েটির অতীত জানতে চাওয়া।
যা হওয়ার হবে, সিদ্ধান্ত নিলাম, অনেস্ট কনফেশান করব।
জ্বী।
খোঁজ খবর নেন নি?
জ্বী নিয়েছি।
কি রিপোর্ট দিয়েছে আপনার গোয়েন্দারা?
একজন ছেলে বন্ধু আছে। তবে সে প্রেমিক কি না সিউর হতে পারে নি।
মেয়েটা আবার মিষ্টি করে হাসল।
যদি পানির রাসায়নিক নাম বলতে পারি, তবে কি প্রমাণ হবে?
প্রমাণ হবে আপনারা শুধুই ফ্রেন্ড।
মেয়েটা সুন্দর করে আমার দিকে তাকাল। এবার আর আগের মত মিষ্টি করে হাসল না। একটু কি ঠোঁট বাঁকা করল? না হাসল? এবার তো আরও অপূর্ব লাগছে। এরপর চোখ নামিয়ে নিল। লজ্জায়? এখনই বোঝা যাবে। হয় উত্তরে পানির রাসায়নিক নাম বলবে নয়তো বলবে জানি না। আমি আমার উত্তর পেয়ে যাব। অপেক্ষা করছি। অধীর আগ্রহে মেয়েটার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছি। নড়ছে? কিছু কি বলছে?
বেশ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থাকলো। এরপর একসময় চোখ তুলে তাকাল। কথা বলার জন্য ঠোঁট দুটো ফাঁক হল। এখনই উত্তর পাব।
ভাইজান ওঠেন। আপনার সময় শেষ।
মানে?
মানে এই মেশিনে ১৫ মিনিট ভবিষ্যৎ দেখা যায়। আপনার ১৫ মিনিট শেষ। পরের কাসটোমারের এখন ঢুকব।
আমার স্বপ্ন দেখা তো শেষ হয় নাই ভাই।
কিছু করার নাই ভাই। এক ঘণ্টার মেশিনটা বানানোর চেষ্টা চলছে।
আবার যদি স্বপ্ন দেখতে চাই?
লাভ নাই। একই স্বপ্ন দেখবেন আর একই জায়গায় থামবেন। অনেক বড় লাইন বস। একটাই মেশিন তো। তাড়াতাড়ি উঠেন, জায়গা ছাড়েন। পরের জন বসব।
ইচ্ছা না হলেও মেশিন থেকে বেড়িয়ে আসলাম। আমার মন খারাপ দেখে টেকনিশিয়ান ছেলেটা সান্ত্বনার ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো, কারোরই মন ভরে না স্যার। কি আর করবেন। আপনার কেসটা কি স্যার?
মাথা ঝাকিয়ে বোঝাতে চাইলাম, তেমন কোন ব্যাপার না। ওকে বলে কি লাভ? সকালে যখন বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়ল ভ্রু কুঁচকে গিয়েছিল। এও কি সম্ভব? পরে ভাবলাম, সম্ভব হলে মন্দ হয় না। বিজ্ঞান তো কত কিছুই আবিস্কার করেছে, এটাও হয়তো নতুন কোন আবিস্কার। তবে আবিস্কারটা যদি সত্যি হয়, যুগান্তকারী একটা ঘটনা ঘটবে।
ঠিকানা টুকে নিলাম। ফোন করে অ্যাপয়ন্টমেন্ট না নিয়ে একেবার দেখতে চলে এলাম। ওদের সব কিছু দেখলাম, শুনলাম। তখনও বিশ্বাস হয় নি যে এই মেশিনে বসে ভবিষ্যৎ দেখা সম্ভব। কিছুটা সন্দেহ নিয়েই মেশিনে বসেছিলাম, আগামীকাল যে মেয়েটাকে দেখতে যাব তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে।
মনে মনে হাসলাম। অভিজ্ঞতা খারাপ হল না। এদের দাবী যদি সত্যি হয় অর্থাৎ মেশিনে বসে স্বপ্নে যা দেখবো, তাই ঘটবে, তবে কালকের দিনটা বেশ এক্সাইটিং হবে। যন্ত্রটার নামটাও খুব ভালো দিয়েছে ‘ড্রিম কাম ট্রু’। দেখি আগামীকালকে কি ঘটে।
২| ২৩ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২১
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভাই ঠীকানাটা দেন
জলদি ২য় বিয়া ভাইগ্যে আছে নাকি দেইক্যা আসি
দারুন লিখছেন।
পুরাই বিলিভ করাই দেয়ার মতো
++
৩| ২৩ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৫
কালোপরী বলেছেন: ek golpo kotobar post kren ajob ... er moddhe mone hoy 2 3 din ei ek e golpo porlam
১২ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪৬
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: দেখার চেষ্টা করছিলাম কোন নামটা বেশী পছন্দ করে পাঠক। গল্পটা আজকে আমাদের অর্থনীতি পত্রিকায় ছাপা হবে।
৪| ২৩ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:২১
আকাশ_পাগলা বলেছেন: ভালো হইসে। গুড
৫| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:১০
মোঃ আদিব ইব্নে ইউসুফ বলেছেন: ওয়াও, অসাধারণ হয়েছে। ডুবে গিয়েছিলাম গল্পটাতে একেবারে। কবে যে এমন স্বপ্ন দেখতে পারব
১২ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:১০
ডা: আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২১
সানফ্লাওয়ার বলেছেন: আগামিকাল কি ঘটবে খুব জানতে ইচ্ছে করছে। কি করি?